ঘুরে এলাম নাটোরের উত্তরা গণ-ভবন

লিখেছেন লিখেছেন মিশেল ওবামা বলছি ১৮ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:১৮:৫৫ দুপুর

উত্তরা গণভবন



দিঘাপতিয়ার রাজার মনোগ্রাম



গত ২৬শে মার্চের ছুটিতে ভাবলাম কোথাও ঘুরতে যাই। আমার হাসব্যান্ড কে বললাম যে চলো নাটোরে যাই। নাটোরের 'মৌচাক মিষ্টান্ন' ভান্ডারের মিষ্টি কিনে নিয়ে আসি, আর উত্তরা গনভবন থেকে ঘুরে আসি।

উত্তরা গণভবন বা দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি নাটোর শহর থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে এককালের দিঘাপতিয়া মহারাজাদের বাসস্থান এবং বর্তমান উত্তরা গণভবন বা উত্তরাঞ্চলের গভর্মেন্ট হাউস।

যেই ভাবা, সেই কাজ... সকালের নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়লাম নাটোরের উ্দ্দেশ্যে। দুপুর ১২টা নাগাদ পৌছে গেলাম, গনভবনের গেটে।



প্রবেশদ্বার

দু'টা টিকেট কেটে আমরা ভেতরে ঢুকে পরলাম। বেশ ভালই লাগলো...। নাটোর



মূর্তি

আমাদের দেশের বাড়ি নাটোর। নাটোর যাওয়াও হয় মাঝে-মধ্যেই, কিন্তু ঐ যে "দেখা হয় নাই চক্খু মেলিয়া...." তাই তো দেশ-বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরলেও বাড়ির কাছের দর্শণীয় স্হানই বাদ পরে গেছে। আগে ভেতরে ঢোকার জন্য জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ের অনুমতি নেয়া লাগলেও, বর্তমানে জনপ্রতি ১০ টাকার টিকেট কেটে ঢোকা যায়। গেটে সবাইকে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে চেক করে, সাইড ব্যাগ সার্চ করে ঢুকতে দেয়। সিকিউরিটি মনে হলো ভালই, তবে ছবি তোলা নিষেধ লিখিত সাইন বোর্ড দেখে ভাবলাম ছবি বুঝি তোলা যাবে না। কিন্তু বাংলাদেশে তো আইন আছে, যথাযথ তার প্রয়োগ নেই। দেখলাম সবাই দেদারছে ছবি তুলছে। আমরাও টুকটাক তুললাম।

রাজবাড়ি প্রতিষ্ঠার ইতিহাস

প্রাসাদের মূল অংশ এবং সংলগ্ন কিছু ভবন নির্মাণ করেছিলেন রাজা দয়ারাম রায়। রাজবংশের ষষ্ঠ রাজা প্রমদা নাথ রায়ের আমলে ১৮৯৭ সালের ১০ জুন নাটোরের ডোমপাড়া মাঠে তিনদিনব্যাপী বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের এক অধিবেশন আয়োজন করেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অনেক বরেণ্য ব্যক্তি এ অধিবেশনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন। অধিবেশনের শেষ দিন ১২ জুন প্রায় ১৮ মিনিটব্যাপী এক প্রলয়ংকরি ভূমিকম্পে রাজপ্রাসাদটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। পরে রাজা প্রমদা নাথ রায় ১৮৯৭ সাল থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত ১১ বছর সময় ধরে বিদেশী বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী ও চিত্রকর্ম শিল্পী আর দেশী মিস্ত্রিদের সহায়তায় সাড়ে ৪১ একর জমির উপর এই রাজবাড়ীটি পুনঃ নির্মাণ করেন।

সাড়ে ৪১ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত প্রাসাদটি পরিখা ও উচু প্রাচীর ঘেরা। প্রাসাদের পূর্বপাশে পিরামিড আকৃতির চারতলা প্রবেশদ্বার রয়েছে যা উপরের দিকে সরু হয়ে গেছে এবং এর উপরে একটি ঘড়িও রয়েছে। মধ্যযুগীয় বাংলাদেশের অন্যান্য সামন্ত প্রাসাদের মতোই নাটোরের রাজবাড়ীতে রয়েছে দীর্ঘ প্রবেশ পথ।

নামকরণ

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর দিঘাপতিয়া রাজা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। ১৯৫০ সালে জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ার পর দিঘাপতিয়ার রাজ প্রাসাদটির রক্ষণা-বেক্ষণে বেশ সমস্যা দেখা দেয়। সমস্যা সমাধানে দিঘাপতিয়ার মহারাজাদের এই বাসস্থানকে ১৯৬৭ সালের ২৪শে জুলাই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর আব্দুল মোনায়েম খাঁন দিঘাপতিয়ার গভর্ণরের বাসভবন (The East Pakistan Governor's house of Dighapatia) হিসেবে উদ্বোধন করেন। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে এর নাম পরিবর্তন করে উত্তরা গনভবন ঘোষণা করেন।



উত্তরা গণভবনের নামফলক



দিঘাপতিয়ার গভর্ণরের বাসভবনের নামফলক

বিষয়: বিবিধ

৩৮৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File