সেদিনও নেমেছিল ঝুম বৃষ্টি (ধারাবাহিক উপন্যাস)

লিখেছেন লিখেছেন মামুন আহমেদ ১৬ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:৩১:০৯ দুপুর



১.

বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। ঝুম বৃষ্টি। এই বৃষ্টিতে ভিজতে পারলে কি মজাই না হত! ইস! কেন যে জ্বর এসে বাসা বাঁধল এই ছোট্ট শরীরে? সচারচার এলমাকে এতটা বিষন্ন হতে দেখা যায়না। সেদিন রুহুলের সাথে জেদ করে বৃষ্টিতে ভিজেছিল। এমনিতেই সে বৃষ্টি পাগল একটা মেয়ে। রুহুলের ভাষ্যমতে মিষ্টি মেয়ে! এমন মেয়েদেরকে অনেক সাবধানে থাকতে হয়। নয়ত কাক অথবা পিঁপড়ার দল লুট করে নিয়ে যাবে। এলমার ছোট মাথায় একথার কোন অর্থ আপলোড করতে পারে না। আবার রুহুলের কথা অবিশ্বাসও করতে পারেনা। তার চোখে তাকালে সে অনায়াসে কাঁদতে পারে। কাঁদতে তার খুবই ভাল লাগে! কি অদ্ভুত কথা! সে কাঁদতে চাইলেও পারবেনা! রুহুলের তাতে কষ্ট হয়। অসহ্য যন্ত্রনায় কাতরাতে কাতরাতে রুহুল এলমাকে ফোন করে-

-হ্যালো, এলমা?

-জী, স্যার! বলেন।

-কেমন আছো!

-ভাল আছি।

- তাহলে কাঁদছো কেন! তোমাকে না বলছি, কাঁদবেনা, তারপরও কাঁদছো!

-আপনি তো আমাকে দেখছেন না, তাহলে জানলেন কি করে, আমি কাঁদছি!

-সে তুমি বুঝবেনা। দয়া করে কান্না থামাও! প্লীজ, প্লীজ, প্লীজ............

রুহুলের জীবনটাই ছিল মাতৃত্ব মুখর। কিন্তু রুহুল বুঝতে পারে নি মা তাকে ছেড়ে চলে যাবে না ফেরার স্বর্গরাজ্যে। মা যখন বেঁচে ছিলেন তখনও রুহুলের এমন যন্ত্রণায় ছটফট করতে হতো। বিশেষ করে মা যখন তার কথা ভেবে কাঁদতেন!

-স্যার, একটা কথা...... এলমা তার স্বভাবসুলভ ঢঙে কথা বলে।

-কি?

-বাইরে বৃষ্টি। হ্যা অনেক বৃষ্টি, স্যার! একটু ভিজবো!

-তোমার না জ্বর! তাছাড়া, আম্মু আছে না?

-আছে কিন্তু ঘুমাচ্ছে।

-তার সাথে তুমিও ঘুমাও। তোমার হয়ে আজ আমি ভিজবো। কথা ক্লিয়ার?

-ক্লিয়ার............

ফোন রেখে এলমা জানালার কাছে গিয়ে বাইরে হাত রাখে। বৃষ্টির ফোটার ছোঁয়ায় তার হৃদয়ে পুলক লাগে। কি পাগল স্যার! আমার হয়ে সে ভিজবে... হি! হি!...হা! হা!... এই পর্যায়ে এসে এলমার মনে হল সে যেন অনেক বড় হয়ে গেছে। কিছুদিন আগেও তার সমান বুক ছিল। পিরিয়ড শুরু হয়েছে মাত্র মাস সাতেক আগে। সে দৌড়ে চলে আসে আয়না ঘরে। এখানে এলমার আম্মু পার্লার বানিয়েছে। রুমের চারদিক আয়না দিয়ে ঘেরা। এলমা এর নাম রেখেছে আয়নাঘর। এখানে দাঁড়ালে সমস্ত শরীর দেখা যায়। আয়না ঘরে প্রবেশ করে এলমা অবাক হয়ে নিজেকে দেখতে থাকে। সে যেন আজ অসংখ্য এলমা হয়ে রুহুলকে সম্মোহন করে চলছে। কি আজব কথা, এই এলমাকে নিয়ে স্যার এমন সবপ্নের তরি কেন ভাসালেন! শেষ পর্যন্ত ভেসে থাকতে পারবেনতো? আম্মু যদি জানতে পারেন তো স্যারের খবর আছে। তাছাড়া আমাকেও তো অনেক বকবেন। তাহলে কেন এই সবপ্নের জালে জড়ানো? কেন মরীচিকার পিছু নেওয়া? স্যার যে কেন বুঝতে চায়না! এলমার চোখে জল চলে আসে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে রুহুলের সরলতাপূর্ন নির্লিপ্ত এক চাহনি। এই চাহনির মধ্যে কি আছে? প্রেম অথবা ভালবাসা! নাকি ক্ষণিকের ভাল লাগা থেকে ক্ষণিকের মোহে নিষ্পেষিত পোড়া মনের অস্ফুট আর্তনাদ! একি, সে কাঁদছে ! স্যার না আজ বৃষ্টিতে ভিজবে! তাকে কাঁদলে চলবে? স্যারের ফোন চলে আসবে তো! ঐতো আম্মুর ঘরের ফোনে রিং হচ্ছে! এলমা তার সাথে রাখা তোয়ালে দিয়ে চোখ মোছে। ফোন রিসিভ করতে হবে। আম্মু ঘুমাচ্ছে। বৃষ্টিতে আম্মুর জটিল ঘুম হয়। মরা ঘুম! আম্মুটাও না ইদানিং কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে! শুধু ঘুমায়! এলমা আয়না ঘর থেকে বের হয়ে আম্মুর ঘরের দিকে এগোতে থাকে।

-হ্যালো!

-জী স্যার, বলেন।

-মনটা অনেক খারাপ হয়ে আছে?

-হু!

-বৃষ্টিতে ভিজবে!

-হ্যা। ভিজবো!

-ভিজতে ভাল লাগে?

-অসম্ভব ভাল! স্যার, আমি ছাদে যাই!

-যাও!

এলমা ছাদে চলে আসে। দূরে কোথাও বাজ পড়ার শব্দ হয়। এলমা ভয়ে কাঁপতে থাকে। মনে হয় আম্মুর ঘুম ভেঙে গেছে। তাকে খুঁজতে ছাদে চলে আসবে। এলমার তখন কোন ভয় থাকবেনা। কিন্তু আম্মু আসছেনা কেন? তার ঘুম ভাঙেনি? আম্মু, জলদি ছাদে আসো! আমি ভয় পাইছি! আম্মু ছাদে দেখে যাও। এলমার কণ্ঠস্বর ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। শীতে শরীর জমে যাচ্ছে। কাঁপতে থাকে সমস্ত শরীর। মেঘলা আকাসে চারিদিক অন্ধকার ছিল। ছাদের এক কোনায় যে ইলেক্ট্রিসিটির লাইট জ্বলছিল তাও যেন নিভে যাচ্ছে। হয়ত আম্মু আসবে না। সে এখনও ঘুমাচ্ছে। এলমার মাথা ঘুরতেছে। মনে পড়ে রুহুলের কথা। সিঁড়ির কাছে রুহুল দাঁড়িয়ে আছে। হাতে একটা মোম জ্বলছে। এলমাকে ডাকছে। স্যার, আমাকে ধরেন! এলমা আর কোন কথা বলেতে পারেনি। তার আগেই ছাদে পড়ে যাই। চারদিকে শুধু বৃষ্টির শব্দ। আকাশের মেঘ যেন তার সব কষ্ট দিয়ে পৃথিবীকে ভিজিয়ে আনন্দে ভাসতে চায়। কোথাও কেউ আছে বলে মনে হয়না। গাছের একটা পাখি পর্যন্ত আজ ডাকতে ভুলে গেছে।

(চলবে)

বিষয়: সাহিত্য

১৫৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File