ঐক্যচোরা জামাত-সালাফী
লিখেছেন লিখেছেন আল মুহাজির শাইখ ২৮ মে, ২০১৪, ১০:০১:৩৭ রাত
এই ব্লগপোস্টটি লেখার কোন উদ্দেশ্য ছিলো না আমার। তবে পরিস্থিতি বাধ্য করেছে বিধায় উপায় ছিলো না। বিষয়টি সকলের নজরে আছে। খুব সাধারণ ও সিম্পল বিষয়। কিন্তু এই ছোট্ট বিষয়টির দোহাই দিয়ে জামাত-শিবির ও আহলে হাদীস সালাফী বন্ধুগণ গাঁ বাঁচাতে ও জনসাধারণের করুণা পেতে 'পকেট মার খাওয়া' গেঁয়ো আবুলের মত আর্তনাদ করতে থাকে।
বিষয়টি কি জানেন? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। 'ঐক্য'এর দোহাই। কারণ, তাদের বিরুদ্ধে কিছু লিখলেই নাকি 'ঐক্য' নামক প্যান্টের বেল্টু খুলে যায়। বিষয়টি যেমন উদ্বিগ্নের তেমনই হাস্যকরও বটে। একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে, ইনশা আল্লাহ।[/b
দেশের নাগরিক হিসেবে চোর এবং পুলিশ উভয়ই কিন্তু সমান। আমরা সবাই চাই, আমরা সকল নাগরিক ভাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ থেকে সুখে-শান্তিতে জীবন যাপন করবো। কাউকে মার খেতে দেখলে কিংবা নির্যাতিত হতে দেখলে সকলে এগিয়ে গিয়ে তাকে মুক্ত করে আনবো। তাই না? হ্যাঁ, এমনই হওয়া উচিৎ প্রতিটি নাগরিকের মানবিক চিন্তা-চেতনা।
[b]মনে করুণ, কোন এক ছুটির দিনে অবসর সময়ে বের হলেন, অসহায় ও নির্যাতিতদের সাহায্য করার জন্য। রাস্তার পাশে জটলা দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। সুযোগবুঝে ভীড় ঠেলে সামনে গিয়ে দেখেন, একটি মধ্যবয়সী যুবককে কয়েকজন আচ্ছামত লাত্থি-গুতা মারছে। জানতে পারলেন, আপনার এলাকার মসজিদে সে নিয়মিত জুতা চুরি করে। দু'একবার ধরা খেয়ে বেদম মাইরও খেয়েছে। আজ একই ব্যক্তি পকেট মারতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা পড়ে গেলো জনগণের কাছে। বলুন, ঐক্যের অনুভবে এখন তাকে বুকে আগলে নিবেন নাকি আপনিও কষে তার দু'গালে দু'চারণ লাগিয়ে দিবেন?
কেন আপনার এই দ্বিমুখী আচরণ? নির্যাতিতদের সাহায্য করার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে কেন তাকে না বাঁচিয়ে উল্টো দু'চারটা লাগিয়ে দিলেন?
আসলে এটা দ্বিমুখী আচরণ নয়। এদের জন্য আমরাই দায়ী। আমাদের সমাজ ব্যবস্থাই দায়ী। এদের দুর্দিনে আমরা এগিয়ে না আসার কারণেই তারা আজ এই অপরাধে জড়িত হয়েছে। এতদসত্বেও মাঝে মাঝে কিছু উত্তম-মধ্যম না দিলে এদের জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে এলাকা ছাড়তে হবে। সুতরাং এরা আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও এদের সাথে ঐক্য নেই। নেই আপোষ বা আঁতাত। এদেরকে মোকাবেলা করার জন্যই আমাদের কষ্টার্জিত অর্থে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পোষা হয়।
ঠিক তদ্রুপ জামাত-শিবির ও আহলে হাদীস সালাফী বন্ধুদের অবস্থা। তারাও মুসলিম দাবীদার এবং মুসলিম বটেও। কিন্তু তারাও 'পকেট মার' যুবকটির মত জঘন্য কিছু ধর্মীয় অপরাধে জড়িত। যেমন, তারা বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক আক্বীদা ও বিশ্বাসের 'ব্লেড' দিয়ে জনসাধারণের ধর্মীয় মূল্যবোধকে কেটে ফেলে। কুরআন-সুন্নাহর মনগড়া ব্যখ্যা দিয়ে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি করে। কুরআন-সুন্নাহর প্রকৃত ধারক-বাহক হক্বানী উলামায়ে কেরামের ব্যপারে সাধারণ মুসলিমদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে আহলে হাদীস সালাফিরা আরো জঘন্য ও নোংরামীর আশ্রয় নেয়। ফলে মুসলিম সমাজের এই 'পকেট মার'দেরকেও সাধারন নাগরিক সমাজের পকেট মারদের মত মাঝে মাঝে তুলোধুনো না করলেই নয়। মাঝে মাঝে দিতে হয় রাম ধোলাই ও কষাতে হয় জাম্বো গদাম। কিন্তু যখনই আপনি 'গদাম'এর পরিবর্তে একটু আলতোভাবে কানটা ধরে সতর্ক করে দিবেন ঠিক তখনই 'ঐক্য'এর আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী করে ম্যাৎকার ছুঁড়ে মারবে। অথচ নিজেরাই কিন্তু সারাদিন-রাত মুসলিমদের মাঝে বিভ্রান্তির জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। গালাগালি করছে উলামাদের। বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে দিনের মুখলিস খাদেমদের বিরুদ্ধে। অপবাদ দিচ্ছে দ্বীনের মুবাল্লিগ ও দা'ঈদেরকে। বিশেষ করে, আহলে হাদীস সালাফী বন্ধুরা মাযহাব ও ইমামদের ব্যপারে কুৎসা রটিয়ে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যকে আজ টুকরো টুকরো করয়ে দিয়েছে। এসব কিছুর পরও কিন্তু তথাকথিত 'ঐক্য' নষ্ট হয় না। বরং তাদের ব্যাপারে কলম ধরলেই 'ঐক্য'র Slow motion শুরু হয়ে যায়।
অতএব, ভেবে চিনতে দেখুন, 'ঐক্য'র এই একচ্ছত্র এজেন্টশীপদের প্রতারণায় পা দিবেন? তারা খুব ভালো করেই জানে, যদি কখনো পুলিশের সাথে চোরের আঁতাত হয়ে যায় তাহলে চুরি করতে আর কোন বাঁধা থাকে না। তাই জামাতী ও সালাফীরাও উলামায়ে কেরামের সাথে 'ঐক্য' করতে তিন পায়ে খাঁড়া। এক্ষেত্রে সূরা আলু ইমরানের ১০৩ নম্বর আয়াতের অপব্যখ্যাও দাঁড় করায়। অথচ জানেও না, এই আয়াতের মূল ব্যখ্যা ও আলোচ্য বিষয় কি? এ বিষয়ে একদিন বিস্তারিত পোস্ট করার চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ।
শেষ কথাঃ জামাত-শিবির ও আহলে হাদীস সালাফী বন্ধুদের উদ্দেশ্যে লিখিত আমাদের পোস্টগুলোও সেরকম। চোরের মত নাগরিক যত বাড়বে ততবেশি বাকী নাগরিকদের ভোগান্তি বাড়বে। ঠিক তদ্রুপ জামাতের মত তথাকথিক 'ইসলামী সৈনিক' ও আহলে হাদীস সালাফীদের মত 'কুরআন-গবেষক ও ইসলামী ছিনতাইবীদ' যত বাড়বে তত বেশি 'ইসলাম'এর ক্ষতি হবে। অতএব, চোর-পুলিশে যেমন আপোষ ও ঐক্য নেই ঠিক তেমনই জামাত ও সালাফীদের সাথে মুসলিমদেরও কোন আপোষ, ঐক্য বা আঁতাত নেই।
আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে বুঝার তাউফীক দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
১৩১৩ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর হক্বানী উলামায়ে কেরাম কারা তা জানতে চাচ্ছেন? হ্যাঁ, সেটাই বলছি।
ধরুন, আপনি মসজিদে গিয়ে দেখলেন, হাতেগুণা ৩/৪জন মুসল্লী জামাতে নামাজ পড়ছেন। আপনি বিরক্ত হয়ে বাহিরে চলে আসলেন এইভেবে যে, এদের মাঝে একদম ঐক্য নেই। মাত্র ৩/৪ জনের জামাত। তাও আবার চার দেয়ালের ভেতরে। বিরক্ত হয়ে বাহিরে এসে দেখলেন, বিশাল একজামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শত শত মুসল্লীতে টুইটম্বুর পুরো ময়দান। কিন্তু সমস্যা হলো, তারা কেবলার উল্টোদিকে ফিরে নামাজ পড়ছে।
এবার আপনিই বলুন, কোন জামাতে শরীক হবেন?
মনে রাখবেন, চার-দেয়ালের ভিতরে হোক আর যাই হোক, তারা কেবলামুখী। অতএব, তারা যদি ২ রাকাত নামাজও পড়ে তবে তা নামাজ হিসেবে গণ্য। আর জামাত-শিবিরের বন্ধুগণ কেবলার বিপরীতে। অতএব, সারাজীবন জিহাদের নামে যতই গাড়ি ভাংচুর, মিছিল, মিটিং সহ উল্টোসিধে নাচন-কোদন করুক, তাতে কারো কিছু আসে যায় না।
আরো বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।অথবা এখানে।
জবাবঃ না ভাই। জামাতের বাহ্যিক কেবলা ঠিক আছে মাগার আত্মিক কেবলা ঠিক নেই। অর্থাৎ বাহ্যিকভাবে জামাত হলো ইসলামমুখী কিন্তু বাস্তবে হলো 'সিংহাসনমুখী'।
এখন হয়তো প্রশ্ন করবেন, 'আল মুহাজির শাইখ' কি তাহলে নিজেকে অন্তর্যামী দাবী করলো নাকি? নতুবা জামাতের 'আত্মিক কেবলা' সম্পর্কে জানলো কেমনে? তাহলে মুহাজিররে এখনই 'নাস্তিক' ট্যাগ দেওন লাগবো। হুররেএএএএ, কে কোথায় আছো? একটারে পাইছি...
জবাবঃ না ভাই, এত খুশি হওয়ার কিছু নাই। হার্টের রোগীর হাজারো উপসর্গ গোটা শরীর জুড়ে ছড়িয়ে থাকে। ঠিক তদ্রুপ 'আত্মার অপরিশুদ্ধতা'ও জীবন চরিতে ফুটে ওঠে। কারণ, হার্টেরই অপর নাম 'আত্মা'।
মোবারকবাদ মন্তব্যের জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন