ঐক্যের চূড়ান্ত আহ্বানঃ বাচ্চু রাজাকারের সাথে সাথে বাংলাদেশের সর্বশেষ মুসলিমটিরও ফাঁসি হয়ে গেলো।
লিখেছেন লিখেছেন আল মুহাজির শাইখ ০৭ মার্চ, ২০১৩, ০২:০০:৫৯ রাত
ভূমিকাঃ শিক্ষণীয় ও দৃষ্টান্তমূলক উপমা-উৎপ্রেক্ষার ক্ষেত্রে আরব্য সাহিত্যের কোন তূলনা নেই। এমনই একটি শিক্ষণীয় আরব্য সাহিত্যের একটি দীর্ঘ গল্পের সারসংক্ষেপ এখানে তুলে ধরছি।
এক জঙ্গলে বাস করতো লাল, হলুদ ও সাদা রঙের ৩টি ষাঁড়। বাঘ ও সিংহের এই হিংস্র রাজ্যে তাদের বসবাস ও নিরাপত্তা নিতান্তই অনিশ্চিত হয়ে ওঠলো। তারা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলো, “অস্তিত্ব নিয়ে টিকে থাকতে হলে আমাদের কাছে অবলম্বনের মাত্র একটি উপায়ই আছে। আর তা হলো, যত ভীতিকর পরিস্থিতিই আমাদের সম্মুখে আসুক, আমরা কেউ কখনো কাউকে রেখে আপন জান বাঁচানোর জন্য পালাবো না। ঐক্য ও ভাতৃত্বের মাধ্যমে দুর্ভেদ্য নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলবো। আর যদি কেউ আক্রান্ত হয়েই যায় তাহলে জীবন বাঁজি রেখে সবাই মিলে তাকে বাঁচানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা করেই যাবো।" যেই কথা সেই কাজ। ফলে যখনই কোন বাঘ কিংবা সিংহ তাদের কারো উপর আক্রমণ করতে আসে, তৎক্ষণাত বাকী দুইজন শিং দিয়ে গুঁতিয়ে আক্রমণকারীর অবস্থা ‘তেজপাতা’ বানিয়ে দেয়। মু্ক্ত করে আনে তাদের ভাইকে।
একদা বনের বাঘ ও সিংহরা সলাপরামর্শে বসলো, কীভাবে কী করা যায়? ক্ষুদার জ্বালাতো আর সয় না। পরামর্শ ও কলা-কৌশল নির্ধারণীর জন্য ডাকা হলো শিয়াল পণ্ডিতকে। বেচারা শিয়ালের তো কুটনৈতিক বুদ্ধির অভাব নেই। সে শুধু এতটুকু বললো “মহারাজ! ব্যবস্থা হয়ে গেছে। আজ দুপুর থেকে আপনাদের অপারেশন শুরু করবেন। তবে আজ আপনাদের শিকার হলো শুধু সাদা ষাড়টি। অন্যগুলোর দিকে কিন্তু ফিরেও তাকাবেন না।"
এইবার শিয়াল বাবু প্রণব মূখার্জী গেলো ষাঁড়গুলোর নিকট। গিয়ে দেখলো লাল ও হলুদ ষাঁড় দুটি শুয়ে আছে। আর সাদা মিয়া অনুপস্থিত। এই সুযোগটির যথার্থ ব্যবহার করে নিলো মিস্টার শিয়াল সাহেব। সে বললো, “আরে মামুরা! বাঘ ও সিংহের এই হিংস্র অভয়ারণ্যে তোমাদের মত আমিও অসহায়। কিন্তু আমি দেহে ছোট, দ্রুতগামী ও ধূর্ত হওয়ার দরুণ আত্মরক্ষায় কোন বেগ পেতে হয় না। কিন্তু তোমরাতো তাও পারো না। তোমাদের জন্য আমার খুব মায়া হয়। কখন জানি তোমাদের কী হয়ে যায়!!! আমি সব সময় এই চিন্তায় থাকি।
আমার কাছে একটা ভালো বুদ্ধি আছে। আমার বিশ্বাস, এই বুদ্ধিটি যদি তোমরা প্রয়োগ করো তাহলে আজীবনের জন্য নিরাপদ হয়ে যাবে এবং মনের সুখে বাকী জীবনটা পার করে দিতে পারবে।"
এবার ফাঁদে প্রথম দুই পা বাড়ালো ষাঁড়দু’টি। শিয়ালের পণ্ডিতি ও ধূর্ততার প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে তারা জানতে চাইলো “এমনকি যাদুর কাঠি আছে তোমার কাছে!!!” শিয়াল বললো “যেহেতু আমি, তোমরা ও বনের বাঘ-সিংহগুলো মিলে সবাই একই সমাজে বাস করি তাই আমাদের মাঝে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে একটি নিরাপত্তাচুক্তি হওয়া উচিৎ।"
এ কথা শুনেতো গরুগুলোর আর আনন্দের শেষ নেই। আসমানমুখী হয়ে গলা ছেড়ে হাম্বা হাম্বা করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়তে থাকলো। যেন আজীবনের নিরাপত্তার ফায়সালা এখনই হয়ে যাচ্ছে। ফলে আর কখনো অস্তিত্বের নিরাপত্তা সংকট নিয়ে আর ভাবতে হবে না। কিন্তু গরুর বাচ্চা গরুগুলো জানে না যে, তারা আত্মঘাতি সিদ্ধান্তে ইতোমধ্যে চুক্তি-স্বাক্ষর করে ফেলেছে। তারা অধির আগ্রহে জানতে চাইলো শিয়ালের কাছে তাদের করণীয় সম্পর্কে। শিয়াল বললো, “বেপারটি একদম সোজা। তোমরা এখানে আছো তিনজন। তোমাদের মধ্য থেকে যদি মাত্র একজনকে নির্ধারণ করে বাঘ মামার নিকট হাদিয়া পাঠাইতে পারো তাহলেই চুক্তি সম্পন্ন। চিন্তার কোনই কারণ নেই। বাঘ মামা নিজে এসেই হাদিয়া নিয়ে যাবেন। ব্যস্! এখন ঠ্যাঙের উপর ঠ্যাঙ তুইলা শুধু চা খাইবা। আর কোন সমস্যা নেই। বাঘে যাইতে-আইতে তোমাগোরে সালাম দিয়া চলবো।” এই কথা শুনেতো গরুদু’টির মাথায় রক্ত উঠে গেলো। এখনই শিয়ালের পেটে শিং ঢুকিয়ে জনমের মত শিক্ষা দিয়ে দিবে। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে শিয়াল একটু নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বললো “আরে আরে, তোমরা এত তাড়াহুড়ো করছো কেন? এখনো তো আমার পুরোপুরি বক্তব্য শেষ হয় নাই।“ আবার শান্ত হলো তারা দু’জন। শিয়াল বললো “তোমাদের মধ্যে একজন হলো লাল। দেখতে পুরো রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মত। আরেকজন হলো হলুদ। পুরো চিতা বাঘের মত। আর ঐসাদাটা পুরাই ভাদাইম্মা। শালা গরুর বাচ্চা গরু। তাই আমার পরামর্শ, যদি তোমরা দু’জনে মিলে ঐ গরুর বাচ্চাটা বাঘকে দিয়ে শান্তি চুক্তিটি স্বাক্ষরিত করে নিতে পারো তাহলেই কেল্লা ফতেহ। গরুটাও বিদায় নিলো, শান্তি ও নিরাপত্তাও চূড়ান্ত হলো। এমনকি তোমরাও রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও চিতা বাঘের সাথে তাল মিলিয়ে বুক ফুলিয়ে চলার এক অপূর্ব সুন্দর সুযোগও পেয়ে গেলে।"
এইবার শিয়াল এক্কেবারে কাইত কইরা ফালাইছে। দ্বিতীয় পাদু’টিও ফেঁসে গেলো। তারা নিজেদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও সামাজিক (জাঙ্গলিক) সম্মান লাভের হীণ স্বার্থে অত্যন্ত আপন ও ঘনিষ্ঠ একজন সঙ্গীর জীবন ধ্বংস করে দিতে রাজী হয়ে গেলো। নেমে আসলো গযব।
ভর দুপুর। ক্ষুদার যন্ত্রণায় কাতর হয়ে আছে বাঘের দল। শিয়ালের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী তারা চলে আসলো গরু-অঞ্চলে। সরাসরি হামলা করলো সাদা ষাঁড়টির উপর। আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে সাদা ষাঁড়টি জীবনের সর্বশক্তি দিয়ে ডাকতে থাকলো দুই সঙ্গীকে। জীবন বাঁচানোর জন্য যথাসাধ্য আকুতি জানালো। ক্ষুধার্ত ও দূর্বল এই বাঘটির মুকাবেলা করা ঐ সঙ্গীদ্বয়ের জন্য কোন ব্যপারই ছিলো না। কিন্তু লিপ্সা ও সম্মানের মোহ তাদের মস্তিষ্ককে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। অবসান ঘটলো তাদের এক তৃতিয়াংশের। কিন্তু ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেলো তাদের নিরাপত্তা বলয়। কিন্তু এত কিছু বুঝলে কি আর গরু হইতো!!!
কিছুদিন পর আবার সুযোগ বুঝে শিয়াল আসলো শুধু লাল গরুটির কাছে। জিজ্ঞেস করলো “কী খবর মামু? কেমন আছো? রয়েল বেঙ্গলের মত ভালোইতো পাট লইছো! এখনতো তোমারে দেখলে আমাগোর মত শিয়ালেরও ডর লাগে।“ শিয়ালের কথায় যেন লাল গরুর আত্ম-অহংকারের আর শেষ নাই। শিয়ালকে অশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশ্ন করলো “আরো কীভাবে উন্নতি করা যায়!” আবারো শিয়ালের মহাসুযোগ। সে বললো “এইবার এক কাম করেন। বনের রাজা হইলো আপনাগো মতন রয়েল বেঙ্গল টাইগার। কিন্তু আপনার সাথে যে চিতার মত ঐ হলুদ গরুটা ঘুরে ঐটা দেখে সবাই আপনারে নিয়া হাসাহাসি করে। আমার পরামর্শ হলো, যদি আপনি রাজী থাকেন তাইলে ঐ চিতার বাচ্চারেও খরচার খাতায় তুইল্লা দেই।" রাজী হয়ে গেলো চরম স্বার্থপর লাল মিয়া। আজ দুপুরে তার সামনে বিদায় নিলো অপর সঙ্গী।
পরদিন ঠিক দুপুর। শিয়ালের কোনরূপ কুটনীতি ছাড়াই ঐ বাঘটি সরাসরি উপস্থিত হলো লাল গরুটির নিকট। তারপর লাল মিয়াকে সম্বোধন করে গোটা জগদ্বাসীকে সবক দিলো, “যদি তোমরা তিনজন জীবিত থাকতে এবং পূর্বের ন্যায় ভাতৃত্বের অটুট বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে তাহলে জঙ্গলের কোন বাঘ তোমাদেরকে ধ্বংস করতে পারতো না। তাই ছলে বলে কৌশলে একে একে তোমার দুই সঙ্গীকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আর তুমিই এই অপারেশনের শেষ বলি।"
তখন লাল গরুটিও কেয়ামত-অবধি মানুষের শিক্ষার জন্য স্বর্ণাক্ষরে লিখার মত একটি শিক্ষণীয় উক্তি করে যায়। যা আজো একতা বিনষ্টের সতর্কবাণীরূপে স্মরণীয় হয়ে আছে। সেই উক্তিটি হলো,
اُكِلْتُ يَوْمَ اُكِلَ الثَّوْرُ الْاَبْيَضُ
অর্থাৎ, “আমাকেতো সেদিনই খাওয়া হয়ে গেছে যেদিন সাদা ষাড়টিকে খাওয়া হয়েছিলো।"
বলাবাহুল্য, পুরো ঘটনাটিকে আরো সংক্ষেপে বর্ণনা করা যেত। তবুও ইচ্ছা করে নাতিদীর্ঘ করা হয়েছে। কারণ, প্রতিটি বাক্যের সাথে বর্তমান পরিস্থিতে মুসলমানদের অবস্থার বাস্তবচিত্র ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস চালানো হয়েছে।
আরেকটু যোগ করে বলতে চাই, বর্তমান পরিস্থিতে অনেকেই হয়তো ভাবছেন, এই যুদ্ধতো জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে। এর সাথেতো ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। যদি কখনো ইসলামের সাথে কেউ যুদ্ধ ঘোষণা করে তখন একজন মুসলিম হিসেবে আমিও জীবন বাঁজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়বো। ততক্ষণ আমার কোন দায়িত্ব নেই।
এর জবাবে আমি বলবো, আমিও আপনার সাথে একমত। ধর্মবিকৃতি ও বিকৃত ধর্ম চর্চার দরুণ অবশ্যই জামাত-শিবিরের বিচার হওয়া উচিৎ। কিন্তু এই বিচার কে করবে? যে নিজেই ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মদ্রোহী সে কি কখনো ধর্ম-অবমাননার বিচার করার যোগ্যতা রাখে? বরং এমন খোদাদ্রহী শক্তির কাছে ধর্মবিষয়ক বিচার চাইতে আত্মসম্মানবোধে কি মোটেও আঁচড় কাটে না?
অশিক্ষিত ও সাধারণ মানুষের কর্মকাণ্ড ও ধ্যাণধারণা নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই। আমি বরাবরই আশাহত হচ্ছি কতিপয় উলামায়ে "ছূ"র “লাল গরু সূলভ” আচরণ দেখে।
আমার প্রশ্ন হলো, বর্তমানে যুদ্ধ কার বিরুদ্ধে ঘোষিত হয়েছে? জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে নাকি গোটা ইসলামের বিরুদ্ধে?
কেউ হয়তো বলবেন, জামাত-শিবির যেভাবে ইসলামের সাথে বেয়াদবী করেছে, আল্লাহ তা’য়ালা ক্রুদ্ধ হয়ে তাদের উপর আযাবস্বরূপ এই পরিস্থিতি নাযিল করেছেন। আর আমরাতো একদম জমজমে ধোয়া মক্কার খেজুর। অতএব, এই আযাবে আমাগো কিচ্ছু হৈতো না।
আমি এ ধরণের মানসিকা পোষণকারীদের হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলতে চাই, আল্লাহ তা’আলা সর্বদা মাযলূমের সাথে আছেন। চাই সেই মাযলূম ব্যক্তি কাফের হোক কিংবা মুসলিম। যদি এমতাবস্থায় আমরা মাযলূমের পাশে দাঁড়াতে না পারি তাহলে অন্তত এই অপরাধের দরুণ এমন আযাব নেমে আসবে যে, আর পিঠ সোজা করে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।
কথা না বাড়িয়ে চূড়ান্ত শিক্ষাপ্রাপ্ত লাল গরুর সেই স্মরণীয় উক্তি-অবলম্বনে বলতে চাই “সেদিন বাংলাদেশের সর্বশেষ মুসলিমটির ফাঁসি হয়ে গেছে যেদিন বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায় ঘোষিত হয়েছে”।
এরপরও কি তোরা জাগবি না?
বিষয়: রাজনীতি
১৩৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন