এক ব্যতিক্রমী কনে বিদায়........
লিখেছেন লিখেছেন মিশেল ওবামা বলছি ২৫ জানুয়ারি, ২০১৪, ০১:৪৬:৫০ দুপুর
এ যাবৎ যত কনে বিদায় হতে দেখেছে তার কোনটার সাথেই নিজের বিদায় মূহুর্ত মেলাতে পারছে না রিহাব। দু'মাস হল বিয়ে হয়েছে কিন্ত এই প্রথম যাচ্ছে শ্বশুড় বাড়ি।
ভাবছে, "বাবা-মামনীর ইচ্ছে ছিল কিছুদিন পরে ছুটিতে এসে ওকে আনুষ্ঠানিকভাবে 'উঠিয়ে' দেবে। কিন্তু তা আর হলো কই? নিজে নিজেই উঠতে হচ্ছে...। আচ্ছা বিয়ের এই পর্বটাকে 'উঠিয়ে' দেয়া বলে কেন? ধুর! উঠিয়ে দেয়া বলুক আর পাঠিয়ে দেয়া বলুক আর পাঠিয়ে দেয়া বলুক তাতে কি যায় আসে? কিন্তু এভাবে বরের হাত ধরে শ্বশুড় বাড়ি গেলে কাজিন, ফ্রেন্ড, রিলেটিভরা সবাই যে কথা শুনাবে! বলবে, বিয়ের দাওয়াত না দেয়ার অজুহাত। মানে, মানবজাতির তৃতীয় হাত...! আসলে দাদীশ্বাশুড়ি দেখার জন্য এত অস্থির না হলে প্যানটা ঠিক-ঠাক এগোতো।"
মাঝে মাঝে রিহাবের মনে হয় যত নষ্টের গোড়া এই লাবীব... বাবা-মামনীকে সি-অফ করে বললো, 'এখনই যদি বাসায় ফিরে যাই, মন খারাপ হবে। তারচেয়ে বরং চলো কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসি...।'
বেড়াতে গিয়ে যদিও মনটা বেশ ভালো হয়ে গেলো, কিন্তু যেখানে গেলো সেই জায়গাটা ওদের বাড়ি থেকে খুব কাছে...। সেটা জেনে দাদী তো তখনি নাত-বৌ দেখার জন্য অস্থির.... পরে অনেক বুঝিয়ে লাবীব কথা দিলো, কুরবানী ঈদে রিহাবকে নিয়ে বাড়ি যাবে...
''কিন্তু ওকেও তো দোষ দেয়া যায় না। দাদীর বয়স একশত ছাড়িয়ে গেছে... কখন দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার ডাক আসে বলা তো যায় না! আর তাই প্রাণপ্রিয় নাতীর বৌ দেখার জন্য এত কান্না-কাটি।"
'মানুষের কথা চুলোয় যাক....'
রিহাবের মনে পড়লো, "ওর দীদার খুব শখ ছিলো ছিলো ওদের একটা বেবী দেখার। কিন্তু শখটা তো পূরণ হওয়ার আগেই আল্লাহপাক দীদাকে নিয়ে নিয়েছেন। দাদীশ্বাশুড়ির শখটা পূরণ করা তো সহজ যদি আল্লাহপাক সহায় হোন...''
লাবীবের কথায় রিহাব বাস্তবে ফিরে এলো.... "তোমাকে নিয়ে এমন ভাবে বাড়ি যাচ্ছি, যেন কাজী-অফিসে বিয়ে পড়িয়ে বউ নিয়ে বাড়ি হাজির...। তবে.. তেমনটা হলে বোধহয় এমন বীরবেশে কোনক্রমেই আসা হতো না... হিহিহি...।"
লাবীবের কথায় রিহাব না হেসে পারলো না। বললো... "সব সময়ই বুঝি দুস্টুমি বুদ্ধি মাথায় ঘুর ঘুর করে? তবে শোন, বাবা-মা, আত্নীয়-পরিজনদের দোয়া আর শুভকামনা ছাড়া নতুন জীবন শুরু করা নিতান্তই বোকামী। আর সেই বোকামী আমরা করি নাই বলেই তো, সবার দোয়া আর শুভকামনায় আমরা স্নাত হচ্ছি প্রতি খ্খন, প্রতি মূহুর্ত...।"
লাবীব স্বশব্দে 'আলহামদুলিল্লাহ' বলে উঠলো...
কখন যে চারিপাশে রাতের আধার নেমে এসছে লাবীব টেরই পায় নাই.. বাড়ি পৌছাতে এখনো ঘন্টা খানেক সময় লাগবে.. বসুধার বুকে চাদের আলো ঝড়ছে.. নিরব রাস্তার মাঝ দিয়ে ওরা ছুটে চলেছে গন্তব্য পানে.. প্রকৃতির এই অসাধারন রূপ লাবীবের মনে আজই প্রথম দোলা দিয়ে গেল.. উপলব্ধি করলো, প্রিয় মানুষ পাশে থাকলে সামান্য জিনিষও অসামান্য হয়ে ধরা দেয়.. এই পথে কত যাতায়াত করেছে কখনো এমন অনুভূতি হৃদয়ে দোলা দেয় নাই.. জানালার গ্লাস নামিয়ে ড্রাইভারকে এসি ওফ করে আস্তে গাড়ি চালাতে বললো...
লাবীব নিজের মুঠোয় রিহাবের হাতটা নিয়ে বললো, " চলো আজ থেকে আমরা একে অপরের ভুল-ত্রুটিগুলো সংশোধন করে জান্নাতের পথকে সুগম করার সংকল্প করি। আর দোয়া করি যেন, আল্লাহপাক আমাদেরকে জান্নাতেও সাথী হিসেবে কবুল করে নিক... আমীন।
উৎসর্গ:- ঐ সকল ভাই-বোনদের যারা বিবাহ পূর্ব নাজায়েজ প্রেমে নিজেকে জড়িয়ে কলুষিত করছেন। আবার এই অবৈধ সম্পর্ককে বৈধতা দান করতে গিয়ে বাবা-মার অমতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করুন। ইসলামের সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন...আমীন।
বিষয়: বিয়ের গল্প
২২৮৭ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কষ্ট হয়েছে-
চূক চূক
কেনো যেন বিয়ের গল্প পড়ে আমার তাই মনে হলো।।
মন্তব্য করতে লগইন করুন