আফগানিস্তান, তালেবানের প্রতি ভালোবাসাঃ অতঃপর শুধুই ঘৃণা!!!

লিখেছেন লিখেছেন বিলমারুফ ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১২:০২:১১ রাত



এমন একটা সময় ছিল যখন আফগানিস্তান, তালেবান এ দুটি শব্দ আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছিল। আমাদের বাড়িতে একজন স্যার ছিলেন যিনি প্রতিদিন কলেজ শেষে পৌর শহর থেকে পত্রিকা নিয়ে আসতেন। আর আমি পত্রিকার পাতা খুলেই তালিবানের বিজয়ের সংবাদ খুঁজে বেড়াতাম। কখনো যদি তালেবান সম্পর্কিত কোন দুঃসংবাদ পত্রিকার পাতায় দেখতাম তাহলে মনে কষ্ট হতো। সে দিন ভালো করে খাবার দাবার এবং রাতে ঠিক মতো ঘুম হতোনা। কিন্তু না আজকে তাদের এই অমানুষিক, নিষ্ঠুর বর্বরতা দেখে তাদের প্রতি ঘৃণা ক্রোধ ছাড়া আমার অন্তরে ভালোবাসার কোন স্থান রইলো না।

এই ফুটফুটে মাসুম শিশু গুলোর কি অপরাধ ছিল যে, তাদেরকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করতে হয়েছে। তারা তো শুধুমাত্র পড়াশোনা করতেই স্কুলে গিয়েছিল। তাদের বাবা মা কত স্বপ্নই না বুকে লালন করছিল। কিন্তু সে স্বপ্ন স্বপ্নের রাজ্যে রয়ে গেল, বাস্তবে রূপ নিতে দিল না তালেবান নামক ইসলামের লেবাসধারী সন্ত্রাসী জঙ্গি গোষ্ঠী।

এরা মুখে দাড়ি, মাথায় পাগড়ী আর লম্বা লম্বা জোব্বা পরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে ইসলাম নামক বিশ্বের সবচেয়ে শান্তির ধর্মের ক্ষতি করেই চলেছে।

আজ অনলাইনে এ ঘটনার খবরাখবর নিতে গিয়ে যা দেখলাম, তাতে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়েছে।

● একজন মুসলিম যুবক লিখেছে,

আমি আমার অমুসলিম বন্ধুদের কাছে

নিজের পরিচয় দিলে ওরা বলে,

ও তুমি তাহলে মুসলিম!!!!

তুমি সন্ত্রাসী!!!!

তুমি বোমা মেরে নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা কর!!!

● সন্তানহারা একজন বাবা বলেছেনঃ

"I sent my son in his school uniform and I returned to collect him in a coffin"

● অন্য আরেকজন বাবা বলেছেনঃ

"My son was my dream,

my dream has been shot dead".

● ‪#‎M_Hassaan_Rahim‬ নামের একজন লিখেছেনঃ

"If Taliban are Muslims, I am not.

If I am a Muslim, Taliban are not."

● ‪#‎Mansura_Sajahan‬ নামের এক বোন লিখেছেনঃ

"They killed children,

they can't even call themselves humans!!!"

● নিহতদের মধ্যে ‪#‎Mubeen_Shah‬ নামের একটি ছেলে কিছু দিন আগে তার ফেসবুকের কাভার ফটোতে লিখেছিল,

"We are a NATION of beauty and great grief our smile is much STRONGER than your gun"

শিশুরা হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য এক মহা নেয়ামত ও বরকত স্বরুপ। হাদীসে এসেছে, নবী করিম (সাঃ) বলেছেনঃ “শিশুরা আল্লাহর ফুল” (তিরমিযী)।

যে ফুলগুলো একদিন প্রস্ফুটিত হয়ে সমাজকে মুখরিত, আলোকিত ও আন্দোলিত করার কথা ছিল আজ সে ফুলগুলো অঙ্কুরেই গুলি করে হত্যা করে দিল তালেবান সন্ত্রাসীরা।

শিশুদের প্রতি রাসূল (সাঃ) এর ভালোবাসা ছিল অপরিসীম। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা এক বেদুইন রাসূল (সাঃ) এর কাছে উপস্থিত হয়।

তখন রাসূল (সাঃ) একটি শিশুকে চুমু দিচ্ছিলেন। লোকটি বলল, আপনারা বাচ্চাদের চুমু খান?

আমরা তো এমনটা করি না।

তখন রাসূল (সাঃ) বললেনঃ

"আল্লাহ তায়ালা যদি তোমার হৃদয় থেকে দয়া ও ভালোবাসা কেড়ে নেন, তবে আমি কি করতে পারি”? (বুখারী ও মুসলিম)।

শিশুদের দেখলে পরে রাসূল (সাঃ) যে কপালে চুমু দিতেন, আজ সেই কপালে ওরা গুলি চালিয়ে দিল।

রাসূল (সাঃ) সব সময় শিশুদেরকে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করতেন এবং তাদের যাতে কষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতেন। কোন একদিন রাসূল (সাঃ) মসজিদের মিম্বরে খুতবা দিচ্ছিলেন, এমন সময় তার দৌহিত্রদ্বয় দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে গিয়ে পা পিছলে পরে যাচ্ছিল তখন রাসূল (সাঃ) খুতবা বন্ধ করে তাদেরকে কোলে তুলে নিলেন এবং তাদের আদর করলেন। এমনকি রাসূল (সাঃ) শিশুদের কান্নার আওয়াজ শুনলে পরে নামায সংক্ষিপ্ত করতেন। আর বর্বর তালেবানরা নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করে তাদের মা বাবার বুক খালি করে দিল।

অন্য একটি হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ

“Whoever fails to show mercy to our children and honor to our elders is not one of us.” [Sunan al-Tirmidhî (1919)]

অর্থাৎ "যে শিশুদের প্রতি দয়া ও বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।"

নবী করিম (সাঃ) এর এই হাদীস মতো শিশুদের প্রতি দয়া, ভালোবাসা প্রদর্শনের পরিবর্তে তাদেরকে হত্যা করে, তালেবানরা রাসূল (সাঃ) এর উম্মত থেকে খারিজ হয়ে গেছে। তাই আসুন, ইসলামের লেবাস পরে যারা এই শিশু হত্যার মতো জঘন্য পাপ কাজ করে চলেছে, বিশ্ববাসীর নিকট আমরা তাদের মুখোশ উন্মোচিত করি। তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের হাতে সোপর্দ করি।

মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার দরবারে প্রার্থনা করি, তিনি যেন এই নিহত মুসলিম শিশুদেরকে শহীদী মর্যাদা দিয়ে জান্নাতে সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন করেন। তাদের পিতা মাতা ও পরিবার পরিজনদের ধৈর্য ধারণের তৌফিক দেন। আমিন

Nizam Bin Rafique

‪#‎PeshawarAttack‬

‪#‎StopKillingOurChildren‬

‪#‎PrayForPakistan‬

‪#‎PrayForPeshawar‬

বিষয়: বিবিধ

১৩১০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

295597
১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১২:১৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই তালেবান আসলে আফগান তালেবান কিনা সেই বিষয়ে সন্দেহের যথেষ্ট কারন আছে।
মর্মস্পর্শি পোষ্টটির জন্য ধন্যবাদ।
295601
১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০১:১৩
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : A little learning is a dangerous thing. Taliban???? It was TTP not Taliban. TTP means tehrik e Taliban Pakistan it's not any branch of Taliban. TTP is a tribal militant group of waziristan follows Isis whereas Taliban thinks khilafah of Isis is void and they are Kharizi..Taliban already released a statement and told that TTP did a big mistake and they don't support these kinds of activities. It is haram to kill innocent children and women so at first try to know the truth then come here for discussion. And where were you when America killed 3000+ innocent people of Waziristan by Drone bombing and few days ago Pak army killed 1200 people in Waziristan? Does Islam support those activities??? Don't be one eyed
295611
১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০১:৩০
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন : আমি সবাইকে বলছি :



১। ইসলাম প্রতিশোধপ্রবণ হওয়ার শিক্ষা দেয় কি ?

২। ইসলাম প্রতিশোধ নেওয়ার বিষয়টাকে ইতিবাচক হিসেবে নিতে শিক্ষা দেয় কি ? না নেতিবাচকভাবে ?

৩। ইসলাম শব্দের অর্থ কি ? ইসলাম শব্দের অর্থ যদি আত্মসমর্পণ করাও হয়, তাহলে যার উপর আত্মসম্পর্ণ করার কথা বলা হয় তিনি কি ইসলাম পছন্দ লোকদের এমন প্রতিশোধপরায়ণ হতে বলেছেন না তার বার্তাবাহককে বলেছেন ?




দেখুন, প্রতিশোধ নিয়ে কেহ মহৎ হতে পারে না ।

আমার এক ভাই মারা যাওয়ার কারণ আমি দেড় বছর পর জানতে পারি । আমি এই ব্যাপারটা বাড়িতে বলি । আমার এই কথা শুনে আমার বাবা বলেন আমি জানতাম । আমরা অবাক হলাম ।

ব্যাপারটা আমি ফেসবুকের গ্রপ Justice For Dr. Shamarukh Mahjabin এ তুলে ধরেছিলাম আর একটা স্যাটাসেও তুলে ধরেছিলাম । আমি বলেছিলাম :
” ফেসবুক অনেক সময় সত্য কথাকে প্রকাশ করে দেয় । আমার এক ভাই ছিল ডাক্তার । এফসিপিএস ফাস্ট পার্ট শেষ করেছিলো আটাশ বছর বয়সে । বিএসএস পরীক্ষার মৌখিক অংশটা সে দিয়ে যেতে পারেনি । কারণ তার কয়েক দিন আগে সে মারা যায় কক্সবাজারে ।

তার মৃত্যুর সময় ও মৃত্যুর কারণ বন্ধুদের কাছ হতে যা আমরা জেনেছিলাম তা পরে আমার অনুসন্ধানে ভুল প্রমাণিত হয় ।

তার মৃত্যুর কারণ ফেসবুকে জানলাম প্রায় দেড় বছর পর । কিন্তু যখন জানলাম তখন আমাদের কিছুই করার ছিল না ।

আমি আমার ফেসবুকের তরুণ বন্ধুদের অনুরোদ করছি :

১. বন্ধুদের সাথে চলাফেরা করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন ।
২. বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা হলো সবচেয়ে কাছের বন্ধু । তাদের সাথে সব বিষয় শেয়ার করুন ।
৩. অন্য ধর্মের লোক এবং অসম্ভব আদর্শ ধারণকারী লোকদের হতে দুরে থাকুন । কারণ তাদের সাথে সামান্য মত-পার্থক্যই আপনার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে ।
৪. আপনি আপনার বিপরীত লিঙ্গের ফ্রেন্ডদের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন । তারা আপনার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে । উপরন্তু এধরণের সম্পর্কের কোন দায়িত্ববোধ নেই এবং বৈধতার দিক থেকেও দুর্বল । ”





আপনাদের বলছি :
১। আমরা মুসলিম । ইসলাম ধর্মের লোকদের সংখ্যা পৃথিবীতে ক্রমবর্ধমান । এক সময় ইসলাম ধর্মের লোকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে । অমুসলিমরা আমাদের সব কাজ ও দৃষ্টিভঙ্গিকে নিরীক্ষণের দৃষ্টিতে দেখে । তাদের কিছু অংশ সন্দেহ ও প্রতিপক্ষ ভেবে সব কিছু বিচার করে ।

২। আমরা সব কিছুই শান্তিপূর্ণপন্হায় করতে পারি । শান্তিপূর্ণপন্হায় যা কিছু করা হোক না কেন তাতে সবারই সমর্থন থাকে ।

৩। বাংলাদেশে ইসলাম অশান্তির মাধ্যমে আসেনি । শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলাম এসেছে । ১৩০৩ সালে শাহজালাল রহ অত্যাচারীদের অত্যাচার নির্যাতন নিপীড়ন দুর করার জন্য বাংলাদেশের এক কোনায় এসেছিলেন । .. তার পরের ইতিহাস আমাদের জানা । আমরা কি এসব ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেবো না ।


আমাদের অবশ্যই তালেবান-আল কায়দা - আই এস - বোকো হারাম - আহলে হাদিস .. ইত্যাদি ইত্যাদি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হতে ‍দুরে থাকতে হবে । এব্যাপারে সহিহ হাদিস পর্যন্ত রয়েছে । তাতে বলা হয়েছে যে পূর্ব দেশ হতে এক দল লোক উদয় হবে তাদের দেখে চরম পরহেজগার মনে হবে , তাদের পরহেজগারী বা কুুরআন তেলোয়াত.. ইত্যাদি ইত্যাদি তাদের গলার নিচে নামবে না । আর এই হাদিসটাতে আমাদের এসব দল হতে দুরে থাকার উপদেশ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের লোকদের হত্যা করার নির্দেশ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে । আমরা তাদের হত্যা করবো কি - তারাই আমাদের অস্তিত্ব ও সম্মানের জন্য হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে ।
295669
১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:২২
ইসলামী দুনিয়া লিখেছেন : ধন্যবাদ। আপনার মনের বক্তব্য প্রকাশ করার জন্য। আমিও চরম ব্যাথ্যা পেযেছি এসব শিশুদের জন্য। ঠিক তেমনি ব্যাথ্যা পেয়েছি। মার্কিন ড্রোন আক্রমনে শত শত নিরপরাধ শিশু হত্যার জন্য। বছর বছর ধরে পাক সেনা কর্তৃক নিরপরাধ মানুষ হত্যা ও গুম হওয়ার জন্য। আমি মর্মাহত।
295790
১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৪৫
মোতাহারুল ইসলাম লিখেছেন : ইসলাম এর ইমেজ নস্যাৎমূলক যত কাজ পৃথিবীতে হয়, এর পিছনে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পণা থাকে যার সূতো এমন এক স্থান থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় যার ব্যাপারে রংগমঞ্ছের পাত্র-পাত্রীরা ওয়াকিবহাল থাকেনা, দর্শকতো নয়ই! আল্লাহ আমদের সত্যের উপর অবিচল থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File