আওয়ামীলীগের স্যেকুলার রাজনীতি : ভন্ডামীর সাতকাহন

লিখেছেন লিখেছেন কানা বাবা ২৭ জুন, ২০১৩, ০৩:১১:৩৯ দুপুর

যখনই নির্বাচন আসে তখনই দেখা যায় আওয়ামী লীগ ও আওয়ামীপন্থী কিছু প্রগতি ব্যবসায়ী  স্যেকুলারিজমের ধুয়া তোলে সংখালঘু সম্প্রদায়ের ভোট টানার চেষ্টা করে। তাদের পোশ্য এসব চিহ্নিত বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী ও পারফর্মারদের দিয়ে নামে বেনামে কিছু সংগঠন তৈরি করা হয়। এসব সংগঠনের প্রায় প্রত্যেকটাতেই গুটিকয়েক চিহ্নিত ব্যক্তিকেই ভূমিকা রাখতে দেখা যায়। এরা বিভিন্ন ভাবে আওয়ামীগের ধিকে সংখালঘু সম্প্রদায়ের ভোট টানার চেষ্টা করে।

 

স্যেকুলারিজমের কথা বলতে গিয়ে যে কথাটা বলতে বলতে আওয়ামীলিগের লোকজন মুখে ফেনা চলে আসে তা হল স্যেকুলারিজম মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ। অথচ মুজিবনগর সরকার যে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দেয় তাতে স্যেকুলারিজমের নাম গন্ধও পাওয়া যায় না। মুজিব নগর সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে মূলনীতি ছিল তিনটা

১) জনগণের জন্য সাম্য

২) মানবিক মর্যাদা ও

৩) সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা

সরাসরি ঘোষনাপত্র তুলে ধরলে এরকম...

 

We the elected representatives of the people of Bangladesh as honor bound by the mandate given to us by the people of Bangladesh whose will is supreme, duly constituted ourselves into a Constituent Assembly, and

Having held mutual consultations, and In order to ensure for the people of Bangladesh equality, human dignity and social justice Declare and constitute Bangladesh to be sovereign peoples' Republic.

 

মূলত ক্ষমতায় যেতে না পারার ক্ষোভ এবং ক্ষমতায় যাওয়ার তুমুল উন্মাদনা থেকেই আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম। তাই ক্ষমতা নিয়ে কাড়াকাড়ি বাড়াবাড়ির স্বভাব আওয়ামী লীগের জন্মগত দোষ। এর জন্য তারা আজ স্যেকুলার বেশ ধরে ত কাল পাক্কা মুসলমান সাজে।

 

আওয়ামী লীগের জন্ম মুসলিম লীগের পেট থেকে যার জন্মই হয় ধর্মের ভিত্তিতে। তখন তার নাম ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ। মুসলিম লীগের কিছু নেতাকর্মী মূল দল থেকে বেরিয়ে এসে এ দল গঠন করেছিলেন। কারা ছিলেন তারা ? যারা মুসলিম লীগের অন্তর্দলীয় দ্বন্দ্বে পর্যুদস্ত হয়ে নেতৃত্ব ও ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। আওয়ামীলীগাররা বলতে পারে মুসলিম লীগের সাথে আদর্শিক দন্ধ থেকে আওয়ামীলীগ আলাদা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হল  মুসলিম লীগের আদর্শ লক্ষ্য থেকে তাদের আদর্শ লক্ষ্য আলাদা কিছু ছিল না। আওয়ামী মুসলিম লীগের (বর্তমান আওয়ামীলীগ) গঠনতন্ত্রের ১১টি উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের দশম ধারাটি ছিল : To dessiminate knowaedge of Islam and its high moral and religius Principles among people.’  (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস ও দলিলপত্র, গতিধারা, ঢাকা : পৃষ্ঠা- ৪৫) আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রকৃতপক্ষে ছিল দ্বিতীয় মুসলিম লীগ।  দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্থানের জনগনের ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট ব্যবহার করেই ক্ষমতায় যাওয়ায় ছিল যাদের মূল উদ্দেশ্য।

 

নিজেদের স্যেকুলার দাবি করলেও ক্ষমতায় যাওয়ার পথ মসৃণ করতে প্রতিনিয়ত তারা ধর্ম ভিত্তিক দল গুলোর সাথেই একাট্টা হয়েছে।

 

১) ১৯৫৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী মুসলিম লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলামী এবং গণতন্ত্রী দল মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে যে ২১ দফা কর্মসূচি দিয়েছিল তাতে ধর্মনিরপেক্ষতার কোন নাম গন্ধ ছিল না বরং স্পষ্ট করে উল্লেক ছিল ক্ষমতায় গেলে কুরআন ও সুন্নাহর মৌলিক নীতির খেলাপ করে আইন প্রণয়ন করা হবে না এবং ইসলামের সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে নাগরিকগণের জীবন ধারণের ব্যবস্থা করা হইবে।   (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস ও দলিলপত্র, গতিধারা ঢাকা ; পৃষ্ঠা ৮৩)

 

২) ১৯৬৯ সালে আইউব খানের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করার জন্য ৮টি রাজনৈতিক দল নিয়ে যে ডেমোক্র্যাটিক অ্যাকশন কমিটি (ডাক) গঠন করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ ছাড়াও তার অন্যতম প্রধান শরিক ছিল জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম ও কাউন্সিল মুসলিম লীগ। ১৯৯৬ এ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গাট ছাড়া বাধে বর্তমানে সাপে নেওলে সম্পর্ক জামাতের সাথে।২০০৭ এর নির্বাচনের হাওয়া শুরু হলে ঘোষনা দেয় খেলাপতে মজলিসের সাথে জোট করার।

 

ক্ষমতায় যেতে আওয়ামীলীগ একধিকে স্যেকুলারিজমের ধোঁয়া তুলে সংখ্যালঘুদের ভোট টানার চেষ্টা করে আবার একই সাথে নিজেদের পাক্কা মুসলমান হিসেবে তুলে ধরে সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমানদেরও ও হাতে রাখার চেষ্টা করে।

 

১) ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জন্য একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে। এই সংবিধান শুরু হয় In the name of Allah, the Beneficial, Merciful… দিয়ে। এই প্রস্তাবিত সংবিধানের ৭ম অনুচ্ছেদের বলা হয় To enable the Muslims of Pakistan, individually and collectively, to order their lives in accordance with the teachings of Islam as set in the Holy Qur’an and the Sunnah. (আওয়ামী লীগ সংবিধান কমিটি কর্তৃক ৬ দফার ভিত্তিতে প্রণীত পাকিস্তানের খসড়া শাসনতন্ত্র (অংশ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র, দ্বিতীয় খণ্ড, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদশ সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা, ১৯৮২, পৃষ্ঠা ৭৯৩)।

প্রস্তাবিত এই সংবিধানে সকল নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলা হয়। আবার মুসলমানদের ভোট হাতে রাখার জন্য বলা হয়  “মুসলমানরা যাতে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হবে । বলা বাহুল্য, পাকিস্তানি সামরিক জান্তা আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে এই সংবিধানই কার্যকর হত।

 

 

২) ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের প্রচার দফতর একটি সার্কুলার জারি করে। সেটি শুরু হয় আল্লাহু আকবার দিয়ে, আর জয় বাংলা বলে শেষ করার আগে লেখা হয় : স্মরণ করুন আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অতীতের চাইতে ভবিষ্যৎ নিশ্চয়ই সুখকর। বিশ্বাস করুন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নিকটবর্তী।

 

৩) ১৯৭১ সালের ২০ মে হিন্দুস্তান টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এইচ এম কামারুজ্জামান বলেন, Our struggle is not opposed to Islam. The value and teachings of Islam shall be preserved. (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস ও দলিলপত্র, গতিধারা, ঢাকা : পৃষ্ঠা ৪৫)

 

৪) ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর ভারত কর্তৃক স্বীকৃতি পাওয়ার পরদিন  অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম জাতির উদ্দেশে দেয়া তার ভাষণে প্রথম বাংলাদেশের মূলনীতি হিসেবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা  শব্দ  উচ্চারণ করেন। পরদিন অর্থাৎ ৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদও শব্দটি উচ্চারণ করেন। আওয়ামী লীগ ইতঃপূর্বে কখনই  স্যেকুলাজমের কথা না বললেও  ডিসেম্বর মাসে এসে আমরা এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করি। বলা যায় দিল্লীকে সন্তুষ্ট করে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের ক্ষমতা লাভই এর মূল উদ্দেশ্য। স্বাধীনতার পর ইসলামিক ফাউন্ডেশন বন্ধ ও ধর্মের ভিত্তিতে কোন সংগঠন করা যাবে না এই প্রজ্ঞাপন জারি করে নিজেকে স্যেকুলার দল হিসেবে বাইরের শক্তির সমর্থন লাভের চেষ্টা করে। কিন্তু জনপ্রিয়তা যখন তলানিতে ঠেকে তখন এই ইসলামিক ফাউন্ডেশন আবার চালো করে মুসলমানদের সেন্টমেন্ট নেয়ার চেষ্টা করে।

 

৫) ১৯৯৬ সালে নির্বাচনের আগে আওয়ামীলীগ হাজির হয় পুরো নতুন মোড়কে। অতীতের জন্য জনগণের কাছে মাফ চাওয়া, মাথায় স্কার্ফ পরা, নেতাকর্মীদের মসজিদে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ নৌকার মালিক তুই আল্লাহ স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় যায়।

 

মুখে স্যেকুলারিজমের ফেনা তুললেও আওয়ামীলীগ মুলত ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ধর্ম ও ধর্মীয় গোষ্ঠীকে যখন যেভাবে দরকার ব্যবহার করেছে। বলা যায় জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামিলীগ এই ধর্ম ব্যবসায় জড়িত

@https://www.facebook.com/notes/kana-baba/আওয়ামীলীগের-স্যেকুলার-রাজনীতি-ভন্ডামীর-সাতকাহন/172104719630790

বিষয়: রাজনীতি

১৮৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File