বাকশাল বিরোধী আন্দোলনের ইশতেহার...

লিখেছেন লিখেছেন কূটনী ১০ মার্চ, ২০১৪, ০৯:১৬:৩৮ রাত

গত ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচী সফল করতে ব্যার্থ হওয়ার মধ্য দিয়ে বিরোধী জোটের আন্দোলন করুন পরিনতি বরন করেছে। আর বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়েছে নতুন মোড়। এখন অবৈধ বাকশালী সরকার কোন প্রকার প্রতিরোধ ছাড়াই তার কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। তাদের দেশ বিরোধী কার্যক্রম ও বিরোধী নেতা-কর্মীদের প্রতি অত্যাচার-নির্যাতন সব রেকর্ড অতিক্রম করলেও কোথাও গড়ে ওঠে না প্রতিরোধ এমনকি একটি প্রতিবাদ মিছিল ও হয়না রাজপথে। স্বাধীন বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের জন্য এতটা হতাশাগ্রস্থ সময় এর আগে এসেছে বলে মনে হয় না। এ সকল হতাশাগ্রস্থ নেতা কর্মীদের আত্নবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরী।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিরোধী দলের সফলতা সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগনের অবস্থান জানান দিচ্ছে। এ সব সচেতন জনগনকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে সচেষ্ট হতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না যে পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকার পরাজিত হলেও সরকার পতনের আন্দোলন কিন্তু সফলতার মুখ দেখেনি তাই এ বিজয়ে স্বস্তির ঢেকুর না তুলে কিভাবে বাকশালীদের বিরুদ্ধে একটি সফল আন্দোলনের সূচনা করা যায় তার পরিকল্পনা করতে হবে। বাকশালী দুঃশাসনের পতনের লক্ষ্যে একটি সফল আন্দোলনের সূচনা করার জন্য একটি প্রস্তাবনা তুলে ধরলামঃ

বিগত আন্দোলনে ব্যার্থতার কারন পর্যালোচনা করুনঃ

বিগত পাচটি বছর বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধীদলীয় জোটের আন্দোলন সফলতার দেখা পায়নি। দেশের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও বিরোধী দল কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যার্থ হয়েছে। দেশের জনগনের প্রানের দাবী তত্ত্বাবধায়ক সরকার পূনর্প্রতিষ্ঠার দাবীটিকেও তারা আদায় করতে পারেনি। তাই বিগত দিনের ব্যার্থতার কারণগুলো যথাযথভাবে পর্যালোচনা করা আজ সময়ের দাবী। আন্দোলনে বিএনপি ও জোট নেতাদের ভূমিকা পর্যালোচনা করতে হবে এ ক্ষেত্রে গলাবাজি কিংবা অন্যকে দোষারোপ না করে “Root Cause Analysis” এর মাধ্যমে সমস্যাগুলোকে সনাক্ত করে সে অনুযায়ী ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হবে। গানিতিক হারে জোট বাড়িয়ে কিংবা গতানুগতিক কর্মসূচী দিয়ে সময় ক্ষেপণের পথ নিলে এ আন্দোলন যে সফলতা পাবে না তা আজ পরিষ্কার ভাবেই দেখা যাচ্ছে। ভীনদেশী তাবেদার বাকশালীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সফল করতে হলে গত পাঁচ বছরের আন্দোলন পর্যালোচনা করে সময় উপযোগী নতুন কর্মসূচী - কর্মপন্থা নির্ধারন করতে হবে।

আন্দোলনের বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহন করুনঃ

অল্প কিছুদিন আন্দোলন করে ক্ষমতার স্বাদ গ্রহনের যে পরিকল্পনা বিএনপির ছিল তা ভুল প্রমানিত হয়েছে। বর্তমান অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে সফল করতে হলে বাস্তব ভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে। সরকার বিরোধী আন্দোলন কি কি বাধার সম্মুখীন হতে পারে তা বিবেচনায় রেখে পরিকল্পনায় তার প্রতিকারের ব্যাবস্থা রাখতে হবে বিশেষ করে মিডিয়া প্রপাগান্ডা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, জঙ্গি ইস্যু এবং পুলিশ-র‍্যাবের অত্যাচারের বিষয় গুলো। সময় উপযোগী কর্মসূচী প্রণয়ন করতে হবে এ ক্ষেত্রে কারনে-অকারনে হরতাল-অবরোধের মত কর্মসূচী এড়িয়ে চলতে হবে। সরকার বিরোধী আন্দোলনে জোটের প্রয়োজনীয়তা ও এর কার্যকারিতাকে নতুন করে পর্যালোচনা করতে হবে। জোট ভিত্তিক না কি যুগপৎ আন্দোলন?... আন্দোলনের শুরুর আগেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জোটভুক্ত দলগুলোকে দৃশ্যমান করুনঃ

সরকার বিরোধী জোট শক্তিশালী করার জন্য জোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যে বিদ্যমান সমস্যাগুলিকে অতি দ্রুততার সাথে কাটিয়ে উঠতে হবে। প্রয়োজনে জোটকে পূনর্গঠন করতে হবে। জোটভুক্ত দলগুলোকে দৃশ্যমান করতে হবে। কাগজে কলমে ১৮ দলীয় জোট হলেও বিগত আন্দোলনে জামায়াত-বিএনপি ছাড়া অন্য কাউকে মাঠে দেখা যায়নি। যারা সংবাদ সম্মেলনে “শো অফ” আর “টক শো” তে গলাবাজী করার মাধ্যমেই আগামী দিনে মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর রয়েছেন তাদের কে বলে দিতে হবে যে রাজপথের আন্দোলনে যারা অংশ নিবে আগামী দিনে শুধু তাদেরকে মূল্যায়ন করা হবে। আন্দোলনে সফলতা পেতে হলে জোটভুক্ত দলের সংখ্যা নয় বরং তার কার্যকারিতার দিকে তাকাতে হবে। নিজেদের মধ্যে মতভেদ-অবিশ্বাস কমিয়ে আনতে হবে এবং আত্নবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রয়োজনে জোট পূনর্গঠন করতে হবে।

ভিন দেশীদের প্রতি নির্ভরতা কমিয়ে আনুনঃ

এ কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ক্ষমতার পালা বদলে আমেরিকা ও পশ্চিমাদের কোন ভুমিকা নেই তবে এ কথাও সত্য যে তারা শুধু তাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যই ভূমিকা পালন করে। মুখে তাদের যতই মহান বানী থাকুক না কেন তাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এমন হীন কাজ নেই যা তারা করতে পারে না। বিগত দিনে বিএনপির অতি কূটনৈতিক নির্ভরশীলতা রাজনীতিতে কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। বিএনপিকে তারা বারবার আশ্বাসের মুলা ঝুলিয়ে তাদের বশে রাখলেও সরকারকে তারা পুর্ন সহায়তা করে গেছে। মনে রাখতে হবে ভিন দেশীদের পক্ষে রাখতে হলে রাজপথ দখলে রাখতে হবে। এসব মোড়লেরা কখনো জনগনের বিপক্ষে অবস্থান নেয় না তাই রাজপথ দখলে থাকলে এসব ভিনদেশী মোড়লদেরকে এতটা তেল মালিশের দরকার হবে না। তাই কূটনৈতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি রাজপথে সক্রিয় থাকতে হবে।

নগনের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নিনঃ

বাংলাদেশের রাজনীতির দিকে একটু দৃষ্টিপাত করলেই দেখা যাবে যে শুধু সরকার নয় বিরোধী দলের, বিশেষ করে বিএনপির রাজনীতির প্রতি ও মানুষ অনাস্থা জ্ঞাপন করেছে। সাধারন মানুষের মনে এ ধারনা জন্মেছে যে, ক্ষমতায় গেলে বিএনপি ও আম্লীগের মাঝে কোন পার্থক্য থাকে না। নিজেদের উন্নতি ছাড়া দেশ ও জনগনের জন্য এরা দুদলই সমান ক্ষতিকর। এ দুদলের মধ্যে ক্ষমতার পালাবদলে সাধারন জনগনের কোন উপকার হয় না। গত ৫ জানুয়ারী নির্বাচনে ৯০ ভাগের বেশি মানুষ ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে আম্লীগ সরকারের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছে। পাশাপাশি এ বিশাল জনগোষ্ঠী স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিরোধীদলের আন্দোলনে অংশগ্রহন করেনি বলেই বিরোধী দলের আন্দোলন ও সফলতার দেখা পায়নি। মনে রাখবেন, জনগন এখন অনেক সচেতন তারা নিজেদের লাভ ক্ষতির হিসেব করে সিদ্ধান্ত নেয় তাই সাধারন জনগনের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিতর্কিত ট্রাইব্যুনালের ব্যাপারে অবস্থান পরিষ্কার করুনঃ

স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে সংঘটিত অপরাধ সমূহের বিচারের ব্যাপারে বিরোধী জোটের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। এ ব্যাপারে গোঁজামিলের আশ্রয় না নিয়ে সু-নিদৃষ্ট ঘোষনা দিতে হবে। ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে ট্রাইব্যুনাল পূনর্গঠন এবং প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধায়নে এই বিচার প্রক্রিয়াকে চালু রাখার ঘোষণা দিতে হবে। এই বিচার প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করা হবে না বলে জনগণকে কথা দিতে হবে। যারা বিচারের নামে প্রহসন করে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করেছে তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করার ব্যাবস্থা করতে হবে। কোন এক পক্ষকে নয় বরং দোষীব্যাক্তি যে দলের হোক তার বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে যদি কোন নিরাপরাধ ব্যাক্তিকে মিথ্যা অভিযোগে দোষী সাব্যস্থ করা হয়ে থাকে তবে নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নিতে হবে।

দলীয়করন ও দূর্নিতীর ব্যাপারে পদক্ষেপ নিনঃ

সর্বগ্রাসী দলীয়করণ এবং দূর্নিতীর বিরুদ্ধে আপনাদের অবস্থান ঘোষণা করুন। দেশের হতাশাগ্রস্থ যুব সমাজকে আশার আলো দেখানো এবং তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে সরকার চরম ব্যার্থতার পরিচয় দিয়েছে। এ বিশাল যুব সমাজকে আশার আলো দেখাতে আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে। তবে মনে রাখবেন শুধু মুখে প্রতিশ্রুতি দিলেই হবে না এ ব্যাপারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বীকৃত দুর্নিতীবাজ নেতাদের নির্বাচনে প্রার্থি না করার ঘোষণা দেয়ার মাধ্যমে দূর্নিতী বিরোধী অভিযান শুরু করতে হবে। দলীয় পরিচয় নয় বরং যোগ্যাতার ভিত্তিতে প্রশাসনসহ সর্ব ক্ষেত্রে নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, দলের জন্য তা ক্ষতির কারন হলেও।

সব শেষে বলতে চাই এই বাকশালী সরকারের পতন নিশ্চিত করতে ব্যাক্তি কেন্দ্রিক রাজনীতি এবং দলকানা নিতীর অবসান ঘটিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও জনগনের পক্ষে অবস্থান নিন না হয় আপনারা আবার ও পরাজিত হবেন।

বিষয়: বিবিধ

১২৮৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

190095
১০ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:৩৪
হতভাগা লিখেছেন : আওয়ামী লীগের সাথে কূটনামীতে পারবেন না ।
190441
১১ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:০৪
সজল আহমেদ লিখেছেন : অনেক তথ্যবহন করছে লেখাটা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File