সন্ত্রাস করে সরকারি দল আর নিষিদ্ধের দাবি উঠে জামায়াতের
লিখেছেন লিখেছেন তারেকুল ইসলাম ২৪ মার্চ, ২০১৩, ১১:৪২:৫৭ সকাল
জামায়াত-শিবিরের বিরচদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ বায়বীয়
আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ চিরকালই অসহিষ্ণু ও সন্ত্রাসী ধরনের দল
সুত্র; বাশেরকেল্লা পেইজ
সংগ্রহে তারেকুল ইসলাম: আমাদের দেশে রাজনৈতিক আন্দোলন, রাজপথে সভা-সমাবেশ বা মিছিল নতুন কিছু নয়। এসব আন্দোলন-সংগ্রামে পুরনো রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সব সময় ছিল সক্রিয়, তাদের ভূমিকা ছিল অগ্রগামী। রাজপথে সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও-এও পিছিয়ে নয় এই ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলটি। পুলিশের উপর হামলা, প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেয়া, বঙ্গভবনের অক্সিজেন বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা, প্রকাশ্য রাজপথে সাপের মতো পিটিয়ে মানুষ হত্যা, লাশের উপর নর্দন কুর্দন করা কোন দিক দিয়েই পিছিয়ে নেই আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দাবি আদায়ে কোনো কিছুকেই আওয়ামী লীগ বেআইনী ও অন্যায় মনে করে না।
'৯০-এর পরবর্তী বিএনপি সরকারের সময় রাজপথে আন্দোলন চলাকালে অফিসগামী কর্মকর্তাকে দিগম্বর করা, দাড়িটুপি পরিহিত ব্যক্তিদের প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করা, ক্লিনিকে বোমাবর্ষণ, রাজনৈতিক দলের অফিসে হামলার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি রাজনৈতিক দলের মিছিল থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে। ক্ষমতায় এসেও এসব থেকে পিছিয়ে নেই তারা। বিশেষ করে বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্য কুপিয়ে মারা, অস্ত্র হাতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর হামলা, পুলিশের সাথে যৌথভাবে অস্ত্রের মহড়া দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর হামলা, এসিড দেয়ার মতো নৃশংসা করতে একটুও দ্বিধা করেনি রাজনৈতিক কর্মী নামধারী সন্ত্রাসীরা। আওয়ামী লীগ নিজ দল ছাড়া অন্য কোনো দলকেও কখনই বরদাশত করেনি।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী গণহত্যার শিকার ১৭০ জনের মধ্যে শুধু জামায়াত ও শিবিরেরই রয়েছে ৯১ জন। এর আগে সরকারি দলের সন্ত্রাস ও পুলিশের গুলীতে শহীদ হয়েছে আরো ২০ জন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের গায়ে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে গুলী করেছে এবং চট্টগ্রামে পুলিশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন কর্মীর দু'চোখ তুলে ফেলে তাকে হত্যা করেছে। এ সরকার জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৩৬ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু এসবের পরও জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা অস্ত্র হাতে রাজনীতি করেছে, কাউকে মেরেছে এমন বিষয় দেখা যায়নি। বরং তারা বার বার মার খেয়েছে। এই সরকারের আমলে তাদের যেমন রাজপথে নামতে দেয়া হয়নি, অফিস করতে দেয়া হয়নি, এমনকি বাসায় থাকতে দেয়া হচ্ছে না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্র হত্যাকে কেন্দ্র করে শিবিরের বিরচদ্ধে দেশব্যাপী চিরচনী অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। খুনি কে তার কোন খোঁজ করা হয়নি। আর সারা দেশে ছাত্রলীগ হত্যা সন্ত্রাস আর চাপাতির তান্ডবের বিরচদ্ধে কোন অভিযান হয়নি।
মানুষ আক্রান্ত হলে তখন আত্মরক্ষার জন্য সামনে যা পায় তা নিয়েই প্রতিরোধের চেষ্টা করে। পুলিশ জনগণের সেবক। তাদের দায়িত্ব জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু তারা তা না করে নির্যাতন নিপীড়ন চালালে জনগণের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে প্রতিবাদতো করতেই পারে।
গতকাল বুধবার দৈনিক আমারদেশ পত্রিকায় বিবিসি খ্যাত সাংবাদিক সিরাজুর রহমান লিখেন, ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখে লেখা এক কলামে আবারও একটা সুপরামর্শ দিয়েছিলাম সরকারকে। লিখেছিলাম, ‘জামায়াতে ইসলামকে নিষিদ্ধ করতে যাবেন না, ছাত্রশিবিরকে বেশি ঘাঁটাবেন না, তাদের প্রকাশ্য রাজনীতি থেকে দূরে ঠেলে দেবেন না, তার পরিণতি ভয়াবহ হবে।’ কয়েকটি দৃষ্টান্ত দিয়ে আরও লিখেছিলাম, ‘নির্যাতন দিয়ে রাজনীতিকে নিস্তব্ধ করে দেয়া যায় না।’ দেখা যাচ্ছে, এ সরকারকে সৎ পরামর্শ দেয়া উলুবনে মুক্তা ছড়ানোর মতোই পন্ডশ্রম।
জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে বেআইনী ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করার দাবী উঠেছে। পুলিশের সাথে সংঘাতের কারণে। কিন্তু আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ যেভাবে সন্ত্রাস করে, তাহলে তো তারা বহুবার নিষিদ্ধ হওয়ার কথা। অতীতের কর্মকান্ড বাদ দিলেও, গত ৪ বছরের কর্মকান্ড পর্যালোচনা করলেই তারা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা হেন কাজ নেই, যা তারা করেনি। নিষিদ্ধ করলে তাদেরই আগে করতে হবে।
সরকার দলীয় অন্তঃকোন্দলে খুন ১৫৩
সেন্টার ফর মিডিয়া অ্যান্ড ট্রেনিং (এমআরটির) জরিপ মতে, ৪ বছরে খুন হয়েছে ১৬৫৮৯ জন, রাজনৈতিক হত্যাকান্ড ৭৯০ জন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ৪৪৯ জন ও গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ৫৮৮ জন । বর্তমান সরকারের ৪ বছরের খুনের গড় ১১ জনেরও বেশি। দলীয় পদ, ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারা করতে গিয়ে ক্ষমতাসীনদের অন্তঃকোন্দল সংঘর্ষ বেধেছে জায়গায় জায়গায়। শুধু আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অন্ত:কোন্দলে নিহত হয়েছেন ১৫৩ জন। এ সরকারের আমলে আইন শৃংখলা বাহিনীকে রাজনৈতিক বিরোধী শিবিরকে দমনের জন্য অপব্যবহারের অভিযোগ উঠে সবচেয়ে বেশী । আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সরকারের চার বছরে মৃত্যু হয়েছে ৪৫৯ অর্থ্যাৎ প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ১০ জন বিচার বহির্ভূত হত্যা কান্ডের স্বীকার হয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই কথিত ক্রসফায়ার বা এনকাউন্টারে গুলীবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
গণহত্যার শিকার জামায়াত শিবিরের ৯১ নেতাকর্মী
গত ২৮ ফেব্রচয়ারি থেকে দেশব্যাপী গণহত্যা শুরচ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত ২৮ ফেব্রচয়ারি বৃহস্পতিবারই ঘটেছে ৭০ জনের মৃত্যু। পরদিন এ সংখ্যা ৭৫-এ দাঁড়ায়। এর আগে ১১ দিনে মৃত্যু ঘটেছে ১৭ জনের। ৬ দিনে ১১৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে। গত ১৩ মার্চ বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন, সরকারের গণহত্যার শিকার হয়েছে ১৭০ জন।
এর মধ্যে শুধু জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৯১ জন নেতাকর্মী গণহত্যার শিকার হয়। দেশব্যাপী পুলিশ ও বিজিবি এ গণহত্যা চালায় বলে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে।
জামায়াত ও শিবিরের যারা গণহত্যার শিকার হয়েছেন, তাদের তালিকা নিচে দেয়া হলো:
রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চল : সাঈদ রচবেল (ঠাকুরগাঁও শিবির কর্মী), মুজাহিদ (দিনাজপুর শিবিরের সাথী), ফয়েজ উদ্দিন (দিনাজপুর জামায়াত কর্মী), আতিকুল ইসলাম (নীলফামারী জামায়াত কর্মী), ফরিদ উদ্দিন (গাইবান্ধা জামায়াত কর্মী), জুয়েল মিয়া (গাইবান্ধা জামায়াত কর্মী), মজনু মিয়া (গাইবান্ধা জামায়াত কর্মী), মশিউর রহমান (রংপুর শিবিরের সাথী), মাহমুদুল হাসান (রংপুর শিবিরের সাথী), সাদিকুর রহমান (রংপুর শিবির কর্মী), আশিকুর রহমান আপন (রংপুর শিবির কর্মী), আজমল হুসাইন (রংপুর শিবির কর্মী), শাহেদ মিয়া (রংপুর জামায়াত কর্মী), মামুন মিয়া (রংপুর জামায়াত কমী)র্, জাহাঙ্গীর আলম (রংপুর জামায়াত কর্মী), ফরমান আলী (জয়পুরহাট, জামায়াত কর্মী), হিসাব উদ্দিন (জয়পুরহাট শিবির কর্মী), মজনু রহমান (জয়পুরহাট জামায়াত কর্মী), মহিদুল ইসলাম (জয়পুরহাট জামায়াত কর্মী), নাসির উদ্দিন (জয়পুরহাট, জামায়াত কর্মী) আবদুল হাকীম (জয়পুরহাট জামায়াত কর্মী) বদিউজ্জামান (জয়পুরহাট শিবিরের সাথী),
