অপূর্ণতা (চারা গল্প)
লিখেছেন লিখেছেন মামুন আহমেদ ১৫ মে, ২০১৩, ০৩:৪৯:০০ দুপুর
১. সকাল বেলা নাসিরের ঘুম ভাঙে দুঃস্বপ্ন দেখে। তার মৃত বাবা তাকে মারার জন্য দৌঁড়াচ্ছে। বৃদ্ধ মানুষ বলে নাসিরের সাথে তাল মিলাতে পারছেনা। নাসির পিয়নের চাকরি করে। মতিঝিলে একটা ছোট অফিসে তার পোষ্টিং হয়েছে। দুলাভাই মমতাজ তাকে এই কাজটি পাওয়ার ব্যপারে অনেক সাহায্য করেছ। বাবা মনসুর আলীর মেলা ধানি জমি ছিল। যমুনার ভাঙনে সব চলে গেলে তার শোক সইতে না পেরে অসুস্থ্য হয়ে মারা যায়। সেই থেকে নাসির পরিবারের সব দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নেয়। বৃদ্ধা মা আর ছোট ছোট দুইটা ভাইয়ের ভরণপোষনের বন্ধবাস্ত তাকেই করতে হয়। ভাই দুইটা অনেক মেধাবী। ওদের লেখাপড়া শেখাতে পারলে সংসারের অভাব আর থাকবেনা। তাই নাসির যত কষ্টই হোক তাদের লেখাপড়ার জন্য সব করতে রাজি আছে। সামান্য বেতনের টকায় সংসার খরচ আর ভাইদের লেখাপড়ার খরচ চালান সম্ভব হয়না। তাই বাড়িতে দু'বিগা জমি বর্গা নিয়েছে ধান চাষ করার জন্য। অধিক ফলনের আসায় উচ্চফলনশীল জাতের ধান বুনিয়েছিল। কিন্তু ভাল ফলনতো হয়ইনি, উল্টা বিনিয়োগের টাকাও উঠেনি। নাসিরের কষ্টের পরিধি বাড়তেই থাকে। দিন দিন বৃদ্ধা মাও যেন শয্যার প্রতি ঝুকে পড়ছে। সব মিলিয়ে নাসির পড়েছে মহা বিপদে।
২. চুরির দায়ে নাসিরের চাকরি চলে গেছে। সে ছিল নিরুপায়। তার সামান্য বেতনের টাকা দিয়ে আর চালাতে পারছিলনা। তবে সে যা করেছে তাকে চুরি বলা চলে না। সে পায়ে হেটে গাড়ী ভাড়া বাঁচিয়ে নিজের কাছে রেখেছিল। প্রায়ই অফিসের কাজে তাকে বাইরে যেতে হয়। অফিস থেকে রিক্সা ভাড়া কিংবা সিএনজি ভাড়া পেতো। সেই টাকা খরচ না করে জমিয়ে রাখত। অফিস সেটা জানতনা। আজ বসের কাছে সে ধরা পড়ে গেছে। নাসিরকে পাঠিয়েছিল ভিসা অপিসে। ব্যাংকক যাবার ভিসা। নাসির ভিসা নিয়ে আসল। কিন্তু অনেক দেরি করে এসেছে। বসের সন্দেহ হয় তাই নাসিরকে জেরা করতে থাকে।
-নাসির, তুমি রিক্সায় যাওনি কেন?
নাসির আশ্চর্য হয়। স্যার জানল কি করে! স্যার নিশ্চয় আরো কিছু জানেন। কাজেই লুকিয়ে লাভ নেই। সত্য কথাই বলা ভাল। স্যার, টাকা নিতে ভুলে গেছি! নাসির সত্য বলতে গিয়েও মিথ্যাই বলে ফেলে। গুড, তাহলে টাকাটা ফেরৎ দাও। বসের কড়া নির্দেশ। নাসির এই নির্দেশের বাইরে যেতে চায় না। তাছাড়া তার অত সাহস ও শক্তি নেই। কিন্তু তার কাছে তো ভাড়ার টাকা নেই। মাটির ব্যাংকে রেখেছিল। স্যার, টাকা ব্যাংকে রেখেছি। নাসিরের কন্ঠস্বর বড়ই করুন শোনায়। বসের গলার তেজ যেন ততই বেড়ে গেছে নাসিরের যতটা বসে গেছে। যাও, তোমার ব্যাংকটিকে নিয়ে আসো। দেখি কত টাকা জমিয়েছো। নাসির ব্যাংক এনে বসের সামনে রাখে। বস সেটাকে ভেঙ্গে দেখেন অনেক টাকা জমেছে। তাহলে প্রতিদিন তুমি এভাবে সময়ের অপচয় করে কাজে ফাঁকি দিয়ে আসছো! বস তাকে ধমকাতে থাকে। নাসির কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে, স্যার, আপনি আমার মা-বাপ! আমাকে মাফ করে দ্যান! মাফ! চোরের কোন মাফ নেই। এক্ষুনি অফিস থেকে বের হয়ে যা, চোরের বাচ্চা চোর!
বিষয়: সাহিত্য
১৩৩৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন