শেখ মুজিব : ক্ষমতার রাজনীতি ও মুজিববাদি চেতনার অনুসন্ধান
লিখেছেন লিখেছেন কানা বাবা ০৮ জুলাই, ২০১৩, ১২:২৭:৩৩ দুপুর
শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য নাম। আওয়ামীলীগারদের কাছে পীর তুল্য। কট্টর আওয়ামী বিরুধীরাও তার সমালোচনা করার সাহস খুব একটা করেন না। বাংলাদেশের জন্মের ধারাবাহিক ইতিহাসের প্রতিটি ঘটনাক্রমের সাথে তিনি এতটায় উতপ্রুত ভাবে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন বা জড়িয়ে গিয়েছিলেন যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস তাকে ছাড়া অসম্পূর্ন এটাকে মানতেই হবে । পাড় আওয়ামী সমর্থকরা একধাপ এগিয়ে বলেই ফেলেন শেখ মুজিবের জন্ম না হলে বাংলাদেশেরই জন্ম হত না। তাদের এই অতিউক্তি নিয়ে তর্কে যাওয়ার কোন মানে হয় না। কারন জনগন যখন পরিবর্তনের প্রয়োজন অনুভব করে তখন তারা নেতা আসার জন্য অপেক্ষা করে না নিজেরায় নেতা তৈরি করে নেই।
এই নোটের বিষয় শেখ মুজিব না আসলে বাংলাদেশ হত কি হত না এটা না। শেখ মুজিবের একটা রাজনৈতিক স্ট্যান্ড বের করার চেষ্টা করা। কোন রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন শেখ মুজিব ? সমাজতন্ত্র, পুজিবাদী গনতন্ত্র , নাকি নিজেই কোন রাজনৈতিক দর্শনের সৃষ্টি করে যাওয়া চেষ্টা করেছেন ? যাকে আওয়ামীলীগাররা শেখ মুজিবের আদর্শ বলে থাকেন এবং নিজেদের সেই আদর্শের সেনা বলে দাবি করে থাকেন। যদি তাই হয়ে থাকে তবে কি সেই আদর্শ। এই সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজায় এই নোটের উদ্দেশ্য।
শেখ মুজিবের রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনার শুরু মূলত ১৯৩৬ সালের প্রথম ধিকে । তখন সুভাষ চন্দ্রের স্বদেশী আন্দোলন ভারতবর্ষের তরুনদের কাছে ছিল এক মাদকতার নাম। বয়সে তরুন মুজিব সুভাষ চন্দ্রের বক্তৃতা শুনে এই বাম পন্থী আন্দোলনে জড়িয়ে পরেন।
“স্বাধীনতা আনতে হবে, আমিও সুভাষ বাবুর ভক্ত হয়ে গেলাম। আর স্বদেশী আন্দলনের লোকদের সাথে মেলামেশা করতে লাগলাম ”। সূত্র ঃ অসমাপ্ত আত্বজীবনী।
কিন্তু এই বামপন্থী রাজনীতি তিনি বেশিদিন করেন নি। ১৯৩৮ সালে এক হিন্দুর মাথা ফাটানো নিয়ে মামলা হলে হিন্দু বিচারক জামিন না দিয়ে শেখ মুজিবকে জেলে পাঠায় এই জেদ থেকে জেল থেকে বের হয়ে ততকালীন বাংলার শ্রমমন্ত্রী ও বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল মুসলিম লীগ তথা বিপিএমএল এর সাধারণ সম্পাদক সোহারাওয়ার্দির সাথে দেখা করে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগে যোগ দেন। এবং নিজে সম্পাদক থেকে মুসলিমলীগ ও ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ শাখা গঠন করেন। বামপন্থী আদর্শ ছেড়ে গ্রহন করলেন ইসলামী ভাতৃত্বের আদর্শ।
“তখন রাজনীতি শুরু করি ভীষণ ভাবে। সভা করি বক্তৃতা করি । খেলার ধিকে আর নজর নাই। শুধু মুসলিম লীগ আর ছাত্রলীগ। পাকিস্থান আনতেই হবে নতুবা মুসলমানদের বাঁচানোর উপায় নাই। খবরের কাগজ আজাদ যা লিখে তাই সত্য বলে মনে হয়”। সুত্রঃ অসমাপ্ত আত্বজীবনী।
সেই থেকে মুজিবের মুসলিম লীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের পথ চলা শুরু। আরো সঠিক করে বললে সোহারাওয়ার্দির একনিষ্ঠ কর্মী যেটা আমরা তার পরবর্তি রাজনৈতিক অবস্থান থেকে পরিষ্কার বুঝতে পারি। সোহারাওয়ার্দি তথা মুসলিম লীগের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে শেরে বাংলা বিরুধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশ ভাগের সময়ের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় মুসলমানদের পক্ষাবলম্বন , দেশ ভাগের পর জিন্নাহ সোহারাওয়ার্দির ক্ষমতার দন্ধে মুসলিম লীগে ভাঙ্গন দেখা দিলে সোহারাওয়ার্দিপন্থী মুসলিম লীগ কর্মীদের সংগঠিত করে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনে ভুমিকা রাখেন। আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের সময় পূর্ব বাংলার অবিসংবাদিত নেতা লাল মাওলানা নামে পরিচিত মাওলানা ভাসানীকে পূর্ব বাংলার মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করা হবে বলে শেখ মুজিব ও সোহারাওয়ার্দি মিলে আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতির আসনে বসান। এর কারন ছিল মাওলানার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে পুর্ব বাংলার মানুষের সমর্থন লাভ। এবং এতে তারা সফল ও হন। কিন্তু অল্প কিছুদিনেই মাওলানা ভাসানী তাদের ক্ষমতার লিপ্সা বুঝতে পারেন। পাক ভারত সামরিক চুক্তিকে কেন্দ্র করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সোহারাওয়ার্দির সাথে পার্টি প্রেসিডেন্ট ভাসানী দন্ধ চরমে উঠলে ভাসানী আওয়ামী লীগ ছেড়ে ন্যাপ গঠন করেন। আজীবন ক্ষমতার রাজনীতি করে যাওয়া শেখ মুজিব এবারও ক্ষমতাসীন সোহারাওয়ার্দির পক্ষ নিলেন। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবের একদলীয় বাকশাল গঠনকে বৈধ করার জন্য আওয়ামীলিগাররা শেখ মুজিবকে বামপন্থী বলে প্রচার চালায়। অথছ এক্ষেত্রে মুজিব সাম্রাজ্যবাদী চুক্তির পক্ষে মাওলানা ভাসানীর মত অবিসংবাদিত বাম ধারার রাজনীতিককে বাদ দিয়ে ক্ষমতাসীন সোহরাওয়ার্দির পক্ষে গেলেন। মুজিবের ক্ষমতাসীনদের লেজুরবৃতির রাজনীতির সুন্দর মুল্যায়ন করেছে আহমদ ছফা......
“যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশে একটি মধ্যশ্রেণী গড়ে না উঠেছে ততদিন শেখ মুজিব পশ্চিমা পাকিস্তানি ধনিকদের লেজুড়বৃত্তি করেছেন, বাঙালি স্বার্থের বিরোধিতা করতেও কুণ্ঠিত হননি। অনেককাল পর্যন্ত ধনিকদের মতাদর্শই তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ ছিল। তাঁর মতো ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির এমন একনিষ্ঠ সেবক তৎকালীন পূর্বপাস্তিানে দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যেত কি না সন্দেহ আছে” রাজনৈতিক প্রবন্ধ আহমদ ছফা।
১৯৪৮ সালে মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হলে অন্যতম উদ্যোক্তা ভাসাসৈনিক অলি আহাদ সাম্প্রদায়িক সংগঠন করার বিরুদ্ধে দাঁড়ালেও শেখ মুজিব মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করার পক্ষে জোরালো অবস্থান গ্রহন করেন।
“১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি তারিখ ফজলুল হক মুসলিম হলের এসেম্বলি হলে এক সভা ডাকা হল, সেখানে স্থির হল একটা ছাত্র প্রতিষ্ঠান করা হবে। যার নাম হবে পূর্ব পাকিস্থান মুসলিম ছাত্রলীগ” । নইমুদ্দিনকে কনভেনর করা হল। অলি আহাদ এর সদস্য হতে আপত্তি জানালেন। কারন সাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান করবে না। পূর্ব পাকিস্থান ছাত্রলীগ নাম দিলে সে থাকতে রাজি আছে। আমরা তাকে বুঝাতে চেষ্টা করলাম”। সুত্রঃ অসমাপ্ত আত্বজীবনী।
৬০ এর দশক ছিল মুলত শেখ মুজিবের রাজনৈতিক উত্থানের দশক। পূর্ব বাংলার মানুষের মধ্যে নিজেদের বঞ্চনার হিসেব দিন দিন পরিষ্কার হতে লাগল এবং পশ্চিমের শাসকদের প্রতি ক্ষোভ বাড়তে শুরু করে। শেখ মুজিবের নেতৃত্ব আওয়ামীলীগ এই সুযোগটা গ্রহন করে। পূর্ব বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে ভোটের রাজনীতিতে পূর্ব পাকিস্থানের একক রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আভির্ভুত হয়।
১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমানকে গণসম্বর্ধনা দেওয়া হয়৷ সেই সভায় ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে সভার সভাপতি তোফায়েল আহমদ শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন৷ যদিও স্বাধীনতার পর জাসদ নিয়ন্ত্রিত ডাকসু ছাত্র হত্যার অভি্যোগে এই উপাধি ফিরিয়ে নেই।
১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন৷ এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ভূট্টো পাকিস্তানের দুই প্রদেশের জন্য দুই প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব দিলে শেখ মুজিব তা প্রত্যাখান করেন। প্রস্তুতি নিতে থাকেন অবিভক্ত পাকিস্থানের প্রধান মন্ত্রী হওয়ার। এই উদ্দেশ্যে আওয়ামীলীগ সংবিধান রচনার জন্য একটা কমিটি গঠন করে এবং একটা খসড়া সংবিধান প্রনয়ন করে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও ভুট্টো ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকলেও মুজিব শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলেন। ২৫ মার্চ সন্ধায় গনহত্যার নির্দেশ দিয়ে ইয়াহিয়া খান যখন পূর্ব পাকিস্থান ত্যাগ করেন তখনও মুজিব একটা ফোন কলের আশায় ছিলেন।
শেখ মুজিব তখনো ১ টি ফোন কলের অপেক্ষায় ছিলেন। এবং ডঃ কামাল হোসেনকে বার বার জিজ্ঞেস করছিলেন কোন ফোন আসছে কিনা। প্রতিবারই উত্তর ছিল না সূচক। ফোনটি আসার কথা ছিল লেঃ জেঃ পীরজাদার কাছ থেকে। কারন ইয়াহিয়া বলেছিলেন তার ভাষন প্রচারের আগে পীরজাদার সাথে শেখ মুজিবের ১ টি ছোট বৈঠক হবে। সূত্রঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, জীবন ও রাজনীতি ১ম খন্ড। সম্পাদক মোনায়েম সরকার, বাংলা একাডেমী ২০০৮।
আর্মি ক্র্যাকডাউন নিশ্চিত হলে অন্যান্য আওয়ামিলীগ নেতাদের আত্বগোপনে চলে যেতে বলে নিজে আত্বসমর্পন করেন পাকিস্থান বাহিনীর কাছে। ২৫ মার্চের গনহত্যার জন্য শেখ মুজিবের দায়ভার সুস্পষ্ট হয় আহমদ ছফার এই উক্তিতে।
“গোটা জাতি যখন চূড়ান্ত সংগ্রাম কাঁধে নেওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত তিনি জনগণকে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য তৈরি না করে তাদেরকে একটার পর একটা তামাশার মধ্যে ঠেলে দিয়ে অনাবশ্যক সময় হরণ করেছেন। আর ইত্যবসরে পাকিস্তানিরা জাহাজে প্লেন বোঝাই করে পশ্চিমাঞ্চল থেকে সৈন্য এবং মারণাস্ত্র এনে সেনা ছাউনিগুলি বোঝাই করে ফেলেছে। সেই সম্ভাবনায়ময় সময়ের কোনও সুযোগ তিনি গ্রহণ করেন নি”। রাজনৈতিক প্রবন্ধ- আহমদ ছফা
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর শেখমুজিব আবির্ভূত হন একজন ফ্যাসীবাদী নেতা রূপে। ক্ষমতার নেশায় তিনি কখনও প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন,কখনও প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। যে শেখ মুজিব নিজে বহু বছর লড়েছেন বহু দলীয় গনতন্ত্রের জন্য কিন্তু ক্ষমতায় এসে গদি ধরে রাখার জন্য টেনে নামালেন গনতন্ত্রের দড়ি। কখনও বা জরুরী আইন জারি করে জনগণের সকল নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়েছেন এবং সকল ক্ষমতা নিজে কুক্ষিগত করেছেন। রক্ষী বাহিনী গঠন করে বিরুধী দমন, স্বজনপ্রীতি দুর্নীতি তাকে আবির্ভূত করে এক দানব রুপে। ধীরে ধীরে সাধারন মানুষ তার ধিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকে। কিন্তু মুজিব যতই জনবিচ্ছিন্ন হতে থাকেন ততই সব ক্ষমতা নিজের হাতের মুঠোই আনার জন্য উঠেপড়ে লাগলেন। এরই ধারাবাহিকতায় শেখ মুজিরেব হাতে সর্বময় ক্ষমতা তুলে দেয়ার স্বার্থেই ১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুযারিতে শাসনতন্ত্রে আনা হয় সংশোধনী। মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে ২৯৪জন পার্লামেন্ট সদস্যের ভোটে পার্লামেন্টারী পদ্ধতির সরকার রূপান্তরিত হয় প্রেসিডেন্সিয়াল ফরমে । শেখ মুজিব হন ৫ বৎসরের জন্য অর্থাৎ ১৯৮০ সাল অবধি নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারি প্রেসিডেন্ট এবং সে সাথে একদলীয় রাজনীতির সর্বেসর্বা। জনবিচ্ছিন্ন শেখ মুজিব জনতার আদালতে তথা ভোটে যাওয়ার সাহস করেননি। প্রতিষ্ঠা করেন, দেশের একমাত্র রাজনৈতিক দল বাকশাল। তালা ঝুলিয়ে দেন অন্যান্য দলের দফতর গুলিতে। ফরমান জারি করেন, ১৯৭৫ সালের ২৫শে মে’র মধ্যে সকল সংসদ সদস্যকে বাকশালে যোগদান করতে হবে নইলে বাতিল ঘোষিত হবে তাদের সংসদ সদস্যপদ। জেনারেল ওসমানী ও ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বাকশালী নীতির বিরোধীতা করে পদত্যাগ করেন। এর আগেই হারিয়েছেন আরেক বিশ্বস্ত সহযোগী তাজউদ্দীন আহমেদকে। নিষিদ্ধ করা হয় চারটি সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা ছাড়া বাকি সব পত্রিকা । একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বস্তুত তিনি গণতন্ত্রকে সেদিন কবরদিয়েছিলেন।
আজীবন ক্ষমতার রাজনীতি করা শেখ মুজিবের ক্ষমতার লোভ স্পষ্ট হয় আওয়ামীলীগ নেতা অলি আহাদ ও তাজউদ্দিনের এই কথোপকথনে...
“১১ই জানুয়ারি (১৯৭২) টেলিফোন বাজিয়া উঠিল। রিসিভার তুলিয়া একটি পরিচিত কিন্তু অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত কন্ঠস্বর শুনিতে পাইলাম। কন্ঠস্বরটি তাজউদ্দিন আহমদের। কলেজ জীবন হইতে বন্ধু টেলিফোনে তাজউদ্দিন কুশলাদি জিজ্ঞাসার পর আমাকে বলেন- “শেখ সাহেবকে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন করিবার সিদ্ধান্ত লইয়াছি এবং প্রস্তাবও করিয়াছি। কারণ তিনি যে কোন পদেই বহাল থাকুন না কেন, তাঁহার ইচ্ছা-অনিচ্ছাতেই রাষ্ট্রীয় প্রশাসন পরিচালিত হইবে। শেখ সাহেবের মানসিক গড়ন তুমিও জান; আমিও জানি। তিনি সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণে অভ্যস্থ্। অতএব ক্ষণিকের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য পার্লামেন্টারী কেবিনেট পদ্ধতির প্রশাসন প্রহসনে পরিণত হইবে। তিনি প্রেসিডেন্ট পদে আসীন থাকিলে নিয়মান্ত্রিক নাম-মাত্রদায়িত্ব পালন না করিয়া মনের অজান্তে কার্যতঃ ইহাকে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতিরপ্রশাসনে পরিণত করিবেন। এই দিকে প্রেসিডেন্ট পদে বিচারপতি আবু সাঈদচৌধুরীকে নির্বাচনের কথা ভাবিতেছি। তোমার মত কি?” তদুত্তরে তাঁহাকে বলিলাম- “তোমার সিদ্ধান্ত সঠিক। নামমাত্র প্রেসিডেন্টের ভূমিকা পালন শেখ সাহেবের শুধু চরিত্র বিরুদ্ধ হইবে না; বরং উহা হইবে অভিনয় বিশেষ। কেননা- ক্ষমতার লোভ তাঁহার সহজাত।”
বিষয়: বিবিধ
২৩৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন