সাভার ট্রাজেডি এবং হেফাজতে ইসলাম/ইসলামি আন্দেলন/আহলুস-সুন্নাহ

লিখেছেন লিখেছেন রওশন জমির ২৯ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:১৫:০৬ রাত



১। সাভারে যখন শয়ে শয়ে মানুষ বিল্ডিং-চাপা পড়ে আছে, তখন হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা নানাভাবে সক্রিয়তার পরিচয় দেয়। সাভার এলাকায় যাদের বসবাস, তাদের কেউ কেউ উদ্ধার-তৎপরতায়, মানবিক সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। সাভারের বাইরের কর্মী-সমর্থকরা হেফাজতের উত্থাপিত ১৩ দফা দাবির বাস্তবায়ন এবং আসন্ন অবরোধ কর্মসূচি সফল করার কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকে। রাজধানীর অদূরে, এই সাভারে মানবতার করুণ চিৎকার তাদের গতি শ্লথ করতে পারে নি। সাভারস্থ ইসলামি আন্দোলনের কর্মী-সমর্থকরাও এই মানবিক কাজে অংশ নেয়। আহলুস-সুন্নাহর কোনো শাখা, বোধহয়, সাভারে নেই, তাই তাদের চোখে পড়ে নি।

২। সাভার ট্রাজেডির অব্যবহিত পর দলমত নির্বিশেষে সবাই রক্তদানসহ উদ্ধার-তৎপরতায় জড়িত হয়। দেশের অন্য সব সংগঠন তাদের ঘোষিত ও নিত্তনৈমিত্তিক কর্মসূচি কাটছাঁট করে, সীমিত করে। কিন্তু হেফাজত এক ‘সাভারের সমাবেশ’ স্থগিত করা ছাড়া আর কোনো কর্মসূচি স্থগিত/বাতিল করে নি। তাদের সমাবেশ থেকে বীরত্বসূচক/জেহাদি নানা বক্তব্যের ঝড় বয়ে গেছে। মনে হচ্ছিল, এই মুহূর্তে তাদের এই কর্মসূচির কোনো বিকল্প নেই! তবে, এই ট্রাজেডির পর ইসলামি অন্দোলন নিজেদের পূর্বঘোষিত ‘প্রধানমন্ত্রীর অফিস ঘেরাও’ কর্মসূচি বাতিল করে। আহলুস-সুন্নাহ চট্টগ্রামের নানা কর্মসূচি বহাল রাখে।

৩। যে যে-ভাবেই দেখুক, সাধারণ ধর্মপ্রাণ জনতার মাঝে হেফাজতের গ্রহণযোগ্যতা অন্য যে-কোনো ধরনের সংগঠনের চেয়ে বেশি। তাদের গতানুগতিক কর্মসূচিকে যদি সাভার ট্রাজেডির পক্ষে ব্যবহার করা যেত, তাদের জনপ্রিয়তার পালে আরো হাওয়া লাগত। ইসলামি আন্দোলনেরও গ্রহণযোগ্যতা আছে, তেমনই আহলুস-সুন্নাহরও। তাদের সবারই সাভার ট্রাজেডিতে আরো বেশি অবদান রাখার অবকাশ ছিল, এখনো আছে।

৪। এ অঘটনের পর কোনো কোনো ধর্মীয় নেতা একে গজবতত্ত্ব দিয়ে নিজের ঈমানের পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অথচ আর্ত-মানবতার পক্ষে দাঁড়ানোও যে ঈমানের পরিচয়, তা তাদের বক্তব্যে ফুটে ওঠে নি। আলেম-ওলামার বক্তব্য ও আচরণে সামগ্রিক ইসলামের নীতি ও পরিচিতি প্রকাশিত না হলে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ তৈরি হয়।

৫। হেফাজতের সমালোচক-নিন্দুক-গোষ্ঠী হেফাজতকে এবং অপরাপর ইসলামি দল ও সংগঠনগুলোকেও নারীদের, বিশেষত গার্মেন্টস-কর্মীদের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে। এই সময়ে গার্মেন্টস কর্মীরা, বিশেষত নারীরা যখন দুর্ঘটনার শিকার, তখন হেফাজতসহ অন্যরা নারীদের, বিশেষত গার্মেন্টস-কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে সমালোচনাগুলোকে ভোঁতা করতে পারত।

৬। হেফাজত যদি দুর্ঘটনার পর থেকে অনুষ্ঠিত নানা সমাবেশে গতানুগতিক বক্তব্যসহ সাভার ট্রাজেডির পক্ষে একটি সাহায্য-তহবিল গঠন করত, তাহলে এতে ব্যাপক সাড়া পড়ত, মোটামুটি টাকা পয়সাও সংগ্রহ হত । কারণ, হেফাজতের দাবি মতে, প্রতিটি সমাবেশেই লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটেছে। পাঁচ টাকা করে দিলেও তো কয়েক লক্ষ টাকা জমা হওয়ার কথা, যা বিপদগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা যেত। আর এভাবেই তাদের কর্মসূচি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ থেকে বেরিয়ে আসত। ইসলামি আন্দোলনের তো নানা তহবিল আছে; তারা ব্লগার-বিরোধী সমাবেশেও অর্থ-সংগ্রহ করেছে বলে শোনা যায়। তারা এ মুহূর্তে এ ব্যাপারে তৎপর হলে আরো ভাল হত। আহলুস-সুন্নাহ অনেক পুরনো সংগঠন। তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ালে, তাদের ও দেশের প্রভূত কল্যাণ হত।

৭। সত্য বটে, মাঠ-পর্যায় থেকে তহবিল সংগ্রহে একটা ঝুঁকি আছে। সকল অর্থের হিসাব যথাযথভাবে নেওয়াটা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। শোনা যায়, হেফাজত এমন একটা আশঙ্কা থেকেই এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে নি। হেফাজতের এ চিন্তাটা অমূলক নয়। কিন্তু যদি কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ‘অনলাইন এ্যাকাউন্ট’ করে মফস্বল থেকে সরাসরি টাকা সংগ্রহ করা যায়, এতে দুর্নীতি বা তসরুফের অবকাশ কমে যাবে। অন্য সব ইসলামি দল-সংগঠন নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা নিক। মোটকথা হল, মানুষ ও দেশের পাশে দাঁড়ানো।

৮। সংগৃহীত টাকার বিতরণকে নেতাগণ ঝামেলাপূর্ণ মনে করতে পারেন। কিন্তু এ ঝামেলা এড়ানোর জন্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ-তহবিলে শুধু সাভার-ট্রাজেডির শিকার ব্যক্তিদের মাঝে বিতরণের জন্য দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। আর তাছাড়া প্রত্যেক দলের কেন্দ্রীয় নেতাগণ নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা সংগ্রহ করে তা বিতরণ করতে পারেন। কিন্তু সেই ত্রাণ-তহবিল, (তা হেফাজত, ইসলামি আন্দোলন বা আহলুস-সুন্নাহ, যার মাধ্যমেই হতে পারে, তা) কি আদৌ হবে? নাকি ধর্মাচ্ছন্ন আলেম-সমাজে সমাজবিচ্ছিন্ন হয়েই ইসলামের ঝাণ্ডা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবেন? এটাই এখন দেখার পালা।

আল্লাহ আমাদের সুমতি দান করুন। আমিন।

বিষয়: বিবিধ

১৩১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File