গোলাম আজমের মৃত্যু এবং তারপর...
লিখেছেন লিখেছেন রওশন জমির ১৩ নভেম্বর, ২০১৪, ০৯:৫১:২৫ সকাল
গোলাম আজমের মৃত্যু হল বার্ধক্যজনিত কারণে। স্বাভাবিক বাঙালি জীবনের তুলনায় তার যাপিত-জীবন একটু দীর্ঘই হল বলা যায়। তবে তা একেবারে স্বাভাবিক মৃত্যু। তার এ মৃত্যুর পর পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনায় প্রত্যাশা-হতাশার একটি চিত্র চোখে পড়ে। এনিয়ে একটি বিতর্কের সৃষ্ট হয়। এর ব্যবচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যেই এ লেখা।
এদেশীয় ট্যাবু অনুসারে মৃত্যু-পরবর্তী সময়ে কারো সমালোচনা অশোভন। কিন্তু ইতিহাসের নিরিখে, পথচলার প্রয়োজনীয়তায় যখন তা অপরিহার্য় হয়ে পড়ে, তখন এ ছাড়া আর উপায় কী? হ্যাঁ, এ লেখায় যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ রক্ষার চেষ্টা থাকবে।
গোলাম আজমের মৃত্যুতে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলে একটা স্বস্তি নেমে আসবে, অপর পক্ষে জামাত-শিবিরে হতাশা। কারণ, সরকার ও এর সমর্থক গোষ্ঠীর মতে, এবং আদালতেও যা প্রমাণিত, তিনি একজন যুদ্ধাপরাধী। তাই আদালতের রায়ে কারাবন্দি অবস্থাতেই তার মৃত্যু হয়। এমনিতেই যে বয়সে উপনীত হয়েছিলেন, খুব বেশি দিন বাঁচার কথা নয়। তবুও তার মৃত্যুতে জামায়াত তার দীর্ঘদিনের নেতাকে হারাল বিধায় হতাশ হতে পারে এবং অপরাধীর যথাযথ শাস্তি হল বলে সরকার ও সমর্থক গোষ্ঠীর মনে তৃপ্তি দানা বাধতে পারে।
আদালতে তার অপরাধ গুরুতর প্রমাণিত হওয়ার পরও বয়স বিবেচনায় মৃত্যুদ- দেওয়া হয় নি। কিন্তু কারাবন্দি অবস্থায় তিনি যে-সব সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন, তা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ-শিবিরে শুরু থেকেই ক্ষোভ ছিল। মৃত্যুর পর তার লাশকে ঘিরে দেশে-বিদেশে জামায়াত ও এর সমর্থক গোষ্ঠী যে কর্মোদ্দীপনার প্রমাণ দিল, তাতে জামায়াত-শিবিরের সাহসের যেমন কেউ কেউ প্রশংসা করছেন, তেমনই তাদের বিরোধীদের মনে এনিয়ে জমাটবাধা কষ্টের কথাও ভুলবার নয়।
জামায়াত ছাড়া আর বাকি সবার বিশ্লেষণ হল, জামায়াতে ইসলামি একাত্তরে যে ভূমিকা পালন করে, তাতে এদেশীয় প্রধান হিসাবে গোলাম আজমসহ তার সকল অনুসারীদের এটা (সাজা) পাওনা ছিল। (আদালতে অবশ্য তাই প্রমাণিত হল।) কিন্তু একাত্তর-পরবর্তী সময়ে জাতীয় অস্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক টানাপোড়েনের কারণে এ সাজা-প্রাপ্তিতে বিলম্ব ঘটেছে মাত্র। একাত্তর-পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবস্থান বিষয়ে জামায়াত যৌক্তিক আচরণ করলে, একাত্তরের প্রতি ন্যূনতম সম্মান প্রদর্শন করলে এরূপ অবস্থা তৈরি নাও হতে পারত।
আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াত এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না করার কারণে দুর্ভোগ বেড়ে যায় যৌক্তিকভাবেই। এ জন্য বিরোধীদের দায়ী করা হলেও জামায়াতের নিজের হঠকারী অবস্থান এর জন্য কম দায়ী নয়। হতে পারে ক্ষমা চাওয়ার পরও আদালতি বিচারে এর কোনো ব্যত্যয় হত না। কিন্তু ইতিহাসের কাছে তারা বিবেকী মানুষ হিসাবে পরিচিত হতো। আবার সাধারণ মানুষের মনে একটা দরদ তৈরি হত, যা বিচার-পরবর্তী সময়ে তাদের পার্টির ভবিষ্যত রচনায় সহায়ক হত।
সে যা-ই হোক, জামায়াতকে শেষ পর্যন্ত অপরাধী হিসাবে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হল। এটাই হল ইতিহাসের অমোঘ নিয়মের ধারাবহিকতা। বাঙালি ও বাংলাদেশীদের ব্যর্থতায় আদালতে তাদের বিচার যদি সম্ভব না-ও হতো, ইতিহাস তাদের কখনো ক্ষমা করত না। কিন্তু জামায়াত ও এর নেতাদের বিচার হতে কেন এত সময় নিল বা মৃত্যুর পরও বিতর্কিত পার্টি-প্রধানের প্রতি মানুষের এত দরদ কেন বা দেশ-বিদেশে এত জানাযার প্রস্তুতি কেন, তার উত্তর খোঁজা যেতে পারে। আর তখনই প্রত্যাশা-হতাশার মূল কারণটুকু উদ্ঘাটিত হতে পারে।
জামায়াতের বা যুদ্ধাপরাধের বিচারের এত দীর্ঘসূত্রিতার জন্য আমাদের এদেশের রাজনৈতিক নেতারাই প্রধানত দায়ী। তারা যদি শুরুতেই এর সমাধানের ব্যবস্থা করতেন, তাহলে চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছর পর এই কাসুন্দি এভাবে ঘাটতে হত না। অনেকের ধারণা, যদি বঙ্গবন্ধুর সরকার ধারাবহিকভাবে দশ কি পনের বছর ক্ষমতায় থেকে যেতে পারত, তাহলে এর একটি সন্তোষজনক সমাধান চোখে পড়ত। তা আর হয় নি। নৃশংসভাবে তাকে সপরিবারে সরিয়ে দিয়ে নানা টাল-বাহানার মধ্য দিয়ে দেশ এগুতে থাকে। আর তাই এ-মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধের ইস্যুই রাজনীতির গুটি হিসাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। এর সুযোগ নিয়ে জামায়াতও ঘুরে দাঁড়ানোর, শেকড় ছড়ানোর চেষ্টা করে। থেমে থেমে হলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দৃঢ়করণের চেষ্টা যেমন সফল, তেমনই জামায়াতের শেকড় ছড়ানোর চেষ্টাও ব্যর্থ নয়। যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন হওয়ায় বৃহত্তর জনতার সন্তোষ এবং একই সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে কিছু মানুষের উপস্থিতি তাই প্রমাণ করে।
শেষ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধের বিচার হলেও বিচারপ্রার্থীদের অনেক প্রত্যাশাই পূরণ হয় নি। এ প্রসঙ্গে অনেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুদ্ধাপরাধের বিচারের নানা উদাহরণ টেনে আনেন। তারা তা চাইতেই পারেন। এটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু তাদের মনে রাখা উচিত, সেটা ছিল বৈশ্বিক পর্যায়ের একটি বিচার। বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো ছিল এ বিচারের পক্ষে এবং বিশেষভাবে সচেষ্ট। অন্যদিকে আমাদের ক্ষুদ্র এই দেশ এককভাবে নানা উদ্যোগের মাধ্যমে এগুতে চাইলেও এর জন্য দেশীয় ষড়যন্ত্র ও আন্তর্জাতিক নানা শক্তির বিরোধিতার মুখোমুখি হয়। অবশেষে এখন তা একটি উপসংহারের পথে। আন্তর্জাতিকতার তুলনা না টেনে দেশীয় অবস্থান থেকে যতটুকু হল বা হচ্ছে, তাও বা কম কীসে?
অন্যদিকে, ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধের ক্ষত শোকানোর জন্য আন্তর্জাতিক শক্তিসংঘ যে-সব ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তা যে সফলতা লাভ করে এবং জনতার সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হয়, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের দেশ স্বাধীনতা লাভ করার দীর্ঘ চল্লিশ বছর পরও সেই সব সফলতা অর্জিত হয় নি, যা ছিল জনগণের একান্ত প্রত্যাশিত। সুশাসন, গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক মুক্তি, সুষম রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইত্যকার নানা বিষয় এখনো উপেক্ষিত। এই সব কাক্সিক্ষত-প্রত্যাশিত বিষয়ের অনুপস্থিতিতে স্বাধীনতা-বিরোধীরা বঞ্চিত সমাজের মাঝে হতাশা তৈরি করার চেষ্টা করে, একাত্তরকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এদের সফলতা তিক্ত হলেও স্বীকার্য।
অন্যদিকে, ইউরোপে বা বিশ্বযুদ্ধে ধর্ম নিয়ে কোনো টানাটানি হয় নি। সেখানে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির অবস্থান এতটাই পাকাপোক্ত যে, মানুষ এখন নিরাশ হয়েও ধর্মের কাছে আশ্রয় নেয় না। ধর্মের নামে কোনো পার্টিও তেমন কার্যকর নয়। কিন্তু আমাদের দেশে, এই প্রাচ্যে ধর্মের উপযোগিতা এখনো পূর্বের মতোই সমান। কিন্তু ধর্ম যেন সুবিধাবাদী গোষ্ঠী বা সমাজের অস্ত্র না হতে পারে- এজন্য ধর্মনিরপেক্ষ দল ও সমাজের কোনো চেষ্টা এ যাবৎ পরিলক্ষিত হয় নি। স্বাধীনতার পর এই দীর্ঘ সময়ে মানব-কল্যাণে ধর্মীয় শিক্ষা ও গবেষণায় যেমন সরকার ও বুদ্ধিজীবীদের কোনো দায় নেই, তেমনই অবদানও নেই। আর তাই বিভিন্ন পার্টি, বিশেষত ধর্মীয় পার্টি নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ধর্মের বাণীকে ব্যবহারের অবকাশ পায়।
অস্বীকার করার জো নেই যে, প্রাচ্যের শিক্ষা ও রুচির মান এখনো ঊর্ধ্বগামী হতে পারে নি। উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণ করেও আমাদের দেশের সার্টিফিকেটধারীরা প্রথার নিগড় থেকে মুক্ত হতে পারে না। তাই অতীত থেকে চলে আসা ধর্মের নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রতি তারা যুক্তি-তর্কহীনভাবে সমর্পিত। ধর্মের সকল ব্যাখ্যা ও বিষয়-আশয় মোল্লা-মৌলবি বা ধর্মীয় নেতাদের হাতে দিয়েই স্বস্তি বোধ করতে থাকে। সীমিত চিন্তার শক্তি নিয়ে প্রথাগত মোল্লা-মৌলবি ও ধর্মীয় নেতারা মানব-মুক্তির উদ্দেশ্যে নয়, নিজের স্বার্থ, দলের স্বার্থ উদ্ধারেই ব্যস্ত থাকে।
যতদূর জানা যায়, গোলাম আজম পাকিস্তানের সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদির একজন বিশেষ ভক্ত, বলা যায় অন্ধ ভক্ত। মওদুদির পরশ পেয়েই তিনি ধন্য। মওদুদির গড়া দল না পেলে তার পক্ষে নতুন কোনো দল গঠন করা সম্ভব হত না। তাই দেখা যায়, অন্ধভাবে তিনি মওদুদির অনুসরণ করেছেন। অথচ মওদুদির পাশে, জামায়াতে ইসলামির ছায়ায় আরো অনেক লোকের সমাগম হয়েছিল। তাদের অনেকে যেমন বড় বড় মাওলানা, আবার কেউ কেউ ছিলেন সাধারণ শিক্ষা-ব্যবস্থার লোক। কিন্তু এদের অনেকেই সচেতন ও মেধাবী। মওদুদির মতো সৃজনক্ষম না হলেও ধর্মীয় গ-ির মাঝেই তাদের দৃষ্টিভঙ্গি মোটামুটি যুক্তিপ্রবণ এবং সত্যসন্ধানী। তাদের নিজেদের স্বকীয়তা ও ব্যক্তিত্ব মওদুদির আলোয় ম্লান হবার নয়। তাই মওদুদির বিরুদ্ধে, পার্টির নানা কার্যক্রম নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলে সমাধান না পেয়ে তারা বের হয়ে আসেন। কিন্তু গোলাম আজম নানা ঘাটে ঘুরে ফিরে মওদুদির এখানে নোঙর করেন। তিনি এর পুরস্কারও পান। একাত্তরে নানা আচরণের মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি করেও মওদুদির কাছ থেকে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের ‘জামায়াতে ইসলামী’-এর আমিরের পদ লাভ করেন! আমৃত্যু এঘাটেই থাকেন।
তিনি যেমন মওদুদির বিরুদ্ধে কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেন নি, সাহস পান নি। তেমনই তার চারপাশে যে-সব মানুষের সমাগম ঘটেছে, তাদের মনেও গোলাম আজম সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন জাগে নি: ধর্মীয়ভাবে নয়, রাজনৈতিকভাবেও নয়। অন্ধ ভক্তদের মনে কোনো প্রশ্ন জাগে না। এই অন্ধ ভক্তরা জ্ঞান ও শিক্ষার দিক থেকে কোন পর্যায়ে আছে, এ নিয়ে নেতার মনে যেমন প্রশ্ন জাগে না, তেমনই নেতার অবস্থান-যোগ্যতা ও বিবেক নিয়েও তাদের মনে কোনো প্রশ্নও জাগে না। প্রশ্নহীন মানুষের ভক্তি-অনুরাগ নিয়ে যাদের তৃপ্তি থাকতে পারে, থাকুক। কিন্তু বিদ্যা-বুদ্ধি ও বিবেকের প্রতি যাদের আস্থা আছে, এ নিয়ে তাদের মনে দ্বিধা তৈরি হওয়া এক ধরনের হতাশা। তাদের মনে বরং প্রশ্ন আসতে পারত যে, কেন দেশ এতটা এগুয় নি, যার পরিণামে সাধারণ মানুষজন এই সীমিত বুদ্ধির নেতাদের পেছনে দৌড়াবে না?
বাইরের বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের কোনো একটি পত্রিকার কলামে দেখলাম, তাকে সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। এনিয়ে কমেন্টেসের জায়গায় জামায়াত-শিবিরের উচ্ছ্বাসভরা উপস্থিতি যেমন চোখে পড়ে, তেমন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দ্রোহী জবাবও নজর কাড়ার মতো। এব্যাপারে একটি কথা বলা দরকার। তা হল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যে তরুণের হঠকারী আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয়, মানব-সমাজের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়, তারও কিন্তু ভক্তবৃন্দ আছে। সম্প্রতি তার ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণের ঘটনাও ঘটেছে। আবার একজন পরিচিত দুষ্কৃতকারী ব্যক্তিক জীবনে সদাচারী হয়েও লক্ষ্য-অর্জনে নৃশংস হতে পারে। এর প্রমাণ তো আমাদের চারপাশে ভুরি ভুরি আছে। তাই একাত্তরে রাষ্ট্রিক পর্যায়ে নৃশংস হয়েও ব্যক্তিক জীবনে তিনি ভয়ঙ্কর না-ও হতে পারেন। তার ব্যক্তিক সদাচারের পুরস্কার যেমন মৃত্যু-পরবর্তী জনমানুষের ভক্তির পরাকাষ্টা, তেমনই আদালত কর্তৃক ঘোষিত তার শাস্তিও জনসমক্ষে কৃত অপরাধের পরিণতি।
আজ সংখ্যালঘিষ্ঠ হয়েও যে-সব তরুণ বিবেকের তাড়নায় গোলাম আজমের জানাযার সামনেও প্রতিবাদী অহং নিয়ে দাঁড়িয়েছেন, তাদের ধন্যবাদ। তাদের কারণেই এত বছর পর ইতিহাসের একটি পর্বে পূর্ণতার পথ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরি না হয়, সাধারণ মানুষের মুক্তির আলো চোখে না পড়ে, যদি অ-শিক্ষা ও কু-শিক্ষার অন্ধকার দূর না হয়, তাহলে এই অন্ধকারের পথ বেয়েই একাত্তরের পরাজিত ভূত আবারও মূর্তিমান হতে পারে। আমাদের চেষ্টাকে, আত্মদানতে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফায়েদা লোটার চেষ্টা করতে পারে। সেই সচেতনতা কি আমাদের আছে?
বিষয়: রাজনীতি
১৩৮০ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
১- রতনে রতন চিনে, তাই পাদা-রা-ই ভাদা চিনে- বলা যেতো। আমি পারি না, সেই যোগ্যতা আমার নেই। সেই অন্ধতা আমার তৈরি হয় নি। আপনি আপনার অবস্থান ও যোগ্যতা অনুসারে যা বলার, তাই বলেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ।
২- কিন্তু ভাইজান, একটু বুঝিয়ে বলবেন, কীভাবে আমি বাইরে যেতে পারি নি? যেহেতু আপনি ভেতর-বাহির বুঝেন, এমনকি গ্যাড়াকলও। তাই মুক্ত বিবেক দিয়ে আমাকে বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব তো আপনার।
৩- সঠিকটা আপনাকেই বুঝিয়ে দিতে হবে। কারণ আপনি জ্ঞান-পাপী নন, বরং জ্ঞান-ঋষি!
তবে কেন সরকারপন্থী ও বাম সমর্থক মিডিয়াগুলি মুসলিম ব্রাদারহুড, এ.কে পার্টির বিরুদ্ধে লিখে, অপপ্রচার চালায়?
প্রথম আলো ও সহযোগী মিডিয়াগুলি মিশরে সিসির গণহত্যার পক্ষে অনেক সাফাই গেয়েছে। জনগণ দ্বারা অবাঞ্চিত ইহুদী কামাল গাবালা কর্তৃক সিসির পক্ষে সাফাই গাওয়া স্বৈরাচারী লেখাগুলি ছাপিয়ে যাচ্ছে।
এরপর ও কি বুঝতে বাকি আছে, এটি সত্য মিথ্যার চিরন্তন দ্বন্ধ, রাজাকার-মুক্তিযোদ্ধার লড়াই নয়?
১- সত্য-মিথ্যার চিরন্তন দবন্ধ? বাহ, চমৎকার তো!ব্রাদারহুডের বাইরে কি ইসলাম নেই? চলমান সমস্যার জন্য শুধু ইহুদি নাসারারা-ই দায়ী? ভাবুন। ব্রাদারহুডের কোনোই দায় নেই? একে পার্টির সবৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্তগুলো একটু খতিয়ে দেখুন। চোখ খুলে যাবে।
২- আর হ্যাঁ, সেই প্রেক্ষিতেই বলছি, মওদুদির পাকিস্তানে কি জামায়াত বিরোধিতা নেই? ছিল না? এমন কি আলেম-ওলামারা বিরোধিতা করেন নি? এই দবন্ধে সকল সত্য বুঝি জামায়াতের সাথে? আপনার এই সত্যবোধের জন্য হাজারো মোবারকবাদি!
৩- আমাদের দেশের কোনোও মিডিয়ায় তো সত্য বলে না। খোদ জামায়াতের মিডিয়াও না। কিন্তু কেউ সত্য বলে না বলে আমরাও কি সত্য-বিমুখ হয়ে যাবো? আত্ম-সমালোচনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবো? আত্ম সমালোচনাহীন জীবনে আত্ম তৃপ্তি থাকতে পারে, মুক্তি নেইঃ জামায়াতের পূর্বাপর ইতিহাস তার প্রমাণ।
আপনাকে ধন্যবাদ।
জামায়াত, ব্রাদারহুড, এ.কে. পার্টি ফেরেশতা বা ভিনগ্রহের কোন প্রাণী চালায়না, মানুষ এগুলির পরিচালক। আর রাসূল(সা) ছাড়া কোন মানুষই ভুলের উর্ধে্ব নয়। তাঁরাও কেউ এটা দাবি করেন না। হুম।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ)এর একটি বিখ্যাত উক্তি দিয়ে শেষ করলাম।
"যে কোন যুগে তুমি যদি কোন সঠিক ইসলামপন্থী দল খুঁজে না পাও, তাহলে চিহ্নিত ইসলাম বিদ্বেষী এবং ইসলামের পরীক্ষিত শত্রুদের দিকে তাকাও, তারা কোন দলটির প্রতি সবচেয়ে বেশি ক্ষিপ্ত। কেননা সঠিক ইসলামপন্থী দল মুসলমানরা চিনতে ভুল করলেও, ইসলামের চিহ্নিত শত্রুরা কখনো ভুল করে না।"
১-সিসির পক্ষে আমার কোনো বাক্য ব্যবহৃত হয়ে থাকলে দুঃখিত। আচ্ছা, সিসি, রাও ফরমান আলি, ইয়াহইয়া, টিক্কা খানের মাঝে কোনো পার্থক্য আছে? কিন্তু সিসির জন্য শুধুই ঘৃণা, (অবশ্য এতে আমার আপত্তি নেই আর সিসির জমজ ভাইদের জন্য অপার মমতা, সীমাহীন পক্ষপাতিত্ব- তা আবার কেমন কথা? এটা বুঝি খুব দীনদারি? বলিহারি, এই সব দীনদারিকে!
২- ইবনে তাইমিয়া? হ্যাঁ, ধর্মের আবরণে অপরাধকে ঢাকার জন্য বাণীর অভাব হয় না। জীবন-বিচ্ছিন্ন একটা বাণী দিয়েই তো কেল্লা ফতে করা যায়! ইবনে তাইমিয়ার পুরো জীবনে একটি ঘটনা দেখান তো, যেখানে তিনি ধর্মের জন্য, দেশের জন্য অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতন, নিপীড়ন, খুন-ধর্ষণকে সমর্থন করেছেন, চোখ বুঝে মেনে নিয়েছেন। তার জীবন থেকে একটি মাত্র এমন উদাহরণ দেখানোর অনুরোধ জানাই। অথচ এই জামায়াত, এই গোলাম আজম গং অবলীলায় তা করেছেন।
৩- আত্ম সমালোচনাহীন জীবনে আত্ম তৃপ্তি থাকতে পারে, মুক্তি নেইঃ জামায়াতের পূর্বাপর ইতিহাস তার প্রমাণ।
আপনাকে ধন্যবাদ।
নিরপেক্ষ সব ইতিহাস হতে জানা যায়, ৭১ এ মুজিব বাহিনীর উর্দু জানা সদস্যরা পাকিস্তানী বাহিনীর পোষাক পড়ে অনেক অপকর্ম করেছে। সবচেয়ে বেশি মুক্তিযোদ্ধাও হত্যা করেছে মুজিব বাহিনী। আর নারী ধর্ষণ???
জাবিতে ধর্ষণের সেঞ্চুরী কারা পালন করেছিল? মাত্র দুদিন আগের ঘটনা-শ্রমিক লীগের টর্চার সেল থেকে তরুণী উদ্ধার, আটকে রেখে দেহব্যবসা। ভিকারুননিসার পরিমল এবং দেশের আনাচে কানাচে বিশেষ অঙ্গ হারানো ব্যক্তিরা কোন দলের, কোন গোষ্ঠীর সমর্থক? চিন্তা করুন, জবাব মিলবে।
একটি সহজ সমীকরণ। আজ যারা বা যে গোষ্ঠী নারী নির্যাতন করছে ৭১ এ তারা সাধু দরবেশ ছিল আর ৪৩ বছরে যারা কোন অপরাধ করেনি তারা ৭১ এ সব অপরাধ করেছে-এটা ভাবার কোন কারণ ঘটেনি। ৭১ এর নারী নির্যাতনগুলিও ছাত্রলীগ, মুজিবলীগের গুন্ডারাই করেছে।
আমি নিজ দায়িত্বে কমপক্ষে ১০০ টি গ্রামে গিয়ে প্রবীণ ব্যক্তিদের সাক্ষাতকার নিয়েছি। কোন অপরাধের সাথে জামায়াতের তৃণমূলের কোন কর্মীর সংশ্লিষ্টার অভিযোগও পাই নি। নিরপেক্ষ দৃষ্টি থাকলে আপনিও সেভাবে যাচাই করতে পারেন। জামায়াত অখন্ডতার পক্ষে ছিল, কোন অপরাধের সাথে নয়। আর সাংবিধানিকভাবে, আইনগত ভাবে সেটিই বৈধ ছিল। কারণ তখন সাংবিধানিক রাষ্ট্র ছিল পাকিস্তান। যে দূরদৃষ্টি হতে (ভারতীয় আধিপত্যবাদ)জামায়াত অখন্ডতার পক্ষে ছিল
স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও সে আশংকাটিই সত্যি প্রমাণ হচ্ছে বারবার।
আর আপনি প্রত্যক্ষ ও প্রচ্ছন্নভাবে সারাবিশ্বে কলংকিত বিচারকার্যকে সমর্থন করছেন যে বিচারকার্য স্কাইপ কেলেংকারীতে দুষ্ট, বিচারকরা ইসলামবিরোধী, সাক্ষী অপহরণ করা হয়েছে, তথ্য প্রমাণ ছাড়া পেপার কাটিং এর উপর রায় দেয়া হয়েছে। এত কিছুর পর যারা এ বিচারকার্যকে সমর্থন করে তারা মুসলমান দুরের কথা, মানুষের পর্যায়ে পড়ে বলে আমি মনে করি না।
২- জামায়াত-শিবিরের অনেক গরু-ই এ রোগে মারা গেছে। আপনি তো কো ছার! দেশের বাইরে যাওয়ার পর সেই সব গরুর চোখ খুলেছে, খুলতে শুরু করেছে। বাতাসে এখন তাদের গুঞ্জন শোনা। ভুলেও কান পাতবেন না, বিশ্বাস ভেঙে যেতে পারে।
৩-আমার চারপাশে জামায়াত-শিবিরের লোকজনের সংখ্যা যা আছে, বয়োবৃদ্ধরা তাদের অন্যতম, যারা একাত্তর নিজ চক্ষে অবলোকন করেছেন, তাদের সাক্ষ হল, পাকিস্তানিরা, এদের সহযোগীরা মানুষকে খুন-ধর্ষণ করেছে; জীবিত এবং বিগত অনেক আলেমের মুখ থেকেও তা শুনেছি। আর হ্যাঁ, পাকিস্তানি বর্তমান উরদু পত্রিকাও তো তাই বলে। অন্তত ১৬ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চ তা পড়ে দেখতে পারেন। যেই সত্য নিজে জেনে-শুনে-পড়ে জানতে পারি, তা ত্যাগ করবো কোন বিবেকের তাড়নায়?
৪- অপরাধী অপরাধীই। তার পক্ষে কোনো সাফাই হয় না। বিচারের মানদণ্ড নিয়ে সংশয় থাকতেই পারে। পৃথিবীর কোন বিবাদী/ অভযুক্ত বিনা প্রশ্নে আদালত মেনে নিয়েছে?
৫- আওয়ামী লীগ-ছাত্র লীগ অপরাধ করলো বলে একাত্তরের অপরাধ জায়েজ হয়ে গেল? এগুলো হল নিজের অপরাধ ঢাকার নানা ছলছুতো। এগুলোর দিন শেষ।
৬- এই সময়ে এমন কাঁচা জ্ঞান দিতে আপনার এতো উৎসুক তৈরি হল কেন ভাইজান? অখণ্ডতার পক্ষে থাকা আর সামরিক জান্তাকে নিপীড়নে সহায়তা করা এক জিনিশ নয়। দুটোকে গুলিয়ে ফেলে সবার চোখে ধুলো দেওয়া সহজ নয়। ধর্ম মানে অন্ধতা নয়, ধর্ম মানে নিজের বিবেককে বন্ধক দেওয়া নয়। ভাবুন, বিবেককে জাগ্রত করুন।
আমিন।
স্বাধীনতার পর দালাল আইনে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং মামলা হয়েছিল সেখানে বর্তমান ক্যাঙারু ট্রাইবুনালে বিচারাধীন কারো নাম ছিল না। ৪৩ বছর ধরে কোন থানায় বা আদালতে যাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ হয় নি, হঠাৎ করে তাঁদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যে রাজনৈতিক স্টান্টবাজি তা কিশোর বালক বুঝলেও আপনার মত ধর্মের লেবাস পরে থাকা আওয়ামী দালালের পক্ষে বুঝা সম্ভব নয়। ফরিদ উদ্দীন মাসউদ এর মত আবদুল্লাহ ইবনে উবাই বাংলাদেশে একজন নয়, আপনার মত হাজার হাজার আছে। এ অন্ধরা লেবাস পড়ে ধর্মের যত ক্ষতি করে, নাস্তিকদের দ্বারাও অতটা ক্ষতি হয় না।
১- ভূতের চোখে যেমন শর্ষে ভাসে, আপনার চোখেও তেমন রাম-বাম ভাসে। আপনাকে কীভাবে অভয় দেওয়া যায়, এই ভাবার সময় আমার হলে ভাল হত। আমি বলছিঃ "আমার চারপাশে জামায়াত-শিবিরের লোকজনের সংখ্যা যা আছে, বয়োবৃদ্ধরা তাদের অন্যতম, যারা একাত্তর নিজ চক্ষে অবলোকন করেছেন, তাদের সাক্ষ হল, পাকিস্তানিরা, এদের সহযোগীরা মানুষকে খুন-ধর্ষণ করেছে; জীবিত এবং বিগত অনেক আলেমের মুখ থেকেও তা শুনেছি। আর হ্যাঁ, পাকিস্তানি বর্তমান উরদু পত্রিকাও তো তাই বলে। অন্তত ১৬ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চ তা পড়ে দেখতে পারেন।" আপনি এগুলোও বমি করে দিচ্ছেন। তাহলে কি গ্রামের প্রবাদঃ "কুত্তার পেটে ঘি-ভাত হজম হয় না" একমাত্র সত্য!
২- না ভাই, রাম-বামকে আমি যেমন মূল্য দিই না, তেমনই গোলাম-বান্দিকেও না। মাসুদ-হাসুদের কথা তো দূর কি বাত। আর ইনানি-বিনানি, প্যানপ্যানানি ভাল লাগে না। এগুলো একমাত্র নাবালগদের মানায়। যা ভাল লাগে, বুঝতে পারি, আমি তাই বলি ও বলছি। কাউকে বাধ্য করছি না।
ধন্যবাদ।
ফরিদ উদ্দীন মাসউদরা পারে নি, আপনিও পারলেন না।
১- আমি তো বৃত্তের বাইরে থেকে বলছি, তাই আমার প্রতি এই সব শব্দ ব্যবহার খুব বেশি বড় বলে মনে হয় না। যখন জামায়াতের পেছনের ইতিহাসের দিকে তাকাই, তখন দেখতে পাই বৃত্তের ভেতর থেকে যারা প্রশ্ন তুলেছেন, তাদেরও তো নানা উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। ড- ইসরার আহমদ তো ভিন গ্রহের কেউ ছিলেন না। সাহসী প্রশ্ন তোলার পর কী হয়েছিল তার পরিণতি? পৃথিবীর কোনো গালি কি বাদ ছিল, যা তার উপর প্রয়োগ করা হয় নি? এই রকম আরো অনেক নাম তোলা যায়!
২- হ্যাঁ ভাই, অন্ধের হাতি দর্শন সেই এক চেষ্টা বটে। সূর্যের আলো দেখলে চামচিকারা যেভাবে চোখ লোকায়, কারণ সূর্য তার অসহ্য। গোলাম-বান্দিদের মতো আমার আবার তেমন প্রবণতা নেই। আমি পড়ি এবং পড়েছি, এমন কি 'বড়ে গোলাম'-এর লেখা 'জীবনে যে দেখলাম'ও। সাজ্জাদ-তাজাম্মুলও বাদ নেই। পাকিস্তানের সিদ্দিক সালিক-এর Witness to surrender পড়েছিলাম অনেক আগে। এর উর্দু সংস্করণের একটি জবাব লেখা হয় 'হামারি শিকাস্ত কি কাহানি' নামে, যা সম্প্রতি পড়া হল। প্রথমটিতে আপনার দেবতা পাকিস্তানি সেই সেনা অফিসারদের কুকীর্তিগুলো তুলে ধরা হয়েছে, দ্বিতীয়টিতে আপনার অপর দেবতা তৎকালীন পাকিস্তানি রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্র উন্মোচন করা হয়েছে। এগুলো পড়েই হয়তো এদের পায়ে আপনি এভাবে কপাল ঠুকছেন! ভাল, খুব ভাল! একেই বলে বিবেক, একেই বলে ধর্ম, আর একেই বলে (তথাকথিত) ইসলাম!
১- আমি তো জানার জন্যই আপনার দ্বারস্থ হয়েছি। আপনার উপদেশের দীর্ঘদিন আগে থেকেই পাকিস্তানের উর্দু পত্রিকা পড়ে একাত্তর বিষয়ে সত্য জানার চেষ্টা করছি। এখনো ২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বরে নেট খুলে তাদের মতামতগুলো পড়ার চেষ্টা করি।
২- সেখান থেকে যে সত্যগুলো জানতে পারি, সেই প্রেক্ষিতেই কথা বলি। আমার চোখে কোনো ঠুলি পরা নেই।
৩- আর হ্যাঁ ভাই, আমি ইস্লামের পক্ষেই বলি,যে ইসলাম কোনোভাবেই খুন-ধর্ষণ, জুলুম-নিপীড়নকে সমর্থন করে নাঃ ধর্মাচারী এবং বামাচারী কারো নিপীড়নকেই না, তাতে শাস্ত্রের যত আবরণই প্রানো হোক না কেন।
ধন্যবাদ।
রবি ঠাকুরের একটি কথা আছেঃ
তোমরা সবাই বলো আমায় কথা বলতে সহজে/
সহজ কথা যায় না বলা সহজে।।
ধন্যবাদ।
ফরিদ উদ্দীন মাসউদরা পারে নি, আপনিও পারলেন না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন