দায়ভার না কী অপবাদ?
লিখেছেন লিখেছেন মামুন আহমেদ ০৮ মে, ২০১৩, ০৩:২৬:১০ দুপুর
৫ই মে, সকাল ১১:২০ মিনিট। অফিসের কিছু জরুরী কাজ শেষ করে চোখ রাখি টিভির খবরে। বলে কী! হেফাজতের অবরোধ চলছে শান্তিপূর্ণভাবে! তাও আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নিজেই বলছেন! তার কথায় কোন বিশ্বাস নেই। তিনিই তো বলেছিলেন, জামা'আত-শিবির ও বিএনপির কিছু দূষ্কৃতিকারীদের ধাক্কায় রানা ভবন ধ্বসে যেতে পারে। তার মুখে এমন ভাল খবর শুনে কেন যেন মনটা বিষাদে ভরে গেল।
ভারাক্রান্ত মনে আবার কাজে যোগ দিলাম। লাঞ্চের পরে আবার একটু সময় পেলাম খবর দেখার। হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল। কিন্তু যুবলীগের কিছু কর্মীরা এই কর্মসূচিতে বাধা প্রদান করতে চাইলে হেফাজত কর্মীদের সাথে তাদের সংঘর্ষ বাধে এবং পরবর্তীতে সেটা ভয়ংকর রুপ ধারণ করে। শেষ পর্যন্ত সেটা ছড়িছে পড়ে সর্বত্র। বিকেলে অফিস থেকে বের হয়ে পরি মহা ঝামেলায়। নয়া পল্টনের মসজিদ গলিতে আমার কর্মস্থল। রাস্তায় নেমে তো ভয়ে শেষ। এই বুঝি পুলিশের বুলেট এসে বক্ষছেধ করে। রাস্তায় হাটার মত কোন ফাঁকা যায়গা নেই। সর্বত্র হেফাজত কর্মীদের ঝটলায় পরিপূর্ণ। বাসায় যেতে হবে, পুরান ঢাকার বংশালে। চোখ বন্ধ করে চলতে লাগলাম এবং একসময় বাসায় এসে পৌঁছলাম।
রাতে খবর দেখে অনুমান করলাম, শাহবাগের প্রজন্ম চত্তর উঠিয়ে দিতে সরকার বাধ্য হবে। মতিঝিলের শাপলা চত্তরের সমাবেশ যদি বন্ধ করতে সরকার ব্যর্থ হয় তবে অচিরেই সরকারের পতন ঘটবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনি মতিঝিলের শাপলা চত্তর পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। ওদিকে শাহবাগের প্রজন্ম চত্তরও উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ভালমন্দ দুটো খবরই আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিল। শাহবাগের চত্তর ওঠাতে পুলিশের কোন সমস্যা হবার কার ছিলনা। কিন্তু শাপলা চত্তর! ওখানে যারা ছিল তারা তো জীবন বাজি রেখেই বসেছিল। তারা চলে গেছে কিভাবে? কোথায় গেছে? তারা তো যাবার জন্য আসেনি! তাহলে কী তাদেরকে মুরগী জবাই করার মত জবাই করা হয়েছে? নাকি বন্ধুকের গুলিতে ঝাজরা করা হয়েছে তাদের জিহাদী বুকের পাজর?
বেলা যত গড়াতে থাকে ঘটনার পরিস্থিতি ততই স্পষ্ট হতে থাকে। শাপলা চত্তরে এক নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল সেখানে। দিবালোকের ন্যয় এটা আজ পরিষ্কার।
কিন্তু এই দানবীয় হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী কে?
কেউ বলে সরকার একাই দায়ী। কেউ বলে, হেফাজতের সাথে সাথে প্রধান বিরোধীদলও সমান দায়ী ।
অবরোধ কর্মসূচির নেপথ্যে হেফাজতের দাবী ছিল ১৩ দফা দাবীর বাস্তবায়ন।
হাসিনার সাথে সাথে খালেদাও জানে ১৩ দফা দাবীর বাস্তবায়ন মানেই তাদের আর মসনদে বসার ক্ষমতা থাকবেনা। তাই হাসিনা হেফাজতের দাবী প্রত্যাক্ষান করলেও খালেদা হেফাজতের দাবীকে মৌখিক সমর্থন দিয়েছিলো। হেফাজতের কর্মীরা হয়ত খালেদার সমর্থনকে সত্য বলে ধরে নিয়েছিল। নয়ত খালেদার বক্তব্যে কেন তারা এতটা নির্ভয়ে শাপলা চত্তরে ঘুমানোর আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল? খালেদা তার দলের নেতা-কর্মীদেরকে নির্দেশ দিয়েছিল হেফাজতের পাশ থাকার জন্য। তার নির্দেশমত নেতা কর্মীরা যদি হেফাজতের পাশে থাকত তাহলে হেফাজত কর্মীরা এভাবে প্রাণ হারাত না।
কথা স্পষ্টঃ
খালেদা ছিল মুখাভিনয়ের নায়িকা মাত্র! হেফাজতের মন ভুলানোর জন্য এমন দায়িত্বহীন বক্তব্য সে দিয়েছিল তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকতে পারে না। খালেদার দরকার ভোট। আর হেফাজতের কর্মী সংখ্যা কম নয়। তাদের মন ভুলান বাণী আওড়াতে পারলে অবশ্যই তারা খালেদাকে ভোট দিবে।
হাসিনা এখানের খলনায়িকা! মখা আলমগিরেরা তার অনুগত সহযোগী। আর মিডিয়া তাদের আজ্ঞা পালনেই ব্যস্ত।
এরশাদ চাচা তো আপন প্রাণ বাঁচা বলতেই অজ্ঞান! তার পরও হেফাজতকে কিছুটা সমর্থন দিচ্ছে। তার আশা যদি কিছু ভোট পাওয়া যায়।
আল্লামা আহমদ শফি যততা না ভেবেছিলেন তার থেকেও অনেক বেশি সাহস ছিল তার কর্মীদের মধ্যে। কিন্তু শফি সাহেব কি পারলেন এই সাহসের মর্যদা দিতে? তার বিচক্ষনতার গলদ ছিল। তাইতো এতগুলো নিরাপরাধ তরুণ প্রাণ অকালেই ঝড়ে গেল।
জামা'আত তো সুযোগ সন্ধানীর পরিচয় বরাবরই রেখে চলেছে। তাদের বড় ধরনের একটা সুযোগ ছিল, হেফাজতের সাথে মিশে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার। তারা ভেবেই ছিল তাদের ধান্দায় তার সফল হতে যাচ্ছে। কিন্তু রাজনীতি যে কতটা বিচিত্র আর ভয়কংর হতে পারে সেটা আওয়ামীলীগ আবারো দেখিয়ে দিলো।
সফি সাহেবের বোঝা উচিৎ ছিল রাজনৈতিক স্বার্থপরতার কাছে কিছুটা হলেও কৌশলি হতে হয়।
বিষয়: বিবিধ
১২২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন