চরিত্র হননের নতুন আগ্রাসন : ওয়ার্ল্ড ভ্যালেন্টাইনস'ডে

লিখেছেন লিখেছেন যযবর ১২ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:০৫:৪৩ দুপুর



বর্তমান বিশ্বের নতুন পরিভাষা হল“গ্লোবাল ভিলেজ”। অর্থাৎ বিশ্ববাসী একই এলাকার বাসিন্দা। আর তাই Globalization এর নামে যেমন কর্মপূচী নেয়া হয়েছে তার একটি পূর্ন দিক হল বিশেষ বিশেষ দিবস পালন। তেমনি একটি দিবস হল World Valentine day যে কোন জাতিকে ধ্বংস করতে হলে দরকার প্রথমে তার কৃষ্টি কালচার সম্পূর্ন রূপে ধ্বংস ও নিমূর্ল করা। যে সূত্র ধরে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে বহুপূর্ব থেকেই শুরু হয়েছে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র। মুসলিম জাতি সত্ত্বার অস্তিত্বকে নস্যাৎ করতে তাই ইহুদী খ্রীস্টান চক্র শুরু করছে সাংস্কৃতিক আঘ্রাষন। এজন্য তারা বেচে নিয়েছে হাতিয়ার হিসেবে প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে। মুসলমানদেরকে চরিত্রহীন ও সাংস্কৃতিক ভাবে দুর্বল করার জন্য পাশ্চাত্য মিডিয়ার ধ্বজাধাররি সুকৌশলে এদেশের মিডিয়ায় প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে তাদের মহাপরিকল্পা। যার মাধ্যমে তারা অনুষ্ঠানের একটু গোড়ার দিকে ফিরলে আমরা দেখতে পাই ৯০ এর দশকে এদেশে “বিশ্বভালবাসা দিবস” হিসেবে আসন গেড়ে বসে এ নব্য সংস্কৃতি। আমাদের দেশে প্রথম “যায়যায় দিন” প্রত্রিকায় ৯৩ সালে“ভালবাসা দিবস” সংখ্যা প্রকাশ করে। সেই থেকে এ দেশের সকল মিডিয়ায় এটি একটি বিশেষ স্থান দখল করে নেয়। এদিনে তরুন-তরুনী ও প্রেমীক-প্রেমিকা একে অপরকে শুবেচ্ছা কার্ড ও উপহার সামগ্রী পাঠায়। একে অপককে ভালবাসার কথা জানায়। শুধু প্রেমিক প্রেমিকারাই নয় ভ্যালেন্টাইন'ডে তে সবাই অর্থাৎ মা-বাবা, ভাই-বোন, সন্তান, শিক্ষক, সহকর্মীরা ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটান নানা ভাবে। যা থেকে একটি বিষয় ভালভাবে পরিষ্কার হয় যে, এদেশে যুর সমাজসহ সর্বস্থানে ভ্যালেন্টাইন'ডের অপসংস্কৃতি অক্টোপাশের ন্যায় ঝাপটে ধরেছে।

সংস্কৃতির এ নব্য আগ্রাসনকে জানার পূর্বে জানা দরকার সংস্কৃতি কি? মুসলিম উম্মাহর সংস্কৃতি কি? সংস্কৃতি শব্দটি বাংলা। ইংরেজীতে 'Culture' আর আরবীতে “সাক্বাফাত” এবং উর্দুতে তাহযীব। সংস্কৃতি অর্থ হয় সভ্যতাজনিত উৎকর্ষ, কৃষ্টি, সভ্যতা, তামাদুন বা সংস্কার। আল্লা’মা রাগেব আলী রৈুতী তার “আয়-স্বাক্বাফাহ” গ্রন্থে লিখেছেন সাক্বাফাই অর্থ মানসিকতার সঠিক ও পূর্ন সংশোধন এমন ভাবে য়ে, সংস্কৃতিবান ব্যক্তির সত্তা পরিপূর্নতা ও অধিক গুন বৈশিষ্ট্যের দর্পন হবে Oxford Dictionary-তে বলা হয়েছে 'trained and fine state of Under standing and manners and tastes, phase of these prevalent at a time or place instilling of it by training, artificial rearing of bee fish bacteria etc. টি, এস, ইলেয়ট এর ভাষায় “চাল চলন ও আদব কায়দার পরিন্ডলতারে কালচার বলে। সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী (রহঃ) সাংস্কৃতির সার কথায় লিখেছেন “সংস্কৃতি কাকে বলে তাই সব প্রথম বিচার্য। লোকেরা মনে করে জাতির জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়ম-নীতি শিল্প-কলা, ভাস্কর্য, আবিষ্কার ও উদ্ভাবনী বাজনীতিক রীতি নীতি সভ্যতা ধরণ বৈশিষ্ট্য ও রাষ্টনীতিই হল সংস্কৃতি। কিন্তু আসলে এগুলো সংস্কৃতি নয়। এসব হচ্ছে সংস্কৃতির ফল ও প্রকাশ। এমন সংস্কৃতির মূল্যায়ন করা যেতে পারে ব্েট কিন্তু আসল জিনিস হল এসবো অন্তনির্হিত মৌলিক ভাবধারা। তার ভিত্তি ও মৌল নীতির সন্ধান করাই আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য” সুতরাং এ থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠে যে মুসলিম জাতির “কালচার বা সংস্কৃতি” হল তাদের ধর্ম ও কর্মের মৌলিক ভাবধারা সমন্বিত রুপ(-১) ১৪ই ফেব্রয়ারীর সংস্কৃতি বিজাতীয় সংস্কৃতি চর্চারই নামান্তর। যা ইসলাম ধর্মে সম্পূর্ন ভাবে পরিত্যাজ্য।

ভ্যালেন্টাইস'ডে কি? ১৪ই ফেব্রয়ারী ভ্যালেন্টাইনস'ডে বা ভালবাসা দিবস ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, জার্মানিসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই তারকা থেকে শুরু করে সাধারন মানুষ সকলেই এদিনটিকে উদযাপন করছেন স্মৃতিময়, আনন্দময় ও মধুময় করে। পরস্পরকে ভালবাসার এই দিনটি নিয়ে ও রয়েছে অসংখ্য মতামত। যীশু খ্রীষ্টের জন্মের আগে চতুর্থ দশকে পৌত্তলিক ও মূর্তিপূজারীদের সমাজে বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচলিত ছিল। জমির উর্বরতা জন্য একটি দেবতাকে তারা বিশ্বাস করত। প্রাচীন রোমে জুনোর সম্মানে ১৪ই ফেব্রয়ারী ছুটির দিন। জুনো ছিলেন রোমান দের দেবীদের রানী। রোমানরা তাকে মহিলা ও বিবাহের দেবী হিসেবে জানত। পরবর্তী দিন ১৫ই ফেব্রয়ারী শুরু হত লুপার কালিয়া” উৎসব। লুপারকালিয়া হলেন জমি উর্বরতার দেবতা। তখন যুবক ছেলেও মেয়েদের জীবন ছিল সম্পূর্ন ভাবে পৃথক । সেই সময় তরুনদের ” আকা নামক এক ধরনের প্রথা রেওয়াজ ছিল। যেটি লুপারকালিয়া উৎসব উদযাপন করা হত। উৎসবের একটি কর্মসূচী ছিল। যুবতীদের নামে লটারীতে যে যুবতী যে যুবকের ভাগ্যে হবে আগামী বছর এ দিন আসা পর্যন্ত যে যুবতীকে যুবক ভোগ করত। অর্থাৎ লটারীর মাধ্যমে যুরতীদেরকে বন্টন করা হত। সেদিন দেবতার নামে পশু উৎসর্গ করা হত। উৎসর্গকৃত পশু বা ছাগলের চামড়া তুলে যুবতীর গায়ের মধ্যে জড়িয়ে দেয়া হত। তারপর ছাগলের রক্ত ও কুকুরের রক্ত রঞ্জিত একটি চাবুক যুবকের হাতে দেয়া হত। যুবক সে চাবুক দিয়ে চামড়া পরিহিতা যুবতীকে আঘাত করত, তারা মনে করত, এই চাবুকের আঘাতের কারনে যুবতীটি সন্তান জন্ম দেয়ার উপযুক্ত হবে।

এরপরে খ্রীষ্ট ধর্ম আবির্ভুত হল। যেটি ছিল আহলে কিতাবের ধর্ম। কাজেই এ জাতীয় কুংস্কারকে খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীরা সমর্থন করতে পারলনা। এ অনুষ্ঠানকে বিশুদ্ধ করা জন্য তারা দেবতার পরিবর্তে পাদ্রীর নামে করা শুরু করল। পাদ্রীর নামে লটারী দেয়া হল। যুবকের ভাগে যে প্রাদ্রীর নাম আসে যে যুবক পাদ্রীর সংস্পর্শে এক বছর অতিবাহিত করবে। যাতে পাদ্রীর কারনে যুবকদের চরিত্র ভাল হয়। ৪৭৬ জন পোপ ও জেলিয়াস বলেন, দিবসের নাম পরিবর্তন করা দরকার। আসে ছিল একজন দেবতার নামে এটা পরিবর্তন করে তাদের একজন যাজক যার নাম ছিল ভ্যালেন্টাইন তার সম্মানে দিবসটি পালন করা হোক। ৮৯৬ সালে এই দিবসের নাম করন করা হল ভ্যালেন্টাইস'ডে।

“ভ্যালেন্টইন” কে? খ্রীষ্টানদের ইতিহাসে পঞ্চাশ জনের মত ভ্যালেন্টাইন নামক ব্যক্তি নাম পাওয়া যায়। যার নামে এ দিবসটি পালন করা হয় তার ইতিহাস হল ২৬৯ খ্রীষ্টাব্দে রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লাউডিয়াসের অধীনে রোম অনেক খারাপ অত্যান্ত কঠিন ভাবে অগ্রসর হচ্ছিল। ক্লাউডিয়াস বিশ্বাস করত যে, রোমানরা তাদের স্ত্রী, পরিবার-পরিজন এবং ভালবাসা ত্যাগ করে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে ও যুদ্ধে যেতে চায়না। যার কারনে তিনি রোমে সমস্ত বিবাহ ও বাগদান অনুষ্ঠান বন্ধও নিষিদ্ধ ঘোষণা করল। দ্বিতীয় ক্লাউডিয়াসের সময়ে ভ্যালেন্টাইন রোমের এক গির্জার যাজক তারা বিবাহিত দম্পত্তিদের গোপনে সাহায্য সহযোগিতা করতেন। ভ্যালেন্টাইনের একটি পছন্দের কাজ ছিল প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিবাহ দেয়া। এমন কি সম্রাট ক্লাউডিয়াস আইস পাস করার পর ও তিনি বিবাহের কাজ সম্পন্ন করতেন। এ সময় বাইরে সৈনিকদের পদচারনে শোনা যেত। এক রাতে একটি বিবাহের কাজ সম্পাদন করার সময় পায়ের শব্দ শুনতে পেলেন এবং ভয় পেলেন। বিবাহ পর্ব শেষ হওয়ার পর সেই দম্পত্তি পালাতে সক্ষম হলেও ভ্যালেন্টাইন ধরা পড়লেন । তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হল এবং সম্্রাট সেন্ট ভ্যালেন্টইনের মৃত্যুদন্ড ঘোষনা করলেন। অনেক তরুন-তরুনী তাকে দেখতে এসে ফুল নিক্ষেপ করেছিল এবং জানালা ঘিরে ধরে বলেছিল তারা ও ভালবাসার বিশ্বাসী এদের মধ্যে জেলখানার গার্ডের মেয়েও ছিল। তার পিতা তাকে অনুমতি দিয়েছিল সেলে তার সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য। মেয়েটি ভ্যালেন্টাইন কে তার বিশ্বাস ধরে রাখতে সাহায্য করেছিল। দীর্ঘ দিন কারাভোগের পর ২৬৯ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ই ফেক্ষ্রয়ারী ভ্যালেন্টাইন মৃত্যুবরনের আগে বন্ধু জেলখানার গার্ডের মেয়েকে তার উদারতা এবং বন্ধুত্বের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে একটি চিঠি লিখেন। চিঠির শেষ লেখা ছিল Love from your Valentine অর্থাৎ ভালবাসা তোমার ভ্যালেন্টইন থেকে। এভাবে সেন্ট ভ্যালেন্টইন ভালবাসার দেবতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। আর সেই থেকে তার মৃত্যু দিবসকে ভালবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায় সেন্ট ভ্যালেন্টইন ও অন্যান্য বিরোধীতাকারীদের সনে এ বিষয়ে সংহতি প্রকাশ করলেন। রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লাউডিয়াসের নির্দেশে বিচারক তাকে প্রশ্ন করেন, রোমান দেবতা ‘জুপিটার’ ও মার্কাটি সম্পার্কে তিনি কি ধারনা পোষন করেন? তিনি উত্তরে বলেন, এসব দেবতার কোন অস্থিত্ব নেই যিশুবর্নিত গডই একমাত্র প্রভূ । দেবতাদের এভাবে অপমান করায় অপরাধে তাকে মৃত্যু দন্ডদেশ দিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। বন্দিবস্থায় ভ্যালেন্টাইন কারা তত্ত্বাবাধয়কের অন্ধ মেয়ের চিকিৎসা করে দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দেন। এরপর মেয়েটার সাথে তার যোগাযোগ ঘটতে থাকে যা ভালবাসায় পরিনতি লাভ করে। ২৭০ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ই ফেব্রয়ারী মৃত্যুবরণের পর ৪৯৬ খ্রীষ্টব্দে এই বিয়োগান্ত ঘটনোকে স্মরণ রাখার জন্য ১৪ই ফেব্রয়ারী ভ্যালেন্টইনস'ডে হিসেবে ঘোষনা করা হয়।

চরিত্র হননের হাতিয়ার ও নীতি নৈতিকতার স্থলনজনিত কারন সহ আনুষ্ঠানিক মারাত্মক কিছু সমস্যা কারণে ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার ভ্যালেন্টাইনস'ডে পালনকে নিষিদ্ধি ঘোষানা করেন। পরবর্তীতে ইতালী, অষ্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী ও জার্মানী ফ্রান্সের পথে হাঁটে এর আগে ১৭ শতকে রক্ষনশীল খ্রীষ্টানদের আধিপত্যের কারণে ইংল্যান্ডে ও এসব উৎসব পালন বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৭৯০ সালে রাজা কার্লোস দ্বিতীয় এটা আবার পুনরুজ্জীবিত করেন।

ভ্যালেন্টাইনস'ডে প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয় কিউপিডের ছবি। কিউপিড হচ্ছে ভালবাসার রোমান দেবী ভেনাসের পুত্র সন্তান। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক হারে ভ্যালেন্টইন’ডে কার্ড বিনিময় শুরু হয় ১৮৪৭ সালে ম্যাসাচুসেটস এর অর্কেস্টারে। Esther A Howland ১৮৪০ সালে আমেরিকায় বানিজ্যিক ভ্যালেন্টইন'ডে কার্ড উৎপাদন ও বাজারজাত করেন। প্রথম বছরে কার্ড বিক্রি হয়েছে পাঁচহাজার ডলার। গত বছর ১৪ই ফেব্রয়ারী রাতে ঢাকার ফুলের দোকান গুলোতে কোন ফুল ছিলনা। এমনকি সব দ্বিগুন মূল্যে বিক্রি হয়। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যুব সমাজ এ দিবসটিকে কিভাবে সেলিব্রেট করছে। ঢাকা তো কোন নিউইয়র্ক সিটি নয় যেখানে ১টি গোলাপ বিক্রি হয়েছে বিশ ডলার ভালবাসবে তবে? বলো ভালবাসবে তবে? এ স্লোগান নিয়ে ১৪ই ফেব্রয়ারী ২০০৫ সোমবার বিকাল ৫টায় ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডেবোটং সোসাইটি স্বোপজিত স্বাধীনতা পুরোপুরি সফল হয়। তবুও যে কথা বলার দরকার তাহলো কিভাবে আমাদের আগামী প্রজন্মের চরিত্র হনন করছে পাশ্চাত্যের তথাকথিত সভ্য সমাজ যার শেষ অনুষ্ঠানের একটি হল এমন একটি নগ্নতা ও অসভ্য বিতর্কের আয়োজন।

বিশ্বভালবাসা দিবস নামে আগুনের মধ্যে পেট্রোল ঢেলে যুবকদের চরিত্রকে ভস্মিভূত করা হচ্ছে। তাদেরকে লজ্জাহীন ও বেহায়ারূপে প্রতিষ্ঠা করার জন্য একে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে অশ্লীলতা, নগ্নতা, বেহায়াপনা, জেনা, ব্যভিচার সহ নানা অপকর্মে আর নারী পুরুষের অবাধ যৌনাচার গোটা দেশের পরিবেশকে চরম ভাবে দুবির্ষহ করে তুলছে। মহাবিপর্যয়ের অশনি সংকেত দেখা যাচ্ছে চারিদিকে। তাই ভালবাসাদিবস পালনতো দূরের কথা এ নিয়ে হাসি-তামাশা ও করা যাবে না। কেননা মহান আল্লাহ এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেছেন তোমরা যেনা বা ব্যাভিচারের কাছেও যেওনা। তিনি আরো বলেন “হে নবী আপনি মুমিন যুবকদেরকে বলেন তোমরা তোমদের চক্ষুযুগল অবনমিত কর (আর যুবতীদের দিকে তাকানো থেকে বিতত হও) এবং নিজেদের লজ্জাস্থান হেফাজত কর। হে নবী আপনি মুমিন (যুবতীদেরকে) বলেন তারা ও যেন তাদের দৃষ্টিকে নত করে অপর কোন পুরুষের দিকে চোখ না দেয়া এবং তাদের সম্ভ্রামকে রক্ষা করে। কোরআনের এসব আয়েতের মাধ্যমে বুঝা যায় ব্যভিচার করাতো দূরের কথা তার কাছেও যাওয়া যাবে না। ভালবাসা দিবস যেনা নয় কিন্তু এটি যেনাকে উৎসাহিত করে এক সময় ব্যভিচারে লিপ্ত করে। তাই বিবাহ পূর্ব নর নারীর মেলামেশা ও ভালবাসা হচ্ছে হারামও অবৈধ। ভালবাসা দিবস পালনের নামে যুগলবন্দী হয়ে যুবক যুবতী নারী পুরুষকে পার্কে গিয়ে আড্ডা দেয়া হোটেল ও রেষ্টুরেন্টে গিয়ে আপ্যায়ন করা বিবাহের পূর্বে তো বৈধ নয়। এমনকি পারও তাতে শালীনতা বজায় বাখতে হবে।

ভালবাসা দিবস পালন নামে একটি অপকর্ম ও অশ্লীল সমাজ গড়ে উঠার আজ বিশ্বায়ন চরম হুমকি ও মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে মুখ থুবরে পড়েছে। এক সমীক্ষায় দেখা যায় এ পর্যন্ত বিশ এর অধিক যৌন বাহিত রোগ (Sexually Transmitted Disease) আবি®কৃত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে দেখা গেছে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ৩৭কোটি নারী পুরুষ বিভিন্ন রকমের যৌন বাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। এই যৌন বাহিত রোগের বিস্তার প্রায় সর্বক্ষেত্রেই ঘটে নারী পুরুষের অবাধ ও বিবাহিত সম্পর্কের বাইরে যৌন কর্মকান্ডের ফলে। কিছু কিছু যৌন বাহিত রোগের পরবর্তী জটিলতা হিসেবে বন্ধাত্ব প্রজনন তন্ত্রের বিভিন্ন রকমের ক্যান্সার বিপদজনক গর্ভধারন ইত্যাদি দেখা দেয়। যা প্রানঘাতী । আবার কিছু কিছু যৌনবাহিত রোগ মায়ের থেকে শিশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে যায় ফলে শিশু পঙ্গুঁ হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে শিশুর মৃত্যু হয়। যৌন ব্যহিত রোগের মধ্যে AIDS (এইডস) তো মানুষকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। অন্যান্য অনেক রোগ যেমন ত্রিকলিস, গনোরিয়া, চ্যানক্রোরিত ইত্যদি ও মারাক্তক রোগ। শুধু তাই নয় AIDS আফ্রিকা থেকে বিশেষ এক ভাইরােেসর মিউটেশনের ফলে জন্ম নেয়, সেখান থেকে পরবর্তীতে উত্তর আমেরিকার দেশ হাইতিতে স্থানান্তরিত হয়। হাইতিতে রয়েছে অসংখ্য সমকামী পুরুষ পতিতা বৃত্তি (Male prostituting) প্রানঘাতী AIDS আবির্ভাব সমকামীদের মধ্যে সর্বাদিক বিস্তারের হার ইত্যাদি। হযরত লুত (আঃ) এর জনগোষ্ঠিদের সেই সর্ব নিকৃষ্ট চরিত্রের কথা স্বরন করিয়ে দেয়। যাদেরকে আল্লাহ ধ্বংশ করে দিয়েছিলেন। আর যে কাজটি আমেরিকা ও ইউরোপে আইনরূপে বৈধতা পেয়েছে। অবৈধ যৌনচারের কারনে পরিবার ও সমাজ অস্থিতিশীলতা হয়ে উঠেছে। পরিবার প্রথা ভেঙ্গেঁ পড়ছে এবং বিবাহের হার কমে যাচ্ছে আশংকাজনক হারে আমেরিকায় প্রতি ১ মিনিট শ সেকেন্ডে ঘটে ১টি ধর্ষনের ঘটনা।আর সেখানে ভারতে প্রতি ৫ মিনিটে ১ জন নারী ধর্ষিতা হয়।

আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ও চলছে চরম দেওলিয়া। চলছে সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির চর্চা। অপসংস্কৃতির বিভীষিকা থেকে মুসলিম সংখ্যা ঘরিষ্ঠ দেশ ও বিশ্ব মানবতাকে রক্ষা ও বিরত বাখতে না পারলে হযরত লুত (আঃ) আর কাওমের মত এমনকি তার চেয়েও ভীষন কোন খোদায়ী গজব নাযিল হয়ে সমগ্র বিশ্ববাসীকে আল্লাহ ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে সকল পর্যায় থেকে। যার সমাধান ১৪০০ বছর আগে পবিত্র কোরআন এভাবে দিয়েছেন যখন অওউঝ এর কোন ধারনা বিশ্ব সভ্যতা জানতনা “ব্যভিচারিনী ও ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে একশো কষাঘাত মারবে। আল্লাহর বিধান কার্যকারী করনে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদের অভিভুত না করে, যদি তোমরা বিশ্ববাসীদের একটি দল যেন তোমরা বিশ্ববাসীদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। (আস-নূর-২)

বিষয়: বিবিধ

১৫১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File