চুরি করা (ক্লিপটোম্যানিয়া)যখন মানসিক রোগ
লিখেছেন লিখেছেন আকরাম ১১ আগস্ট, ২০১৩, ০৭:০৫:২১ সন্ধ্যা
১) সুপারশপ থেকে দুই বক্স চকলেট চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়লেন মিস্টার কামাল। দোকানের সবাই তো বেশ অবাক। কারণ মিস্টার কামাল ‘ তো বিত্তশালী ব্যক্তি-তার সামান্য চকলেট চুরি করার দরকার কী? পরে ‘ভুলেই এমন হয়ে গেছে, আন্তরিকভাবে দুঃখিত’ বলে কোন ভাবে বিব্রত অবস্থা থেকে রেহাই পেলেন ‘ক’; সুপারশপের লোকজনও এমন বিত্তবান কাস্টমারকে বেশি হেনস্তা করল না।
২) কণা ও বনা দুই বান্ধবী। একদিন কণার সাধের নোটবুকটা খোয়া গেলে সে শোকে কাতর হয়ে পড়ল। অনেক খোঁজাখুঁজি করে শেষ পর্যন্ত বনার রুমের খাটের তোশকের তলায় তার খোঁজ মিলল! কণা রীতিমত অবাক আর বনা থরথর করে কাঁপতে থাকল।
উপরের দুইটি ঘটনায় চুরির সাথে সম্পর্কিত একটি মানসিক রোগ যার নাম ক্লিপটোম্যানিয়া ।
যে রোগে আক্রান্ত হলে কোন ব্যক্তি চুরি করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে না- অথচ এর সাথে তার ব্যক্তিগত বা আর্থিক সম্পর্ক নেই।
একজন চোর আর্থিক অভাব মেটাতে বা লাভবান হতে চুরির মত অপরাধ করে। আবার সাধারণ জীবনে বেখেয়ালে কারও ছোটখাটো জিনিস অন্যের হস্তগত হতে পারে। কিন্তু ক্লিপটোম্যানিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি কোন বাহ্যিক উদ্দেশ্য নিয়ে নয়-আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়েই চৌর্যবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ে।
অনেকের মতে, ক্লিপটোম্যানিয়া ওসিডি বা অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজিজেরই একটি অংশ – অর্থাৎ ব্যক্তি সচেতন ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার অবচেতন মনের অনাকাঙ্ক্ষিত ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেয়। এক্ষেত্রে চুরি করার পরে ব্যক্তি প্রচণ্ড মানসিক চাপ থেকে সাময়িকভাবে রেহাই পায়।
সাধারণভাবে ক্লিপটোম্যানিয়া অন্যান্য মানসিক সমস্যা- মনমেজাজের ভারসাম্যহীনতা, হতাশা,দুশ্চিন্তা, মাদকাসক্তি, খাদ্যগ্রহণঘটিত মানসিক রোগ যেমন- বুলিমিয়া নার্ভোসার সাথে সম্পর্কিত থাকে।
ক্লিপটোম্যানিয়ার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও প্রচলিত তত্ত্ব অনুসারে- মস্তিষ্কের একটি নিউরোট্রান্সমিটার সেরাটোনিনের কম নিঃসরণই এ আচরণের জন্য দায়ী। কারণ সেরাটোনিনই আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। হতাশা, দীর্ঘদিন ধরে বয়ে বেড়ানো মানসিক চাপ ও সমস্যা, ব্যক্তিগত সমস্যার পারিপার্শ্বিকতায় এ রোগ হতে পারে। এ রোগের সাথে বংশগত মানসিক রোগের যোগসূত্রও থাকতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে বয়ঃসন্ধিকালে ও তরুণ বয়সেই এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এছাড়া নারীদের মধ্যে এ রোগে আক্রান্তের হার বেশি। এর কারণ হতে পারে- নারীদের মাঝেই বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে হতাশা ও অবদমিত আবেগজনিত সমস্যায় আক্রান্তের হার তুলনামূলক বেশি হয়।
ক্লিপটোম্যানিয়ার সাথে অন্য একটি মানসিক রোগ পাইরোম্যানিয়ার যোগসূত্র রয়েছে [ সম্ভবত এ রোগেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার মার্ক ভারমিউলেন আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট একাডেমির ভবনে]
ক্লিপটোম্যানিয়াকে একটি মানসিক রোগ হিসেবে বিবেচনা করেই এর চিকিৎসা করা প্রয়োজন। যে কোন মানসিক সমস্যাই প্রাথমিক ভাবে নিরাময় করা না হলে তা ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করে। আর এই রোগ চেপে রাখলে যেমন যত্রতত্র অপদস্ত হওয়া ও সামাজিক মর্যাদাহানির ঘটনা যেমন ঘটবে তেমনি তীব্র অপরাধবোধ,গভীর হতাশা ক্রমেই ব্যক্তির মানসিক ভারসাম্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। বিভিন্ন সাইকোথেরাপি- সি,বি, টি [ কনজিনিটিভ বিহাভিয়ার থেরাপি] এবং ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে এ রোগের সুচিকিৎসা সম্ভব।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া
আরো জানতে
আমার ব্লগ http://ptohelp.blogspot.se
বিষয়: বিবিধ
২১২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন