ফেলে আসা সেই শৈশব আর কৈশরের ঈদ (সৃতিচারণ)

লিখেছেন লিখেছেন মিশেল ওবামা বলছি ১০ আগস্ট, ২০১৩, ১১:২৮:৫৯ সকাল

সেই দিন গুলো আজ মনে হলে ফিরে পেতে ইচ্ছে করে Day Dreaming। কিন্তু দিনগুলো তো পেছনে ফেলে চলে এসেছি বহু দূরে। এখন আশে পাশের পিচ্চিগুলোর ঈদ আনন্দ দেখলে মনে পড়ে যায় সেই মধুর Bee সৃতিগুলো।

১। আমার শৈশবের বেশ কিছু মজার সময় কাটে ইউনিভার্সিটির কোয়ার্টারে।

কোয়ার্টারের পাশেই ছাত্রীদের আবাসিক হল। হলের সামনে বিভিন্ন ফেরিওয়ালারা জিনিষের পসরা সাজিয়ে বসে থাকে। আমরা দুই বান্ধবী একদিন হলের সামনে ঘুরতে গিয়ে দেখি ঈদ কার্ড বিক্রি হচ্ছে। দেখে আমরা দুই পিচ্চি মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম যে ঐ ঈদে আমাদের পাড়ায় যত সমবয়সী বন্ধু-বান্ধব, সিনিয়র ভাইয়া-আপুরা আছে সবাইকে ঈদ কার্ড দেবো।

যেই ভাবা, সেই কাজ। দু'জনে মিলে একটা লিস্ট তৈরী করলাম। তারপর সে অনুযায়ী কার্ডও কিনলাম। কিন্তু আমরা দুই বোকার হদ্দ খাম নিতে ভুলে গিয়েছি। এখন কার্ড দেব কেমন করে? গার্জিয়ানদের চোখ ফাকি দিয়ে তো আর রোজ রোজ যাওয়া যায় না। কারন গার্ড আংকেলগুলোকে আমাদের আব্বুদের নির্দেশ ছিলো আমরা যেন কোয়ার্টারের সীমানা কোন ক্রমেই ক্রস করতে না পারি। পরে দু'জনে মিলে বুদ্ধি বের করলাম, আমরাই খাম বানিয়ে ফেলবো। পরে দু'জনে মিলে কাগজ কেটে ভাত ডলে আঠা হিসেবে লাগালাম। দারুন খাম তৈরী হলো। পরে আব্বু-আম্মুরা শুনে বলছিলো আমাদেরকে বলতে কার্ড-খাম কিনে এনে দিতাম। কিন্তু তাতে কি আর অতটা আনন্দ হতো?

কার্ড কিনে খামে ভরে রেডি করে রেখেছি যে ঈদ আসতে তো অনেকদিন বাকী পরে দেয়া যাবে। এমন করতে করতে ঈদ রাত চলে আসলো। আর তখনি আমাদের হুস হলো যে কার্ড তো দেয়াই হয় নাই। রাতে কি আর ৫/৬ বছরের পিচ্চিদের একা একা বাসা থেকে বেরুতে দেয়? কিন্তু আমাদের ঐ রাতের মধ্যেই কার্ড দেয়া চাই। পরে গার্জিয়ানদের চোখ ফাকি দিয়ে ঈদ রাতেই দু;জনে মিলে কার্ড দিয়ে আসলাম।

২। এরপরে বেশকয়টা ঈদ করেছি মালয়শিয়ার পেনাংএ। একবার ঈদের রাতে এক বাসায় পেনাংএর সব বাংগালীদের দাওয়াত। সবাই একত্রিত হলাম, বেশ হৈ-হুল্লর আর আনন্দ-ফূর্তি করলাম। রাত বারোটার দিকে সবাই যে যার বাসায় ফিরে আসলাম। একটা বিল্ডিংএ আমরা চারটা ফ্যামিলি থাকতাম। অন্যরা অন্যদিকে চলে গেলেও আমরা এই চার ফ্যামিলির সদস্যরা বিল্ডিংএর নিচে বেশ কিছুক্খন গল্প-গুজব করলাম। সবার মাঝে আমার আম্মু আর তিন তলার এক আন্টি ছিলেন হিজাব পরিহিতা। তো কথার ফাকে হিজাব পরিহিতা আন্টিটা বাসায় চলে গেছে। এদিকে ঐ আন্টির হাসব্যান্ড, যে কিনা কিছু দূরে দাড়িয়ে গল্প করছিলো সে বাসায় যাওয়ার সময় আমার আম্মুকে ভেবেছে উনার ওয়াইফ। তো পাশে গিয়ে বলছে, ফাতিমা মানে উনার মেয়ে কোথায়? তো আম্মু তা শুনতে পায় নাই। এরপর যেই না বলেছে, চলো বাসায় যাই.... আর অন্যান্য আন্টিরা হোহো Rolling on the Floor করে হেসে উঠেছে। তারপর ঐ বেচারা তো লজ্জ্বায় I Don't Want To See তিন লাফে তিন তলা। পরদিন তো ঐ আন্টি এসে বলছে যে, ভাবী কিছু মনে নিবেন না। ফাতিমার আব্বুর গ্যান-বুদ্ধি এমনি Big Grin । তাই বলে বলুন তো, দু'জন আলাদা আলাদা কালারের হিজাব পরিহিতা ছিলেন। উনার ওয়াইফ কি কালারের হিজাব পড়েছিলেন সেটা কি উনার মনে থাকা উচিৎ নয়?

৩। ২০০৮ এর রোজার ঈদে আমরা তিন বান্ধবী মিলে প্ল্যান করলাম যে চাদরাত আমরা তিনজনের যেকোন একজনের বাসায় একসাথে কাটাবো। তারপর একসাথে তিনজন মিলে সারা রাত ইসলামী সংগীত শুনে Music, মেহেদী দিয়ে আর গল্প করে কাটিয়ে ছিলাম। কি যে মজা হয়েছিলো তা আর বলার অপেক্খা রাখে না। আমাদের এই তিনজনক থ্রী স্টার বলতো সবাই। এখনো যখন আমাদের মাঝে ফোনে কথা হয়, তখন সেই ফেলে আসা দিনগুলোর কথা আলোচনায় চলে আসে মনের অজান্তেই।

৪। ছোটবেলায় যখন গ্রামের বাড়ি ঈদ করতে যেতাম, কাজিনরা সবাই মিলে দল বেধে সারাদিন ঘুরে বেড়াতাম। আর একটু যখন বড় হলাম আমার বাবা সারাদিন পাড়াময় ঘুরে বেড়ানোটা পছন্দ করতেন না। তখন আনন্দ করার চিত্রটা পালটে গেলো। ঈদের বিকেলে নৌকা ভাড়া করে সব কাজিনরা মিলে নদীতে ঘুরতে বেড়িয়ে যেতাম। আর ঈদের পরদিন নানু বাড়ি গেলে, আম বাগানে পিকনিক করা তো অবধারিত। সেই পিকনিকের মেনু থাকতো ডিম ভুনা Cook আর সাদা ভাত। এর বেশি আর কিছু আমরা রান্না করতে পারতাম না কিন্তু সেই খাবারই মনে হতো যেন অমৃত Eat

আসলে ছোট থাকতে মনে হতো কবে যে বড় হবো, বড়দের শাসন-বারণ আর থাকবে না। এখন বড় হয়ে টের পাচ্ছি সেই শাসিত জীবনের পরতে পরতে কত সুখ সৃতি ছড়িয়ে আছে..... সবাইকে ঈদ মুবারাক Rose

বিষয়: বিবিধ

৩৭৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File