সৌদি আরবে ১৫ দিন (১ম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মিশেল ওবামা বলছি ১০ মার্চ, ২০১৩, ০৯:৩৯:০৮ সকাল
সৌদির ১৫ দিন কেটেছে স্বপ্নের মত, বাবা-মায়ের স্নেহ, বোনের ভালোবাসা, সবাই মিলে হৈ-হুল্লোর করে দিনগুলো কিভাবে যে কেটে গেছে টেরই পাই নাই। আমরা গিয়েছিলাম জানুয়ারির লাস্ট উইকে, তখন আব্বুর ছুটি ছিলো, তাই প্রথমেই গেলাম ওমরাহ করতে। যাক ওমরাহর বিষয় পরে বিস্তারিত বলবো ইনশাআল্লাহ। তো আসার আগের দিন অনেক কষ্টে সময় করতে পারলাম আম্মুদের বাড়িওয়ালার বাসায় যাওয়ার। গিয়ে প্রথমে খুব একটা ভালো লাগছিলো না, কারন ওরা পারে না ইংলিশ, আর আমরা পারি না আরবি বলতে। গিয়ে বোবার মত বসে আছি আমরা তিন মা-মেয়ে। অনেক আগে মালেয়শিয়া থাকতে আম্মুর জর্ডানি ফ্রেন্ডদের কাছে আরবী শিখেছিলাম, কিন্তু অনেকদিন চর্চা না থাকার কারনে প্রায় ভুলেই গিয়েছি। তো অনেক কস্টে টুক-টাক জোড়া-তালি দিয়ে আরবীতে কনভারসেশান শুরু করলাম। ওরা তো মহা খুশী, আমার মুখে আরবী কথা শুনে। বাড়িওয়ালী আন্টির বড় মেয়ে বলছে, তোমার আম্মু তিন বছর ধরে আছে কিন্তু একটা আরবীও বলতে পারে না অথচ তুমি তো বেশ ভালোই বলতে পার। বললাম যে আমি তো আম্মুর ফ্রেন্ডের কাছেই শিখেছি, শুনে তো আরো বলছে তুমি শিখতে পারলে আর তোমার আম্মু শিখলো না? আন্টির বড় মেয়ে মাহা জিওগ্রাফীতে মাষ্টার্স করে একটা স্কুলে চাকুরী করছে কিন্তু দু:খের বিষয় বুকে বোমা মারলেও ইংলিশ বেরোবে না মুখ দিয়ে। মাহার ইমিডিয়েট ছোট বোন নাম নুহা, ও ইসলামিক স্টাডিজে অনার্সে সবে মাত্র ভর্তি হয়েছে। নুহা দেখলাম কিছুটা ইংলিশ পারে। ওদের ছোট খালা বেড়াতে এসেছিলো ঐদিন সেও একটু ইংলিশ একটু আরবী মিশ্রিত ভাষায় কনভার্সেশন চালিয়ে যাচ্ছিলো। আমি এক আমেরিকার সিটিজেন UOH এর টিচার আন্টিকে বিষয়টা বলতেই উনি এর চাইতেও আশ্চর্যজনক খবর বললেন যে এক আরব মেয়ে ইংলিশে মাস্টার্স কিন্তু ইংলিশই পারে না। সে যে কিভাবে মাস্টার্স করেছে আল্লাহ মালুম। যাক, আমার ভাংগাচোরা আরবী আর ওদের ভাংগাচোরা ইংলিশ দুইয়ে মিলিয়ে বেশ ভালই আলাপ জমলো। মনে হচ্ছিলো যে ১৫দিন থাকলাম আরো আগে আসা দরকার ছিল। আগে থেকেই কিছু কিছু এরাব কালচার, এদের কিছু গূণ আমার খুব ভালো লাগে। অন্যান্য আরব দেশের মানুষের সাথে মিশলেও সৌদির লোকজনের সাথে তেমন মেশার সুযোগ হয় নাই। তাই ওদের চাল-চলন, কালচারগুলো খেয়াল করার চেস্টা করলাম। ওদের সবার মনের ভাব পুরাপুরি প্রকাশ করতে না পারার দু:খ আর আন্তরিকতা আমাকে খুবই মুগ্ধ করেছে। আরবরা তো মাশাআল্লাহ বেশ খাইতে পারে, আর আমি বরাবর অল্প খাওয়ায় অভস্ত। যাওয়ার পর থেকে একবার গাহওয়া খেতে সাধছে তো আরেকবার চা, নয়তো চকোলেট, নাহয় পপকর্ণ, অথবা চিপস্। আমাকে এক প্যাকেট চিপস্ খুলে দিয়ে মাহার খালামনি বলছে, এটা শেষ করে তবে উঠতে পারবা, কারন খাবার নষ্ট করলে আল্লাহ গুনাহ দেয়। মাহার আম্মু বলছে, আমাদের মত বেশি বেশি খাবা, আমাদের মত মোটা হবা, তাহলে আমাদের মতই অনেকগুলো বাবু হবে। মাহারা ১৫ ভাই-বোন। তবে খুশি লাগলো যে, আংকেলটা আরব হিসেবে ব্যাতীক্রমী পূরুষ। একটাই মাত্র ওয়াইফ। আমরা চলে আসার জন্য খুব তারাহুরো করছিলাম, আব্বুর এক ফ্রেন্ড আমাদেরকে ডিনারের দাওয়াত করেছিলো, কিন্তূ আমাদের সময় কম বলে আম্মুদের বাসাতেই খাবার নিয়ে হাজির। এদিকে ওরাও না খাইয়ে ছাড়বে না। শেষে মাহাদের বাসায় একটু খেলাম আর একটু খালি রাখলাম আর এক জনের দাওয়াতটা খাবো বলে। ওদের বাসায় আমাদেরকে হলুদ কালার ফ্রায়েড রাইস, চিকেন ফ্রাই, আর মিস্টি কুমড়া এবং আলু মাংসের এক ধরনের তরকারী খাওয়ালো। এই খাবারগুলোর সাথে আগে থেকেই পরিচিত ছিলাম, এক তাবলিগের মাস্তুরাত জামাত সৌদি থেকে মালয়শিয়া গিয়েছিল তার বদৌলতে।
বিষয়: বিবিধ
১৩০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন