আম্লীগ এমনটা হতে দিলো কেন? কারনের সন্ধানে.........

লিখেছেন লিখেছেন কূটনী ১৭ জুন, ২০১৩, ০১:৫২:২৪ দুপুর

রানা প্লাজা দূর্ঘটনা থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে নেয়ার জন্য তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করায় জনমনে শঙ্কা ছিল নির্বাচন নিয়ে সরকারের আন্তরিকতার ব্যাপারে। নির্বাচনের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত ভয় ছিল যে, হয়তো সরকার যে কোন উছিলায় নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারে। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং চারটি মহানগরীতেই শাহবাগী-আম্লীগ সমর্থিত প্রার্থিরা পরাজয় বরন করেছে। সরকার মুখোমুখি হয়েছে এক চরম বিব্রতকর বাস্তবতার। ৫ মের পরে যে পরিমান হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছিল বিরোধী শিবির, সরকারের জন্য ততোধিক হতাশার কারন নির্বাচনের এই ফলাফল।

চার বছরের চরম দুঃশাসন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, মন্ত্রীদের দূর্নিতী, শেয়ার বাজার-হলমার্ক-পদ্মা সেতু দূর্নিতী, আলেম নির্যাতন এবং সর্বশেষ ইসলাম বিদ্বেষী বাম-শাহবাগীদের পক্ষালম্ববনের কারনে নির্বাচনের এ ফলাফল ছিল অনেকটাই প্রত্যাশিত। বটতলার উকিল আর হাইব্রিড নেতারা এসব না বুঝলেও প্রকৃত আম্লীগাররা এটা ভালমতই অনুধাবন করেছিলেন। তাই তো বার বার ঢাকা মহানগরীর নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে জনরোষের ভয়ে। রানা প্লাজায় দূর্ঘটনা না ঘটলে হয়তো এই নির্বাচনের তফসিল ও ঘোষনা করা হতো না!

নির্বাচনের এই ফলাফল অবশ্যই শাহবাগী-আম্লীগারদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করবে। বিএনপির কর্মীরা আবার সক্রিয় হবে। বিএনপির নেতৃত্বে সরকার বিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করতে এই ফলাফল বিশেষ ভুমিকা রাখবে তা বলা যায় নিঃসন্দেহে।

এখন প্রশ্ন হলো আসন্ন পরাজয় আঁচ করতে পেরেও সরকার এমনটা হতে দিলো কেনো? বিগত কয়েক বছরে আম্লীগ প্রমান করতে সক্ষম হয়েছে যে, তারা কি পরিমান ধূর্ত ও ধান্ধাবাজ তা বিরোধী দলের পক্ষে আন্দাজ করা সম্ভব নয়। তাই তারা কেন এটা হতে দিল তার অন্তর্নিহিত কারন শুধু হাসিনা ও তার পরামর্শদাতা রাম বাবুরাই জানবেন। তারপরেও কয়েকটি সাম্ভাব্য কারনের দিকে দৃষ্টিপাত করছিঃ

সরকার পারে নাইঃ অনেকেই বলাবলি করছেন যে সরকার এটা হতে দিয়েছে কথাটা ঠিক নয় বরং সরকার পারে নাই। প্রশাসন কে ব্যাবহার করে বিজয় ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল কিন্তু সরকারের শেষ সময়ে প্রশাসন চেষ্টা করেছে কিছুটা হলেও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করার। প্রশাসন যদি পুরোপুরি নিরপেক্ষ থাকতো তাহলে আম্লীগ-শাহবাগীরা এতো ভোট পেতো না।

তত্বাবোধায়ক ইস্যুঃ এই কারনটাই সবচেয়ে বেশী আলোচিত হচ্ছে। দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন করার জন্য সরকার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে উছিলা হিসেবে ব্যাবহার করবে। দাতা গোষ্ঠীকে বুঝাতে চাইবে যে আমাদের অধীনে সুষ্ঠ নির্বাচন করা সম্ভব এবং সে নির্বাচনে জনগন ভোট দিলে বিরোধী প্রার্থির জিততে কোন সমস্যা নাই। তত্বাবোধায়ক সরকার ছাড়াই সুষ্ঠ নির্বাচন করা সম্ভব। পাশাপাশি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের উপড়ে জনগনের আস্থা বাড়বে এবং এই নির্বাচনের ফলাফল দেখে বিরোধী দল ও হয়তো চাপে পড়লে তত্বাবোধায়ক সরকার ছাড়াই নির্বাচনে অংশ নেবে।

জনপ্রিয়তা যাচাইঃ সরকার হয়তো ধরে নিয়েছে যে তত্বাবোধায়ক সরকারের অধীনেই সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন করতে হবে তাই এই সুযোগে দলের জনপ্রিয়তা যাচাই করে সে অনুসারে তত্বাবোধায়ক সরকারের ব্যাপারে নিজের অবস্থান ঠিক করবে। পত্রিকায় প্রকাশ, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার জরীপে দেখা গেছে সুষ্ঠ নির্বাচন হলে আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসছে কিন্তু দলের মনি-রনির মত হাইব্রিড নেতাদের অবস্থান একেবারেই ভিন্ন তাই সাময়িক ক্ষতি হলেও সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে জনপ্রিয়তা যাচাই করাটাকেই সরকার প্রাধান্য দিয়েছে। নির্বাচনের এই ফলাফল আম্লীগের জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরীতে সহায়তা করবে এবং প্রশাসনের যে কর্মকর্তারা আম্লীগের নির্দেশ মত কাজ করেনি তাদেরকে বাদ দিয়ে আগামীতে দলীয় আনুগত্যশীলদের ব্যাবহার করবে।

সবশেষে একথা বলা যায় যে, কারন যাই হোক আম্লীগের লক্ষ্য আরেকবার ক্ষমতায় থাকা ছলে-বলে-কৌশলে যেভাবেই হোক। তাই বিরোধী দলকে সতর্ক থাকতে হবে। সরকারের সকল কূটচালের মোকাবেলা করতে হবে ধৈর্য, সাহস এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে।

বিষয়: বিবিধ

১৩৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File