আমিরচল ইসলাম (রাজশাহী জামায়াত কর্মী), মুজাহিদ (রাজশাহী জামায়াত কর্মী), রফিকুল ইসলাম (রাজশাহী শিবির কর্মী), নাসির উদ্দিন (চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিবির কর্মী) আবদুর রহীম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ জামায়াত কর্মী), আলাউদ্দিন (জামায়াত কমী পাবনা), সিরাজুল ইসলাম (জামায়াত কমী পাবনা), রচহুল আমীন (সিরাজগঞ্জ শিবির কর্মী), ওয়ারেছ আলী (সিরাজগঞ্জ শিবির কর্মী), মোক্তার হোসাইন (সিরাজগঞ্জ শিবির কর্মী), মাহমুদুর রহমান (সিরাজগঞ্জ শিবির কর্মী), মাহফুজুল হক (সিরাজগঞ্জ শিবির কর্মী), দুলু মিয়া (বগুড়া জামায়াত সমর্থক), জিয়াউর রহমান (বগুড়া জামায়াত সমর্থক), বাবু মিয়া (বগুড়া জামায়াত সমর্থক), আলমগীর হোসাইন (বগুড়া শিবিরের সাথী), শহীদুল ইসলাম (বগুড়া জামায়াত সমর্থক), হাফিজ উদ্দিন (বগুড়া জামায়াত সমর্থক), আবদুলvহ কাফী (বগুড়া জামায়াত সমর্থক), আকলিমা বেওয়া (বগুড়া জামায়াত সমর্থক), মরজিনা বেগম (বগুড়া জামায়াত সমর্থক), আরজিনা বেগম (বগুড়া জামায়াত সমর্থক), বাদল মিয়া (বগুড়া জামায়াত কর্মী), টিটো মিয়া (বগুড়া জামায়াত কর্মী), আবু রূহানী (বগুড়া শিবিরের সদস্য), আবদুলvহ (বগুড়া শিবির কর্মী), মিজানুর রহমান (বগুড়া জামায়াত কর্মী), সাবেত আলী (বগুড়া জামায়াত কর্মী), মোঃ আলাল (পাবনা জামায়াত সমর্থক), সিরাজুল ইসলাম (পাবনা জামায়াত সমর্থক), মুজাহিদ হোসেন (রাজশাহী), রফিকুল ইসলাম (রাজশাহী)।
ঢাকা অঞ্চল: আবদুর রাজ্জাক (গাজীপুর শিবিরের সদস্য) ও নাসির উদ্দিন (মানিকগঞ্জ জামায়াত কর্মী)।
সিলেট অঞ্চল: আজগর আলী খান (সিলেট শিবিরের সদস্য), লোকমান (মৌলভীবাজার জামায়াত সমর্থক)।
কুমিলv ও নোয়াখালী অঞ্চল: আলাউদ্দিন (কুমিলv জামায়াত সমর্থক), ইব্রাহিম (জামায়াত কর্মী), কুরবান আলী (নোয়াখালী জামায়াত সমর্থক), শহিদুলvহ (নোয়াখালী জামায়াত সমর্থক)।
খুলনা অঞ্চল: শহিদুল ইসলাম (ঝিনাইদহ জামায়াত কর্মী), ইকবাল হুসাইন তুহিন (সাতক্ষীরা শিবির কর্মী), আমান (সাতক্ষীরা জামায়াত কর্মী), রবীউল ইসলাম (সাতক্ষীরা জামায়াত কর্মী), আবুল হাসান (সাতক্ষীরা জামায়াত কর্মী), আলী মোস্তফা (সাতক্ষীরা শিবিরের সাথী), শাহীনুর রহমান (সাতক্ষীরা শিবিরের সাথী), মাহবুবুর রহমান (সাতক্ষীরা শিবিরের সাথী), আরিফ বিলvহ (সাতক্ষীরা শিবিরের সাথী), রচহুল আমীন (সাতক্ষীরা শিবিরের সাথী), শামসুর রহমান (সাতক্ষীরা), সাইফুলvহ (সাতক্ষীরা), মাহমুদুল হক (বাগেরহাট)।
চট্টগ্রাম অঞ্চল: ইমরান খান (চট্টগ্রাম শিবিরের সাথী) মোঃ আবিদ (চট্টগ্রাম শিবির কর্মী) মোঃ শাবিবর (চট্টগ্রাম জামায়াত কর্মী), মোঃ আজমত (চট্টগ্রাম জামায়াত কর্মী), হাফেজ হারচন (চট্টগ্রাম জামায়াত কর্মী), উসমান (চট্টগ্রাম জামায়াত সমর্থক), আবু তাহের (চট্টগ্রাম জামায়াত সমর্থক), শহীদুলvহ (চট্টগ্রাম জামায়াত সমর্থক), মিছবাহ উদ্দিন (চট্টগ্রাম জামায়াত সমর্থক), নূরচল হক (কক্সবাজার জামায়াত কর্মী), আবু সালেহ (কক্সবাজার জামায়াত সমর্থক), আবদুর রশিদ (কক্সবাজার জামায়াত কমী)র্, তোফায়েল (কক্সবাজার জামায়াত কর্মী), সাজ্জাদুর রহমান (কক্সবাজার শিবির কর্মী)।
৪০ হাজার নেতা-কর্মী গ্রেফতার\ আসামী ৫ লাখ
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান গত ৬ মার্চ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ১৪ দলীয় জোট সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও আক্রোশের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির। ইসলামী আন্দোলন করার কারণেই সরকারের চরম জুলুম-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির। এ সরকারের ৫৩ মাসের শাসনামলে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৪০ হাজার নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। তাদের বিরচদ্ধে ১৮ হাজার মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৫ লাখ নেতা-কর্মীকে আসামী করেছে। ৪০০ জন নেতা-কর্মীকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। দুশ’ মহিলা ও ছাত্রীকে গ্রেফতার করেছে। তার মধ্যে ১৭৩ জন মহিলাকে রিমান্ডে নিয়ে সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে চোখ তুলে ফেলা হয়েছে। গায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলী করা হয়েছে। অনেকের পায়ে গুলী করে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। এ সরকারের শাসনামলে মোট ২ শতাধিক মানুষকে গুলী করে হত্যা করা হয়েছে। সরকারের ইসলামবিরোধী অবস্থান, নাস্তিকদের পৃষ্ঠপোষকতা ও আলvমা সাঈদীর মুক্তির দাবিতে গড়ে ওঠা জনতার স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেয়ার উদ্দেশ্যে ২৮ ফেব্রচয়ারি থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত গুলী করে হত্যা করা হয়েছে ১৪৭ জনকে। ১০ হাজার মানুষকে আহত করা হয়েছে। অসংখ্য পরিবারকে সর্বস্বান্ত করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জে আলেমসহ নিহত ৪ : ইসলাম ধর্ম অবমাননা ও হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করার প্রতিবাদে ইসলামী দলগুলোর ডাকে গত ২৪ ফেব্রচয়ারি রোববারের হরতালে পুলিশের গুলীতে মাদরাসা শিক্ষকসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। গুলীবিদ্ধ হয়েছে নারী-শিশুসহ ২০ জন। প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীরা জানান, হরতাল সমর্থনে সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে আসেন। তারা সিংগাইর-মানিকগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে †¯vগান দেন। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়। এলাকাবাসীকে লক্ষ্য করে পুলিশ কয়েকশ’ রাউন্ড গুলীবর্ষণ করে। এতে চারজন নিহত হন। তারা হলেন গোবিন্দল মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ শাহ আলম (২৫), নাজিম উদ্দিন (২৬), আলমগীর (২৫) ও মাওলানা নাসির উদ্দিন (৩০)। মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলী মিয়া ওইদিন সাংবাদিকদের জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫০ রাউন্ড টিয়ারশেল এবং ৩০০ রাউন্ড গুলীবর্ষণ করা হয়।
টাঙ্গাইলে নিজেদের দেয়া আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে ছাত্রলীগ কর্মী সুমন
টাঙ্গাইল শহরের ভিক্টোরিয়া সড়কে অবস্থিত জামায়াত-সমর্থক এক ব্যক্তির কম্পিউটার সেন্টারে আগুনে পুড়ে নিহত ব্যক্তি ছাত্রলীগ কর্মী বলে জানা গেছে। ইমরান নামে ওই জামায়াত-সমর্থকের দোকান পুড়িয়ে দিতে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নিজেরাই পুড়ে ছাই হয়েছে। আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ছাত্রলীগের কর্মী সুমন সাহা ছাড়াও অন্তত ১০ নেতা-কর্মী অগ্নিদগ্ধ হয়। অপরদিকে এ ঘটনায় ২৪ ফেব্রচয়ারি সকালে অজ্ঞাত ৮০ জনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক হোসেন রাজিব।
গত ২৩ ফেব্রচয়ারি বিকালে শহরের ভিক্টোরিয়া সড়কে কসমস কম্পিউটার সেন্টারে অগ্নিকান্ডের নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় ২০ থেকে ২৫ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী জয়বাংলা †¯vগান দিয়ে কম্পিউটার সেন্টারে ঢুকে পড়ে। কসমস কম্পিউটার সেন্টারের মালিক শওকত হোসেন ইমরান জানান, শহরের পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকা ও ভিক্টোরিয়া সড়কে আরও দুটি কম্পিউটার সেন্টার রয়েছে। এ দুটি কম্পিউটার সেন্টারের সঙ্গে তার দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়িক বিরোধ চলছিল। ওই দুই সেন্টারের মালিকরা এর আগে বাংলাদেশ কারিগরি বোর্ডে তার বিরচদ্ধে দুবার মিথ্যা অভিযোগ জমা দিয়েছে। এ কারণে কসমস সেন্টার বর্ধিত বা স্থানান্তর করা যাচ্ছে না। বিরোধপূর্ণ ওই দুই কম্পিউটার সেন্টারের মালিকের ইন্ধনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ইমরান জানান, ঘটনার সময় সেন্টারে পাঁচ শিক্ষার্থী ও একজন শিক্ষক ছিলেন। তাদের বের করে দিয়ে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করা হয়। তারপর আগুন ধরিয়ে দিলে নিজেদের দেয়া আগুনেই ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ঝলসে যায়।
অগ্নিকান্ডে ছাত্রলীগের কর্মী সুমন সাহা ঘটনাস্থলেই পুড়ে মারা যায়। সে বাসাইল উপজেলার ভোরপাড়া গ্রামের জয় সাহার ছেলে। আহতরা হলো জেলা ছাত্রলীগের নেতা শহীদ সিদ্দিকী, শুভ, বাবু, রবিন, দ্বীপোজ্জ্বল, সবুজ ও সৌরভসহ অন্তত ১০ জন। এদের মধ্যে চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় পাঠানো হয়।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে পুলিশের সামনে পত্রিকা অফিসে হামলা
গত ১২ ফেব্রচয়ারি দৈনিক নয়াদিগন্তে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। কেউ কেউ নয়া দিগন্তের ব্যাপারে কয়েকদিন ধরে উস্কানিও দিয়ে আসছিলো। ‘জয়বাংলা' †¯vগান দিয়ে দুপুরের দিকে মতিঝিলস্থ ইডেন কমপেক্সের নয়া দিগন্ত কার্যালয়ে এবং বিকেলে জুরাইনের ছাপাখানায় দুর্বৃত্তরা আগুন লাগায়। এ সময় ব্যাপক ভাংচুরও করে তারা। পুলিশের উপস্থিতিতেই নয়া দিগন্ত কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। আগুনে নয়া দিগন্তের একটি গাড়ি পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে যায় এবং প্রেসের কাগজ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এদিকে চট্টগ্রামে পুলিশের উপস্থিতিতে আমার দেশ অফিসে ব্যাপক ভাংচুর-লুটপাটের পর আসবাব ও গুরচত্বপূর্ণ কাগজপত্র জ্বালিয়ে দিয়েছে ছাত্র ও যুবলীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। তাদের রোষ থেকে রেহাই পায়নি দিগন্ত টিভি ও দৈনিক সংগ্রাম অফিসও। অফিসে হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়ে আমার দেশ-এর পক্ষে দুপুর থেকে নিরাপত্তার কথা বললেও পুলিশের কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি; বরং হামলার শুরচতে কলাপসিবল গেট ভাঙার সময় থেকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কোতোয়ালি থানার ওসি সুদ্বীপ দাশ, এসআই উৎপলসহ শতাধিক পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চাওয়ার এক ঘণ্টা পর শতাধিক পুলিশ পাহারায় জামালখানের কথিত গণজাগরণ চত্বর থেকে সশস্ত্র অবস্থায় মিছিল বের করে বামদলসহ ছাত্র-যুবলীগের তিন শতাধিক ক্যাডার। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু †¯vগান দিয়ে আমার দেশ-এ হামলা চালানো হয়। এ সময় তারা আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ সব সাংবাদিককে জবাই করে হত্যার হুমকি দেয়। সন্ত্রাসীরা ভবনের দু’জন নিরাপত্তাকর্মীকে মারধর করে নিচতলার কলাপসিবল গেট ভেঙে দ্বিতীয় তলায় আমার দেশ অফিসে হামলা চালায়। তারা দুটি দরজা ভেঙে অফিসে প্রবেশ করে।
প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে অফিসে তান্ডব চালায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। অফিসের ভেতরে থাকা চারটি ল্যাপটপ, চারটি ডেক্সটপ কম্পিউটার, বিজ্ঞাপন বিভাগের ক্যাশ ড্রয়ারসহ সংবাদকর্মীদের ডেক্স ভেঙে লক্ষাধিক টাকা লুট করে তারা। অফিস থেকে পত্রিকার ফাইলসহ আসবাবপত্র বাইরে বের করে সেসবে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় দু’শতাধিক পুলিশ হামলাকারীদের নিরাপত্তা দেয়। একই ভবনে অবস্থিত অন্যান্য পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের সংবাদকর্মীরা সন্ত্রাসীদের তান্ডব নিয়ন্ত্রণ করতে বারবার পুলিশের সহায়তা চেয়েও ব্যর্থ হন।
আমার দেশ অফিসে হামলার আগে বিকাল ৪টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব এলাকার কথিত গণজাগরণ মঞ্চ এলাকা থেকে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জঙ্গি মিছিল বের করে প্রথমেই তারা হামলা চালায় চেরাগীপাহাড় এলাকায় সংগ্রাম অফিসে। সংগ্রামে তান্ডব শেষে একই এলাকার দিগন্ত টিভি অফিসে যায়। একই কায়দায় দিগন্ত অফিস তছনছ শেষে বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে সর্বশেষ হামলা চালানো হয় আমার দেশ-এ।
যাত্রাবাড়ীতে ইসলামী সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে হামলা
মহান একুশে উপলক্ষে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় আয়োজিত ইসলামী সঙ্গীত অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা অনুষ্ঠানের মঞ্চ ও চেয়ার-টেবিল ভাংচুর করে। গত ২১ ফেব্রচয়ারি বিকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের তান্ডবে আয়োজকরা শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি বাতিল করতে বাধ্য হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যাত্রাবাড়ীর মীরহাজীরবাগ চৌরাস্তায় বিকাল ৪টায় একুশে ফেব্রচয়ারি উপলক্ষে কলরব নামে একটি শিল্পীগোষ্ঠী ইসলামী সঙ্গীত, ভাষা শহীদদের মাগফিরাত কামনা ও আলোচনা সভার আয়োজন করে।
বেলা আড়াইটার দিকে সেখানে পুলিশ ও স্থানীয় ছাত্রলীগ উপস্থিত হয়ে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। তারা অনুষ্ঠানস্থলের মঞ্চ ও চেয়ার-টেবিল ভাংচুর করে। তখন সেখানে থাকা কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজকরা পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কাছে ভাংচুরের কারণ জানতে চাইলে তারা তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। পরে পুলিশ কলরবের শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজকদের গ্রেফতারের হুমকি দেয়। ছাত্রলীগ নেতারা আয়োজকদের গালিগালাজ করে এই বলে যে, জামায়াত-শিবিরের পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। কোনো ইসলামী অনুষ্ঠান করতে দেয়া হবে না বলেও তারা জানিয়ে দেয়। এ ব্যাপারে কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর উপদেষ্টা রশীদ আহমেদ ফেরদৌস জানান, ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে পুলিশ ও স্থানীয় ছাত্রলীগ অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। তারা মঞ্চ ও চেয়ার-টেবিল ভাংচুর চালায়।
বিভিন্ন স্থানে ইসলামী ব্যাংক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা
দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের মালিকানাধীন ও পরিচালিত প্রতিষ্ঠান এবং ইসলামী ব্যাংকে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। বগুড়া শহরে ১৪ দলের মিছিল থেকে ইসলামী ব্যাংকের বুথে হামলা, ভাংচুর এবং মিছিলের পেছনে ফাঁকা গুলীবর্ষণের পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মিছিলকারী ছাত্রলীগ কর্মীরা শহরের কয়েকটি রাস্তা প্রদক্ষিণ শেষে নবাববাড়ী রোডের ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথে হামলা চালায়। তারা বুথটি বন্ধ পেয়ে তার সাইনবোর্ড ইটপাটকেল ছুঁড়ে নষ্ট করে। এ সময় পুলিশ সেখানে নীরব ছিল।
সরিষাবাড়ীতে ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ তারাকান্দি সারকারখানা শাখায় শুক্রবার রাতে সঙ্ঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ব্যাংকের দরজা, জানালা, সাইনবোর্ড ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। সিলেটের বিয়ানীবাজারে ছাত্রলীগ কর্মীরা জামায়াতে ইসলামীর মালিকানাধীন পাঁচটি দোকান ভাংচুর ও তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। নওগাঁয় নয়া দিগন্ত, আমার দেশ, সংগ্রাম, ইনকিলাবসহ ঢাকা ও বগুড়া থেকে আসা সব পত্রিকায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত একদল যুবক। শনিবার বেলা ১১টায় শহরের নওজোয়ান মাঠের সামনে পত্রিকাবাহী গাড়ি থেকে প্যাকেট নামিয়ে সড়কের ওপর নিয়ে আগুন দেয় তারা। এ সময় প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী শহরে যানজট সৃষ্টি হয়।
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা জামায়াত অফিস ভাঙচুর করেছে ছাত্রলীগ। দেশব্যাপী ১৪ দলের বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৩ দলবিহীন আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে পাথরঘাটায় মিছিল বের করে। মিছিলটি ইমান আলী সড়কের মাথায় অবস্থিত জামায়াত অফিস অতিক্রমকালে শহিদুলv, ওয়ালিদ মক্কি ও মারচফের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কিছু উচ্ছৃংখল কর্মী জামায়াত অফিস ভাঙচুর করে। এ সময় পৌরশহরের ১ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াত সভাপতি নাসির সরদারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগ ব্যাপক তান্ডব চালায়। বরিশাল নগরীর বাংলাবাজারে ইবনে সিনার জোনাল ডিপোতে হামলা ও ভাঙচুর করে তিন কর্মচারীকে মারধর করা হয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের হাতে নিহত ৩৬
গত চার বছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের হতে নিহত ছাত্রের সংখ্যা ৩৬ জন। সকল মিডিয়া গুলোতে ছাত্রলীগের একের পর এক অপকর্মের সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার হতে থাকলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের অভিভাবকত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। তবে এর পরেও কী প্রতিকার হল। কি বিভৎসতা ! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগ নিজদের ও প্রতিপক্ষের সাথে সংঘর্ষ হয়েছে কমপক্ষে পাঁচশতবার। এর মধ্যে ছাত্রশিবিরের ৬ জন, ছাত্রদলের ১জন, ছাত্রমৈত্রীর ১জন নেতা কর্মী এবং অরাজনৈতিক তিনজন ছাত্র হত্যাসহ নিজদের অন্তঃকোন্দলে নিহত হয় অন্তত ৩৬ জন। দেশের সচেতন মহলের প্রশ্ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফারচক হত্যাকান্ডের পর সারা দেশে শিবিরের নির্দোষ নেতা-কর্মীদের বিরচদ্ধে কথিত চিরনী অভিযানে শত শত ছাত্র গ্রেফতার করা হয়েছে। অথচ ৩৬ ছাত্রের খুনিরা প্রকাশ্যে দিবালোকে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাহলে সরকার দলীয় খুনিরা কি আইনের ঊর্ধ্বে? মাত্র কয়েক দিন আগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভিসি পদত্যাগের আন্দোলন শুরচ করলে ছাত্রলীগ আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর এসিড নিক্ষেপ করে। এতে দু’জন শিক্ষকসহ বেশ ক’জন ছাত্র-ছাত্রী মারাত্মকভাবে এসিড দ্বগ্ধ হন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিাষ্ঠানে শিক্ষকরা ছাত্রলীগ কর্তৃক আক্রান্ত হয়েছেন।
সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন- ভর্তিবাণিজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্বসহ নানা অপকর্মের কারণে মহাজোট সরকারের সব অর্জন ¤vন হতে চলছে; ছাত্রলীগের আগ্রাসী কর্মকান্ডে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও অসহায়।
এছাড়া ৯ ডিসেম্বর ২০১২ সালে ১৮ দলের ডাকে হরতাল চলা কালে ছাত্র শিবিরের কর্মী সন্দেহে নির্মম ভাবে চাপাতির আঘাতে নিহত হয়েছে টেইলর কর্মী বিশ্বজিৎ।
পুলিশের হামলা মামলার শিকার শিবির
ক্ষমতার মসনদে বসার পর মধ্য নবেম্বর পর্যন্ত শুধু শিবিরের বিরচদ্ধে সরকার সাজানো মামলা দিয়েছে প্রায় ২ হাজার। বিভিন্ন মামলায় আসামী করা হয়েছে ২ লাখের অধিক নেতা-কর্মীকে। বিভিন্ন সময়ে কারাবাস করেছেন বিশ হাজারের বেশি নেতা-কর্মী। শীর্ষ নেতৃবৃন্দ তো এখন জেলে। এর বাইরে যারা এখন নেতৃত্বে আছেন তাদের বিরচদ্ধেও রয়েছে হুলিয়া। ৪০ জন নেতা-কর্মী নিখোঁজ রয়েছেন। হাইকোর্টের রচল জারির পরও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন মেধাবী ছাত্রনেতা ওয়ালিউলvহ ও আল-মুকাদ্দাসকে এখনও কোর্টে হাজির করা হয়নি। তাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা অস্বীকার করে যাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৬শ’। অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে ছাত্রশিবিরের প্রায় শতাধিক কার্যালয়ে। ৮৫ ভাগ মুসলমানের দেশে পবিত্র কুরআনে আগুন জ্বালিয়েছে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা।
গ্রেফতার বাণিজ্য ও লুটপাটের মহোৎসব
গ্রেফতার ও তলvশির নামে জামায়াত ও শিবিরের নেতা-কর্মীদের বাসাবাড়ি ও মেসগুলো থেকে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগ সন্ত্রাসীরা কম্পিউটার, আলমারি প্রভৃতি দামি জিনিস লুট করে নিয়ে যাচ্ছে অবলীলায়। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও লুটপাট চালিয়েছে সরকারি দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনগুলোর উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মীরা। বাসাবাড়ি, মেসে গ্রেফতার ও তলvশির সময় অনেক সাধারণ ছাত্রকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে ‘শিবির’ ধরার কোটা পূরণ করার জন্য। সাধারণ অভিভাবক যাদের সন্তান মেসে থেকে পড়াশোনা করে তারা এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
রাজপথে কী ঘটছে আর কী প্রচার হচ্ছে?
সকল বাধা উপেক্ষা করে আজ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার বলে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে আন্দোলন করছে। গত ৫ ও ৬ নবেম্বর দেশব্যাপী পূর্ব-ঘোষিত, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল। কিন্তু সারা বিশ্বের মানুষ সেদিন বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছে প্রতিটি কর্মসূচিতে সরকারের প্রত্যক্ষ নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী আচরণ করেছে। মিছিলে হামলা, লাঠিচার্জ, ব্যাপক টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলী চালানো হয়েছে। এতে প্রায় দেড় সহস্রাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। গুলীবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে একজনের। ৫ জনের চোখ চিরদিনের জন্য নষ্ট হয়ে গেছে। এখনো অনেক ভাই আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে দিনাতিপাত করছেন। এই ঘটনার রেশ ধরে সারাদেশে প্রায় ৩৮০টি মামলা করা হয়েছে। এঘটনায় পুলিশ চার হাজারের বেশি নেতাকর্মী গ্রেফতার করেছে। অথচ সরকার কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় চাপ প্রয়োগ করে জামায়াত ও শিবিরকে বরং পুলিশের ওপর আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত করার হীন অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। পুলিশের মধ্যে অতি উৎসাহী কিছু দলীয় ক্যাডার ও পুলিশের পোশাকধারী ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা কর্মসূচিগুলোতে হামলা করছে প্রতিনিয়ত। গায়ে পুলিশের পোশাক ও পায়ে চামড়ার স্যান্ডেল পরিহিত অবস্থায় মিছিলের ওপর গুলীবর্ষণরত একাধিক যুবকের ছবি ইন্টারনেটে সার্চ দিলে পাওয়া যাবে। ডিউটিরত অবস্থায় কোনো পুলিশ কর্মকর্তা চামড়ার স্যান্ডেল পরতে পারেন কি?
পুলিশকে কে পেটায়?
জাতীয় দৈনিকের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১২ সালের ২৪ ফেব্রচয়ারি বেনাপোলে ছাত্রলীগ পুলিশকে ধরে বেধড়ক পিটিয়েছে। একই বছরের ১১ নবেম্বর বগুড়ায় জামায়াত-শিবির বিরোধী মিছিল থেকে যুবলীগের সন্ত্রাসীরা পুলিশের ওপর আক্রমণ করে কোদাল দিয়ে পুলিশের মাথা ফাটিয়ে দেয়। ২৫ নবেম্বর চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ পুলিশের ওপর হামলা করেছে। ২২ নবেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরচল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতিকে ধরতে পুলিশ সূত্রাপুরে অভিযান চালাতে গেলে ছাত্রলীগের হামলায় ৬ জন পুলিশ আহত হন। গত ১৭ জানুয়ারি ইবিতে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল সংঘর্ষের সময় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সজিব পুলিশের হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে হামলা করে যা সকল মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যাবে ব্যক্তিগত স্বার্থে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশকে পেটাচ্ছে। এ ব্যাপারে পুলিশ ও প্রশাসন নির্বিকার। অথচ শিবিরের কর্মীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে প্রাণ রক্ষার তাগিদে প্রতিরোধ গড়ে তুললে সেটার নাম দেয়া হচ্ছে ‘জঙ্গি’ হামলা। দ্বৈতনীতিরও একটা সীমারেখা থাকা উচিত।
পুলিশের গায়ে আগুন নাটক
জয়পুরহাটে পুলিশের গুলীতে নিহত শহীদ বদিউজ্জামানের হত্যার প্রতিবাদে হরতাল চলাকালীন সময়ে পুলিশের গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার মিথ্যা অভিযোগ শিবিরের ওপর দেয়া হয়েছে। অথচ এটা যে সম্পূর্ণ সাজানো ও মিথ্যা তা পরে প্রমাণিত হয়েছে। কোনো টিভি চ্যানেল বা পত্রিকায় কথিত আহত পুলিশ সদস্যের কোনো ফুটেজ বা ছবি আপনারাও দেখেননি।
ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী সংগঠন
কিছু দিন পরপরই পত্রিকার শিরোনাম হয় ছাত্রলীগ। চাপাতিলীগ খ্যাত এই ছাত্রসংগঠনের দেশজুড়ে বর্বর তান্ডব কার না অজানা। খুন, হত্যা, টেন্ডারবাজি, ভর্তি-বাণিজ্য আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়নে এখন এক ত্রাসের নাম ছাত্রলীগ।
সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্র, সন্ত্রাস ও পুলিশের সহায়তায় একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে ছাত্রলীগ। একক নিয়ন্ত্রণের সুযোগে তারা যেমন ভিন্নমতের শিক্ষকদের ওপর হামলা-নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে, তেমনি অবৈধ অর্থ-বিত্তের মালিক হতে টেন্ডার ও চাঁদাবাজি এবং ভর্তি-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থের ভাগাভাগি নিয়েই চলে গ্রচপের আধিপত্য বিস্তারের পালা। আর তা নিয়েই অস্ত্রের ঝনঝনানি ও গোলাগুলীর সৃষ্টি হয়। এতে কখনও জীবন হারাচ্ছে সাধারণ ছাত্র, পথচারী এমনকি শিশু। আবার কখনও নিহত হন ছাত্রসংগঠনের কর্মী।
ছাত্রলীগের বেপরোয়া আচরণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে ক্ষমতার প্রথম বছরে সাংগঠনিক নেত্রীর পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সংগঠনটিকে ‘ভ্রাতৃপ্রতীম’ আখ্যা দিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচন থেকে অন্যসব ক্ষেত্রে আগের মতোই ভূমিকা রাখছেন তিনি। তবে ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরতে আর কোনো নিয়ন্ত্রক নেই। গত চার বছরে শিক্ষাঙ্গনে নির্যাতক ও লুটেরার ভূমিকায় ছিল এ সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।
সর্বশেষ গত বছরের শেষ দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম খা আলমগীরের আহবানে বিরোধী দল ও মত দমনে নামে ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা। পুলিশ-র্যাবকে সহযোগিতা করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাত্রলীগ-যুবলীগকে আহবান জানিয়েছিলেন। আর এতে ছাত্রলীগ আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের শিকার হয়ে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ বছরের শিশু রাববী, ৯ ডিসেম্বর পুরানো ঢাকায় বিশ্বজিৎ, সিরাজগঞ্জে হযরত আলীসহ বেশক’জন মানুষ জীবন হারান। বছরের শুরচতে ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে হামলায় নিহত হন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক আবদুল মালেক জনি।
দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জেলা ও থানা শহরে প্রায় প্রতিদিনই চলছে ছাত্রলীগের তান্ডব। এসব তান্ডবে পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলোও অসহায় হয়ে ছাত্রলীগের মার থেকে নিজেদের রক্ষা করে চলছে। তবে ছাত্রলীগের নিপীড়নের বিরচদ্ধে রচখে দাঁড়ায় ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সাধারণ গ্রামবাসী। সুত্র।।বাশেরকেল্লা পেইজ
বিষয়: বিবিধ
১৪৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন