আমরা যদি মানুষ হতাম..

লিখেছেন লিখেছেন আবু নাইম ২৩ মে, ২০১৮, ১২:৩৫:৪০ দুপুর

ছোটখাট হাতির একদিনে যে পরিমান খাবার দরকার ঠিক সেই পরিমান খাবার আমরা যোগাড় করি আমাদের ইফতারিতে। মাত্র ১৪ ঘন্টা উপোস থেকেই যেন আমরা রাক্ষস বনে গেছি। যদিও এটি ভূল তবুও সমাজে প্রচলিত আছে, রোজার মাসের ভক্ষণকৃত খাবারের কোন হিসাব দিতে হবে না এবং পকেটে অঢেল টাকা আছে, কাজেই বাহারি খাবারের পশরা সাজাতে তো দোষ নাই। বকের মত এটা থেকে একা ঠোঁকড়, ওটা থেকে আরেক ঠোঁকড়। ইফতারি শেষ। খাবার পর যা উদ্বৃত্ত্ব থাকলো তার গন্তব্য ড্রেনে। যা জোগাড় করা হয়েছিল তার এক-দশমাংশও ভক্ষণ করার সাধ্য উপস্থিত মানুষের ছিল না। শুধু নাম ফুটানো আর আভিজাত্য প্রকাশের জন্য এমন জমকাঁলো আয়োজন।

এর ঠিক উল্টো পাশেই বস্তির মানুষগুলো সারাদিন পরিশ্রম করেও ইফতারির জন্য দু’মুঠো শুকনো চিড়া আর এক মুঠো গুড় জোগাড় করতে পারেনি। সকাল বেলা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ৬ বছরের খুকিটি বাবার কাছে আব্দার করে বলেছিল, বাবা! বিকালে আমার জন্য জিলাপি এনো। বাবাও তার কন্যাকে হাসিমুখে আশ্বাস দিয়েছিলো। মহাজনের কাছ থেকে ষাট টাকার বিনিময়ে রিকশা ভাড়া নিয়ে ১০-১৫ টাকা করে ৪-৫টি খেপও মেরেছিল। স্বস্তির নিশ্বাস। অন্তত মহাজনের টাকাটা শোধ করার মত অবস্থা তো হয়েছে। আর কয়েকটি খেপ মারতে পাররেই আদরের দুলালীর জিলাপি, বউয়ের বায়নাকৃত একটু সদাই, রাতে রান্না করার জন্য চাল-সবজি ক্রয়ের টাকাটা হয়ে যাবে। মনে অনেক স্বপ্ন। দূর যাত্রার দু’জন প্যাসেঞ্জারও জুটেছিল। কিন্তু কপাল মন্দ। ঘন্টা চারেকের জ্যামে আটকে সকল স্বপ্ন রাজপথেই ধূলিস্যাৎ হয়ে গেল। না জুটলো খুকির আব্দারের জিলাপি, না রাতের রান্নার চাল। কোন মুখে দাঁড়ানো যাবে স্ত্রী-সন্তানের সামনে? এটা আমাদের সমাজ চিত্র। দু’টো শ্রেণীতে বিশাল বৈষম্য।

শহরের মোড়ে মোড়ে অভিজাতদের বিশাল ইফতারির পার্টি হয়, সেখানে বস্তির ছেলেগুলোর প্রবেশ নিষেধ। উদ্বৃত্ত্ব খাবার কুকুরকে খাওয়াবে তবুও গরীবকে দেবে না। যদি ওরাও ভালো খাবারের স্বাদ বুঝে যায়! মসজিদে মসজিদে ইফতারির বিশাল আয়োজন, সেখানে ১২-১৪ বছরের ছিন্ন কাপড় পরিহিতরা উপস্থিত হলেই একশ্রেণীর মানুষ ধমকে জিজ্ঞাসা করে, ব্যাটা রোজা রেখেছিস? ওখানের উদ্বৃত্ত্ব খাবার ফেলে দেবে তবুও গরীবের কাছে দিবে না। খাবার পাওয়ার লোভে যদি ওরা প্রতিদিন আসে। রোজার মাসে বিভিন্ন রাষ্ট্র শত টন খাদ্য আমাদের রাষ্ট্রকে উপহার পাঠায় কিন্তু তা বন্টন করা হয়না। বন্টন করা হলেও, যাদের আছে তাদের ভাগ্যে আরও জোটে কিন্তু যাদের ঝুলিতে মোটেও নাই তাদের কপাল শুণ্যই থাকে। মজুদের ঢিলাটা আরও উচ্চ করা হয়। পোকামাকড় খেয়ে নষ্ট করে, পঁচে যায় তবুও গরীবের ভাগ্যের শিঁকা ছেড়ে না।

কি মূল্য এই অভিজাত আয়োজনের? যেখানের গরীব সন্তান-সন্ততি নিয়ে ভূখা পেটে রাত কাটায় আর ধণাঢ্যরা লাখো টাকার খাদ্য নষ্ট করে কিন্তু গরীবকে ডেকে খাওয়ায় না। ইসলামের শিক্ষা, রোজার শিক্ষা, মানবতার শিক্ষা কি এমন? গরীব কাজ করবে এবং তার বিনিময়ে দেবো-এই মানসিকতা আমাদের রয়েছে কিন্তু তাদেরকে লিল্লাহিয়াত দান করবো-এমন মানসিকতা আমাদের মন কিংবা দেহের কোথাও নাই। কেন নাই, সে প্রশ্নের উত্তর অজ্ঞাত। আমরা কি ভয় পাচ্ছি, গরীবারও ধনীদের সমকক্ষ হয়ে যাবে? যে ইসলাম বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ধরার বুকে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল, সেই ইসলামের অনুসারী তথা মুসিলম হিসেবে আমরা বৈষম্য বর্ধিত করছি কোন নীতিমালায়? কৈফিয়ত কি দিতে হবে না? ইফতার পার্টি, অঢেল টাকা, আর পর্বতসম আয়োজনের কোন মূল্য থাকবে না যদি আপনার সম্পদ দ্বারা গরীব উপকৃত না হয়। তাদের ক্ষুধার কষ্ট না মেটে। মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি আমাদের দায়িত্ব যতটুকু তার কতটুকু আমরা পুরণ করেছি কিংবা করছি? তবে কি আজও আমরা মানুষ হতে পারিনি?

আপনি তেমন দান করবেন কেন, যে দান করার বদৌলতে সুযোগ পেলেই আপনি মানুষকে খোঁটা দিবেন। গরীবের রক্তচুষে কিংবা তাদের ব্যবহার করেই আজ সম্পদের পাহাড়। আপনার সম্পদের প্রতি অংশে গরীবের অধিকার আছে। একদিন পূরণ করতে হবে সে অধিকার-এটা সাম্যের দাবী, দাবী ভ্রাতৃত্ব ও মানবতার। মাজারে শিন্নী দেওয়ার লোক, অকাজে অর্থ বিনিয়োগের লোক সমাজের চারপাশে বহু আছে। আপনি তাদের থেকে ভিন্ন হোন। আপনার একদিনের আয় ব্যয় করুন গরিব পিতার সন্তানের মুখে হাসি ফোঁটাতে। তাকে একবেলা আহার দিন, দু’খানা বই কিনে দিন। পান কিংবা বাদাম বিক্রি করার জন্য কযেকটি টাকা মূলধন দিন। ঈদের আগে আপানার সামর্থ্য অনুযায়ী একটুকরা কাপড় কিনে দিন। দেয়াটা আপনার দায়িত্ব, যদি উপেক্ষা করেন তবে আপনাকে বিবেক এবং বিবেকের স্রষ্টার কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে। সেদিন আমাদের জন্য চরম লজ্জার দিন হবে। সংগৃহীত।।।

বিষয়: বিবিধ

৮১৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385407
২৪ মে ২০১৮ রাত ০৯:১৪
আমি আল বদর বলছি লিখেছেন : আজকে অফিস শেষ করে বাসায় ফিরতে দেরি হয়ে যাচ্ছিল বলে স্যার বললেন উনার সাথে উনার বাসায় ইফতার করতে , স্যারের বাসায় যাওয়ার জন্য রিকশায় উঠলাম সেই রিকশার ড্রাইভারটা রোজা রেখে ছিল সাথের বাসায় আসতে আসতে আজান হয়ে যায় রিকশা থেকে স্যার নেমে সোজা দৌড় দিলেন বাসায় ভিতরে একবারও বললেন না তুমি রোজা রেখেছো আজান হয়েছে গিয়েছে যখন আমাদের এইখানে ইফতার করে নাও,আমি রিকশা থেকে নেমে ড্রাইভারের হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বললাম রাস্তায় কোথায় ইফতার করেনিন এটা যদি আমার বাসা হতো অবশ্যই আমি আপনাকে ইফতারের জন্য ডাকতাম , এই বলে আমি বাসায় ভিতরে চলে যাই ইফতার করছিলাম আর ভাচ্ছিলাম ঐ রিকশার ড্রাইভারটাও আমাদের মতো মানুষ আমাদেরই দ্বীনি ভাই ড্রাইভারটাও মুসলিম তবুও কেন এত বাঁধা সৃস্টি করে রেখেছে সুশীল মুসলিমার ?
২৬ মে ২০১৮ সকাল ১০:৫৫
317720
আবু নাইম লিখেছেন : আল্লাহ আপনার মত সবার দিলে রহম পয়দা করে দিন।
২৬ মে ২০১৮ রাত ০৮:৩২
317723
আমি আল বদর বলছি লিখেছেন : আমিন
২৬ মে ২০১৮ রাত ০৮:৩২
317724
আমি আল বদর বলছি লিখেছেন : আমিন

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File