আল-কায়েদার একটি ছবি ও ফেসবুক-বিতর্ক

লিখেছেন লিখেছেন রওশন জমির ৩১ মার্চ, ২০১৪, ০৭:৫১:০৫ সন্ধ্যা



শত্রুপক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইয়েমেনের আল-কায়েদা একজন ব্যক্তিকে হত্যা করে। পশ্চিমা মিডিয়ায় এই ছবিটি মুণ্ডুহীন হিসাবে প্রকাশ পায়। কিন্তু বাংলা ভাষামাধ্যমের একটি ফেসবুক পেইজে এই ছবিটি ভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। এতে ধড়টা মুণ্ডুহীন নয়। তখনই এতে নজর পড়ে। এর মন্তব্যগুলোর প্রতিও মনোযোগ নিবদ্ধ হয়। মন্তব্যসহ ছবিটি ত্রিশেরও অধিক লোক শেয়ার করে, আড়াইশোর মতো লোক তা লাইক দেয়। আর মন্তব্যের সংখ্যা বিশের কাছাকাছি। সকল মন্তব্যই সম্মতিমূলক বা জেহাদি বাহবা নির্ভর। কিন্তু একটি মন্তব্য একটু ভিন্ন রকমের বা সংশয়পরায়ণ। কৌতূহল তখন আরো বেড়ে যায়। এই সংশয়-প্রকাশ, এডমিন এবং তার সমর্থকের পক্ষ থেকে তা নিরসনের চেষ্টাটা বেশ উপাদেয়। এখানে মূল এডমিনকে Admin হিসাবে, সমর্থককে Suporter হিসাবে এবং সংশয় প্রকাশকারীকে Follower হিসাবে উপস্থাপন করে সেই বিতর্ক বা আলোচনাটুকু হুবহু তুলে ধরা হল, সেই সঙ্গে ছবিটিও। উদ্দেশ্য, হয়ত এখানে আরো বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা জমে উঠতে পারে; শিক্ষণীয় আরো অনেক কিছুই সামনে আসতে পারে।

Admin:

ইয়েমেনঃ

গতকাল আমেরিকার ড্রোন হামলার জন্য গুপ্তচরি করায় ইয়েমেনের হাদরামাওত এলাকার ক্ষুব্দ জনতা একজন বেঈমান দালাল গুপ্তচরকে গুলি করে হত্যা করার পর এভাবে ক্রুশবিদ্ধ করে।

Follower: এই সব খবরের সময় সূত্র উল্লেখ করলে ভাল হয়। আপাতত এর সূত্রটুকু বলবেন?

Admin: https://www.facebook.com/DawlaIslamiyyaMainPage/posts/1490900417804112?stream_ref=9

Follower: ধন্যবাদ। প্রথমত, তা পেশাদারি কোনো সংবাদের অংশ নয়। উপরন্তু যে পেইজ থেকে তা শেয়ার করা, তা আল্লাহ তায়ালার শাসন কায়েমের চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের এ কাজ কতটা আল্লাহর নির্দেশনা-সমর্থিত?

Admin: ইয়েমেনে মার্কিন ড্রোন হামলায় হাজার হাজার নারী শিশু নিহত হচ্ছে। মুজাহিদিনরা স্পষ্টই বলে দিয়েছেন যে, যারা এই ড্রোন হামলা করছে, এবং যারা তাঁদেরকে যেকোনো প্রকারে সাহায্য করবে তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এটা জানার পর যদি কেউ সেখানে আমেরিকাকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করে সে কি আমেরিকান সৈন্যদের মতোই মুজাহিদিনদের সাথে যুদ্ধ করল না? আর যুদ্ধ ক্ষেত্রে এমন অপরাধিদের কি শাস্থি তা তাদের শরিয়া কমিটি অবশ্যই অনেক ভালো জানেন।

জাযাকাল্লাহ।

Follower: ভাইজানের মন্তব্যের শেষ বাক্যটি অসহিষ্ণুতার লক্ষণ। তবুও আমার জানার আগ্রহ যেহেতু আছে, তাই জানতে চাচ্ছি। (১) ঘটনাটি চেচেন মুজাহিদিন কর্তৃক একটি স্কুলে শিশু ও নারীদের জিম্মি করার সময়কার। ঘটনার আকষ্মিকতায় আমার অবস্থা তখন অনির্বচনীয়। তখন এক ছোট ভাই আমাকে প্রশ্ন করেন, ইসলামে যেখানে নারী ও শিশুকে যুদ্ধের আওতার বাইরে রেখেছে, সেখানে মুজাহিদিনদের এই কাজ কতটা যৌক্তিক? সঙ্গে সঙ্গে আমার দৃষ্টি খুলে যায়। হ্যাঁ, তাই তো! এখানেই হল ইসলামের মহত্ত্ব!! সেই সব মুজাহিদিনদেরও কিন্তু এ বিষয়ে আমার চেয়ে বেশি জানা ছিল। (২) একাত্তরেও শরিয়া কমিটি ছিল। ধর্ম নয়, তাদের কৃত ধর্মের ব্যাখ্যা তাদের বিপথগামী করেছিল। তাই শরিয়া কমিটির দোহাই দেবার পথ খুব একটা খোলা নেই। অন্তত জানতে, বুঝতে চায়, এমন কারো কাছে। (৩) যারা মুজাহিদিনদের কথার খেলাফ করছে, মুজাহিদিনদের বিরোধিতা করছে, তাদেরও তো যুক্তি থাকতে পারে। তাদের পক্ষেও তো ইসলামের ব্যাখ্যা থাকতে পারে? তাহলে? নাকি মুজাহিদিনরা-ই ইয়েমেনের ইসলামের একমাত্র ঠিকাদার?

Suporter: @ follower (১) এটা কোন ঘটনা, একটু রেফারেন্স দিবেন ? উল্লেখিত ছবির সাথে তো এর কোন মিল পাচ্ছি না । তবে হ্যাঁ, ইসলামে নারী ও শিশুদেরকে ১০০% যুদ্ধের আওতার বাইরে রাখেনি । কিছু বিশেষে পরিস্থিতিতে বিশেষ সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন পড়ে । ব্যাপারটা এত সাদা-কালো ভাবার কোন কারণ নেই । যারা যুদ্ধের ময়দান থেকে যোজন যোজন দূরে তারা সম্ভবত বইয়ের পাতা উল্টিয়ে ব্যাপারটা বুঝতে পারবে না ।

(২) একাত্তরে শরিয়া কমিটিকে একটি মুসলিম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল । এখানে শরিয়া কমিটি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ivading kafir army এর সহযোগির ব্যাপারে, যে স্পষ্টতই দেশদ্রোহী । এখানে একাত্তরের শরিয়া কমিটির সাথে এটার কোন সামঞ্জস্য কোন অ্যাঙ্গেল থেকে দেখছি না । আপনি দেখে থাকলে একটু বুঝিয়ে বলুন ।

(৩) হুমম, এখন আপনি কি সাজেস্ট করছেন ? মুজাহিদিনদের বিরোধী (যারা ড্রোন হামলায় সহায়তা করছে এবং নিরীহ লোক হত্যায় সহযোগিতা করছে)দের সাথে কেমন আচরণ করা উচিৎ ? নিরীহ জনগন হত্যায় যারা actively participate করছে তাদের সাথে কেমন আচরন করা উচিৎ ? ইসলামের কোন version টা, কোন যুক্তিটা এটা সাপোর্ট করে বুঝতে পারছি না । বুঝিয়ে বলবেন? অসহিষ্ণুতা নয়, জানতে চাইছি । vague hypothetical accusation করে তো কোন লাভ নেই । স্পেসিফিক "ইসলামিক ব্যাখ্যাটা" বলুন ।

Follower : @Suporter

(১) প্রথম দুটি ঘটনার নিরিখে আমার বক্তব্য হল, তথাকথিত শরিয়া কমিটিও ভুল করতে পারে। অবশ্য যদি শরিয়া কমিটি বলে কিছু থেকে থাকে। যেমনটি ঘটেছে ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চেচেন মুজাহিদদের বেলায়। আর একাত্তরে এদেশের আলেম-ওলামা (মুসলিম দেশরক্ষার মুজাহিদ কমিটি)-এর সিদ্ধান্তের বেলায়। তাই দূরের এবং কাছের যে কোনো ঘটনার সময়ে নিজের বুদ্ধি-বিবেক ও ইমানি সচেতনতাকে এড়িয়ে অন্ধভাবে তা অনুসরণ ও বরণ করায় আমার সায় নেই।

(২) ইয়েমেনের মুজাহিদিন কর্তৃক এই কাজটিকে ইসলামের আলোকে সিদ্ধ বলার কোনো প্রামাণিক ভিত্তি আমার চোখে পড়ে নি। এজন্যই এনিয়ে প্রশ্ন তোলা। উদ্দেশ্য, পথের সন্ধান। পথের সন্ধানের জন্য তো আমার কিছু বলা লাগে না। রাসুলের সীরাতই যথেষ্ট। কোন জঘন্য ঘটনায় শাস্তি হিসাবে রাসুল শ্ত্রুর স্পাইকে শুলিতে চড়িয়ে কতল করে মানুষকে দেখানোর জন্য রাস্তায় ঝুলিয়ে রেখেছেন, আমার জানা নেই। এ জন্যই বলেছি, কোনো প্রামাণিক ভিত্তি চোখে পড়ে নি।

(৩) আপনার কথায়ও এক ধরণের উন্নাসিকতার গন্ধ আছে। তাই বলছেন, 'যারা যুদ্ধের ময়দান থেকে যোজন যোজন দূরে তারা সম্ভবত বইয়ের পাতা উল্টিয়ে ব্যাপারটা বুঝতে পারবে না । ' হতে পারে! কারণ, তলোয়ার হাতে নিয়েই তো আয়েম্মায়ে আরবায়া (প্রসিদ্ধ চার ইমাম) যুদ্ধ-জিহাদের মাসয়ালা লিখেছেন। জিহাদের যত মাসয়ালা সব তো যুদ্ধের ময়দানেই, তলোয়ার হাতে নিয়েই রচিত হয়েছে! বইয়ের পাতায় কোনো সত্য নেই, সকল সত্য হল তলোয়ারে। বলিহারি, আপনার এই ভাবনাকে।

ধন্যবাদ।

Suporter: @follower

(১) //তাই দূরের এবং কাছের যে কোনো ঘটনার সময়ে নিজের বুদ্ধি-বিবেক ও ইমানি সচেতনতাকে এড়িয়ে অন্ধভাবে তা অনুসরণ ও বরণ করায় আমার সায় নেই// আপনার হাতে তিনটি রাস্তা আছে; এক, মুজাহিদদের ব্যাপারে মুজাহিদ মিডিয়ার খবর বিশ্বাস করুন । দুই, বিশ্বাস করতে না পারলে মুখ বন্ধ রাখুন । যে ব্যাপারে ফার্স্টহ্যান্ড জ্ঞান নেই, সে ব্যাপারে নিজের মুসলিম ভাইদের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলবেন না । তিন, নিজে ইয়েমেনে গিয়ে ফার্স্টহ্যান্ড যাচাই করুন । ওয়াল্লাহি, মুজাহিদরা কোন পরিস্থিতে কি করছে তা সম্পূর্ণরূপে অবগত না হয়ে তাদের বিরুদ্ধে বলার অধিকার আপনার নেই ।

(২) //কোনো প্রামাণিক ভিত্তি চোখে পড়ে নি// সূরা মায়িদাহ'র ৩৩ নং আয়াত দেখুন তো । কিছু পাওয়া গেল ? দেখুনতো সহীহ বুখারী, কিতাবুল জিহাদ হাদীস নং ২৬১ । কি ? প্রামাণিক ভিত্তি চোখে পড়ল ?

(৩) শ্লেষাত্মক মন্তব্য ঝেড়ে subject change করলেন কেন ? আপনি বলেছেন, //যারা মুজাহিদিনদের কথার খেলাফ করছে, মুজাহিদিনদের বিরোধিতা করছে, তাদেরও তো যুক্তি থাকতে পারে। তাদের পক্ষেও তো ইসলামের ব্যাখ্যা থাকতে পারে?// আমি বললাম, //নিরীহ জনগন হত্যায় যারা actively participate করছে তাদের সাথে কেমন আচরন করা উচিৎ ? ইসলামের কোন version টা, কোন যুক্তিটা এটা সাপোর্ট করে বুঝতে পারছি না । বুঝিয়ে বলবেন ? অসহিষ্ণুতা নয়, জানতে চাইছি । vague hypothetical accusation করে তো কোন লাভ নেই । স্পেসিফিক "ইসলামিক ব্যাখ্যাটা" বলুন ।// আপনি কোন ব্যাখ্যায় না গিয়ে আয়িম্মায়ে আরবায়াতে চলে গেলেন । আগে স্পাইয়ের পক্ষের ব্যাখ্যাটা দিন অথবা মেনে নিন এ ব্যাপারে স্পাইয়ের ব্যাপারে defend করার কোন সুযোগ নেই ।

Follower: @ Suporter

(১) আপনার নির্দেশিত আয়াতটি পেয়েছি। হাদিসটি পাই নি। আমার যে কজন পরিচিত আছে, তাদের জিজ্ঞেস করেছি। কেউ আপনার প্রদত্ত নাম্বার অনুসারে বের করে দিতে পারে নি। আর হ্যাঁ, আমার কাছে মূলত দার আল-কুতুব আল-ইলমিয়া প্রকাশিত বুখারির কপি আছে। তাতেও সে অনুসারে নেই। হয়ত আমার জ্ঞান কম। তাই খুঁজে পাওয়া ভার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ভাইজান, সুরা মায়েদার এ আয়াত থেকে কীভাবে এই লোকটিকে নৃশংসভাবে হত্যা করার উপায় বের করলেন, বুঝতে পারলাম না। একটু বুঝিয়ে দিলে ভাল হয়।

(২) আমি মুজাহিদিনদের ব্যাপারে অন্য কোনো জায়গা থেকে এ সংবাদ নিই নি। এই পেইজ থেকেই পড়েছি। এই হত্যার ব্যাপারটি বিশ্বাসও করেছি। সেই সূত্রেই মন্তব্যের সূচনা। এই মন্তব্যটির মূল কথা ইসলামি বিধানের দিকটি স্পষ্ট করা। এটা তো ইমানি দায়িত্ব! ইমানি দায়িত্ব পালন করলে তো তা ইসলামেরই পক্ষে যায়। হ্যাঁ, মুজাহিদিনদের পক্ষে যায় কিনা বা ইসলামের পক্ষে গেলে মুজাহিদিনরা ক্ষুব্ধ হবেন কি-না, সে আমি নির্ধারণ করার কে? তবে বিশ্বাস, যদি ইমানের জন্যই এই যুদ্ধ-জিহাদ হয়ে থাকে, কেউ ক্ষুব্ধ হবেন না। রাসুল সা- এবং খুলাফায়ে রাশেদিনের কোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে প্রশ্ন তুললেও তারা ক্ষুব্ধ হতেন বলে আমার জানা নেই। আপনারা যারা খবর প্রচার করেন, প্রশ্নযোগ্য বিষয়গুলোতে নির্ধারিত সেই পেইজের মাধ্যমে তাদের শরয়ি অবস্থান জেনে নিয়েই তো প্রচার করতে পারেন। তা না করে আইটাই করে প্রশ্নের দরোজা বন্ধ করতে এতো উদ্গ্রিব কেন?

(৩) শ্লেষাত্মক মন্তব্য আপনার কথার জের ধরেই হয়েছে। আর প্রশ্ন করেই করেই তো সত্যে উপনীত হতে হবে। আমার ইসলাম বোঝার এ প্রক্রিয়ায় আপনি হস্তক্ষেপ করার কে? এ অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে ভাল। না পারলে নীরব থাকবেন। কথা বলতে আপনাকে কেউ বাধ্য করে নি! তৃতীয়ত, verson বলতে আপনি কী বোঝাতে চাইছেন, ধৈর্য থাকলে বুঝিয়ে বলতে পারেন। আমি আমার মতামত, আমার বোঝার ধরণ ও প্রক্রিয়া যেমন আপনার উপর চাপিয়ে দিতে চাই না, আবার অন্ধভাবে আপনারটা মেনেও নিতে পারবো না। কারণ, // দূরের এবং কাছের যে কোনো ঘটনার সময়ে নিজের বুদ্ধি-বিবেক ও ইমানি সচেতনতাকে এড়িয়ে অন্ধভাবে তা অনুসরণ ও বরণ করায় আমার সায় নেই।//

ধন্যবাদ।

Suporter: @follower

(১) অনেক কথা বললেন কিন্তু মূল প্রশ্নটি এড়িয়ে গেলেন । // স্পেসিফিক "ইসলামিক ব্যাখ্যাটা" বলুন ।// - যেটা দ্বারা স্পাইকে কঠিন শাস্তি থেকে রেহাই দেয়া যেতে পারে । version মানে, যে কোন ইমামের, যে কোন আহলুস সুন্নাহ এর আলেমের বক্তব্য নিয়ে আসুন দেখি, যেখানে নিরীহ জনগণের হত্যার জন্য দায়ীকে কঠিন শাস্তি থেকে মওকুফের সুযোগ আছে ? // কিন্তু ভাইজান, সুরা মায়েদার এ আয়াত থেকে কীভাবে এই লোকটিকে নৃশংসভাবে হত্যা করার উপায় বের করলেন, বুঝতে পারলাম না।// - "...তাদের হত্যা করা হবে কিংবা শূলিবিদ্ধ করা হবে, অথবা বিপরীত দিক থেকে হাত-পা কেটে ফেলা হবে..." আয়াত কি স্পষ্ট নয় ?

(২) আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উক্‌ল নামক গোত্রের আট ব্যক্তির একটি দল নবী (সঃ) এর নিকট এল । মদীনার আবহাওয়া তারা উপযোগী মনে করেনি । তারা বলল, হে আল্লাহর রসূল (সHappy ! আমাদের জন্য জন্যে দুগ্ধবতী উটনীর ব্যবস্থা করুন । রসূলুল্লাহ (সঃ) বললেন, তোমরা বরং সাদাকার উটের পালের কাছে যাও । তারা তখন সেখানে গিয়ে সেগুলোর পেশাব ও দুধ পান করে সুস্থ ও মোটাতাজা হয়ে গেল । তারপর তারা উটের রাখালকে হত্যা করে উটের পাল হাঁকিয়ে নিয়ে গেল এবং মুসলমান হওয়ার পর তারা মুরতাদ হয়ে গেল । তখন জনৈক সংবাদদাতা নবী (সঃ) এর নিকট উপস্থিত হল । নবী (সঃ) অশ্বারোহীদের তাদের সন্ধানে পাঠালেন । তখন পর্যন্ত দিনের আলো পূর্ণতা লাভ করেনি । ইতোমধ্যেই তাদেরকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হল । রসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের হাত-পা কেটে ফেললেন । তারপর তাঁর নির্দেশে লৌহশলাকা উত্তপ্ত করে তাদের চোখে প্রবেশ করানো হয় এবং তাদেরকে প্রস্তরময় উত্তপ্ত ভূমিতে ফেলে রাখা হয় । তারা পানি চেয়েছিল । কিন্তু তাদেরকে পানি দেয়া হয়নি । অবশেষে তারা মারা যায় ।

(৩) ফাসাদ সৃষ্টিকারীদেরকে নৃশংসভাবে শাস্তি দেওয়ার দলীল উপস্থাপন করা হল ।

//যারা মুজাহিদিনদের কথার খেলাফ করছে, মুজাহিদিনদের বিরোধিতা করছে, তাদেরও তো যুক্তি থাকতে পারে। তাদের পক্ষেও তো ইসলামের ব্যাখ্যা থাকতে পারে?// আবার বলছি - "নিরীহ মুসলিম জনগন হত্যায় যারা কাফেরদের পক্ষ হয়ে" actively participate করছে তাদের সাথে কেমন আচরন করা উচিৎ ? - তাদের পক্ষের ইসলামের ব্যাখ্যাটা কি ?

Follower: @Suporter

(১) আপনার বর্ণিত আয়াত কোনো ভাবেই স্পাই বা গুপ্তচরদের ব্যাপারে যায় না। আর বর্ণিত বা উল্লিখিত সেই হাদিসও এই আয়াতেরই শানে নুজুল। এই হাদিসে বর্ণিত লোকগুলো সরাসরি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং চরম বিশবাসঘাতক রূপে! ইয়েমেন-এ শুলিবিদ্ধ লোকটির তেমন কোনো অপরাধের কথা পোস্টে উল্লেখ নেই। গুপ্তচর বৃত্তির বিষয়ে (কঠিন শাস্তি নির্ধারণে) সুরা আনফালের ২৭ আয়াতটিই ফকিহগণের বিশেষ আলোচ্য। দেখুন তো এখানে কোনো আলো খুঁজে পাওয়া যায় কি-না? এই সঙ্গে হাতিব বিন বালতায়ার হাদিসটিও সামনে রাখা যেতে পারে। শত্রুকে প্ররোচিত করে মুজাহিদ শিবিরে বিপর্যয় সৃষ্টির ঘটনা তো খোদ রাসুলের সময়েও ঘটেছে। তখন রাসুল সা- তাদের (উদাহরণত আব্দুল্লাহ বিন উবাই) ব্যাপারে কী কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? রাসুলের সময়েও এই রূপ ঘটনা ঘটার পর তিনি কঠিন কোনো শাস্তি-দান থেকে বিরত থাকলেও (এবং এমন কি স্থিরপ্রাজ্ঞ উমরের বলার পরেও,) আমরা তা করতে সিদ্ধহস্ত!

(২) তারপরও আপনার নির্দেশনা বা ব্যাখ্যা মতে এই আয়াতকে গুপ্তচরদের ব্যাপারে মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু আক্ষরিক ও বাহ্যিক নির্দেশই কি শেষ কথা? তাহলে খলিফা উমর কেন হাতে-নাতে ধরাপড়া চোরের হাত কাটেন নি, অথচ অন্য কোনো আয়াতে বা কোনো হাদিসে দুর্ভিক্ষের সময়ে হুকুম স্থগিত করার কথা বলা নেই; যুদ্ধের মাধ্যমে ইরাক বিজয়ের পর বিজিত ভূমিতে মুজাহিদিনদের জন্য নির্ধারিত ভাগ (গনিমত) দেওয়া হয় নি, অথচ কুরআনে এই গনিমতের কথা স্পষ্ট করে বলা আছে; জিনা-ব্যভিচারের একটি ঘটনায় নারী/ মেয়ের ক্ষেত্রে নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করেন নি, অথচ এই সব পরিস্থিতিতে মুক্তি দেবার কথা কোথাও বলা হয় নি! কেন, কী লক্ষ্য ছিল তখন? সেই লক্ষ্য কি রহিত বা এর দিন কি শেষ? হ্যাঁ, এখানেই বলা যায় উমরের verson-টা কি অগ্রাহ্য করার মতো?

(৩) ইয়েমেনটা এখন ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়েছে, ঠিক আফগানের মতোই। বরং ইয়েমেনে শিয়া-সুন্নির যে বিভেদ আছে, সে হিসাবে আফগান জটিলতামুক্ত। শুলিবিদ্ধ লোকটিও নির্ঘাত হাউসি কিংবা জায়দি সম্প্রদায়ের, যাদের প্রতি সুন্নি আল-কায়েদা বা সালাফিদের ঘৃণা ও বিদ্বেষের মাত্রাটা অপরিসীম। লোকটি সুন্নি-সমর্থিত হলেও এরূপ শাস্তি-প্রয়োগের কর্তৃত্ব বিষয়ে প্রথাগত ফিকহে দিক-নির্দেশনা আছে। এই সব বিধান (হুদুদ-তাজির) প্রয়োগ করার কর্তৃত্ব 'ভাত দেবার মুরোদ নেই, কিল দেবার গোঁসাই'দের হাতে ছেড়ে দেওয়া যায় না। এ মুহুর্তে সালাফি বা আল-কায়েদা তা করতে গেলে 'গাড়ির আগে ঘোড়া জুতে দেওয়া'র প্রশ্ন উঠবে। এতে আল-কায়েদা বা সালাফিদের তো অবশ্যই, নিটোল ধর্ম ইসলামেরও সুনামের হানি ঘটে, যেই আশঙ্কায় রাসুল নিজেও শাস্তি-প্রয়োগ থেকে বিরত ছিলেন!

(৪) আমারটা বলতে পারলাম আপনার সহিষ্ণু ভাব দেখার পরেই। এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ। দাওয়াতি কর্মে জবরদস্তি হিতে বিপরীত ফল দেয়। মহৎ কাজে ক্ষুদ্র মানুষেরও প্রশ্ন জাগতে পারে। রাসুল ও সাহাবাদের যুগেও প্রশ্ন উত্থাপণের রেওয়াজ ছিল, অভয় ছিল। অতিশয় অন্ধ জেহাদি আবেগ বা আত্মম্ভরিতার খোড়লে পা দিয়ে কারো মুখ বন্ধ করলে আখেরে কোনো লাভ হয় না। ইতিহাস তার সাক্ষী।

আল্লাহ তায়ালা আমাকে, আপনাকে, সকল মুসলিম উম্মাহকে নির্ভুলভাবে শরিয়ত বোঝার ও মানার তাওফিক দান করুন। আমিন।

বিষয়: আন্তর্জাতিক

১২৮২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

200993
৩১ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:৪০
নূর আল আমিন লিখেছেন : || জবাব নেই || খুব
সুন্দর
০১ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:২২
150816
রওশন জমির লিখেছেন :
ধন্যবাদ
201029
৩১ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:৩৫
শিশির ভেজা ভোর লিখেছেন : আল্লাহ তায়ালা আমাকে, আপনাকে, সকল মুসলিম উম্মাহকে নির্ভুলভাবে শরিয়ত বোঝার ও মানার তাওফিক দান করুন। আমিন।
০১ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:২৩
150817
রওশন জমির লিখেছেন :
আমিন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File