খালেদার অনভিপ্রেত বক্তব্য ও আমাদের প্রতিক্রিয়া
লিখেছেন লিখেছেন রওশন জমির ০১ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:৪৪:৩৭ দুপুর
২৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া ’গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় অংশ নিতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হয়ে উপস্থিত নিরাপত্তা কর্মীদেরকে লক্ষ করে অনভিপ্রেত কিছু কথা বলেছেন। তা নিয়ে ইতোমধ্যে কোনো কোনো সংবাদপত্রে সম্পাদকীয় পর্যন্ত বেরিয়েছে। সত্যি বটে, একজন বৃহৎ দলের নেতার মুখ থেকে এ ধরনের উচ্চারণ বেমানান। এ ধরনের বেমানান কথা বলার প্রবণতা অন্যদের থাকলেও এটা দাবি করার কোনো সুযোগ নেই যে, খালেদা জিয়া এ-বক্তব্যে নিজের মান ও অবস্থান বজায় রাখতে পেরেছেন।
এজন্য তিনি সর্বত্র নিন্দিত। বিশেষত ভার্চুয়াল জগতে খিস্তি-খেউড়ের বান ডেকে গেছে। এ ধরনের প্রতিক্রিয়াগুলো দেখতে মন্দ লাগে না। দেখে মনে হয়, তারা খালেদার এমন একটি স্খলনের অপেক্ষায়-ই ছিলেন। তবে ক্ষুব্ধ খালেদার বাণী ও বক্তব্য যেমন তার পরিচয় উন্মোচন করে, তেমনই যারা পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসাবে আরো নিচে নেমে বাহাদুরি জাহির করেন, ইতিহাসের অংশ হওয়ার চেষ্টা করেন, তাদের পরিচয়টাও কিন্তু ঢাকা থাকে না। হ্যাঁ, তখন কদর্য বাণী ও অপশব্দের উপস্থিতি চোখ-কান ও রুচিকে পীড়া দেয় ভীষণভাবে।
বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখনও যে সরকারি নিয়োগে অঞ্চলবিশেষ বেশি সুবিধা লাভ করে নি, তা নয়। এ ব্যারাম অনেক পুরনো, এর উপসর্গ অনেক গভীরে। তাই সেই সময়েও দলীয়, আঞ্চলিকতাদুষ্ট নিয়োগ হয়েছে। এটা নিন্দনীয়, অগ্রহণযোগ্য, এ কথা মানতেই হবে। কিন্তু পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসাবে বর্তমান আওয়ামী সরকারের আমলেও দলীয় ও আঞ্চলিকতাদুষ্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া আগের তুলনায় হাজার গুণে বেড়েছে, তা কিন্তু অস্বীকার করার জো নেই। অর্থাৎ এ-ধরনের তৎপরতায় কেউ কারো চেয়ে পিছিয়ে নেই।
এবারে সরকার, মানে আওয়ামী লীগ নিয়োগে যেমন অঞ্চলবিশেষকে প্রাধান্য দিয়েছে, দলকেও অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। বিশেষত পুলিশ বিভাগে যতটা সম্ভব নিজের লোক নিয়োগ দিয়েছে, ঠিক আগের মতো করেই বা তার চেয়ে বেশি। আর তাই পুরো ঢাকায় নিজেদের নিযুক্ত লোকদের দিয়ে পাহারা বসানো সম্ভব হচ্ছে। অথচ খরচটা সরকারের খাত থেকে যাচ্ছে! বাইরের (রাজনৈতিক ও আঞ্চলিকতার অর্থে) লোকেদের দিয়ে নিজেদের রক্ষা হয়-তো ততটা নিখুঁত হত না। তাই আওয়ামী লীগ সারাদেশে না হোক, অন্তত ঢাকায় নিজের উপস্থিতি সজীব ও দৃঢ় রাখেতে পেরেছে। এটা আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক এবং অবশ্যই স্বস্তির।
যদি বিপরীত চোখ দিয়ে দেখি অর্থাৎ বিএনপির চোখ দিয়ে বা সাধারণ নিরপেক্ষ নাগরিকের চোখ দিয়ে দেখি, তাহলে তো বলতেই হবে, এতে কেরদানি থাকলেও এটা অন্যায্য। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখনও দলীয় নিয়োগ ও আঞ্চলিকতার প্রবণতা দিয়ে একে তারা এমন বর্ম হিসাবে আবিষ্কার করতে পারে নি, যেমনটি পেরেছে আওয়ামী লীগ। তাই এ নিয়ে খালেদা যখন ক্ষুব্ধ হয়, তার দিক থেকে তা বৈপরীত্যপূর্ণ, স্ববিরোধী ও অসামঞ্জস্যশীল হলেও সামগ্রিকভাবে একে ঠেলে ফেলে দেওয়ার সুযোগ নেই। এ-নিয়ে আমরা বিষ্মিত হয়ে বলতে পারি যে, তিনি নিজে এসব প্রবণতায় অভ্যস্ত হয়ে এ-কথা বলেন কেন? কিন্তু সার্বিকভাবে এর বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে পারি না।
যদি এই সব সরকারি নিয়োগ ও তৎপরতাকে নাগরিকতার সাধারণ অবস্থান থেকে বিবেচনা করা হয়, তাহলে এ নিয়ে তুষ্ট থাকার কোনো উপায়ই নেই। সরকারি চাকরিতে, তা পুলিশ বা অন্য যে-কোনো বিভাগেই হোক, নিয়োগপ্রাপ্তি নাগরিকরদের সাধারণ অধিকার। সেই অধিকার খর্ব করে গর্বভরা আচরণ করলে সাধারণ নাগরিক যদি সয়ে নেন, সে তার অক্ষমতা। তা ছাড়া নিজের নিয়োগ দেওয়া লোকদের দিয়ে অনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারেও যদি বিবেক না আটকায়, সে দোষ তো আর খালেদার নয়। হ্যাঁ, খালেদা এখানে সেই দোষ ও অন্যায়ের জন্যই ক্ষুব্ধতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। হয়ত এর প্রকাশ ও মাত্রাটা অপ্রীতিকর।
তাই যারা খালেদার এই বক্তব্যের নিন্দা করছেন, এতে যারা অস্বস্তিবোধ করছেন, তাদের উচিত উভয় দিকের প্রতি সমানভাবে নজর দেওয়া এবং মূল উপসর্গকে চিহ্নিত করা। আর তখনই কোনো সমাধান পেশ করা বা নিন্দামন্দ করার যৌক্তিক পরিসর তৈরি হয়। মূল উপসর্গের প্রতিকার না করে রোগ সারানোর চেষ্টায় লোকদেখানো ভড়ং থাকতে পারে, বিবেকী কৃতিত্ব নেই। এ ধরনের হাতুড়ে চিকিৎসককে অপচিকিৎসক বলাটাই শ্রেয়।
জয় বংলা
বিষয়: রাজনীতি
১৬০৬ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ব্যক্তিগত লোভ(অভাব) কে সামগ্রিক লোভ এর প্রোপর্শনে নিয়ে এবং ব্যক্তিগত লাভকে সামগ্রিক লাভ এর প্রোপর্শনে নিয়ে দেখা যায় অত্যাচার হচ্ছে এক অঙ্গ দ্বারা অন্যটা (দেশের বিভিন্ন বিভাগকে অংগ ধরে)। প্রতিনিয়ত নিরূপিত লাভকে যথাযথভাবে বন্টন না করা পর্যন্ত এটা কিছুতেই বন্ধ করা সম্ভব নয়। এটাই – প্রাকৃতিক নিয়ম কিংবা আল্লাহর নিয়ম – যাই বলেন না কেন, এটাই হয়।
আদম-স্মীথ (এডাম-স্মীথ) সুন্দর ভাবে বলে গেছেন –
দেশের সমগ্র লোভের প্রতিফলন = সমগ্র বিনিয়োজিত (ইনভেষ্টেড) শ্রম (লেবার) – কিছু পাবার আকাঙ্খায়, এটাই সমগ্র বিনিয়োজিত সম্পদ
আর দেশের সমগ্র লাভ = বিনিয়োজিত শ্রমের সমগ্র উপার্জন
এটাকে সুষমভাবে বন্টন করা কি কঠিন কিছু? ক্লাস-সিক্সের ষ্টুডেন্ট যারা ইউনিটিং মেথড (ঐকিক নিয়ম) জানে – তারাও পারবে এটা। আমরাই করতে দেই না সেটা – আমরা মূল্য নিয়ামক, সিষ্টেম নিয়ামক, বন্টন নিয়ামক এর মাধ্যমে – অসমতা রেখে দিচ্ছি ইচ্ছাকৃতভাবেই ব্যক্তিগত স্বার্থে – এই লোভ দিয়ে অরাজকতা, দমন-পীড়ন এবং আনন্দিত চিপড়ে বের করা লাভের আনন্দ ছাড়া আর কি আশা করবো? খুব সহজ হিসাবে – আমরা কঠিনের ধুয়া তুলে – চিপড়ে বের করার আনন্দ লাভ করি আর।
কারা এর জন্য দায়ী সেটাই একইভাবে (ইউনিট একাউন্ট) বের করতে পারবে ক্লাস-সিক্সের ষ্টুডেন্ট-ই; শাসনতো করা উচিৎ ছিল এদের-ই যারা এর জন্য দায়ী, তা না করে শাসন করি আমরা অত্যাচারিতদেরই – এভাবেই চলছে, মনে হয় চলবেও – কতক্ষন? তার উত্তর খুব সহজ – যতক্ষন ক্ষমতা থাকবে।
তত্ত্বকথার আবরণে আপনার ইলাস্ট্রেশনটা ভালই হল। ধন্যবাদ।
অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য নির্বুদ্ধিতার পরিচয় বহন করে।
শুধু গোপালগঞ্জি কেন,অপরাধ করলে যে কোনো এলাকার হোক, তার বিচার হওয়া উচিত।
ছাত্র ফ্লোর পাইলে তো!
"জয় বাংলা" শ্লোগানটা অবশ্য শুরুতে দিলে ট্রিটমেন্টের এফেক্ট কিছুটা হইলেও কইমা যাইতো।
বাই দা ওয়ে, বাড়ি কই? গোপালি নাকি?
গোপালি না হলেও 'ভুপালি' নয়। এটা হলফ করে বলা যায়।
ধন্যবাদ।
ছবিটি অপ্রাসঙ্গিক।
সবুরে মেওয়া ফলে, এটি স্মরণ রাখা ও সেই অনুসারে কাজ করাটা-ই বুদ্ধিমানের কাজ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন