মাওলানা সাঈদীর পক্ষে এ সপ্তাহে আপিল : লড়বেন সিনিয়র আইনজীবীরা। সুত্র বাশেরকেল্লা পেইজ

লিখেছেন লিখেছেন তারেকুল ইসলাম ২২ মার্চ, ২০১৩, ০৯:৪৪:৫০ রাত

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দেয়া ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে এ সপ্তাহেই আপিল করবে আসামিপক্ষ। আপিলের সব কার্যক্রমও এরই মধ্যে শেষের পথে। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আপিল মোকদ্দমা তৈরি করতে রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। প্রায় আড়াইশ গ্রাউন্ড আনা হয়েছে আপিল মোকদ্দমায়। আরও গ্রাউন্ড আনা হবে কয়েকদিনের মধ্যে। এরই মধ্যে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আনা ২০টি চার্জের যে ৮টি চার্জ প্রমাণিত হয়েছে এগুলোর বিপরীতে নানা তথ্য-প্রমাণ মোকদ্দমায় আনা হয়েছে। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হলেও সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে তারা ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা করছেন। মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আপিলে লড়ার জন্য দেশের সিনিয়র আইনজীবীদের নিয়ে একটি আইনজীবী প্যানেল গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রথম ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘোষণার পর সারাদেশে সাধারণ মানুষসহ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বিক্ষোভে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৬ দিনে প্রাণ হারান শতাধিক। জামায়াত-শিবির ও সাঈদীমুক্তি পরিষদ এ রায় প্রত্যাখ্যান করে মাওলানা সাঈদীর মুক্তি দাবি করে আসছে।

এদিকে ট্রাইব্যুনাল সংশোধিত আইন অনুযায়ী রায় ঘোষণার এক মাসের মধ্যে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করার সুযোগ রয়েছে। আইন অনুযায়ী ৩০ মার্চের মধ্যে মাওলানা সাঈদীর রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হবে। আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী তাজুল ইসলাম জানান, ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবারের মধ্যে তারা সুপ্রিমকোর্টে আপিল মোকদ্দমা দায়ের করবেন। আপিলের শেষ ২ দিন ২৯ ও ৩০ মার্চ সরকারি ছুটি হওয়ায় এর আগেই আপিল মোকদ্দমা করতে হচ্ছে। তাজুল ইসলাম জানান, মাওলানা সাঈদীর পক্ষে দেশের সিনিয়র আইনজীবীরা লড়বেন বলে এরই মধ্যে সম্মতি প্রদান করেছেন। ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে আইনজীবী প্যানেলের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক বিচারপতি টিএইচ খান, বারের সাবেক সভাপতি ও বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, রফিকুল ইসলাম মিয়া, সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, বারের সভাপিত এ জে মোহাম্মদ আলী ও সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ আইনজীবীরা।

মাওলানা সাঈদীর অন্যতম আইনজীবী মিজানুল ইসলাম জানান, আপিল মোকদ্দমায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা নিয়ে এসেছি। তিনি বলেন, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সরকারের এ মামলার যুক্তিতর্ক শেষে রায় অপেক্ষমাণ থাকায় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ও তার প্রবাসী বন্ধু ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যকার স্কাইপি সংলাপ আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে প্রকাশ হয়ে পড়ে। এতে তিনি মামলার যুক্তিতর্ক শুরুর আগেই ‘মাওলানা সাঈদীর ফাঁসির রায় লিখে রাখা’সহ বিভিন্ন আলাপ করেন। আপিলে আমরা এ বিষয়টি উল্লেখ করেছি। তিনি বলেন, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে বিশাবালীকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত দেখানো হয়েছে। এ ঘটনায় সরকার পক্ষের তালিকাভুক্তি সাক্ষীর মধ্যে আরেকজন হচ্ছেন বিশাবালীর ভাই সুখরঞ্জন বালী। ৫ নভেম্বর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে আসা রাষ্ট্রপক্ষের এই সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সাদা পোশাকধারী ডিবি পুলিশ। ওইদিন সকাল ১০টায় মাওলানা সাঈদীর দুই আইনজীবীসহ গাড়িতে করে ওই সাক্ষী ট্রাইব্যুনালের গেটে আসার পরপরই অপহরণের ঘটনাটি ঘটে। আজও সুখরঞ্জন বালীর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। আপিলে আমরা এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছি। মিজানুল ইসলাম বলেন, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার অভিযোগটি প্রমাণিত দেখানো হয়েছে। আমরা এ অভিযোগের বিপরীতে ১৯৭২ সালের ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রীর করা মামলার সার্টিফাই কপি ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করেছিলাম। যে মামলায় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নাম ছিল না। তিনি বলেন, আপিলে আমরা এ বিষয়টি উল্লেখ করেছি। তিনি বলেন, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ড. এমএ হাসান সম্পাদিত ২০০৭ সালে প্রকাশিত রাজাকারের একটি তালিকা ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় রাষ্ট্রপক্ষ। এ বইটি রিলাই করে ট্রাইব্যুনাল। অথচ বইয়ের লেখককে সাক্ষী করা হয়নি। তিনি বলেন, ২০১২ সালের লেখা একটি বইয়ে রাজাকারের তালিকায় মাওলানা সাঈদীকে রাজাকার দেখানো হয়েছে। অথচ লেখককে সাক্ষী করা হয়নি। আইনজীবী বলেন, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যেসব সাক্ষী নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেছেন তারা ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সুন্দরবন সাব সেক্টরের সেকেন্ড ইন কমান্ড শামুসুল আলম তালুকদার, পারেরহাটের বীর মুক্তিযোদ্ধা খসরুল আলমসহ বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধারা সাক্ষ্য দেন। আপিলে এসব উল্লেখ করে প্রায় আড়াইশ গ্রাউন্ড উল্লেখ করা হয়েছে।

আইনজীবী টিমের প্রধান ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক আমার দেশ-কে জানান, ‘মাওলানা সাঈদী সম্পূর্ণ নির্দোষ। প্রসিকিউশন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি তারপরও মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এটা দুঃখজনক। ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, রায়ের বিরুদ্ধে এ সপ্তাহে আপিল করা হবে। আশা করি আপিলে আমরা সুবিচার পাব। আইনজীবী বলেন, মাওলানা সাঈদী যে নির্দোষ আমরা আপিলে তা প্রমাণ করব ইনশাআল্লাহ। মাওলানা সাঈদীর মামলাটি সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে তিনি আখ্যায়িত করেন।

বিষয়: বিবিধ

১২০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File