বাংগালি মুসলমানের রবীন্দ্রদর্শন ও কিছু ভুলে যাওয়া ইতিহাস

লিখেছেন লিখেছেন কানা বাবা ১০ জুন, ২০১৬, ০৭:১০:০৮ সন্ধ্যা

আধুনিক বাংলা সাহিত্যে যেহেতু রবীন্দ্রনাথ একটি বটবৃক্ষ তাই সাহিত্যের তীর্থ যাত্রার সকল মিছিল শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথে গিয়ে মিশবে এটাই স্বাভাবিক।কিন্তু রবীন্দ্রনাথের মত এক জন মুসলিম বিদ্ধেষী ও হিন্দু পুনোরুত্থানবাদীর কাছ থেকে বাঙ্গালি মুসলমানের বাঙ্গালিত্বের পাঠ নেয়া শুধু ইতিহাসের বিকৃতি নয় বরং নিজের আত্মপরিচয়কেই অস্বীকার করার সামিল।মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে সুপরিকল্পিত ভাবে আমাদের মনে এটা ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পদার্পনের জন্য।বাংলাদেশের সাহিত্য জগতের বেশির ভাগ মানুষ হয় এই পাঠ দেন অথবা একে নীরবে সমর্থন করেন।এই পাঠের ফলাফল কি তা ভবিষ্যত ইতিহাস নির্মান করবে ।এই পাঠের একটি গুরুত্বপুর্ন এজেন্ডা হল রবীন্দ্রনাথ কে আমাদের বাঙ্গালি জাতীয়তা বাদের(বাঙ্গলাদেশ অংশ) চেতনা তীর্থস্থানে পরিনত করা।মুন্তাসির মামুনদের মত কেউ কেউ ত নজরুলকে বাদ দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে জাতীয় কবি করার দাবি তুলেন।মুন্তাসির মামুনরা রবীন্দ্রনাথকে জাতীয় কবি হয়ত বানাতে পারেন নি। তবে এটা ঠিকই প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে যে বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ হয়েছে তা বহুলাংশে রবীন্দ্রনির্ভর।তাই ত বাঙ্গালি মুসলমানের বাঙ্গালিত্ব আজ রবীন্দ্রনাথ ছাড়া অপূর্ণ।বৃটিশদের হিন্দুদের প্রতি পক্ষপাত মূলক আচরণ, সবগোপাল মিত্র প্রতিষ্ঠিত হিন্দুমেলা,দীন দয়াল প্রতিষ্ঠিত ভারত ধর্ম মহামন্ডল প্রভৃতি হিন্দু পুনোরুত্থানবাদি আন্দোলন , দয়ানন্দ স্বরস্বতী প্রতিষ্ঠিত আর্য সমাজের শুদ্ধি আন্দোলনের নামে মুসলমানদের জোর পূর্বক ধর্মান্তরকরণ, গোরক্ষা সমিতির নামে মুসলমানদের কোরবানিতে গরু জবাই দিতে বাধা দেয়া, সর্বোপরি বাঙ্গালি হিন্দুদের অবিভক্ত বাংলার মোট জনসংখ্যার ৬৫ ভাগ মুসলমানদের বাদ দিয়ে হিন্দু রাজ্য ভারত প্রতিষ্ঠার চেষ্টার বিপরীতে বিকাশ লাভ করে বাঙ্গালি মুসলমান রাজনৈতিক পরিচয়। এই হিন্দু পুনোরুত্থানবাদি আন্দোলন ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে আগ্রাসনে ঠাকুর পরিবার ও রবীন্দ্রনাথ এর দায় অপরিসীম।১৮৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হিন্দু মেলার পৃষ্ঠপোষক ও উদ্দীপক ছিল ঠাকুর পরিবার।কালিদাসের প্রাচীন ভারত,তপোবন আর ব্রাম্মন্যবাদের মহিমায় সমানভাবে মুগ্ধ রবিন্দ্রনাথ জীবনের পরিনত বয়স পর্যন্ত ছিলেন এই ব্রাম্মন্যবাদের একনিষ্ঠ সমর্থক। যেই ব্রাম্মন্যবাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ভারতের নিন্মবর্নের হিন্দুদের বড় অংশ প্রথমে বৌদ্ধ ও পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছে।রবীন্দ্রনাথের এই বিশ্বাস ই তাকে তার সাহিত্যকর্ম ও রাজনৈতিক অবস্থান এ পরিচালিত করেছে।

১৮৮১ সালে একুশ বছর বয়সে প্রকাশিত রুদ্রচন্ড নাটিকায় রবীন্দ্রনাথ মুসলমান সুলতান মুহম্মদ ঘুরিকে ম্লেচ্ছ সেনাপতি ও তস্কর বলে গালি দেন।যারা ম্লেচ্ছ শব্দের অর্থ জানেন না তাদের জন্য বলে রাখা ভাল ম্লেচ্ছ শব্দের অর্থ অসভ্য জাতি ও তস্কর অর্থ চোর বা দস্যু ।কবির ভাষায়

উর্দ্ধকন্ঠে কব আমি আজ রাজপথে গিয়া,

ম্লেচ্ছ সেনাপতি এক মহম্মদ ঘুরী

তস্করের মতো আসে আক্রমিতে দেশ!

তপোবন ও ব্রাম্মন্যবাদে মুগ্ধ রবীন্দ্রনাথে কাছে তখন মুসলমানরা ছিল চোর, দস্যু ও অসভ্য জাতি। অথচ রবীন্দ্রনাথ যখন এই নাটিকা লিখতেছেন তখন মুসলমানরা ভারতের অবিচ্ছেদ্ধ অংশই নয় বাংলায় তারা সংখ্যা গরিষ্ঠ। যেই কবি বাঙ্গালি মুসলমানকে বাংলার অংশ বলেই স্বীকার করেন নি সেই কবির কাছে বাঙ্গালিত্বের পাঠ নেয়া বাংগালি মুসলমানের জন্য কতটুকু শোভনীয়?

ভারতে মুঘল শাসনামলে হিন্দুদের প্রতি কোন ধর্মীয় আগ্রাসনের কথা কোন ইতিহাসবিদের লেখায় কখনো আসে নি। অথচ রবিন্দ্রনাথ তার প্রার্থনাতীত দান কবিতায় লিখেনঃ

নবাব কহিল,মহাবীর তুমি,

তোমারে না করি ক্রোধ-

বেণীটি কাটিয়া দিয়ে যাও মোরে

এই শুধু অনুরোধ।

তরুসিং কহে, করুণা তোমার

হৃদয়ে রহিল গাঁথা-

যা চেয়েছ তার কিছু বেশি দিব

বেণীর সঙ্গে মাথা।

রবীন্দ্রনাথের এই ইতিহাস বিকৃতির কারণ শুধু মাত্র ব্রাম্মন্যবাদের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস নই বরং মুসলমানদের প্রতি বিদ্ধেষপূর্ণ মনোভাব।

অধ্যাপক আহমদ শরীফের ভাষায়ঃ

“ছয়শ বছর ধরে প্রবল এমন এক বিদ্যা ও বিত্তবান জ্ঞান-কৃতি-কীর্তিবহুল জাতির কিছুই তার আবেগ উদ্রিক্ত করতে পারেনি, এতে মনে হয় বিদেশাগত এই শাসকগোষ্ঠীর প্রতি তার অন্তরের গভীরে প্রচন্ড ঘৃণা-বিদ্ধেষ বা স্থায়ী অশ্রদ্ধা ছিল।অথচ শাসক গোষ্ঠী ইংরেজের প্রতি তার এই বিদ্ধেষ দেখা যায় না বরং ইংরেজদের প্রতি তার ছিল অপরিমেয় অনুরাগ ও গভীর আস্থা আর নিবিড় শ্রদ্ধা।””

বাঙ্গালি মুসলমানদের প্রতি তার বিদ্ধেষমূলক মনোভাবের চুড়ান্ত বহিপ্রকাশ কন্ঠরোধ প্রবন্ধ। এখানে তিনি লেখেনঃ

কিছুদিন হইল একদল ইতর শেনীর অবিবেচক মুসলমান কলিকাতার রাজপথে লোষ্ট্রখন্ড হস্তে উপদ্রবের চেষ্টা করিয়াছিল। তাহাদের মধ্যে বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে উপদ্রবের লক্ষ্যটা বিশেষ রুপে ইংরেজদের প্রতি।তাহাদের শাস্তিও যথেষ্ঠ হইয়াছিল।প্রবাদ আছে ইটটি মারিলেই পাটকেলটি খাইতে হয়; কিন্তু মূঢ়গণ ইটটি মারিয়া পাটকেলের অপেক্ষা অনেক শক্ত জিনিস খাইয়াছিল।অপরাধ করিল দন্ড পাইল; কিন্তু ব্যাপারটি কি আজ পর্যন্ত স্পষ্ঠ বুঝা গেল না।ব্যাপারটি রহস্যাবৃত রহিল বলিয়া সাধারণের নিকট তাহার একটা অযথা এবং কৃত্রিম গৌরব জন্মিল।

বৃটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে গিয়ে মুসলমানরা নির্যাতনের শিকার হওয়ায় রবিন্দ্রনাথ শুধু আনন্দ প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হলেন না। এতে করে যে সাধারণ মানুষের মনে যে আন্দোলনকারীদের প্রতি সহানুভুতি জন্মাল তাতে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করলেন। এতে করে মুসলমানদের প্রতি তার দৃষ্টভঙ্গি সহজ়ে অনুমেয়।

প্রায়শ্চিত নাটকে প্রতাপাদিত্যের মুখে রবীন্দ্রনাথের উক্তিঃ

“খুন করাটা যেখানে ধর্ম সেখানে না করাটাই পাপ। যে মুসলমান আমাদের ধর্ম নষ্ট করেছে তাদের যারা মিত্র তাদের বিনাশ না করাই অধর্ম।”

রামরাজত্বের স্বপ্নে বিভোর রবীন্দ্রনাথের পক্ষে এটা বিশ্বাস করা অবাস্তব নয় যে মুসলমানদের আগমনে তার ব্রাম্মন্যবাদী ধর্ম নষ্ট হয়েছে। ইতিহাস থেকেও জানা যায় বাঙ্গালি মুসলমানদের পূর্বপুরুষ নিন্ম বর্ণের হিন্দুরা ব্রাম্মনদের অত্যাচার, নিপীড়ন ও দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য বৌদ্ধ ধর্মের বাতাবরণে দীর্ঘ দিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসলেও তাদের প্রকৃত মুক্তি মিলে বাংলায় মুসলমান শাসন শুরু হওয়ার পর।মুক্তি দানের কৃতজ্ঞতায় হোক কিংবা ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে হোক মূলত মুসলমান শাসন শুরু হওয়ার পর বাংলার মানুষ গনহারে ইসলাম ধর্মে দাখিল হতে থাকে।তাই রবীন্দ্রনাথের মত ব্রাম্মন্যবাদী শোষকের পক্ষ থেকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ধর্ম নষ্টের অভিযোগ আসতেই পারে।কিন্তু যারা মুক্তি লাভ করেছিল সেই বাঙ্গালি মুসলমান কিভাবে রবীন্দ্রনাথে আস্থা রাখে?

হিন্দু পুনোরুত্থানবাদিরা হিন্দু জাতীয়তাবাদের উপর ভর করে রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্নকে সাধারণ হিন্দুদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য মারাঠী দস্যু শিবাজীকে যখন হিন্দু জাতীয়তাবাদের মহাপুরুষ হিসেবে প্রচারনা চালাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথ সচেতন মনে তাতে সামিল হন।বালগঙ্গাধর তিলক ১৮৯৫ সালের ১৫ এপ্রিল মহারাষ্ট্রে শিবাজী উৎসব প্রতিষ্ঠা করেন।এর আদলে সখারাম গনেশ দেউস্করের প্রচেষ্টায় কলকাতায় শিবাজী উৎসব প্রচলিত হয় ১৯০২ সালের ২১ জুন।রবীন্দ্রনাথ শিবাজি উৎসব কবিতাটি রচনা করেন ১৯০৪ সালের ২৭ আগস্ট এবং ১৬ সেপ্টেম্বর সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শিবাজী উৎসব এ সখারাম গনেশ দেউস্করের লেখা শিবাজি দীক্ষা পুস্তিকায় এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। উৎসবে পুস্তিকাটি বিনামূল্যে বিলি করা হয়।

১৮৯৭ সালে শিবাজি উৎসবের প্রতিষ্ঠাতা বালগঙ্গাধর তিলক উগ্র রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে বন্দী হলে রবীন্দ্রনাথ তার মামলা পরিচালনার অর্থ সংগ্রহ অভিযানে যোগ দেন।((মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান “ আধুনিক বাংলা কাব্যে হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক” )) এথেকে বুঝা যায় রবিন্দ্রনাথের সাথে বালগঙ্গাধরের আদর্শিক সম্পর্ক অনেক পুরোনো।

অথচ বাংলার মুসলমান হিন্দু উভয়ের কাছে শিবাজি ও তার মারাঠী দস্যুরা ছিল একটি আতংকের নাম।শিবাজী ও তার মারাঠী দস্যুরা কখনোয় বাংলা মুসলমান শাসকদের সাথে সরাসরি যুদ্ধে যাওয়ার সাহস করে নি। বরং বাংলা সীমান্তবর্তী অঞ্চল গুলোতে অতর্কিত আক্রমন করে গুপ্ত হত্যা, লুটতরাজ, ধর্ষণ ইত্যাদি অপকর্ম চালাত। এই সব অপকর্মের ভুক্তভোগী ছিল সাধারণ হিন্দু ও মুসলমান প্রজারা।এই সব মারাঠী আক্রমন বর্গী আক্রমন নামে পরিচিত ছিল।যা সমসাময়িক রচিত পুঁথি সাহিত্যে উঠে আসে।কবি গঙ্গারাম রচিত মহারাষ্ট্র পূরাণ পুথির কিছু অংশঃ

তবে সব বরগি গ্রাম

লুটিতে লাগিল।

জত গ্রামের লোক সব পালাইল।

ব্রাম্মণ পন্ডিত পলাএ পুঁথির

ভার লইয়া

সোনার বাইনা পলাএ কত

নিক্তির হড়পি লইয়া।

কাএস্ত বৈদ্য জত গ্রামের ছিল।

বরগির নাম শুইনা সব

পলাইল।

আর নিচের ছড়ার কথা শুনেন নি এমন বাঙ্গালি খুঁজে পাওয়া কঠিন।

খোকা ঘুমাল পাড়া জুড়াল

বর্গী এল দেশে

বুলবুলিতে ধান খেয়েছ,

খাজনা দেব কিসে?

ধান ফুরাল, পান ফুরাল,

খাজনার উপায় কী?

আর কটা দিন সবুর কর,

রসুন বুনেছি।

হিন্দুত্ববাদী চেতনা দাড় করানোর জন্য হিন্দু মুসলমান উভয়ের উপর লুটতরাজ চালানো শিবাজীকে জাতীয় বীর হিসেবে উপস্থাপনের পিছনে কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে তা একটি গবেষনার বিষয়।এটা রবীন্দ্র সমালোচকদের উপর ছেড়ে দিলাম।তবে বাঙ্গালি মুসলমান হিসেবে এতটুকু ধরিয়া লওয়া বোধই অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে এর একটি কারণ মুসলমান শাসকদের রাজ্য আক্রমন।যেই বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের প্রান পুরুষ শুধু মাত্র মুসলমান শাসকের প্রজা হওয়ায় ভিন জাতি মারাঠা দস্যুদের দ্বারা নিজের জাতির লোকের উপর লুটতরাজকে বীরত্বপুর্ণ কাজ হিসেবে প্রচার করে সেই বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ উদ্দেশ্য কি সহজেই অনুমেয়।

বাংলা ১৩৪৩ সালের জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় মোহাম্মদি পত্রিকায় জৈনেক লেখক প্রবেশিকা পরীক্ষায় বাংলা বিষয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন।তাতে রবীন্দ্রনাথের বিচারক কবিতায়

“চলেছি করিতে যবন নিপাত, যোগাতে যমের খাদ্য” পংক্তি ও মানি কবিতায়

“ঔরংগযেব ভারত যবে করিতেছিল খান খান”

পংক্তি শুধু আপত্তিকর নয় বাদ দেয়ার কথা বলেন। এতে ক্ষুব্দ হয়ে রবিন্দ্রনাথ বলেন

“এর পর হয়ত মুসলমানরা প্যারাডাইজ লস্ট এর আর্চফিল্ড ও শেক্সপিয়রের লেডি ম্যাকবেথের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে।”

এই থেকেই বুঝা যায় ততকালীন মুসলমান সমাজ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ এর ধারণা বর্তমান মুসলমান সমাজ সম্পর্কে তসলিমা নাসরিন বা আসিফ মহিউদ্দিনদের ধারণা থেকে খুব বেশি পৃথক নয়।

১৯০৫ সালের বংগভঙ্গের পটভুমিতে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ যখন হিন্দু ধর্মের ভিত্তিতে এক ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন তখন অবিভক্ত বাংলা ৫৫% মুসলমান পূর্ববংগে হিসেব করলে দুই তৃতীয়াংশ।এমনকি ভারতের সকল অঞ্চলে মুসলমান জনগোষ্ঠী সংখ্যায় সহজে দৃশ্যমান।

রবীন্দ্র গবেষক নেপাল মজুমদারের ভাষায়ঃ

“ভারতের জাতীয় ঐক্য বৈদিক ধর্মের ভিত্তিতে গড়িয়া উঠিবে এটাই কবির ততকালীন ধারণা। বংকিমচন্দ্র, রমেশ চন্দ্রের যুগ হইতে যে হিন্দু জাতীয়তা বাদ আস্তে আস্তে আমাদের দেশে পরিপুষ্ট হইতেছিল, ক্রমশই তাহা উগ্রপন্থি রাজনৈতিক আন্দোলনের উপর ভয়ানক প্রভাব বিস্তার করিতে থাকে। রবিন্দ্রনাথ তখনও পর্যন্ত সে প্রভাব হইতে মুক্ত হইতে পারেন নাই।”

মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান তার “ আধুনিক বাংলা কাব্যে হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক” বইতে রবীন্দ্রনাথের অবস্থান কে মুল্যায়ন করেছেন এইভাবেঃ

“১৯০৫ সালের বংগভংগ ও এর পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তা ও মানসলোক ছিল পুরোপুরি সাম্প্রদায়িক এবং মুসলিম বিরোধীতায় আচ্ছন্ন।হিন্দু পুনোরুত্থানবাদীদের গো-রক্ষা সমিতি’ কে কেন্দ্র করে যখন সমগ্র ভারতে ও বাংলায় হিন্দু মুসলিম সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছে, বিভিন্ন অঞ্চলে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা সংঘটিত হচ্ছে তখন রবীন্দ্রনাথ এক হিন্দু ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর।”

যদিও রবিন্দ্রভক্তরা দাবি করেন রবিন্দ্রনাথ তার এই হিন্দুত্ববাদী অবস্থান থেকে শেষ জীবনে সরে এসেছেন।কিন্তু ইতিমধ্যে সময় অনেক অতিক্রান্ত হয়ে গেছে।পদ্মা, মেঘনা, যমুনার অনেক জল বাংলা কে প্লাবিত করে বংগোপসাগরে গিয়ে মিশেছে।বাংলা ও ভারতে সঙ্ঘটিত হয়েছে একটির পর একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।ভারতের মুসলমান তথা বাঙ্গালি মুসলমানরা নিজস্ব পথে চলে গেছে অনেক দূর, নিজস্ব লক্ষ্য নিয়ে নিজস্ব গন্তব্যের পথে।

বিষয়: বিবিধ

২০৮৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

371639
১০ জুন ২০১৬ রাত ০৮:০৫
হতভাগা লিখেছেন : যে রবীন্দ্রনাথ অত্র অন্চলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা করেছিলেন সেই ঢাবিতে রবীন্দ্র চর্চা হয় সবচেয়ে বেশী ।

ব্যাপারটা খুবই আত্মগ্লানিকর
১০ জুন ২০১৬ রাত ০৯:১২
308384
কানা বাবা লিখেছেন : সহমত
371645
১০ জুন ২০১৬ রাত ১০:২০
শেখের পোলা লিখেছেন : আমরাতো ক্রমশঃ হিন্দুত্বের পথেই এগিয়ে চলেছি। আমাদের এমন একদিন আসবে যে, পূঁজা পার্বণে আমাদের অভ্যস্থ করানো হবে আর বাঙ্গালীত্ব বজায় রাখতে রবীন্দ্র চরণে অর্ঘ নিবেদন করতে হবে। হায়রে আমাদের দাদা নানারা, কি বুছে আমাদের পাকিস্তানী মুসলীম করেছিলে, যাতে করে আমাদের কাঙ্খীত গন্তব্যে পৌঁছতে অযথা ২৪ বছর বিলম্বিত করে দিলে।
371652
১০ জুন ২০১৬ রাত ১১:৪৮
মোঃ কবির হোসেন লিখেছেন : “খুন করাটা যেখানে ধর্ম সেখানে না করাটাই পাপ। যে মুসলমান আমাদের ধর্ম নষ্ট করেছে তাদের যারা মিত্র তাদের বিনাশ না করাই অধর্ম।”
আমি রবিন্দ্রনাথ সমন্ধে এখানে বলতেচাই
তার আকৃতি মানুষের ছিল,ভিতরটা ছিল বন্য প্রাণ।খুব সুন্দর পোষ্ট করেছন,ধন্যবাদ।ভাল থাকবেন।শুভেচ্ছা রইল।

371772
১২ জুন ২০১৬ দুপুর ০১:০২
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : মন্তব্যটি পোস্ট রিলেটেড নয়। রমাদান নিয়ে ব্লগে আয়োজন চলছে। অংশ নিতে পারেন আপনিও। বিস্তারিত জানতে-

Click this link

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File