এতদিন কোথায় ছিলে........
লিখেছেন লিখেছেন মিশেল ওবামা বলছি ১৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:০৮:০৫ দুপুর
আর মাত্র এক মাস পরেই রিহাবের পুরো পরিবার আবার দেশের বাইরে চলে যাবে। মাত্র দু;মাসের জন্য বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছে ওরা। এসেই হাবিব সাহেব কন্যা রিহাবের জন্য যোগ্য পাত্র খুজতে মহা ব্যাস্ত।
বেশ ক'টা প্রস্তাবের মধ্যে একটা উনার মনে ধরলো বেশ।
লাবীব, ছেলে হিসেবে মন্দ নয়। ধার্মিক, বেশ ভদ্র-মার্জিত, একটা পাবলিক ইউনির লেকচারার...
তো খোজ-খবর, পাত্র-পাত্রী দেখার পর্ব চুকিয়ে, উভয় পরিবারের মধ্যে কথা-বার্তাও ফাইনাল, ঈদুল ফিতরের পরদিন বিয়ে।
দিন যায়, রিহাবের মনে নানান ভাবনা উকি দেয়, "পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে..। আচ্ছা, বিয়ে কি না হলেই নয়? বাবা-মামনী কি আমায় ভালোবাসে না? কি ভাবে আমাকে নিষ্ঠুরের মত বিয়ে দিয়ে রেখে চলে যেতে চাচ্ছে!" ছোট খালামনিকে কথাগুলো বলতেই বললেন যে, 'তোমার যেদিন মেয়ে হবে, বিয়ের উপযুক্ত হবে, তখন ভাবনাগুলোর উত্তর পাবে'।
কিসের একটু সহানুভূতি প্রকাশ করবে তার বদলে বুদ্ধি দিচ্ছে, খালামনিটাই না এমন!
নাহ্, কারো কাছে আর দুঃখ প্রকাশই করবো না।
এরই মাঝে একদিন অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে sms আসাতে ও বেশ অবাক। ভাবলো, কে দিতে পারে? কাজিন, ফ্রেন্ড, পরিচিত সবার নাম্বারই তো সেইভ করা। তবে ইনি কে? কৌতুহলবশত, শুধুই 'হু আর ইউ?' লিখে পাল্টা sms পাঠালো রিহাব।
সেও নিজেকে আড়াল করে রিপ্লাই দিলো, ' চোখ বন্ধ করলেই আমাকে দেখতে পাবে'। রিপ্লাই দেখে তো চোখ কপালে ওঠার জোগাড়! নাহ্, sms দাতা কে জেনে কাজ নেই, বিষয়টার ইতি টানা দরকার।
ভাবতেই লিখে পাঠালো, " আমার মনের মাঝে কেউ নেই, আর বিয়ের পরে হাসব্যান্ডকে ছাড়া কাউকে স্হান দেবোও না, ইনশাআল্লাহ। যেহেতু মনটা ফাকা, তাই চোখ বন্ধ করলেও কাউকে দেখার প্রশ্নই আসে না। আর, আপনি কে তা আমার না জানলেও চলবে। ভালো থাকুন......।"
sms টা পাঠিয়ে রিহাব ভাবলো, যাক্ আপদটা বিদেয় হল; কিন্তু, নাহ্! আপদটা মোটেই ওর পিছু ছাড়ে নাই!
এবার অপরিচিত এক নাম্বার থেকে কল...
আননোন নাম্বারের কল ও রিসিভ করে না, তারওপর গভীর রাত... সাত/পাচ ভেবে রিসিভ করে, সালাম দিতেই... অপর প্রান্ত থেকে, "কেমন আছো?"
"জ্বী, ভাল। কিন্তু আপনি কে বলছেন?"
"আমি.. লাবীব, তোমার সেলফোন নাম্বারটা পেলাম তাই একটু কল করলাম..."
"কিন্তু আপনার সাথে কথা বলা আমার দ্বারা সম্ভব নয়..."
"কেন?"
এই ন্যাকামী করে 'কেন' বলা শুনে রিহাবের মেজাজ চড়ে গেল, নিজেকে সংবরণ করে বলল, "দেখুন, আপনার-আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে, শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের কথা বলা, দেখা করা সম্পূর্ণ না-জায়েজ। আর কোন কারনে যদি আমাদের বিয়েটা না হয় তবে ভবিষ্যতে যিনি আমার হাসব্যান্ড হবেন, তার সাথে প্রতারণা করা হবে। আপনি নিজেই কি এমন স্ত্রী চাইবেন, যে অনেক কে মন-প্রাণ উজার করে দিয়ে শেষ-মেষ আপনাকে বিয়ে করবে?"
এতটুকু শুনে লাবীব বলল, "ঠিক আছে, কল দেবো না। আমি অবশ্য তোমার মত করে ভেবে দেখি নাই, সতর্ক করার জন্য থাংকস্। তবে, দরকার হলে sms দেয়ার পারমিশন চেয়ে নিলাম। ভাললো থেকো, আল্লাহ হাফেয..."
ফোন রেখে লাবীব মনে মনে ভাবলো, 'সবুরে মেওয়া ফলে' তাই মেওয়ার জন্য ওয়াটিং লিষ্টে থাকতেই হবে...।
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে এলো, আজ লাবীব-রিহাবের একক জীবন সমাপ্তির দিন। যদিও ঈদের পরদিন বলে, অনেক রিলেটিভ আসতে পারেন নাই তবু উভয় পরিবারের কাছের কিছু আত্নীয়-বন্ধুদের উপস্হিতিতে বিয়েটা সম্পন্ন হয়ে গেল।
বিয়েটা হলো যেন ঘূর্ণি ঝড়ের গতিতে, সেই সাথে রিহাবের মনের মাঝেও ঝড়ো হাওয়া বইছে... পরশুদিন মামনীদের ফ্লাইট। বাবা,মামনী,ছোট বোন সবাই চলে যাবে রিহাবকে রেখে, ভাবতেই বুক ফেটে কান্না আসছে... আবার লাবীবকে ছেড়ে ওদের সাথে যেতেও তো মন চাইছে না, 'উভয় সংকট' কাকে বলে আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
লাবীব ওর চোখে পানি দেখে বললো, "কি ভাবছো জানি, আম্মুরা তো চলে যাচ্ছে। অচেনা এই ব্যক্তির সাথে থাকতে হবে... তবে আমার শ্যালিকার কাছ থেকে নাম্বারটা পেয়ে ভেবেছিলাম আমাদের মাঝে একটু জানা-শোনা হোক কিন্তু বিপরীতে যে লেকচার দিয়েছ আজীবন মনে রাখবো..."
''জনাবের তো আজ থেকে লেকচার শোনা পুরাদমে শুরু। কথায় বলে না, 'রাজা রাজ্য শাষণ করে, আর রাজাকে শাষন করে রাণী'। তুমি স্টুডেন্টদের লেকচার দিলে কি হবে, আজ থেকে তোমাকেও বউএর লেকচার শুনতে হবে... আর আমাকে না বলে তোমাকে নাম্বার দেয়ার মজা দেখিয়ে আসি রিযানটাকে... তাই তো বলি তুমি নাম্বার পেলে কোথা থেকে!" বলেই রিহাব ছুটলো বোনের খোজে.... আর লাবীব আনমনে বলে উঠলো, "এতদিন কোথায় ছিলে নাটোরের বনলতা সেন?"
রিহাব বোনকে খুজে পেল মামনীর রুমে বিছানায়, বালিশে মুখ গুজে অবিরাম কেদে চলেছে, প্রাণপ্রিয় বড়াপিকে ছেড়ে চলে যাবে বলে...। রিহাবের মনের অবস্থাটাও করুণ। মন বলছে এই তো চিরচেনা আপনজনদের সাথে বিচ্ছেদের শুরু....!
বিষয়: বিয়ের গল্প
২৭৬২ বার পঠিত, ৫৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনি পরীক্ষার ভাইভা বা চাকরির ইন্টারভিউ এর সময় এমপ্লয়ারদের ফেস করেন না ? না কি তারা না দেখেই না ভাইভা নিয়েই আপনাকে পাশ করিয়ে দেবে বা চাকরিতে নিয়ে নেবে ?
যতটুকু দেখাবার ততটুকু প্রকাশ করাও কি এক্ষেত্রে না-জায়েজ ?
আর , কথা বলাতেই বা সমস্যা কোথায় ? মিষ্টি ভাবে না কথা বলে কথায় কিছুটা রুক্ষতা এনেও তো কথা বলা যায় !
''এই ন্যাকামী করে 'কেন' বলা শুনে রিহাবের মেজাজ চড়ে গেল''
০ ছেলেটা তো শুধু কথাই বলতে চেয়েছে । আর রিহাব কথা ও দেখা করা দুটোকেই না-জায়েজ বলেছে । নিজেকে রিহাব ওভার-ধার্মিক দেখাতে চেয়েছে । অথচ বিয়ের কথা বার্তার সময় এইসব দেখা ও কথা বলা মোটেই না- জায়েজ হবার কথা না ।
একদিকে লাবীব শুধু মাত্র কথা বলতে নিষেধ করার কারণে কেন জিজ্ঞেস করে ন্যাকা হয়ে গেল আর ঔদিকে রিহাব যে তার ওভার ধার্মিকনেসটা
তুলে ধরছে সেটা কি ?
বিয়ের আগে মেয়েরা এসব করে - এটা ফ্যাশন । বিয়ের পর তার সেই ধার্মিকতা আর খুঁজেও পাওয়া যায় না ।
২/ একটা ছেলে আর একটা মেয়ের যখন এংগেজমেন্ট হয় তখন নির্জনে একান্তে গল্প-গুজবে মশগুল হওয়া, অহেতুক ফোনালাপ, কোথাও ঘুড়তে যাওয়া ইত্যাদি জায়েজ হওয়ার কোন প্রমাণ কোরাআন-হাদিসের কোথাও আমার চোখে পড়ে নাই।
৩/ আপনি হাতেগোনা কয়জন বিপথগামী মেয়ের সাথে তো সবাইকে মাপলে চলবে না।
৪/ ধার্মিকতা মেয়েদের ফ্যাশন এটা কোথায় পাইছেন?
৫/ নারী-পুরুষ উভয়ের মাঝেই ভালো-মন্দ আছে, তাই বলে ঢালাওভাবে দোষ দেয়া যায় না। মেয়েদেরকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতে শিখুন। আশা করি উত্তরগুলি পেয়েছেন, ধন্যবাদ।
''৩/ আপনি হাতেগোনা কয়জন বিপথগামী মেয়ের সাথে তো সবাইকে মাপলে চলবে না।''
০ হাতে গোনা কেন ? লোম বাছতে গেলে তো কম্বল উজার হবার জোগাড় হয় ।
''৪/ ধার্মিকতা মেয়েদের ফ্যাশন এটা কোথায় পাইছেন?''
০ আপন ভাই আছে ? বিয়া হইছে তার ? টের পান নাই এখনো ?
খালি আছেন ফাঁপড় লইতে !
'' ৫/ নারী-পুরুষ উভয়ের মাঝেই ভালো-মন্দ আছে, তাই বলে ঢালাওভাবে দোষ দেয়া যায় না। মেয়েদেরকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতে শিখুন।''
০ বিয়ের আগে লাবীবকে পঁচিয়ে এখন যখন রিহাবকে পঁচান দিতে গেলাম তখন ''সবাই সমান '' '' ভাল-মন্দ সবার মাঝেই আছে'' '' সন্মানের দৃষ্টিতে দেখুন '' এই সব বাইর হইয়া আসছে না !
লাবীবরে যখন ন্যাকা বলা হয় তখন বুঝি তাকে খুব সন্মান দেওয়া হয় ! তখন মনে আছিলো না !
এতক্ষণ লাবীবকে পঁচিয়ে রিহাবকে ওভার-ধার্মিক দেখিয়ে খুব ভাব মারা হচ্ছিল ; যেই না রিহাবের মুখোশ খোলার চেষ্টা করেছি অমনি শুরু হয়ে গেল কাহিনী ঘুরানো !
নিজে যদি সন্মান পেতে চান তাহলে আগে অপরকে সন্মান দিতে শিখুন
''আশা করি উত্তরগুলি পেয়েছেন, ধন্যবাদ।''
০ বাহ ! পুরাই জাকির নায়েক স্টাইল !
হ্যাঁ , উঃ পাইছি । ''ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে'' মার্কা উঃ ।
@রাহু... দেখো আপু আমারে কি দিছে, ফেভারিট ঝালমুড়ি
যাইহোক, গল্প সুন্দর হইছে
আপনার কাজিন কে ধৈন্যাপাতা দিছি আর আপনারে দিলাম কুমড়া(~~) (~~)
বেশ ভালো লেগেছ.... বিশেষ করে বিবাহপূর্ব আলাপচারিতা থেকে নিজেকে দূরে রাখার বিষয়টি
ধন্যবাদ
ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ
আমিও ভাবছিলাম এটা ফার্স্টলেডির নিজের বিয়ের গল্প
মন্তব্য করতে লগইন করুন