ওয়ার্ল্ড ভ্যালেন্টাইন ডে : অপসংস্কৃতির নব্য আগ্রাসন
লিখেছেন লিখেছেন যযবর ০৯ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:০১:৩৫ দুপুর
ভ্যালেন্টাইন ডে কি? ১৪ই ফেব্রয়ারী ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালবাসা দিবস ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, জার্মানিসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই তারকা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকলেই উদযাপন করছেন স্মৃতিময়, আনন্দময় ও মধুময় করে। যীশু খ্রীষ্টের জন্মের আগে চতুর্থ দশকে পৌত্তলিক ও মূর্তিপূজারীদের সমাজে বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচলিত ছিল। জমির উর্বরতার জন্য একটি দেবতাকে তারা বিশ্বাস করত। প্রাচীন রোমে জুনোর সম্মানে ১৪ই ফেব্রয়ারী ছিল ছুটির দিন। জুনো ছিলেন রোমান দের-দেবীদের রানী। রোমানরা তাকে মহিলা ও বিবাহের দেবী হিসেবে জানত। পরবর্তী দিন ১৫ই ফেব্র“য়ারী শুরু হত লুপার কালিয়া” উৎসব। লুপারকালিয়া হলেন জমি উর্বরতার দেবতা। তখন যুবক ছেলে ও মেয়েদের জীবন ছিল সম্পূর্ণভাবে পৃথক । সেই সময় তরুণদের ‘ আকা’ নামক এক ধরণের প্রথা ছিল। যেটি ’লুপারকালিয়া’ উৎসবে উদযাপন করা হত। উৎসবের একটি কর্মসূচী ছিল। যুবতীদের নামে লটারী ইস্যু করা হত। যে যুবতী যে যুবকের ভাগ্যে হবে আগামী বছর এ দিন আসা পর্যন্ত সে যুবতীকে যুবক ভোগ করবে। অর্থাৎ লটারীর মাধ্যমে যুরতীদেরকে বণ্টন করা হত। সেদিন দেবতার নামে পশু উৎসর্গ করা হত। উৎসর্গকৃত পশু বা ছাগলের চামড়া তুলে যুবতীর গায়ের মধ্যে জড়িয়ে দেয়া হত। তারপর ছাগলের রক্ত ও কুকুরের রক্ত রঞ্জিত একটি চাবুক যুবকের হাতে দেয়া হত। যুবক সে চাবুক দিয়ে চামড়া পরিহিতা যুবতীকে আঘাত করত, তারা মনে করত এই চাবুকের আঘাতের কারণে যুবতীটি সন্তান জন্ম দেয়ার উপযুক্ত হবে।
এরপরে খ্রীষ্ট ধর্ম আবির্ভুত হল। যেটি ছিল আহলে কিতাবের ধর্ম। কাজেই এ জাতীয় কুংস্কারকে খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীরা সমর্থন করতে পারলনা। এ অনুষ্ঠানকে বিশুদ্ধ করা জন্য তারা দেবতার পরিবর্তে পাদ্রীর নামে করা শুরু করল। পাদ্রীর নামে লটারী দেয়া হল। যুবকের ভাগে যে প্রাদ্রীর নাম আসে যে যুবক পাদ্রীর সংস্পর্শে এক বছর অতিবাহিত করবে। যাতে পাদ্রীর কারণে যুবকদের চরিত্র ভাল হয়। ৪৭৬ সালে পোপ জেলিয়াস বলেন দিবসের নাম পরিবর্তন করা দরকার। আগে ছিল একজন দেবতার নামে এটা পরিবর্তন করে তাদের একজন যাজক যার নাম ছিল ভ্যালেন্টাইন তার সম্মানে দিবসটি পালন করা হোক। ৪৯৬ সালে এই দিবসের নামকরণ করা হল ভ্যালেন্টাইন ডে। “ভ্যালেন্টইন” কে? খ্রীষ্টানদের ইতিহাসে পঞ্চাশ জনের মত ভ্যালেন্টাইন নামক ব্যক্তি পাওয়া যায়। যার নামে এ দিবসটি পালন করা হয় তার ইতিহাস হল ২৬৯ খ্রীষ্টাব্দে রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লাউডিয়াসের অধীনে রোম অনেক খারাপ, বাজে এবং অজনপ্রিয় অভিযানে নিয়োজিত ছিল। সে সময় রোমে যুদ্ধবিগ্রহ ও রক্তপাত ছিল সাধারণ ও নিয়মিত ব্যাপার। সামরিক বাহিনীতে সৈন্য নিয়োগের জন্য ক্লাউডিয়াসের সময়টা অত্যন্ত কঠিনভাবে অগ্রসর হচ্ছিল। ক্লাউডিয়াস বিশ্বাস ছিল, রোমানরা তাদের স্ত্রী, পরিবার-পরিজন এবং ভালবাসা ত্যাগ করে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে ও যুদ্ধে যেতে চায়না। যার কারণে তিনি রোমে সমস্ত বিবাহ ও বাগদান অনুষ্ঠান বন্ধ ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। দ্বিতীয় ক্লাউডিয়াসের সময়ে ভ্যালেন্টাইন রোমের এক গির্জার যাজক ছিলেন। তিনি সম্রাট দ্বিতীয় ক্লাউডিয়াসের এই আদেশ সমর্থন করতে পারলেননা । ভ্যালেন্টাইনের একটি পছন্দের কাজ ছিল প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিবাহ দেয়া। এমন কি সম্রাট ক্লাউডিয়াস আইন পাস করার পরও তিনি বিবাহের কাজ সম্পন্ন করতেন। এ সময় বাইরে সৈনিকদের পদচারণা শোনা যেত। এক রাতে তিনি একটি বিবাহের কাজ সম্পাদন করার সময় পায়ের শব্দ শুনতে পেলেন এবং ভয় পেলেন। বিবাহ পর্ব শেষ হওয়ার পর সেই দম্পতি পালাতে সক্ষম হলেও ভ্যালেন্টাইন ধরা পড়লেন । তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হল এবং সম্্রাট ভ্যালেন্টইনের মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করলেন। অনেক তরুণ-তরুণী তাকে দেখতে এসে ফুল নিক্ষেপ করেছিল এবং জানালা ঘিরে ধরে বলেছিল তারা ও ভালবাসায় বিশ্বাসী । এদের মধ্যে জেলখানার গার্ডের মেয়েও ছিল। তার পিতা তাকে অনুমতি দিয়েছিল সেলে তার সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য। মেয়েটি ভ্যালেন্টাইনকে তার বিশ্বাস ধরে রাখতে সাহায্য করেছিল। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর ২৬৯ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ই ফেব্র“য়ারী ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার আগে বন্ধু জেলখানার গার্ডের মেয়েকে তার উদারতা এবং বন্ধুত্বের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে একটি চিঠি লিখেন। চিঠির শেষে লেখা ছিল Love from your Valentine… অর্থাৎ ভালবাসা তোমার ভ্যালেন্টইন থেকে। এভাবে সেন্ট ভ্যালেন্টইন ভালবাসার দেবতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। আর সেই থেকে তার মৃত্যু দিবসকে ভালবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। মৃত্যুর পর ৪৯৬ খ্রীষ্টব্দে এই বিয়োগান্ত ঘটনাকে স্মরণ রাখার জন্য ১৪ই ফেব্র“য়ারীকে ভ্যালেন্টইন ডে হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
World Valentine day এর দিনটিতে তাবৎ বিশ্ব প্রেম-ভালবাসার আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে। তবে কেন এ আনন্দের জোয়ার আর প্রেম-ভালবাসার নামে এত মাতাতমাতি ও বেহায়াপনা ? শুরুতে বলতে চাই কোন জাতিকে ধ্বংস করতে হলে দরকার প্রথমে তার কৃষ্টি-কালচার সম্পূর্নরূপে ধ্বংস ও নির্মূল করা। যে সূত্র ধরে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে বহুপূর্ব থেকেই শুরু হয়েছে বিশ্ব মোড়লদের বিভিন্ন ষড়যন্ত্র। মুসলিম জাতিসত্ত্বার অস্তিত্বকে নস্যাৎ করতে তাই ইহুদী ও খ্রীস্টান চক্র শুরু করছে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। ফিরে দেখা যাক ইতিহাস কি বলে ? ১৮৯৫ সালের শেষ দিকে নিউইয়র্ক থেকে দুটি পত্রিকা প্রকাশিত হতো। একটি সানডে ওয়ার্ল্ড অপরটি সানডে জার্নাল। কে কত বেশি লোককে হাসাতে বা কাঁদাতে পারে, কে কত আশ্চর্য খবর জানাতে পারে, কে কত অদ্ভুত ও অবিশ্বাস্য ফিচার ও গল্প ছাপতে পারে, সে প্রতিযোগিতায় কর্মকর্তারা সর্বদা ব্যস্ত থাকেন। চমক লাগানোর জন্য শুরু হয় মিথ্যার আশ্রয় নেয়া। শুরু হয় ইয়োলো জার্নালিজমের যাত্রা। তথ্য পরিবেশনের চেয়ে উদ্দেশ্য ও অভিসন্ধি চরিতার্থ করাই এর মূল লক্ষ্য। কাগজের অতিরিক্ত কাটতির জন্য যৌনতা, হিংসা, জিঘাংসা, কেলেংকারী, অপরাধ, মিথ্যাচার, অপবাদ ইত্যাদি বিষয়ক সংবাদ সৃষ্টি করে পরিবেশন শুরু হয়। এটি তাদের দৈনন্দিন কাজে পরিণত হয়। তারা এমনভাবে সংবাদ পরিবেশন করল যার ভাষা শুনে শয়তানও শরম পায়। বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে ইহুদী ও খ্রীস্টান একই লক্ষ্যে মৈত্রী বন্ধন গড়ে তোলে। মুসলমানরা যাতে সাংস্কৃতিক দিক থেকে মোটেও অগ্রসর হতে না পারে এজন্য তারা শুরু করে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, যার নগ্ন বহি:প্রকাশ হলো বিশ্ব ভালবাসা দিবস। একটু গোড়ার দিকে ফিরলে আমরা দেখতে পাই ৯০ এর দশকে এদেশে “বিশ্ব ভালবাসা দিবস” হিসেবে আসন গেড়ে বসে এ নব্য সংস্কৃতি। আমাদের দেশে প্রথম “যায়যায় দিন” পত্রিকায় ৯৩ সালে“ভালবাসা দিবস” সংখ্যা প্রকাশ করে। সেই থেকে এ দেশের সকল মিডিয়ায় এটি একটি বিশেষ স্থান দখল করে নেয়। এদিনে তরুন-তরুনী ও প্রেমিক-প্রেমিকা একে অপরকে শুভেচ্ছা কার্ড ও উপহার সামগ্রী পাঠায়। একে অপককে ভালবাসার কথা জানায়।
চরিত্র হননের হাতিয়ার ও নীতি নৈতিকতার স্থলনজনিত কারণসহ আনুষ্ঠানিক মারাত্মক কিছু সমস্যা কারণে ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার ভ্যালেন্টাইনস'ডে পালনকে নিষিদ্ধি ঘোষাণা করেন। পরবর্তীতে ইতালী, অষ্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী ও জার্মানী ফ্রান্সের পথে হাঁটে । এর আগে ১৭ শতকে রক্ষণশীল খ্রীষ্টানদের আধিপত্যের কারণে ইংল্যান্ডেও এসব উৎসব পালন বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৭৯০ সালে রাজা কার্লোস দ্বিতীয় এটা আবার পুনরুজ্জীবিত করেন। “ভালবাসবে তবে? বলো ভালবাসবে কবে?” এ স্লোগান নিয়ে ১৪ই ফেব্রয়ারী ২০০৫ সোমবার বিকাল ৫টায় ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে আয়োজন করে ভালবাসা দিবস বিতর্কের।যেটি আকস্ম্যাৎ বোমা হামলার কারণে পুরোপুরি সফল হয়নি। তবুও যে কথা বলা দরকার তাহলো কিভাবে আমাদের আগামী প্রজন্মের চরিত্র হনন করছে পাশ্চাত্যের তথাকথিত সভ্য সমাজ যার শেষ অনুষ্ঠানের একটি হল এমন একটি নগ্নতা ও অসভ্য বিতর্কের আয়োজন। যার ফলে অশ্লীলতা, নগ্নতা, বেহায়াপনা, যেনা, ব্যভিচারসহ নানা অপকর্মে আর নারী পুরুষের অবাধ যৌনাচার গোটা দেশের পরিবেশকে চরম ভাবে দুবির্ষহ করে তুলছে। মহান আল্লাহ এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেছেন ,‘তোমরা যেনা বা ব্যাভিচারের কাছেও যেওনা’। তিনি আরো বলেন “হে নবী আপনি মুমিন যুবকদেরকে বলেন তোমরা তোমদের চক্ষুযুগল অবনমিত কর (আর যুবতীদের দিকে তাকানো থেকে বিরত হও) এবং নিজেদের লজ্জাস্থান হেফাজত কর। হে নবী আপনি মুমিন (যুবতীদেরকে) বলেন তারা ও যেন তাদের দৃষ্টিকে নত করে অপর কোন পুরুষের দিকে চোখ না দেয় এবং তাদের সম্ভ্রমকে রক্ষা করে”। কোরআনের এসব আয়েতের মাধ্যমে বুঝা যায় ব্যভিচার করাতো দূরের কথা তার কাছেও যাওয়া যাবে না। ভালবাসা দিবস যেনা নয় কিন্তু এটি যেনাকে উৎসাহিত করে এক সময় ব্যভিচারে লিপ্ত করে। তাই বিবাহ পূর্ব নর-নারীর মেলামেশা ও ভালবাসা হচ্ছে হারামও অবৈধ।
ভালবাসা দিবস পালন নামে একটি অপকর্ম ও অশ্লীল সমাজ গড়ে উঠায় আজ বিশ্বায়ন চরম হুমকি ও মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এক সমীক্ষায় দেখা যায় এ পর্যন্ত বিশ এর অধিক যৌন বাহিত রোগ (Sexually Transmitted Disease) আবি®কৃত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে দেখা গেছে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ৩৭কোটি নারী-পুরুষ বিভিন্ন রকমের যৌন বাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। এই যৌন বাহিত রোগের বিস্তার প্রায় সর্বক্ষেত্রেই ঘটে নারী-পুরুষের অবাধ ও বিবাহিত সম্পর্কের বাইরে যৌন কর্মকান্ডের ফলে। কিছু কিছু যৌন বাহিত রোগের পরবর্তী জটিলতা হিসেবে বন্ধাত্ব ,প্রজনন তন্ত্রের বিভিন্ন রকমের ক্যান্সার ,বিপদজনক গর্ভধারণ ইত্যাদি দেখা দেয়, যা প্রাণঘাতী । আবার কিছু কিছু যৌনবাহিত রোগ মায়ের থেকে শিশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, যায় ফলে শিশু পঙ্গুঁ হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে শিশুর মৃত্যু হয়। যৌন ব্যহিত রোগের মধ্যে AIDS (এইডস) তো মানুষকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। অন্যান্য অনেক রোগ যেমন সিকলিস, গনোরিয়া, চ্যানক্রোয়িড ইত্যদি ও মারাতক রোগ। শুধু তাই নয় AIDS আফ্রিকা থেকে বিশেষ এক ভাইরােেসর মিউটেশনের ফলে জন্ম নেয়, সেখান থেকে পরবর্তীতে উত্তর আমেরিকার দেশ হাইতিতে স্থানান্তরিত হয়। হাইতিতে রয়েছে অসংখ্য সমকামী পুরুষ । পতিতা বৃত্তি (Male prostitutin) প্রাণঘাতী AIDS আবির্ভাব সমকামীদের মধ্যে সর্বাদিক বিস্তারের হার। ইত্যাদি হযরত লুত (আঃ) এর জনগোষ্ঠিদের সেই সর্বনিকৃষ্ট চরিত্রের কথা স্বরণ করিয়ে দেয়। যাদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। ঠিক তদ্রƒপ আল্লাহ মহাপ্রলয়ংকরী ভূমিকম্প দিয়ে ধ্বংস করে দেন হাইতি জনপদবাসীকে। ভূমিকম্পটি সংঘটিত হয় ১২ জানুয়ারী ২০১০ সালে এবং এতে প্রায় ৩ লক্ষ লোক নিহত হয় ও ১০ লক্ষ লোক গৃহহীন হয়। আর সমকামের মত কাজটি আমেরিকা ও ইউরোপে আইনরূপে বৈধতা পেয়েছে। অবৈধ যৌনচারের কারণে পরিবার ও সমাজ অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। পরিবার প্রথা ভেঙ্গে পড়ছে এবং বিবাহের হার কমে যাচ্ছে আশংকাজনক হারে। আমেরিকায় প্রতি ১ মিনিট ১৭ সেকেন্ডে ঘটে ১টি ধর্ষণের ঘটনা।আর সেখানে ভারতে প্রতি ৫ মিনিটে ১ জন নারী ধর্ষিতা হয়।
সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ধারায় আজ আমাদের দেশের পবিত্রতম সমাজ ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভ্যালেন্টাইন ডে নামে নষ্টামীর কারণে স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি, অফিস-আদালত, কোর্ট-কাচারী, পার্ক, বোটানিকেল গার্ডেন, মার্কেট-শপিংমল, হাট, লোকালয় ও লেকসহ সর্বত্রই খোলামেলাভাবে চলছে যৌনতার মহড়া। যা দেখে আইয়্যামে জাহেলিয়াতের চরম বিশৃংখল সমাজের অবাধ যৌনাচারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। দেশের আবাসিক হোটেলগুলো দেহ ব্যবসার কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার ফলে পতিতাবৃত্তি এখন প্রশাসনিক অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। নৈতিকতার এতটাই পদস্খলন হয়েছে যে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয় পত্রে পেশাকে যৌন কর্মী হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে। ডিশএন্টিনার মাধ্যমে টিভি, ভিসিআর, সিনেমায় চলছে অশ্লীল ছবি, উলঙ্গ নৃত্য আর যৌন উত্তেজনামূলক দৃশ্য প্রদর্শনী। ইন্টারনেট, ফেসবুক ও টুাইটারের মাধ্যমে চলছে বিকৃত রুচিসম্পন্ন ছবি ও পর্ণো প্রদর্শনী। সিডি-ভিসিডির মাধ্যমে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যে চলছে নির্বিকার যৌনাচার। বেসামাল যুব সমাজের চরিত্র হননের জন্য ম্যাগাজিন ও পত্রিকাগুলো প্রতিদিন আপত্তিকর ছবি এবং অশ্লীল লেখা ছাপছে । যেখানে আল কুরআনে ঘোষণা হয়েছে: বলো, আমার প্রতিপালক নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতাকে (সূরা আরাফ)। যিনার কাছেও যেওনা, এটা অশ্লীল আর মন্দ পথ( বনী ইসরাইল)।
ভ্যালেনটাইন ডে মূলত ইভটিজিং, পরকীয়া, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপ ও ব্যাভিচার ইত্যাদির অন্যতম মূল উৎস। এ দিনটি সৃষ্টির পিছনের কারণ থেকে এ বিষয়টি আরো দৃঢ়ভাবে প্রতীয়মান হয়। দিনটির প্রবর্তকগোষ্ঠী মানবসভ্যতাকে ধ্বংসের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ দিনটিকে মহাকৌশলে বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করেছে। এ দিবসটির প্রভাব বিশ্ববাসীর প্রতি হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে নিক্ষিপ্ত পরমাণু বোমা ফ্যাটম্যান-লিটলবয়, এমনকি তার চাইতে জঘন্য হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে। সারা বছর বিশ্বজুড়ে যে ইভটিজিং, পরকীয়া, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন , এসিড নিক্ষেপ ও ব্যাভিচার সংঘটিত হয় তাকে বৈধতা দেয়ার জন্য প্রতি বছর ১৪ ফেব্র“য়ারীর এ দিবসটি উৎযাপন করা হয়। হায়রে মানবতা! হায়রে মনুষ্যত্ব! হায়রে বিবেক! আজ কোথায় ? বিষয়টি বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করলে সহজে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। ভ্যালেনটাইন ডে এর নতুন সংস্করণ ‘ইভটিজিং’ ও এ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রতিই শুধু দৃষ্টিপাত করছি। চাইল্ড পার্লামেন্ট পরিচালিত ‘শিক্ষা ও সুসাশন’ শীর্ষক এক রিপোর্টে জানানো হয় দেশের স্কুলের ৬২% ছাত্রী ইভটিজিংয়ের শিকার হয়েছে। সেভ দি চিলড্রেন অস্ট্রেলিয়ার কান্ট্রি ডিরেক্টর সুলতান মাহমুদ জানান, এই জরিপ কাজে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল ৬৪ জেলার ৫১২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১ জানুয়ারী ২০১১ )। ন্যাশনাল উইমেন ল’ইয়ার এসোসিয়েশনের এক সাম্প্রতিক তথ্যে দেখানো হয়েছে বর্তমানে দেশে ১০ থেকে ১৮ বছর বয়সী ৯০% নারী ঘরে এবং বাইরে ইভটিজিংয়ের শিকার হচেছ। আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানায় ২০১০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত যৌন হয়রানিমূলক ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে ২৮ জন নারী, মেয়ের অপমান সহ্য করতে না পেরে এক পিতা, ছেলের অবাধ্যতায় এক মা আত্মহত্যা করেন। প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১৮ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১০ মাসে (জানুয়ারী-অক্টোবর) ইভটিজিংয়ের ঘটনায় সারাদেশে ১৭২ টি মামলা হয়েছে। জিডি হয়েছে ৪৬৬ টি। এসব মামলায় মোট আসামীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫০১ জন। উত্যক্তের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে ১ হাজার ২৩৫ জন। (দৈনিক যুগান্তর, ১ জানুয়ারী ২০১১)।
বিষয়: বিবিধ
১৮৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন