কেমন আছেন।

লিখেছেন লিখেছেন আবু নাইম ০২ জুলাই, ২০১৩, ০৪:৩১:১৯ বিকাল

আমাকে আমার প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধব ও দুর প্রবাসের অনেকেই ফোনে জানতে চান, জিজ্ঞেস করেন, কেমন আছেন।

তাদের জনাবাবে মনে পড়ে ইংরেজী বইয়ের একটি লাইন

Not bad at all, Not good at all.

রাতে বাসায় যেয়ে সর্বক্ষন আতঙ্কে থাকি কখন পুলিশ আসছে। দরজায় টোকা বা কলিংবেল বাজলে সঙ্কিত হই পুলিশ আতঙ্কে। কোন রকমে চারটে খেয়ে দেয়ে ঘুমাতে গেলে ঘুমু ঘুমু চোখে ভেষে উঠে পুলিশ নামক জীবদের চেহারা।

সকালে ঘুম থেকে উঠে মসজিদে যেতে ভয় করে রাস্তায় উৎ পেতে থাকা আইন শৃংখলা রক্ষাকারী কোন বাহীনির লোক ধরে নিয়ে যায় কিনা। কারণ ইতি পুর্বে অনেককে এভাবেই মসজিদ থেকে ফেরার পথে বা যাবার পথে ধরে নিয়ে গেছে। যেমন ডা: ফরিদ ভাইকে (সাবেক সিলেট জেলা-সিলেট মেডিকেল বর্তমানে ফরিদপুর, এনাকে চিনবেন বলে তার কথা বললাম এরকম ডজন ডজন নাম ঠিকানা সহ উদাহরন দেয়া যাবে) মসজিদে গেলেন নামাজ পড়তে আর খবর নেই। প্রায় ২৫ দিন পড় মিডিয়ায় খবর বের হল তিনি জঙ্গগীবাদী সংগঠক হিসেবে গোপন বৈঠক করার সময় ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন।

সকালে গোসল করে নাস্তা সেরে অফিসে আসার পুরো পথটাই তটস্ত থাকি কোন পুলিশ কখন আবার ধরে ফেলে মৌলবাদী জঙ্গী বলে, কারণ আমি মুখে নবী (সাHappy এর সুন্নত বলে দাড়ী রেখেছি। ইসলামী লেবাস বলে মাথায় টুপি পড়ি। গায়ে পান্জাবী পড়ি। আর এটাই আমার জঙ্গী, সন্ত্রাসী হওয়ার বড় প্রমান। চলার পথে রাস্তার মোড়ে কোন পুলিশ আমার দিকে তাকালে কলজেটা ছ্যাদ করে উঠে না জানি আমাকে ডাক দিয়ে বসে, নিয়ে যায় অন্ধকার জগতে।

অফিসে এসেও সস্তি নেই। কারন অনেক অফিস থেকেও পুলিশ নামক নাৎসী বাহীনি কর্মরত অবস্থায় অনেককে ধরে নিয়ে গেছে। মিশন গ্রুপ নামক কোম্পানি থেকে কর্মরত অবস্থায় ধরে নিয়ে গেছে অনেককে। এমনি ভাবে ধানসিড়িঁ, দিশারী এ রকম অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে গেছে অনেককে।

ঢাকার শ্রেষ্ট স্কুলগুলোর মধ্যে অন্যতম মনিপুর স্কুলে ক্লাশ চলাকালীন অবস্থায় ১৭ জন টিচারকে তুলে নিয়ে গেছে। এ ভাবে বাদশা ফয়সল, বিএডিসি থেকে ও স্কুল/কলেজ থেকে ক্লাশ চলাকালীন অবস্থায় টিচারদেরকে তুলে নিয়ে গেছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্টাণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, কারণ ওগুলোর পরিচালক বা শিক্ষকরা ইসলামী সংগঠনের সাথে জড়িত বলে।

অনেক মসজিদের ইমাম-খতিব আজ মসজিদে যেতে পারছেন না, খোতবা বা নাজাম পড়াতে। ৩৯, সেনপাড়, সমাজ কল্যান মসজিদে খতিব সাহেব আসতে পারেন না আজ প্রায় ১৩ মাস হয়ে গেল। ইমাম সাহেবকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে মুছলেকা, কিছু শর্ত ও টাকা নিয়ে জামিনে ছেড়ে দেয়ার পর বাসায় এসে এত কান্নাকাটি করছেন যে তার স্ত্রীকে পর্যন্ত বলছেন কি হয়েছে। শুধু বলছেন আমার সাথে এমন আচরণ করা হয়েছে যা পশুর সাথেও করা হয় না, এরা মানুষ নয় পশুর চেয়েও অধম। আর শর্তগুলোর ব্যাপারে বলছেন যে, এর চেয়ে জেলে থাকা অনেক ভাল। তিনি বাসা ছেড়ে দিয়ে যাযাবর এর মত বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বর্তমানে ঐ মসজিদে নামাজ পড়াচ্ছেন মুয়াজ্জিন সাহেব, তাকে ধরে নিয়ে প্রচন্ড নির্যাতন করে জেলে দেয়ার পর বর্তমানে জামিনে আছেন। তার অর্বতমানে একজন মাদ্রাসার হুজুর জুমার নামাজ পড়িয়েছিলেন, রাতে এসে হুজুরকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে থানায় প্রচন্ড নির্যাতন করে জেলে দেয়ার ৪ মাস পর জামিন পান। তিনি ভুলেও এখন এ মসজিদ মুখী হচ্ছেন না।

অফিসে এসে কাটে আতঙ্কে অফিস টাইম শেষ হলে, বাসায় ফেরার রাস্তাটা থাকি তটস্ত। বাসায় পৌছেঁ রাতটা কাটে সন্ত্রস্ত অবস্থায়। আবার বাসা থেকে অফিসে আসার পথটা একই ভাবে চলে। বাসা থেকে বের হবার সময় আমার একান্ত প্রিয়তমা স্ত্রী যার সাথে আমার ১৭ বছর একান্তে কেটেছে, সেই প্রিয়তমা তার নিজের আচল দিয়ে আমার জুতা দুটো পরিস্কার করে পরিয়ে দেয়। দোয়া-দুরুদ পড়ে শরীরে ফুকে দিয়ে বলে হে আল্লাহ তোমার কাছে শপে দিলাম, তুমি আবার আমার কাছে ফিরিয়ে দিও। তাগিদ দিয়ে আমাকে বলে দেয় যে, অফিসে পৌছেই যেন তাকে ফোন করে নিশ্চিত করি যে আমি নিরাপদ। আবার অফিস থেকে বেড় হবার আগে তাকে ফোন করে বের হতে হবে। অফিস-বাসা আস-যাওয়ার পথটা সে থাকে খুবই টেনশনে, এবং এ সময়টা কাটায় দোয়া-দুরুদ পড়ে।

আমার একটি মাত্র সন্তান, ছেলে এবার ঢাকার একটি বিক্ষাত মাদ্রাসায় ৯ম শ্রেণীতে পড়ে, ছেলেবেলার উচ্ছলতা, উচ্ছৃংখলতা তার ভিতর কিছুই নেই। সে যেন নির্বাক হয়ে গেছে। তার চাওয়া-পাওয়া সব মনে হয় শেষ হয়ে গেছে। তার মধ্যে সব সময় প্রিয় মানুষটাকে হারানোর ভয়। মনে হয় যেন সে গভীর চিন্তায় মগ্ন আছে।

আমার আত্মীয় স্বজন- সবাই যেন চিন্তিত। প্রতিটি মুহুর্তে তারা ফোন করে, খোজ-খবর নেয়। আতঙ্কে আছেন সবাই।

পুলিশি নির্যাতন:

এদের হাতে আজ মা-বোনেরাও নিরাপদ নয়। আমার বাসার কাছের বাড়ীওয়ালা মাও: -------ভাইকে ধরেনিয়ে যাবার সময় তার ছেলে ও জামাতাকেও ধরে নিয়ে গেল। তার মেয়ে মাত্র ২৬দিন পুর্বে সিজারের মাধ্যমে সন্তানের মা হয়েছেন। মেয়েটি পুলিশকে জিজ্ঞেস করল যে, আমার স্বামী তো ভার্সিটির টিচার সে তো জামায়াত করে না, তাকে নিয়ে যাচ্ছেন কেন। পুলিশ অফিসার মেয়েটির পেটে লাথি মেরে বলল তোর স্বামী ইসলামী ইউনিভার্সিটিতে চাকরী করে কেন, অন্য কোন প্রতিষ্ঠান নেই। লাথি খেয়ে মেয়েটি সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায়।

লালমাটিয়ার আল-মানার হাসপাতালের বিশিষ্ট চিকিৎসক এর ছেলেকে ধরার জন্য পুলিশ বাসায় যায়, ছেলেকে না পেয়ে মা, বাবা, ভাই ও বোনকে ধরে নিয়ে আসে থানায়।(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

২০৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File