আমার কাকু
লিখেছেন লিখেছেন মিশেল ওবামা বলছি ০৬ আগস্ট, ২০১৩, ০১:২৫:৩৫ দুপুর
আমার কাকু আমাকে আদর করে মানিক বলে ডাকত, তাই আমিও ওকে মানিক বলে ডাকতাম। ও যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে তখন থেকে বিয়ের আগ পর্যন্ত আমাদের বাসায় থাকত। আমার জন্য আব্বু-আম্মুর পরে সবচাইতে বেশি যে করেছে সে হলো আমার কাকু। আম্মু গল্প করত, যে আমি যখন ছোট ছিলাম ও আমাকে কোলে নিয়ে পড়া-শুনা করত। আর একটু বড় হওয়ার পর তো আমি নিজেই দেখছি, ওর কাছে ঘুমাতাম, ও খাইয়ে দিত, গোসল করিয়ে দিত আর প্রতি শুক্রবার কোথাও না কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাওয়া চাই ই চাই। ছুটির দিন আমাকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বেড়িয়ে না নিয়ে আসলে আমি তো ওর চুল ছিড়ে ফেলবো! ওর পরিক্খার আগে ইউনিভার্সিটির হলে চলে যেত আমার অত্যাচার থেকে বেচে একটু নিরিবিলি পড়াশুনা করতে, সেই কটা দিন মনে হত যেন পুরো বাসয় এত মানুষ তবু বুঝি কেউ নেই। এভাবেই বেশ ক বছর কেটে গেল, এর মাঝে আব্বু পিএইচডি করতে মালয়শিয়া চলে গেল। আর আমার কাকু পাকাপাকি ভাবে হলে থাকা শুরু করলো। তখন প্রতিদিন ওর হলের ফোনে কল দিতাম, তখন তো আর মোবাইল ছিল... ওর রুমটা ছিল তিনতলায়, তাই মনে মনে বলতাম বোঝো আমাকে রেখে হলে চলে যাওয়ার মজা! দিনে তিনবার করে ওপর তলা থেকে নিচে নামাতাম ফোন করে, তেমন কিছু বলার জন্য না... ও কেমন আছে, কি খেয়েছে আর বাসায় এসে আমাকে যেন বেড়াতে নিয়ে যায়। আমার আব্দার ফেলতে না পেরে হয়তো চলে আসতো, দুপুরে খেয়েই চলে যেত। আমরা তখন থাকতাম ইউনিভার্সিটির গেস্ট-হাউজে, ও চলে যাওয়ার সময় অনেকদূর পর্যন্ত ওকে এগিয়ে দিয়ে আসতাম। সেদিন ঐ দিক দিয়ে রিকসা করে যাওয়ার সময় আমার হাসব্যান্ড কে বললাম, এই পথে কত দিন কাকুকে এগিয়ে দিয়ে গিয়েছ.... কিন্তু আমার সেই কাকুকে নিয়ে বর্তমানে আমার সৃতিটা খুব কষ্টের, সেটাতে পরে আসছি। এভাবে কিছু দিন যাওয়ার পর আমরাও দেশের বাইরে চলে গেলাম আব্বুর কাছে। মালয়শিয়াতে যদিও খুব ভালো লাগতো, কিন্তু খারাপ লাগত শুধুই কাকুর জন্য। এর মাঝে ওর মাস্টার্স কমপ্লিট হলো, একটা কলেজে চাকুরীতে ঢুকলো। আমরা দেশে এলাম, ওর জন্য পাত্রীর সন্ধানে লেগে গেলাম সবাই। যে যতই সম্বন্ধ আনে ওর একটাই কথা, আমার ভাবী আর ভাতিজীর পছন্দ হলে তবেই বিয়ে করবো। আমিও ওর সাথে যেহেতু খুব ফ্রি তাই মজাও করতাম খুব ওর বিয়ে নিয়ে। যাই হোক বিয়ে ঠিক-ঠাক। শুরু হলো, বিয়েতে কে কি পড়বো, কি করবো না করবো এসব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা। অনেক প্ল্যান সবার, বাড়ির শেষ বিয়ে আয়োজনে যেন কোন ত্রুটি না থাকে। বিয়েটা সম্পন্নও হলো বেশ ভাল ভাবেই। এর পর পরই দৃশ্য পাল্টাতে শুরু করলো, বুঝে ফেললাম আমার কাকী একদম শ্বশুড় বাড়ির রিলেটিভদের সহ্যই করতে পারছে না। যেখানে ভেবেছিলাম কাকীর সাথে একটা ফ্রেন্ডলি রিলেশন তৈরী হবে সেখানে এরকম ভাব বুঝে আমি প্রথমেই হোচট খেলাম। শ্বশুড়বাড়ির প্ররোচনায় সে আমাদের পুরো পরিবারের পেছনে শত্রুতায় লিপ্ত। এখন আমার সেই আগের কাকু আর বর্তমানের কাকুকে কিছুতেই মেলাতে পারি না। মনের ভেতর কে যেন বলে দেয় আমার সেই কাকু বেচে নেই....
বিষয়: বিবিধ
২৪৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন