হেফাজতের সরল সমীকরণ
লিখেছেন লিখেছেন রওশন জমির ২৮ জুন, ২০১৩, ০৯:০৮:৩৯ রাত
পাঁচই মের ঢাকা অবরোধের পর শাপলা চত্বরে জমায়েত হেফাজতকর্মীরা যখন রাতের অন্ধকারে অভাবিতভাবে বিতাড়িত হয়, তখন তারা এর পক্ষে নানা সমীকরণনির্ভর ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে থাকে। এর কোনোটা ইতিবাচক, কোনোটা বা নেতিবাচক। তবে ইতিহাস ও বাস্তবতার নিরিখে যদি এর বিশ্লেষণ হত, তাহলে কল্পনার ফানুসে ভর করে থাকতে হত না, বরং বাস্তবতার কঠিন ও এবড়ো-খেবড়ো জমিনে পা রাখার সুযোগ তৈরি হত। আর এ থেকেই সামনে এগিয়ে চলার পথ খুঁজে পতে তারা। কিন্তু অবাস্তবতার ঘেরাটোপে তারা যেভাবে আটকা পড়েছে, এর থেকে নিষ্কৃতির সত্যিই কোনো উপায় নেই। সে উপায় তৈরিও হবে না, মনে হয়।
তাদের প্রথম সমীকরণ হল, হেফাজতের প্রথম কর্মসূচি তথা লংমার্চ হল বদর যুদ্ধের সমতুল্য। এ যুদ্ধে ইসলামের প্রথম যুগের মানুষজন বিজয়ী হয়েছিলেন। হেফাজতের দ্বিতীয় কর্মসূচি ঢাকা অবরোধ হল অহুদ যুদ্ধের সমতুল্য। সে সময়ে সাহাবিরা এ যুদ্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। এবারে, হেফাজতের দ্বিতীয় কর্মসূচি ঢাকা অবরোধের পর, শাপলা চত্বরের জমায়েতেও হেফাজত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সেই অনুসারেই সহজ আশাবাদী কোনো কোনো আলেম বলতে থাকেন, সামনেই অপেক্ষা করছে ফতহে-মক্কা তথা মক্কা-বিজয়! কিন্তু পাল্টা যখন তাদের বলে দেওয়া হল যে, বদর ও অহুদের পর অনেক অনেক চড়াই-উৎরাই পার হওয়ার পরই কিন্তু ইসলামের ইতিহাসে মক্কা-বিজয় আসে। এর জবাবে পাল্টা কিছু বলেন নি তারা। কিন্তু তাদের সন্দেহের তীরে বিদ্ধ হতে হল অযথা এবং এ সন্দেহ এখনো কাটে নি।
তাদের দ্বিতীয় সমীকরণ হল, হেফাজতের জিহাদি কাফেলা বালাকোটের শহিদদের সঙ্গে তুল্য। তাই কেউ কেউ সমানে আউড়ে যাচ্ছেন, ‘বালাকোট থেকে শাপলা চত্বর’ বা ‘বালাকোট থেকে মতিঝিল’ শীর্ষক নানা মুখরোচক ও কল্পনাপ্রদায়ক বাক্যবন্ধ্য। উর্বর এবং তরল চিন্তায় এগুলো বেশ মজাদার, এতে কোনোই সন্দেহ নেই। কিন্তু যারা বালাকোটের সঙ্গে এর তুলনা করছেন, তারা কখনো বালাকোটের জিহাদের আদ্যোপান্ত সুনিবিড় পাঠ নিয়েছেন বলে মনে হয় না।
বালাকোটের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে ৬ই মে, হেফাজত শাপলা চত্বর থেকে অত্যন্ত অমানবিকভাবে বিতাড়িত হয় একই তারিখে। বালাকোটের নেতা ছিলেন সৈয়দ আহমদ বেরলবি, আর এবারের নেতা হলেন আহমদ শফি। অর্থাৎ দু-জনই আহমদ। কাকতালীয় এই মিলের কারণে মনে রোমাঞ্চ জাগে, জাগতেই পারে। কিন্তু এই রোমাঞ্চ হেফাজতকে কখনোই হেফাজতের নিশ্চয়তা দেবে না। হেফাজতের নিশ্চয়তা তৈরি হবে বাস্তবতার জমিনকে নির্মোহ ভাবে পাঠের মাধ্যমে এবং তিক্ত হলেও সত্যকে নির্দ্ধিধায় মেনে নেওয়ার মাধ্যমে। কিন্তু সে মানসিকতা ও প্রস্তুতি কি হেফাজতের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের আছে বা কখনো তেরি হবে?
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন