আমাদের দরদী মন

লিখেছেন লিখেছেন মামুন আহমেদ ০৭ মে, ২০১৩, ০৫:১০:০৯ বিকাল

মন পাখি তুই কাঁদিস কেন বল ............

সকালে ঘুম ভাঙ্গে কাকের কর্কশ ডাকে যখন মন খারাপ চরমে পৌঁছে। এও সম্ভব, পাখিদের ডাকে ঘুম ভাঙ্গা নাকি মজার ব্যপার! ছোট বেলার দিন গুলো তো এমনই ছিল। কেন বড় হলাম! মানুষ বড় হয় কেন? ছেলে বেলার স্মৃতি মন্থস্থ্য করে নিজেকে দুর্ভাগা ভেবে কষ্ট পাওয়ার জন্য? নাকি ছেলে বেলার পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিঁড়ে নিজেকে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে স্বাধীনতার মুর্ত প্রতিকি ভেবে প্রশান্তি লাভের বিশেষ একটামুহুর্তকে উপভোগ করার জন্য? আসলে মানুষের অপ্রাপ্তিগুলো বড়ই গোঁয়ার টাইপের‍! যতই দিন যায়, হাহাকার যেন ততই বাড়তে থাকে। এর কারণ কি?

মানুষ নিজেকে নিয়ে ভাবতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকে। তাদের মন অনেক দরদী টাইপের। অন্যের কষ্টে কাঁদতে পারা গর্বিত মনোভাবেরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ নয় কী? কখনও অন্যকে কাঁদিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভের প্রচেষ্টা যে কতটা নৃশংস মনোভাবের প্রতিফলন, তাও কিন্তু বোধগম্যের ঊর্দ্ধে নয়! তারপরও মানুষ তার নিজস্ব প্রতিকৃতিতে বড়ই স্বোচ্চার থাকে। কেউ কাঁদিয়ে, আবার কেউ কেঁদে ভাল থাকার ব্যর্থ চেষ্টা করে মাত্র। মানুষের এই সহজাত গুন বড়ই দুর্লব।

মানুষের অতি মানবীয় অথবা দানবীয় গুনাবলী যাই বলা হোকনা কেন, নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব হয়না বলেই হয়ত মানুষ মানুষকে ভালবাসে নয়ত ঘৃণা করে থাকে।

তবে ভালবাসার প্রভাব যাই হোক তাতে মাথা ব্যথার কিছু না থাকলেও ঘৃণার প্রভাবে ব্যথার ঘোরে ঘার থেকে মাথা কেটে ফেলে দিলেও প্রভাব থেকে যায়। তাই ঘৃণা হচ্ছে চরম ঘৃণীত গুনাবলীর মধ্যে অন্যতম। আর যে ঘৃণা করতে পারে সেই পারে মানুষের প্রতি নৃশংস হতে। জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা মানবতার সর্বোৎকৃষ্ট মতবাদ। এই মতবাদের মুখোস পরে যারা মানবতার মর্যাদাকে ভূলুন্ঠিত করতে পারে তারাইতো সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে নিজেদের নারকীয় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে চলছে। আর বেশিরভাগ মানুষ আলো দেখে হাসে আবার আধারে চোখের জল ফেলে। রাতের পিপিঁলিকার মত প্রজ্জ্বলিত আলো দেখে উল্লাস করে জীবন বিলাতেই ব্যস্ত যেন! তারা আলো জ্বালাতেও পারেনা এবং আলো জ্বালানোর কৌশলও জানে না। তারা মাত্র নীরব দ্রষ্টা! নীরবেই কাটে প্রতিটি বসন্ত। তাই তাদের বেচে কী প্রয়োজন? তারা মরছেও যেন মহোৎসবের আয়োজন করে!

বর্তমান বিশ্বের অভিভাবক হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত আমিরিকাতেও মানুষ মরছে। বন্ধুকধারীর গুলিতে নৃশংসভাবে মরছে সেখানকার মানুষ। সিরিয়াতে মরছে ক্ষমতার লোভে মত্ত কিছু মানুষের দ্বারা। লিবিয়াতেও মরেছিল, এখনও মরছে। আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যেও মারা হচ্ছে মানুষ। তাদের বেঁচে থাকার সব অধিকার যেন শেষ হয়ে গেছে। মানুষ মরছে চীন-তিব্বতে। মরছে মায়ানমারের মানুষ। ভারতের নারীরা মরছে ধর্ষীতা হয়ে আর কিছু নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধরা মরছে সাম্প্রধায়ীক দাঙ্গায়। কাশ্মীরের মানুষ মরাটাই এখন রীতি হয়ে গেছে। পাকিস্তানের মানুষ মরছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায়, ড্রোন হামলায় আবার আত্মগাতী বোমা হামলায়। ইরানেও মরছে। ফিলিস্তিন, ইরাক আর আবগানিস্তানের মানুষ আজ মরেই যেন মুক্তির স্বাধ পেয়ে থাকে। কেননা, তাদের যে যাবার আর কোন ঠাই নেই।

বাংলাদেশ আমার অহংকার! আমি বাংলায় গান গায়। বাংলা আমার মায়ের সমান। এমন হাজারো বাণী আমার মগজে লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু এই বাংলার মানুষ কেমন আছে আজ? জানি এর উত্তর কারো অজানা নেই। কিন্তু উত্তর জেনেই বা কি হবে। যে মরছে মরুক,তাতে আমার কি? আমি তো ভালই আছি। যে দিন আমার কোন আত্মীয় কিংবা নিকট আত্মীয়দের মধ্যে কেউ মরে যাবে সে দিন না হয় চোখের একটু জল ফেলে বুকটাকে হালকা করে নেব। সে পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকি! আমার তো দরদী মন। অন্যের কষ্টে কেন কাঁদবো। মানুষ তো সব মরিবার তরে। তা না হলে কেন মরে? মরছে মানুষ, আরো মরুক। শ্মসান হয়ে যাক পুরো দেশ। তাতেও আমার দরদী মনে কোন কষ্ট পাবে না। কারণ সে কারো কাছে ঋণি থাকবে না। কেউ যদি সড়ক দুর্ঘটনায় অথবা বিল্ডিং ধ্বসে মারা যায় যাবে। আমার কি করার আছে? কেউ যদি প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ হারায় তাতেও কোন আপত্তি নেই। কেউ যদি ধর্মীয় আবেগেও মারা যায় যাবে তাতে আমার কী? আমি তো বহাল তবিয়তে আছি! এত মানুষের মৃত্যুতে আমার কোন ক্ষতি নেই বরং আমার স্বার্থ পূরণই বেশি প্রভাবিত হচ্ছে! যত মানুষ মরবে তত খরচ বাঁচবে! খরচ যত কমবে আমার সঞ্চয় ততই বাড়বে। আমার দরদি মন কেন আরো আগে বুঝলোনা এই আপসোসে আমার ঘুম আসেনা। রাতে একলা জেগে থাকি। দিন দিন আমার মধ্যে পশুত্ব প্রস্ফুটিত হলেও আমার ভয়ের কিছু নেই। কেননা আমার দরিদ মন জেনে গেছে তার চার পাশ ভরে আছে ভয়ংকর সব পশুতুল্য মানব দরদি মানুষের প্রেতাত্মার দলে।

বিষয়: বিবিধ

১৭২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File