জিহাদ এবং শহীদ

লিখেছেন লিখেছেন লাল গোলাপ ১৩ মার্চ, ২০১৩, ০১:১৪:১৯ দুপুর

ইসলাম যদি ‘ধর্ম’ মাত্র হয়ে থাকে এবং মুসলমান যদি নিছক একটি ‘জাতি’ হয় তবে জিহাদ কিছুতেই ‘সর্বোত্তম’ ইবাদত হতে পারে না, বরং জীবনের সকল ক্ষেত্রেই এটার অর্থহীনতা ও অযৌক্তিকতা সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার এটা সম্পূর্ণ বিপরীত। বস্তুত ইসলাম কোনো ‘ধর্ম’ এবং মুসলমান কোনো জাতির নাম নয়। ইসলাম একটি বিপ্লবী মতাদর্শ। সমগ্র পৃথিবীর সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করে তার নিজস্ব আদর্শ অনুযায়ী নতুন করে তা ঢেলে গঠন করাই ইসলামের চরম লক্ষ্য। আর ‘মুসলমান’ একটি আন্তর্জাতিক বিপ্লবী দল বিশেষ, ইসলামের বাঞ্ছিত কার্যসূচী বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যেই তাদের সংঘবদ্ধ করা হয়েছে। আর এ উদ্দেশ্য লাভ করার জন্য ইসলামী দলের বিপ্লবী চেষ্টা-সাধনা ও চূড়ান্ত শক্তি প্রয়োগের নামই হচ্ছে ‘জিহাদ’।

‘ঈমানদার লোকেরা আল্লাহর পথে লড়াই করে, কাফেরগণ লড়াই করে তাগুতের পথে।’ (সূরা আন নিসাঃ ৭৬)

হাদিসে উল্লেখিত হয়েছেঃ “এক ব্যক্তি নবী করীম (সা)-কে জিজ্ঞাসা করলো, ‘আল্লাহর পথে যুদ্ধের’ অর্থ কি? এক ব্যক্তি ধন সম্পদের জন্য যুদ্ধ করে অপর ব্যক্তি বীরত্বের খ্যাতি লাভ করার জন্য যুদ্ধ করে, আর তৃতীয় ব্যক্তি শত্রুতা সাধনের জন্য কিংবা জাতির গৌরব অহংকার রক্ষার জন্য যুদ্ধ করে। ইহাদের মধ্যে কার যুদ্ধ ‘আল্লাহর পথে’ হচ্ছে?”

হযরত (সা) উত্তরে বললেনঃ “এদের কারো যুদ্ধই ‘আল্লাহর পথে’ নয়। যে ব্যক্তি কেবল ‘আল্লাহর বিধান’ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই যুদ্ধ করবে, শুধু তার যুদ্ধই ‘আল্লাহর পথে’ হবে।” অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছেঃ “যদি কেহ যুদ্ধ করে আর উট বাঁধবার একগাছ রশি লাভ করাও তার ‘নিয়ত’ হয় তবে সে কোনো ফল লাভ করতে পারবেনা। যে কাজ কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য হবে, আল্লাহ শুধু তাই কবুল করবেন। অবশ্য যদি তার কোনো ব্যক্তিগত কিংবা সমষ্টিগত স্বার্থ লাভ উদ্দেশ্য না থাকে।”

মাঝে মাঝে নিজে খুব অবাক হয় যখন দেখি একজন মুসলমান হয়ে একজন হিন্দু কে বলছে শহীদ।শহীদ কাকে বলে? সোজা কথায় ধর্মযুদ্ধে নিহত ব্যক্তিই শহীদ । অবশ্য এটা পুরোপুরিই ইসলামীক ব্যাখ্যা । প্রচলিত অর্থে দেশের জন্যে বা মানবকল্যাণে নিহত ব্যক্তিরাও শহীদ বিশেষনের অন্তর্গত ।এক্ষেত্রে হিন্দু লোক মরলে শহীদ বলা যায়। ইংরেজি martyr এর সহজ বাংলাই হলো শহীদ । আর শহীদের আরবি ভাষায়: شَهيد তাঁদের বলা হয়, যাঁরা ধর্ম যুদ্ধ অথবা দেশ রক্ষার কাজে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেন এবং জীবন ত্যাগ করেন। সাধারন ভাবে বলা যায়, যিনি দ্বীনের পথে জীবন ত্যাগ করে আর যিনি মাতৃভূমি রক্ষা করার জন্য জীবন দেন এরা শহীদের মর্যদা পাবেন। কিন্তু শহীদ শব্দটি যত্রতত্র রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে এর প্রকৃত অর্থকে বির্তকিত করা হয়েছে প্রতিনিয়ত। অবশ্য বাংলাদেশে শহীদের সংজ্ঞা বিকৃত হতে হতে এখন লজ্জাজনক একটা অবস্থায় পৌছেছে । রাজনৈতিক দলের পাতি এবং ভাতি নেতারা চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে মারা গেলেও শহীদ বলা হয়। । আর 'বাচলে গাজী মরলে শহীদ' বাহিনীর কথা তো বলার কিছু নেই, তারা মনে হয় সাপের কামড় খেয়ে মরলেও শহীদ খেতাব পায়। َএ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন:

আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত। (আল- ইমরান: ১৬৯।)

শহীদ বঙ্গবন্ধু বা শহীদ শেখ মুজিবুর রহমান খুব বেশি প্রচলিত না হলেও অনেকে সেটা বলে থাকে। প্রচলিত সেটা হলো শহীদ রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমান । নেতা - পাতি নেতারা তো বটেই, ম্যাডাম জিয়া নিজেও সভা-সমাবেশে, খালে-বিলে আর সংসদে জিয়াকে শহীদ বলে অভিহিত করে আসছেন । বর্তমানে অনেক আওয়ামী নেতারাও বঙ্গবন্ধুকে শহীদের কাতারে নিয়ে দাড় করান । এখন আমার প্রশ্ন হলো, কোন যুক্তিতে তারা শহীদ বলে গণ্য হবেন? বঙ্গবন্ধু নিজের বাড়িতে আর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে কোন ধর্মযুদ্ধে ব্যস্ত ছিলেন? দুজনই সেনাবাহিনীর কিছু উচ্ছৃংখল কর্মকর্তার উচ্চাভিলাষের স্বীকার হয়ে মৃত্যুবরন করেন। স্থান, কাল আর পাত্র বাদ দিলে তাদের দুই জনের হত্যার ধরণ একই। বঙ্গবন্ধু বা জিয়াউর রহমান - কাউকে ছোট বা বড় করা আমার উদ্দেশ্য না। কারণ তারা আজকের পাতি আর ভাতি নেতা থেকে শত শত গুন দেশপ্রেমী ছিলেন।

এত গেল পুরান কাহিনী। শাহবাগের নাস্তিক ব্লগার রাজিব কে সবাই বিশেষ করে সব মিডিয়া শহীদ শহীদ বলে খাটি দুধ দিয়ে ধোয়া একজন জিবন্ত শহীদ বলে সারা দেশে প্রচার চালাচ্ছে। আমার প্রসন হল রাজিব ক্যান এবং কিভাবে শহীদ হিসেবে পরিগনিত হয়?

বিষয়: বিবিধ

১৮৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File