সৌদি আরবে ১৫ দিন (২য় পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মিশেল ওবামা বলছি ২৬ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:১০:১৮ দুপুর
KSA যাবার পর থেকে পরিচিত সবাই বলছিলো যেন মাজরা (বাগান) দেখতে যাই। ভাবলাম আম্মুদের বাড়িওয়ালার বেশ কয়টা মাজরা উনার মাজরাতেই বেড়াতে যাব। বাড়িওয়ালা আংকেল কে বলতেই উনি বললেন যে উনার বড় ছেলে সুলতান আমাদেরকে মাজরা দেখাতে নিয়ে যাবে। সুলতান UOH এর স্টুডেন্ট, কিন্তু সেই একই সমস্যা। কমিউনিকেশন প্রবলেম, ইংলিশ পারে না বললেই চলে। আমার হাসব্যান্ড আরবী পারে, কিন্তু ওদের আন্চলিক ভাষা বুঝতে অসুবিধা হয়। সুলতান কি বোঝাতে চাইছে, তার কিছুই বুঝতে পারছি না। যার ফলে আগের দিন আমরা যে WELL COME HILL থেকে বেড়িয়ে এসেছি সেখানেই আবার নিয়ে গেল। তবে লাভ ছাড়া লস হয়নি। আগেরদিন বৃস্টির জন্য গাড়ী থেকে নামতেই পারি নাই, এইদিন নেমে অনেক্খন ঘুরলাম। এই WELL COME HILL এর নাইট ভিউটা দারুন, তবে দিনের বেলাতেও বেশ সুন্দর লাগলো।
গাছ-পালা নেই শুধুই পাথুরে পাহাড়। এর সৌন্দর্য আমার কাছে অন্যরকম লাগলো। সবচাইতে বড় কথা সৃস্টকর্তার নিখুত সৃস্টি দেখে অভিভূত না হয়ে পারলাম না। বেশ কয়টা মাজরার ভেতরে ঢুকলাম মোটামুটি ভাল লাগলো। অরেন্জের, আপেল, খেজুর এসবের বাগান। আর একটা জিনিস দেখলাম, ওরা নাম বললো উতরুন্জ। জিনিসটা মার্কেটেও বিক্রি হতে দেখেছিলাম। অরেন্জের গাছ গুলো খুব ভালো লাগলো, অরেন্জ ধরে আছে। মাজরাগুলোর সামনে দেখলাম, একদম ফ্রেশ অরেন্জ, উতরুন্জ বিক্রি হচ্ছে।
তারপর সুলতান আমাদেরকে এক জায়গায় নিয়ে যেতে চাইলো। জায়গাটা আব্বু চিনতো কিন্তু ঐ যে কমিউনিকেশন গ্যাপ... ও কি বলে বোঝাতে চাইছে বুঝতেই পারছি না। শেষ-মেষ যাবার পরে বুঝলাম, কিন্তু ভয়ে কলজে শুকিয়ে কাঠ.... জায়গাটার নাম জাবাল সামরা। সমতল থেকে অনেক উপরে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার জন্য আকা-বাকা রাস্তা। আমাদের না যতটা ভয় লাগছে তার চাইতে শত গুণ ভয়ে আব্বু শেষ...। আর আমার ছোট আপি আগেই ঘুমিয়ে পরেছিলো বলে রক্খা। নয়তো ওর কান্না-কাটি থামানোই দায় হয়ে যেত। আব্বু ভয় পাচ্ছে আর সুলতান সেটা নিয়ে খুব মজা পাচ্ছে।
জাবাল সামরার চূড়া থেকে নিচের ভিউ
সময়টা ছিলো সন্ধ্যের আগ মুহূর্তে, আর চূড়ায় এত বাতাস যে দাড়িয়েই থাকতে পারছিলাম না। আমার হাসব্যান্ড তো মজা করে বলতে লাগলো কেউ উড়ে না গেলেও তুমি উড়ে যেতে পার, তাই সাবধানে থাকিও। মুখে বললাম তুমি আছ না? উড়ে যদি যাই তুমি ধরে ফেলবে। কিন্তু মনে মনে বললাম, ইস্ এখন তো খুব মজা করা হচ্ছে আমাকে নিয়ে, কিন্তু সবার মধ্যে একমাত্র আমিই নরমাল ওয়েটের অধিকারি বাকি তোমাদের সবারই ওভার ওয়েট...
যাক কিছুক্খন চূড়ার ওপরে ঘুরলাম। সুলতান একটা জায়গা দেখিয়ে বললো, ওখানে নাকি দাতা হাতেম তাঈ এসে বসেছিলেন। বিশ্বাস হলো, আবার হলো না। আমার আবার তথ্য প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস হয় না। রাত আটটা নাগাদ বাসায় ফিরলাম। ছোট আপি তাকওয়া ততক্খনে জেগেছে। ক্যামেরা নিয়ে ছবি দেখতে দেখতে জাবাল সামরার ছবি দেখে বলছে, ওখানে আমার ছবি নেই, তোমরা আমাকে রেখে কেন একা একা গেলে, তোমরা আমার কেমন ভাইয়া-আপু ইত্যাদি বলতে বলতেই ভ্যা করে কান্না জুড়ে দিল....। কত কি বলে তবেই শান্ত করলাম।
তবে সৌদিতে গিয়ে কোথাও বেড়াতে বেরোলেই আমার বুকের ভেতরটা সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির জন্য হাহাকার করে।
মালয়শিয়া থাকতে আমার এক ইয়েমেনী ফ্রেন্ডকে কথা প্রসংগে বলেছিলাম আমার দেশটাও মালয়শিয়ার মত সবুজ-শ্যামল। কিন্তু পরক্খনেই আমার মনটা বলেছিলো, প্রকৃতিটা অবশ্যই অনেক অনেক সুন্দর তবে জান-মালের নিরাপত্তার দিক দিয়ে মালয়শিয়ার আংশিকও নেই...
বিষয়: বিবিধ
২১৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন