যেসব চিকিৎসায় রোজা ভাঙবে না।।।।
লিখেছেন লিখেছেন আবু নাইম ১০ জুন, ২০১৭, ১০:১৪:০৯ সকাল
১৯৯৭ সালের জুনে মরক্কোতে “ইসলামের দৃষ্টিতে সমসাময়িক চিকিৎসা সমস্যা” শিরোনামে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এই সেমিনারের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল কি কি মেডিকেলজনিত কারনে রোজার ক্ষতি হয় না। পরবর্তীতে নবম ফিকাহ-মেডিকেল সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় যেখানে যৌথভাবে বৈজ্ঞানিক, সাংস্কৃতিক এবং স্বাস্থ্যবিষয়ে আলোচনা হয়।
এ আলোচনা যৌথভাবে জেদ্দাস্থ ইসলামিক ফিকাহ একাডেমি, মিশরের আল আজহার ইউনিভার্সিটি, আলেকজান্দ্রিয়ায় অবস্থিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক অফিস এবং ইসলামিক শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের (ওঝঊঝঈঙ) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়। এই সেমিনারেও মূল আলোচ্য বিষয় ছিল কি কি ভাবে ঔষধ সেবনে বা পরীক্ষা করলে রোজা ভঙ্গ হয় না।
ইসলামিক চিন্তাবিদ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বসম্মতিক্রমে এমন কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেন যাতে অসুস্থ ব্যক্তি রোজা রাখা অবস্থায় নিম্নলিখিত ব্যবস্থাপত্র নিলে এবং প্রয়োজনে পরীক্ষা নিরীক্ষা করালে রোজা ভঙ্গ হবে না। এই সেমিনারের সিদ্ধান্ত বৃটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে।
১. রোজা রাখা অবস্থায় চোখ, কান ও নাকে ড্রপ নেয়া যাবে।
২. হৃদরোগীর বেলায় বুকে ব্যথা হলে নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রে বা ট্যাবলেট জিহবার নিচে নিতে পারবেন।
৩. মহিলা রোগির তলপেটে পরীক্ষার জন্য যৌনদ্বার দিয়ে ডাক্তার বা নার্স হাতের আঙ্গুল অথবা কোনো ডিভাইস প্রবেশ করালে রোজা ভাঙ্গবে না। এমনকি চিকিৎসার জন্য যৌনপথে পেসারি বা কোনো ঔষধ ব্যবহার করা যাবে।
৪. মূত্রথলি পরীক্ষা বা এক্সরে করার জন্য রোগির প্রস্রাবের দ্বার দিয়ে ক্যাথেটার অথবা অন্য কোনো যন্ত্র প্রবেশ করালে অথবা রেডিও-ওপেক ডাই প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হবে না।
৫. দাঁত তোলা, ড্রিলিং করা বা মেসওয়াক বা ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা যাবে, তাতে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে যেন এগুলো করার সময় পাকস্থলিতে থুথু বা টুথপেস্ট প্রবেশ না করে।
৬. রোগীর চামড়া, মাংস, অস্থিসন্ধি ও শিরায় ইনজেকশন দেয়া যাবে। কিন্তু স্যালাইন, ডেক্সট্রোজ, প্রোটিনজাতীয় জিনিস ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না।
৭. যে কেউ রক্ত অন্যকে দিতে পারবেন আবার জরুরি প্রয়োজনে নিজেও নিতে পারবেন।
৮. কোনো রোগি অক্সিজেন অথবা অজ্ঞানকারী গ্যাস (এনেসথেসিয়া) নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
৯. চর্মের মাধ্যমে শরীরের ভেতরে যায় এমন মলম, ক্রিম, অয়েন্টমেন্ট ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে।
১০. পরীক্ষার জন্য তার শরীর থেকে রক্ত নেয়া যাবে।
১১. হৃদরোগে আক্রান্ত রোগি হার্টের এনজিওগ্রাম এবং কার্ডিয়াক ক্যাথেটার করা যাবে।
১২. রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য বা চিকিৎসার অংশ হিসেবে এন্ডোস্কপি করলে রোজা ভাঙ্গবে না।
১৩. মুখ পরিষ্কারের জন্য মাউথ ওয়াশ বা গড়গড়া বা মুখে স্প্রে জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা যাবে, তবে যেন পাকস্থলিতে কোন কিছু না যায়।
১৪. জরায়ু পরীক্ষার জন্য শরীরে হিস্টেরোস্কপি করা যাবে, এমনকি জরায়ুতে কোন যন্ত্রপাতি বা অন্যকিছু পরীক্ষার জন্য প্রবেশ করালে রোজায় কোন সমস্যা হবে না।
১৫. লিভার বায়োপসি অথবা অন্য কোন অঙ্গের বায়োপসি করলে রোজা নষ্ট হবে না।
উপস্থিত অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ নিম্নে বর্নিত ব্যবহার্যবিধিও অনুমোদন করেন, যেমন -
১. নাকে স্প্রে বা হাঁপানি রোগির বেলায় ইনহেলার জাতীয় কিছু নিলে কোন সমস্যা নেই।
২. রোগির পায়ুপথে ইনজেকশন অথবা পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য আঙ্গুল বা অন্য কোন যন্ত্র প্রবেশ করালে রোজা ভাঙ্গবে না।
৩. জরুরি কোন অপারেশন প্রয়োজন হলে রোজা রাখা অবস্থায় করা যাবে।
৪. কিডনি অকেজো হলে রোগির ডায়ালাইসিস করলে রোজা ভাঙ্গবে না।
৫. পাকস্থলী পরীক্ষার জন্য গ্যাস্ট্রোস্কপি করা যাবে কিন্তু কোন তরল প্রবেশ করানো যাবে না।
এ মতামতগুলো নিয়ে অনেক রোগি এবং চিকিৎসকের মধ্যে বিভ্রান্তি হতে পারে। কিন্তু এই মতামতগুলো বিশ্বের ইসলামি চিন্তাবিদ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। তাই আমাদের দেশে চিকিৎসকরা এই মতামতগুলো রোগিদের জানালে তারা যেমন সচেতন হবেন, তেমনি সঠিক নিয়মে রোজা পালন করতে পারবেন।
বিষয়: বিবিধ
১০২৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন