হেফাজতের আন্দোলনঃ এ পর্যন্ত প্রাপ্তি অনেক...

লিখেছেন লিখেছেন কূটনী ১৭ মে, ২০১৩, ০৪:৩৬:৫২ বিকাল

আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহনের পর থেকেই বাংলাদেশে ইসলাম বিদ্বেষী কার্যকলাপ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেতে শুরু করে। সরকার যেন ইসলামের বিরুদ্ধে সর্বাত্বক লড়াইয়ে অবতীর্ন হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বিতর্কিত লোক নিয়োগ দিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিকে, কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক নারীনিতী এবং ইসলাম বিরোধী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা, আলেম-ওলামা এবং ইসলামী আন্দলনের নেতাদেরকে নানান ছল-ছাতুরীর মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করা, সংবিধান থেকে আল্লাহর উপড় আস্থা সরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি অশ্লীলতাকে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাবস্থা করা হয় সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে। সরকারের ইসলাম বিদ্বেষের যেন কোন শেষ হয় না।

এবার সরকার তার এই ইসলাম বিদ্বেষী কার্যকলাপকে সামাজিক আন্দোলনে রুপ দিতে সচেষ্ট হয় আর তাই কিছু গাঞ্জাসেবক-নর্তকী আর নাস্তিকদের একত্রিত করে শাহবাগের মোড়ে। সরকারের প্রকাশ্য পৃষ্ঠপোষকতা আর বাম-বান্ধব, ভারত প্রেমিক মতি মার্কা মিডিয়ার বদৌলতে এ আন্দোলনের কথা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ব জুড়ে। শাহবাগ মোড়ে সমবেত কিছু গাঞ্জাসেবকদের দাবীকে গনদাবী হিসেবে প্রচার করা হয়। শাহবাগকে কেন্দ্র করে দিন-রাত চলতে থাকে বেহায়াপনা, যুবক-যুবতীদের অবাধ বিচরন ক্ষেত্রে পরিনত হয় শাহবাগ। সেখান থেকে একের পর এক ইসলাম বিদ্বেষী দাবী উত্থাপন করা হয়, বিষোদগার করা হয় উলামাদের প্রতি। ইসলামী রাজনিতী নিষিদ্ধের দাবী করা হয়, দাবী করা হয় ইসলামী প্রতিষ্ঠান গুলোকে বন্ধ করে দেয়ার। ব্যাঙ্গ করা হয় শালীন পোষাক-পরিচ্ছদকে। শাহবাগকে কেন্দ্র করে জড়ো হতে থাকে ইসলাম বিদ্বেষী-ধর্মদ্রোহী ব্লগারদের দল। ঢাবির চিপায়-চাপায় এবং ওসমানী উদ্যানের অরন্যে যারা থাকতো তারা জনসম্মুখেই তাদের অসামাজিক কার্যকলাপ চালাতে লাগলো। অন্ধকার জগতের সম্রাট চটি পিয়াল, থাবাবাবা আর জমির চাচাদের আস্ফালনে সে এক ত্রাহী কান্ড। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের এ কি অবস্থা!

শাহ জালাল, শাহ পরান, শাহ মাখদুম, শহীদ তীতুমীরের রক্ত যে জাতীর মধ্যে প্রবাহমান, যে দেশের মানুষের ঘুম ভাঙ্গে আযানের ধ্বনি শুনে, দিনে পাঁচবার আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয় মুয়াজ্জিনের সুললিত কন্ঠে সে দেশে সামান্য কিছু ধর্মদ্রোহী বামদের চাপিয়ে দেয়া মতবাদ কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগীদের অবস্থান ক্ষোভের সঞ্চার করে প্রতিটি মানুষের মনে। নবীর প্রতি অপমানে জনগন অস্থির হয়ে ওঠে। তারা প্রতিবাদ করতে চায়, চায় প্রতিরোধ করতে। ইসলামী আন্দোলনের নেতা কর্মীদের উপড় দিয়ে যখন সরকারী ষ্টীম রোলার চলছে তখন সবাই তাকিয়ে ছিল যে কে এগিয়ে আসবে দেশের এই ক্রান্তি লগ্নে? জনসাধারনের মনে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ কিভাবে পরিনত হবে বিক্ষোভে! কার নেতৃত্বে গড়ে উঠবে আন্দোলন? দেশবাসীর এই যখন অবস্থা ঠিক তখনই কান্ডারীর ভূমিকায় এগিয়ে আসে আল্লামা শফীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

হেফাজতের নেতৃত্বে মুহুর্তেই বদলে যায় দৃশ্যপট। ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় সমগ্র বাংলাদেশ। ধর্মদ্রোহী শাহবাগীদের বিচারের দাবীতে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ। হতাশাগ্রস্থ জনগণ আবার জেগে উঠে প্রতিটি জনপদে। চট্রগ্রামে শাহবাগীদের আগমন প্রতিহত হয়ে যায় জনগনের স্বঃতস্ফুর্ত আন্দোলনে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা শাহবাগীরা জনতার প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়। কমে আসে জমীর চাচাদের আস্ফালন। ঘোষনা করা হয় ঢাকা মুখে লংমার্চ।

সরকার, আম্লীগ ও শাহবাগীদের সকল ষড়যন্ত্র, হরতাল, বাধা উপেক্ষা করে তৌহিদী জনতার ঢল নামে ঢাকায়। নবী প্রেমিকদের বাধ ভাঙ্গা জোয়াড়ে বাংলাদেশ ফিরে পায় তার চিরচেনা মুখ। প্রমান হয় এদেশ মুসলমানদের। হেফাজতের শান্তিপূর্ন লংমার্চ জানান দিয়ে যায় যে বাংলাদেশে গৌরগোবিন্দের প্রেতাত্বাদের বিনা বাধায় ছেড়ে দেয়া হবে না। সমসাময়িক সময়ে এ লংমার্চের মত স্বতস্ফুর্ত কর্সূচী এক বিরল ঘটনা। লংমার্চের সফলতাও চোখে পরার মত। যে শাহবাগী ধর্মদ্রোহীরা ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছিল তারও দিব্যি ভোল্ট পালটে ফেলে। স্বঘোষিত ইসলাম বিদ্বেষীরাও ধর্মের পক্ষ নিতে সচেষ্ট হয়। আরিফ জেবতিক, শাহরিয়ার কবির, জমীর চাচা্র মত চিরচেনা শাহবাগীরাও টকশোতে হাজির হয় কোরানের আয়াতের অর্থ নিয়ে। এসব শাহবাগীদের কর্মকান্ড দেখে হাসতেও লজ্জা লাগে। সফল লংমার্চের পর থেকে অন্ধকার জগতের সম্রাট চটি পিয়ালরা আবার চলে যায় তাদের আপন জগতে। তাদের মুখের ভাষার উৎকট গন্ধ আর উদ্ভট আস্ফালন থেকে সাময়িক মুক্তি পায় সাধারন জনগণ। লংমার্চের সফল সমাপ্তির পর হেফাজতে ইসলাম ১৩ দফা দাবী পেশ করে। এ দাবী আলেম-উলামাদের দাবী, এ দাবী দেশের তৌহিদী জনতার দাবী সর্বপরি এ দাবী এ দেশের শান্তিকামী আপামর জনসাধারনের দাবী। এ দাবী আদায় না হলে ঢাকা ঘেড়াও করার কর্সূচী ঘোষনা করে হেফাজতে ইসলাম।

কিন্তু বাংলাদেশে ধর্মদ্রোহীদের আশ্রয়দাতা শেখ হাসিনা ধোঁকাবাজি শুরু করে এ দেশের আলেম সমাজের সাথে। সরকার জনতার দাবী মেনে না নিলে এ কর্সূচী অনিবার্য হয়ে ওঠে। জনতার স্বতস্ফুর্ত উপস্থিতি দেখে সরকার নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করে। অন্য দিকে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যার্থ বিএনপিও এই ব্যাপক জনসমাগমকে তাদের পক্ষে নিতে সচেষ্ট হয়। অরাজনৈতিক সংঠন হেফাজত মুখোমুখি হয় পচা রাজনীতির। কিন্তু সব বাধা উপেক্ষা করে রাসূল প্রেমিক জনগণ ঢাকায় অবস্থান নেয়। তাদের দাবী একটাই ১৩ দফা মেনে নিতে হবে না হলে তারা ফিরে যাবে না। ঘোষনা আসে লাগাতার অবস্থানের। বিএনপি সমর্থন জানায় হেফাজতের কর্সূচীতে অন্যের ঘারে কাঠাল ভেঙ্গে খাওয়ার আসায়। অপর দিকে বাম-রাম বান্ধব সরকার হেফাজতের নিরস্ত্র নেতা কর্মীদের সরিয়ে দিতে অভিযান চালায় রাতের অন্ধকারে। নির্মম গনহত্যা চালানো হয় শাপলা চত্বরে অবস্থান রত নেতা কর্মীদের উপর। কেউবা ছিল ঘুমন্ত, আবার কেউ ছিল নামাজে মগ্ন আবার কেউ ছিল আল্লাহর জিকিরে মশগুল। কিন্তু এই আওয়ামী জানোয়ারগুলোর একটি বারও বুক কাপেনি গুলি চালাতে এই নিরস্ত্র আলেমদের উপর। রক্তের বন্যা বয়ে যায় শাপলা চত্বরে। অগণিত লাশ পরে আর সে লাশ গুলোকে গুম করে ফেলে এ নরপিশাচের দল।

এ বর্বরতার কথা শুনে, ছবি ও ভিডিও দেখে অশ্রু প্লাবনে সিক্ত হয়েছে সারা দেশ। এ কেমন পাশবিকতা। তবে এসব দেখে ঈমানদাররা হতাশ হয়না বিন্দু পরিমান বরং তারা নতুন শপথে উদ্দিপ্ত হয়। প্রতি ফোটা রক্তের বদলা নিতে প্রস্তুতি নেয় নিত্য দিন।

আম্লীগের নেতারা বলছে হেফাজত নাকি পরাজিত হয়েছে। ওদেরকে কে বুঝাবে যে ঘূমন্ত মানুষের উপর গনহত্যা চালিয়ে বিজয়ী হওয়া যায় না বরং ইতিহাসের পাতায় তাদেরকে অপরাধী হিসেবেই চিনহিত করা হয় যুগে যুগে। ইতিহাস সাক্ষী জুলুমবাজরা কখনও বিজয়ী হয়না।

শহীদের রক্ত কখনও বৃথা যায় না। রাসূল প্রেমিকদের এ আন্দোলনে শহীদানদের রক্ত ও বৃথা যাবে না, এ ত্যাগের উপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশে একটি সফল ইসলামী বিপ্লবের শুরু হবে ইনশাল্লাহ। আমি বিশ্বাস করি শাপলা চত্বরে বিপ্লবের বিচ রোপণ করা হয়েছে। আগামী দিনে আলেম সমাজ ও তৌহিদী জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে আল্লাহ্‌র জমীনে আল্লাহ্‌র দ্বীন প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়বেন ইনশাল্লাহ।

বিষয়: বিবিধ

১৩৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File