হিন্দুত্ববাদের মোড়কে ব্রাহ্মন্যবাদের পুনোরুত্থান

লিখেছেন লিখেছেন কানা বাবা ১২ অক্টোবর, ২০১৯, ০৯:২৩:৪৪ রাত

প্রাচীন ভারতে বিভিন্ন শাসকদের শাসনক্ষমতার একটা বড় অংশ যোগান আসত জনগনের উপর প্রভাবশালী মন্দির গুলো হতে। যে কারনে কোন রাজ্য আক্রমনের সাথে সাথে রাজ্যের শাসকের সমর্থক মন্দির গুলোতেও আক্রমন হত। মন্দিরগুলোও এই সব আক্রমন প্রতিহত করার জন্য যথাসম্ভব প্রস্তুত থাকত। মন্দির গুলোর নকশাও করা হত অনেকটা দূর্গ আকৃতিতে যতটা সম্ভব দূর্ভেদ্য করে। এমনি একটি প্রায় দূর্ভেদ্য মন্দির ছিল পশ্চিম ভারতের সোমনাথ মন্দির। বলা হত সোমনাথ মন্দিরের নকশা এতটায় দূর্ভেদ্য ছিল যে স্বয়ং ভগবান ই বিভ্রান্ত হয়ে যেতেন -কোন ঘর অর্ঘ্য নিবেদনের আর কোন ঘর প্রতিরক্ষার। কিন্তু এই দূর্ভেদ্য মন্দির সুলতান মাহমুদ গজনভীর পদানত হয় খুব সহজেই। অনেকটা এলাম দেখলাম জয় করলাম টাইপ। মাহমুদ গজনভীর শৌর্যবীর্য ইতিহাস বিখ্যাত সন্দেহ নেই। তা কি এতটাই অপ্রতিরোধ্য ছিল যে ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম শক্তিশালী সামরিক ও আধ্যাত্মিক ঘাটি অনেকটা বিনা প্রতিরোধে ধসে পড়ল? এই ব্যাপারে ইসলাম পন্থী ইতিহাস চর্চাকারীদের মধ্য একটা উপাখ্যান বা কাহিনী প্রচলিত। যার বিভিন্ন ধরনের বর্ননা পাওয়া গেলেও সারবস্তু প্রায় কাছাকাছি: সেই সময় শিবের ভক্তদের মধ্যে কোন কন্যা সন্তান জন্ম নিলে মানত করা হত মেয়ে রজ:স্বলা হওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শিবের দ্বাদশ লিংগের সেবার জন্য সোমনাথে প্রেরন করা হবে। কিন্তু এই সব নারীদের অনেকেই আর সোমনাথ থেকে ফেরত আসতে পারতেন না। মন্দিরের পক্ষ থেকে বলা হত দেবতা শিব তাদের পছন্দ করে নিজের সেবাকার্জে নিয়োজিত করার জন্য স্বর্গে আরোহন করিয়েছেন। এই সব নারীদের মন্দিরের বিভিন্ন কক্ষে আটকে রেখে পুরাহিতরা ধর্ষন করতেন বলে অভিযোগ ছিল। পরবর্তিতে তাদের হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করে আরব সাগরে লাশ ভাসিয়ে দেয়া হত। কিন্তু সোমনাথ এতটায় সুরক্ষিত এবং শক্তিশালী ছিল যের এর পক্ষে কোন প্রমান যোগার করা বা পুরোহিতদের বিরুদ্ধাচারন করা ছিল একেবারে অসম্ভব। তো এমনি এক মানতী মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল এক রাজপুত যুবকের যে কিনা আবার সোমনাথ মন্দিরেরই সেবক। মেয়ে রজ:স্বলা হলে বাবা আয়োজন করতে থাকে মেয়েকে শিবের সেবার জন্য প্রেরনের। রাজপুত যুবক বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও তা রুখতে পারে না। যথা সময়ে মেয়েটিকে সোমনাথে প্রেরন করা হয় এবং মেয়েটির কপালেও স্বর্গে আরোহনের দূর্ভাগ্য হয়। এই অবস্থায় যুবকটি তার প্রেমিকাকে নিয়ে সোমনাথ থেকে পালানোর চেষ্টা করে কিন্তু সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। সেই সময়ে সোমনাথ অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মাহমুদ গজনভীর। রাজপুত যুবক প্রেমিকাকে উদ্বারে ব্যর্থ হয়ে শরণাপন্ন হন মাহমুদ গজনভীর এবং তাকে মন্দিরের নকশা সহ অনেক গোপন তথ্য প্রদান করেন।যার সাহায্য মাহমুদ গজনভী সহজেই সোমনাথ দখল করে নেন। এই উপাখ্যান এর ঐতিহাসিক ভিত্তি কতটুকু তা বলা মুশকিল। কিন্তু লেখক ও গবেষক জাভেদ হোসাইনের ভাষায় বলা যায় - উপাখ্যান সবসময় সত্য হওয়ার প্রয়োজন নেই কারন সে নিজে একটি ভিন্য সত্যকে ধারণ করে। এবং এই ক্ষেত্রে সেটা হল ধর্মকে ব্যবহার করে পুরোহিতন্ত্রের সাধারন মানুষের উপর নিপীড়ন এর ইতিহাস। যা অর্থনৈতিক, সামাজিক এমনকি যৌন আগ্রাসনে রুপ নিয়েছিল। আর এস এস ও বিজেপির হাত ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে যে সেই পুরোহিততন্ত্রের পূনোরুত্থান হচ্ছে তা বুঝার জন্য রাজনৈতিক বোদ্ধা হওয়া লাগে না।কিন্তু ভারতবর্ষের হিন্দু সমাজ বিভ্রান্ত বিক্ষিপ্ত পতংগের ন্যায় ঝাকে ঝাকে এই পুরোহিতন্ত্রের আগুনে ঝাপ দিচ্ছে। যেন এই আগুনে পুড়ে অংগার হওয়াই জীবনের সার্থকতা।

বিষয়: বিবিধ

৮০৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386751
১৫ অক্টোবর ২০১৯ সকাল ০৭:৩২
টাংসু ফকীর লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File