আজকের অফিসে যাত্রা এবং একটি ছিনতাই
লিখেছেন লিখেছেন আবু নাইম ৩১ আগস্ট, ২০১৪, ০৬:০৬:৩৭ সন্ধ্যা
অনেক রাত করে আজ ঘুমিয়েছি। তার করণ হল আমার স্ত্রীর অতি আদরের ছোট ভাই তার অফিসের দুজন কলিগকে নিয়ে রাত ১১:৩০টার পরে বাসায় এসেছে। তাদের খানাদানার পর ঘুমাতে প্রায় ১টার বেশী বেজে গেল।
আমার আবার সেই ছাত্র বেলা থেকেই একটু বদ-অভ্যাস সকালে ঘুম দেয়া। আজকেও সেটা হল তবে একটু বেশী ঘুমালাম। ৮:১৫ -তে ঘুম উঠে তাড়াতাড়ি গোসলটা সেড়ে গিন্নির হাতের তৈরী ৩টি রুটি কাগজে প্যাকেট করে পকেটে পুড়ে দরজা খুলে সালাম দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লাম। আমার চট্টগ্রামের ছাত্রবন্ধু কল্যাণে চা দিয়ে রুটি খাওয়া শিখেছিলাম সেই ছাত্র জিবনে- এখনও মাঝে মাঝে তাই খাই।
যথারীতি মিরপুর ১০ এর গোলচক্কর এসে দেখি জ্যাম তেমন একটা নেই, রাস্তা ফাঁকা, গোলচক্করে পুলিশ। জায়গায় জায়গায় পুলিশ। মনে পড়ল আজকে হরতাল, চ্যানেল আইয়ের উপস্থাপক জনাব ফারুকীর হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে হরতাল। তবে সরকার বিরুধী হরতালে যে রকম মারমুখী পুলিশ থাকে সে রকমটা নেই।
ফার্মগেটের টেম্পু পেয়ে সামনের সীটে উঠে বসলাম। আগে সামনের সীটে বসার চেষ্টা বেশী করতাম। ইদানিংকালে টেম্পুর ড্রাইভার গুলো অল্প বয়সের এরা সবাই প্রায় কি সব ব্যান্ড সংগীত ধুম ধারাক্কা গান বাজায় যা না শুনতে ভাল লাগে না আছে কোন এর অর্থ। যে কারনে সামনে বসাটা প্রায় ছেড়েই দিয়েছি।
আজকে কি মনে করে যেন সামনে বসলাম। উঠে বসে পড়লাম এবং গাড়ীতে চড়ার দোয়টি পড়ে নিলাম:
যেটা ভাবছিলাম সেটাই সত্য হল। ড্রাইভার বেটা ঠিকই তার ক্যাসেট প্লেয়ারে গান ছেড়ে দিয়েছে। তবে অন্যদের মত জোড়ে নয় সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। আমি যে গান পছন্দ করিনা তা কিন্তু নয়। গান ভালই লাগে। গানের তালে তালে হৃদয়-মন দুলে উঠে। তবে হাল জমানার ব্যান্ড টাইপের গানগুলো মোটেই ভাল লাগে না। একবার ভাবলাম পিছনের সীটে গিয়ে বসি আবার কি মনে করে গেলাম না। আমার পাশে আর এক ভদ্র লোক এসে বসলেন।
গাড়ী চলে আসল তালতলা। এ রাস্তায় যারা চলাচল করেন তারা নিশ্চয় জানেন তালতলা যেখানে বাস থামে ঠিক সেখানটায় বেশ কয়েকটা সিটি কর্পোরেশনের ময়লার বক্স। কি বিচ্ছিরি গন্ধরে বাবা। নাক চেপে থাকতে হয় অনেক ক্ষন। আর ড্রাইভারদের একটা অভ্যাস এরা গুরেফিরে এ খানটাতে এসেই গাড়ীটা যাত্রী ওঠা-নামা করানোর জন্য থামবে। অবশ্য অনেক যাত্রী এটা নিয়ে অনেকবারই দেখেছি অনেক কথাই বলতে, একটু আগ-পিছ করার জন্য কিন্তু কে শুনে কার কথা।
আইডিভি ভবনের রোড ডিভাইডার পার হওয়ার সময় গাড়ীতে ক্যাসেট প্লেয়ারে একটি গান হচ্ছিল গানটির মর্ম এমন........ তোমার দাড়ি-চুল পাকেনি বলে জম আসবে না এটা ভুল...তোমার বয়সের অনেক আগেই অনেককে জমে নিয়ে গেছে.......
আগার গাঁও সিগনালে গাড়ী থামল যাব ফার্মগেট, আমার পাশের ভদ্রলোক বললেন এটা ফার্মগেট যাবে, আহ আমি ভুল করে উঠে পড়লাম। নেমে গেলেন বেচারা। কথা হল এই যে ভদ্র লোক উঠলেন ১০নং গোল চক্কর থেকে, প্রতিটি স্টপিজে ফার্মগেট ফার্মগেট বলে হেলপার চেচালো সেটা কি তিনি খেয়াল করলেন না। আসলে কিছু লোক আছেন হুটহাট করে উঠে পড়েন, চোক-কান খোলা রাখেন না। এতে করে সময়, অর্থ এর অপচয় হয়। একটু সাবধান হলে এমনটি হয় না। যাক সেখান থেকে আর একজন ফার্মগেটের যাত্রী উঠে আমার পাশে বসল।
আগার গাঁও সিগনালে সবুজ বাতি জ্বলে উঠল। গাড়ী চলতে শুরু করল। সিগনাল পেড়িয়ে নার্সারী পার হচ্ছি এ সময় দেখলাম রিক্সায় এক ভদ্রলোক অফিস ব্যাগটা কোলে নিয়ে দু হাত দিয়ে ধরে বসে আছেন, একটা মোটার সাইকেলে দুজন আরোহী, বয়স ২৬/২৭ হবে, দুজনের মাথায় হেলম্যাট, পিছন থেকে এসে ব্যাগের ফিতা ধরে টান দিল, প্রচন্ড শব্দে ফিতাটা ছিড়ে গেল। সব ঘটনা চোখের সামনে। তাকিয়ে দেখলাম রিক্সা যাত্রী ভদ্রলোক যখন দেখলেন ব্যাগটি নিতে পারলা, তাঁর ব্যাগ তাঁর হাতেই আছে, তখন তিনি একটু মুচকি হাসি দিলেন। আর মটর সাইকেল আরোহীরা দ্রুত সরে পড়তে ব্যস্ত হল। অবশ্য হাতে ঠিকই ছিড়ে যাওয়া ব্যাগের ফিতা টা ধরে রেখেছে। ওটা কিন্তু দেখলাম ফেলে দিল না। ওটা নিয়ে চীন মৈত্রী হলের দিকের রাস্তা ধরে চলে গেল। যেখানে ঘটনা ঘটল সেখানেই রাব-৪ এর অফিস। শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয় একটু ভিতরে। একটু সামনে এগিয়ে দেখলাম একটা টহল পুলিশের গাড়ী ধীর গতিতে আগাচ্ছে।
ড্রাইভার বলল দেখছেন কাজটা কি করল। আমার পাশের ভদ্রলোক প্রথমে বুঝতে পারেননি। সে মনে করেছিল আমরা ওদের রাফ সাইকেল চালানোটা মিন করেছি। যখন ঘটনা বললাম তখন সে বলল, এ জায়গাটায় এ রকম ঘটনা প্রায়ই ঘটে। আরও জানালেন আইডিভি ভবনের দক্ষিন পাশ দিয়ে যে রাস্তা গেছে ঐ রাস্তাগুলোতে এরকম ঘটনা প্রতিদিনই ঘটে। আইডিভি ভবন থেকে কম্টিউটার ও ল্যাপটপ কিনে ঐ রাস্তা দিয়ে যারা যান তারাই এ ধরনের ঘটনার স্বীকার হন।
চোখের সামনে এ ধরনের একটা ব্যর্থ ছিনাতাইয়ের জলজ্যান্ত ঘটনা প্রত্যক্ষ করলাম। এটাই আপনাদেরকে আজ শেয়ার করলাম। ক্যাসেট প্লেয়ারে যে গানটি গাইল ... এদের তো জমের ভয় নেই। থাকলে এরা কি এভাবে ছিনতাই করতে পারত। ব্যাগের ভিতরে টাকা, ল্যাপটপ ছাড়া আরও যে অনেক জরুরী কিছু থাকে তার জন্য সারাটা জিবন কষ্ট করতে হয়। সেটা তো এদের মাথায় নেই।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে তার প্রিয় বন্দা হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
বিষয়: বিবিধ
১৪৬৩ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ আমার ব্লোগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য।
চা দিয়ে রুটি খুবই উপদেয় এবং ভাল নাস্তা।আর আইডিবি ভবনের বাইরে ছিনতাই নৈমিত্তিক ব্যাপার। ভবনের নিচেথাকা পুলিশরাও নাকি এতে জড়িত।
ধন্যবাদ আমার ব্লোগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন