শেষ যাত্রা (ছোট গল্পের সহদর)
লিখেছেন লিখেছেন মামুন আহমেদ ১২ মে, ২০১৩, ০৩:১১:৫১ দুপুর
১.
সকালে যখন ঘুমিয়ে ছিলো স্বপ্নটা তখনই তাকে ঘায়েল করে ফেলে। এমন স্বপ্নও তাকে দেখতে হবে! তার কাছে সবই কেমন ছেলেমানুষির মত মনে হয়। রাত তিনটার আগেই তাকে ঘুমানোর আয়োজনে আত্মনিয়োগ করতে হয়। রাত তিনটা পর্যন্ত মিথিলার সাথে কথা বলে সে। একদিন কথা না বললে, মিথিলা তাকে আর আস্ত রাখেনা। কথার আচড়ে তার শরীরের সব অঙ্গ যেন রক্তাক্ত হয়ে কাতরাতে থাকে। মিথিলা কি মনে করে? সে কি মিথিলাকে ভালবাসেনা? তাহলে সে কেন ভালবাসা পায়না! ভালবাসার মানুষকে কেউ এভাবে আহত করতে পারে! কখনও করেছে কেউ?
২.
দুপুর দুইটা নাগাদ মিথিলার ফোন আসে।
-হ্যালো! শুভ... শোন, আমি বাড়ী যাচ্ছি। ফিরে এসে বাকী কথা বলবো। এখন রাখি... ভাল থেকো... আমি না আসা পর্যন্ত ফোন করবে না... বাই.....
লাইন কেটে যায়। সে কি করবে এখন! যাক, বাবা! অন্তত কিছুদিনের জন্য তো স্বস্তি পাওয়া যাবে। মেয়েটা কি জ্বালাতনই না তাকে জ্বালাত! ফিরে না আসা পর্যন্ত সে ভালই থাকবে! অন্তত রাতে আরাম করে ঘুমাতে তো পারবে। প্রতি দিন একই প্যানপ্যানানি করত! মেয়রা পারেও বটে! পৃথিবির অর্ধেক নারি আর অর্ধেক পুরুষ মানুষ হলে, নারীদের যন্ত্রণায় পুরুষরা তো মরবেই। বেঁচে থাকলেও খুব শান্তিতে থাকতে পারবেনা। শুভর মধ্যে একধরণের প্রফুল্যবোধ লক্ষ করা যায়।
৩.
মিথিলা সেই যে গেছে আর ফিরে আসার নাম নেই। প্রথম প্রথম শুভর কাছে ভাল মনে হলেও এখন আর ভাল লাগেনা। তাহলে কি জাহিদ ফিরে এসেছে? মিথিলার বড় খালার ছেলে। জাহিদ দুবাই থাকে। মিথিলা বলেছিল, জাহিদ তাকে অনেক পছন্দ করে। বিয়েও করতে চায়। কিন্তু মিথিলা তাকে একটুও পছন্দ করেনা। তাকে দেখলেই মিথিলার ভয় লাগে! কি অদ্ভুত চেহার তার! তবে টাকা থাকলে চেহারার প্রয়োজন পড়ে না। মিথিলা কি সেটাই প্রমাণ করল? বিদেশ ফেরৎ খালাত ভাইকে পেয়ে তাকে ভুলেই গেছে! এটাই স্বাভাবিক। তার কি আছে, কিছু স্বপ্ন ছাড়া? পুরান ঢাকায় টিউশনি করে লেখাপড়া করে। তাছাড়া বাড়িতে মা আছে, তাকেও টাকা দিতে হয়। মিথিলাকে সে কি দিতে পারত? কিছুই না।
৪.
এক মাস হয়ে যাচ্ছে, মিথিলা এখনও ফেরেনি। শুভর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে! যাবেই যখন সত্যি কথা বললেই পারতে। এতটুকু সৌজন্যবোধও দেখানোর প্রয়োজন মনে করলেনা! ধন্য তোমার ভালবাসা! মেয়েদের স্বভাবই এমন প্রেম করবে যার তার সাথে আর সংসার করবে টাকাওয়ালা বরের সাথে। ছি! মিথিলা, ছি!...
রাগে শুভ নিজের চুল নিজেই টানতে থাকে। গলির মুখে বের হয়ে শুভ ফোন হাতে নেয়। মিথিলাকে কল করে। কিন্তু প্রত্যেকবারই মিথিলার ফোন বন্ধ পায়। তার নাম্বার হয়ত বিজি করে রেখেছে। তাই দোকান থেকে মিথিলাকে ফোন করবে। কিন্তু দোকানে আর যেতে পারনো। তার আগেই শুভ হোচট খায়! একি দেখল সে! গত মাসের সাত তারিখে সরক দুর্ঘটায় ভার্সিটি ছাত্রী মিথিলা সহ নিহত তিন, আহত সাতজন। ঝাল মুড়িওয়ালার কাছে ছিল পুরাতন পত্রিকা। মিথিলা শেষ যেদিন তাকে ফোন করেছিল, সেদিন ছিল সাত তারিখ বুধবার।
বিষয়: সাহিত্য
১২২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন