রানা প্লাজা-ট্রাজেডি এবং জাকাত

লিখেছেন লিখেছেন রওশন জমির ২৮ জুলাই, ২০১৩, ০৫:১৩:২৮ বিকাল



এত দুঃখ কোথায় রাখি? এটি কোন কবিতার লাইন এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না। কিন্তু ঘটনাটি ঠিক একই রকমের। যতদূর জানতে পারি, রানা প্লাজায় আহত-নিহত পরিবারের সদস্যরা সরকারের যৎ সামান্য সাহায্যও পায় নি। সরকার একে পাস কাটাতে পেরেছে, এটাই তার স্বস্তি। কিন্তু আমাদের অস্বস্তিটা হল, আমরা কোন দিকে যাবো?

ঘটনার উত্তপ্ত অবস্থায় অনেক সাহায্য সাভারের চারপাশে ঘুরে বেড়িয়েছে। সবাই হাত বাড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু বাঙালি তো হুজুগে। যতদিন হুজুগ ছিল, মিডিয়ার কভারেজ ছিল, ততদিন সবার মনই এজন্য উছলে উঠেছিল। এখন তো সবই নীরব। যারা দুর্ঘটনার শিকার, শুধু তারা এবং তাদের পরিবার ভবিষ্যতের গাঢ় অন্ধকারকে বুকে করে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। আর হ্যাঁ, ঘটনাচক্রে বা আমাদের চ্যানেলের মাধ্যমে একটি ডাটা এসে পোঁছাচ্ছে ক্ষীতগ্রস্তদের তালিকাসহ। আর ভিতরে ভিতরে কেঁপে উঠছি, কী করব আমরা? কী করার আছে এ মুহূর্তে?

"কারো চিকিৎসা সমাপ্ত হয় নি, কেউ পঙ্গু হয়ে বাসায় বসে আছে। অন্যের গলগ্রহ হয়ে পেট চালানো কারো কারো জন্য সম্ভব হলেও বাড়ির মালিক তাড়িয়ে দিচ্ছে ভাড়া বাকি পড়ার দরুণ। পিতা-মাতাহীন শিশুগুলো আর কাঁদে না, তবে ক্ষিদের তাড়নায় থালা-বাসন নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছে। যেই শিশুটি স্কুলমুখো ছিল সে এখন টোকাই...।"

রমজানে আমরাও কিছু ফান্ড সংগ্রহ করি। বলে নেওয়া ভাল, সংগৃহীত পুরোটা ফান্ডই দরিদ্রদের শিক্ষা খাতে ব্যয় হয় অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। এবং তা এতোই অপ্রতুল যে, শিক্ষার্থীদের চাহিদার নিরিখে সারাটা বছর সংকোচিত হয়ে থাকতে হয়। এবারে এই টানাটানির মাঝেই এক সদস্যের প্রশ্ন, রানা প্লাজায় দুর্ঘটনার শিকার মানুষদের উপস্থিত সাহায্য করার চেয়ে দরিদ্রদের শিক্ষা-কার্যক্রম অব্যাহত রাখা বেশি দরকারি কি-না? যেখানে মানুষ খেতেই পায় না, স্বাভাবিক জীবনের এবং চিকিৎসার নিশ্চয়তা পায় না, সেখানে শিক্ষার চিন্তা বিলাসিতা নয় কি? প্রশ্নের পর কোনো উত্তর উচ্চারিত হয় নি, মাথায় আসে না। তবে কাঁদলাম একান্ত নীরবে এবং প্রশ্নের কারণে যে জ্বলন তৈরি হল, তা কীভাবে নিভানো যায়, তা-ই এখন খুঁজছি। প্রশ্নকর্তা সদস্য একটা প্রস্তাব দিল, জাকাতের টাকাটা নির্ধারিত খাতে থাকুক, কিন্তু এতগুলো মানুষকে দুর্দশায় রেখে আমাদের বর্ণিল ঈদের আয়োজন অযৌক্তিক এবং অবশ্যই দুঃখজনক। ও আরো কিছু মন্তব্য করেছে, যা একান্তই ওর ও আমাদের গণ্ডিবদ্ধ ধর্মীয় তত্ত্বকথা। সে-গুলো এখানে না হলেও চলে। কিন্তু ওর প্রস্তাব হল আমরা যারা এসব কর্মের সঙ্গে জড়িত, তাদের এবারের ঈদে একমাত্র দরকারি কাপড় কিনে বাকি টাকাটা সেই সব হতাহত ভাগ্যপীড়িত মানুষজনদের দিয়ে দেওয়া।

জানা মতে, গেল কয় বছর ধরে সার্কেলের প্রায় অর্ধেক সদস্যই ঈদে কোনো জামা-কাপড় নিজের জন্য কেনে না। এ-খাতে যে বাজেট থাকে, এর সবটাই প্রতি বছর গরিবদের মাঝেই বিতরণ করা হয়। কেউ কেউ অবশ্য এটা বই-কেনায় খরচ করে। এবার তাহলে ভাই-বন্ধু, আত্মীয় স্বজনকেও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ঈদের উপহার-আদান-প্রদানে একটু হ্রাস টানতে হবে।

প্রিয় পাঠক, আপনিও আপনার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসুন। আপনার জাকাতের একটা অংশ নিজ হাতে ক্ষতিগ্রস্ত সেই সব পরিবারের কাছে পৌঁছে দিন। যদি মনটা তৈরি থাকে, নিজের খরচ থেকেও খানিকটা তাদের দিন। এবারকার ঈদে ভাল কাপড়, নতুন কাপড় নাই-বা পরলেন! একটি বিপন্ন মানুষের মুখের হাসি হাজার নতুন ও দামি কাপড়ের চেয়েও শ্রেষ্ঠ! প্লিজ পাঠক... উদ্যোগী হোন...

বিষয়: বিবিধ

১৩৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File