আমার অর্ধেক মাতৃত্ব আর কিছু কষ্টের অনুভুতি
লিখেছেন লিখেছেন মিশেল ওবামা বলছি ০১ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:৩৭:০০ সকাল
আমার বিয়ের বেশ কয় বছর আগে তাবলীগের এক প্রোগ্রামে জনৈক ব্যক্তি বলছিলেন, কারো শিশুসন্তান মৃত্যু বরণ করলে আল্লাহপাক সেই সন্তানকে তার পিতা-মাতার পরকালে নাজাতের ওসিলা করে দিবেন। আর এটাই আমাকে এত আকর্ষণ করে যে তখন থেকেই মনে হত আল্লাহ পাক যেন আমাকে এই মর্যাদার অধিকারিনী করেন।
আমাদের বিয়ের দের বছরের মাথায় একটা বেবী আসল। আমি যখন ভাবতাম আমি মা হতে যাচ্ছি কি অদ্ভুত ভালো লাগায় যে আমার মনটা ভরে যেত, তা ভাষায় প্রকাশ করার সাধ্য আমার নেই। আসলে যারা মা হয়েছে তারাই একমাত্র অনুভূতিটা উপলব্ধি করতে পারে। দিন যত যায় কিছুটা খুশি, কিছুটা আশংকা, ভয় ভীতির এক মিশ্র অনুভূতি তৈরী হতে শুরু করে।
আর চারমাস থেকে যখন বেবী মুভ করতে শুরু করলো, ওর প্রতিটা মুভমেন্ট আমি খুব এনজয় করতাম।
আর ছোট বেবীদের প্রতি আমার এমনিতেই প্রচন্ড আকর্ষণ, পথেও একটা ছোট বেবী দেখলে আদর না করে যেতেই ইচ্ছে করে না। বেবীটা পেটে আসার পর ওকে নিয়ে যে কত জল্পনা-কল্পনা শুরু হলো আমার, শুধুই ভাবতাম বেবীটাকে আদর করবো, ওর সাথে খেলা করবো আরো কত কি....।
এভাবেই সুস্হ-স্বাভাবিক ভাবে প্রায় পাচ মাস পূর্ণ হয়ে গেল। পাচ মাস পূর্ণ হওয়ার দুই দিন পর হটাৎ করে প্রবলেম দেখা দিল, ডাক্তারের কাছে গেলাম আমাকে ক্লিনিকে ভর্তি হতে বললো। আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট দেখে বুঝে গেলাম বেবীটা বুঝি আর থাকবে না। সত্যিই থাকলো না। বেবীটা মেয়ে ছিল। ক্লিনিক থেকে যখন বাসায় ফিরলাম তখন রাত ন'টা। বেবীটাকে দাফন করার জন্য আমার হাসব্যান্ড আর খালু নিয়ে যাবে। কাফন দেয়ার জন্য কাপড় খুজতে গিয়ে ওয়ারড্রব থেকে একটা সাদা কাপড় বের করলো যেটা আমি আম্মুর জন্য হাতের কাজ করে ওড়না বানাবো বলে কিনেছিলাম। সময় অভাবে বানাতে দিতে পারি নাই। আসলে যে ওটা আমার ফাতিমার কাফনের কাপড় হবে তা তো জানা ছিল না। আমার হাসব্যান্ড নিজে হাতে বেবীটাকে কাফন পড়িয়ে দাফন করেছিল। ও এখনো বলে, যে জানো আমার মেয়ের মুখটা আজও চোখে ভাসে। বেবীটা পেটে থাকতে আমার ছোট বোন এক জোড়া মোজা, একটা ব্লাংকেট, কিছু ড্রেস আম্মু কিনে দেবে না তবুও জেদ করে কিনেছিলো। সৌদি থেকে আসার পর আম্মু ওগুলো ব্যাগ থেকে বের করে দেখি আড়াল করার চেষ্টা করছে। তখন আমার ছোট আপি তাকওয়া দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো, "আপি এগুলো না আমি জেদ করে তোমার বেবীটার জন্য কিনেছিলাম, ও তো আল্লাহর কাছে চলে গেছে, আল্লাহ আবার একটা বেবী দিবে ইনশাআল্লাহ সেই বেবী এগুলো ইউজ করবে।" ইদানিং প্রায়ই তাকওয়া বলে, আমাদেরকে জান্নাতে যাওয়ার জন্য বেশি বেশি আমাল করতে হবে, তবেই না আমরা ফাতিমা কে ফিরে পাব, ও তো জান্নাতে আছে....
বিষয়: বিবিধ
১৭০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন