আজকে আমি অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে একজনের কথা স্মরণ করছি।

লিখেছেন লিখেছেন আবু নাইম ০২ জুন, ২০১৩, ০৩:৪৪:৫৩ দুপুর

আজকে আমি অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে একজনের কথা স্মরণ করছি। যিনি হলেন সাইয়েদ শুয়েভ আহমেদ মুসলেহ ভাই। যিনি গত ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ তারিখ রাত ৩:৩০ মিনিটে লন্ডনে ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহী রজিউন।

এ ভাইটির সাথে আমার পরিচয়, জানা-শোনা অনেক দিনের। তাঁর সাথে ঘনিষ্ট হবার সুযোগ হয়েছিল ১৯৮৭ সনের কোন এক দুপুরে সিলেটের আম্বর খানায় তাঁর দোকানে। তিনি লেখা পড়া শেষ করে কিছু দিনের জন্য আম্বর খানায় একটা দোকান দিয়েছিলেন।

আমি জগন্নাথপুরের হাবিবপুর-কেশবপুর মাদ্রাসা থেকে ১৯৮৫ সনে দাখিল পাস করি, এরপর ১৯৮৭ সনে আলিম পাস করে সিলেটের শিবগঞ্জ মেসে তৎকালীন জেলা সভাপতি হাফেজ মাওলানা আবুল হোসাইন খান ভাইর কাছে গেলাম উদ্দেশ্য সিলেট আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়া, সাথে ছিল ধর্মপাশার আমারই একান্ত সহপাঠি মো: মোখলেসুর রহমান আমিন। আবুল ভাই আমাদেরকে সৎপুর আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হতে পরামর্শ দিলেন, সৎপুর মাদ্রাসাটি সিলেট শহর থেকে বাইরে, লেখা-পড়ার মান ছিল ভাল ও আমল-আখলাখও ভাল ছিল। অনেকটা মনখুন্নই বলা যায় আবুল ভাইর পরামর্শে সৎপুরে ভর্তি হলাম।

যথারীতি লেখা-পড়া চলছিল, বাড়ছিল অভিজ্ঞতা, এরি মাধ্যে সাথী হলাম। জেলা সভাপতি আবুল ভাই এবার বললেন জগন্নাথপুরে ফিরে যেতে থানা দায়িত্বশীল হিসেবে। জগন্নাথপুরে কোথায় উঠব চিন্তা করছিলাম। আম্বর খানার দোকানে গিয়ে মুসলেহ ভাইর সাথে কথা বললাম। তিনি বললেন আমাদের বাড়িতে উঠ।

তাঁর কথা মত ১৯৮৭ সনের কোন একদিন তল্পিতল্পা গুটিয়ে সৈয়দপুরে তাঁদের বাড়ীতে উঠলাম। এর কিছু দিন পর মুসলেহ ভাইও দোকানে সুবিধা করতে না পেরে ব্যবসাপাতি গুটিয়ে বাড়িতে চলে এলেন। সেই থেকে একসাথে চলা। মুসলেহ ভাইর প্রতিটি কথা, চিন্তা মনে হত হিসাব করা। সব থেকে বেশী যে জিনিষটি আমি দেখেছি তার মধ্যে তা হল আল্লহর প্রতি তার অবিচল ঈমান।

একদিন সকালের রোদে বারান্দায় বসে গল্প হচ্ছিল। আমি বললাম মুসলেহ ভাই এভাবে আর কতদিন কাটবে, বিয়ে-সাদী নেই, কাজ নেই, তিনি বললেন আমি আল্লার উপর ভরসা করছি, আল্লহ যাকে দেন ছাপ্পর মেরে দেন। কি থেকে কি হয়ে যাবে বুঝতেই পারবানা।

ঠিকই এর কয়েকদিন পর একদিন সৈয়দপুর বাজারে গেলাম মুসলেহ ভাইসহ, খবর আসল বাড়ীতে মেহমান এসেছেন, বড়ভাই তাড়াতাড়ি বাড়ীতে আসেন, আমি মুসলেহ ভাইকে বাড়ীতে পাঠিয়ে একটা প্রোগ্রামে গেলাম, প্রোগ্রাম শেষ করে এসে দেখি মেহমান চলে গেছেন, খবর শুনে তো আক্কেলগুড়ুম। শুনলাম মৌলভীবাজার থেকে মেয়ের বাবা এসেছেন, বাড়ী-ঘর দেখলেন, পছন্দ হল, ছেলে দেখলেন তাও পছন্দ হল, এবার তিনি বললেন, আমি মেয়ের এজাজত নিয়ে এসেছি আপত্তি না থাকলে আকদ পড়াবেন। আকদ হল। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে গেলেন, অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই সকল কাগজ-পত্র তৈরী হল, তিনি খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে চলে গেলেন লন্ডনে।

বড় হয়েছি, লেখা-পড়া করেছি সিলেটে কিন্তু আমার জন্ম বাংলাদেশের দক্ষিন অঞ্চলের সাগর তীরের জেলা বরগুনায়। এ অঞ্চলে একেরপর এক বন্যা ঘুর্ণিঝড় লেগেই আছে। গত ১৫ই নভেম্বর ২০০৭ ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড় সিডর, ২৫ মে, ২০০৯ আয়লা নামক ঝড়। এতে অনেকের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। গত সিডরের সময় দেখেছি অনেক প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, সংস্থা সহযোগিতা করেছে। নদীর তীরের লোকেরা রাস্তার পাশের লোকেরা প্রচুর পরিমানে ত্রান পেয়েছে। কিন্তু একটু ভিতরের লোকজন অনেকেই বঞ্চিত হয়েছে। লোক-লজ্জার কারণে অনেকেই নদীর ধারে বা রাস্তার পাশে ত্রান নিতে আসেননি। ঘুর্ণিঝড় সিডরে বেশী লোক মারা গেছে বা বেশী ক্ষতি হয়েছে বরগুনায় অথচ ত্রান বা সাহায্য বরগুনার আশাপাশের জেলাগুলোতে বেশী পৌছেঁছে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানিক সাহায্য তো বরগুনায় যায়নি তার করণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভল নয়। এ অঞ্চলের মানুষজন এমনিতেই গরীব। অনেক এলাকা আছে যাঁরা বৎসরে একবার গরুর গোশ্ত খান যা কিনা কোরাবনীর সময় পেয়ে থাকেন। এখানে অনেক গ্রাম আছে সরকারী স্থাপনা ছাড়া পাকা ঘর নেই।

এ অবস্থায় মুসলেহ ভাই আমাকে বিরাট অংকের টাকা দিলেন, এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের মধ্যে দেয়ার জন্য। আমি কয়েকজন ছাত্রকে ঠিক করে তাদের মাধ্যমে লিষ্ট করে উক্ত টাকা অতি গোপনে বন্ঠন করেছি। তাঁর থেকে উৎসাহ পেয়ে আমার আরও কয়েকজন বন্ধু-বান্দবদের কাছে বিষয়টি বললে তাঁরাও নির্দিধায় আমার হাতে টাকা তুলে দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে হাফেজ আবুল হোসেন খান ভাই, সৈয়দ আমিরুল ইসলাম আনা, সৈয়দ সিরাজুল ইলাম, মন্তেশর আলী এনাদের থেকে বিশাল সহযোগিতা পৌছেঁ দিয়েছিলাম।

গত ১৬ মে বৃহস্পতিবার, ২০১৩ মাহসেন ঝড়, ঝড় পরবর্তী জলোচ্ছ্বাসে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সংগঠিত ছাত্রদের অনেকে আমাকে স্মরণ করেছে। কিন্তু কাকে বলব। আজ আমরা অনেকেই খুবই কষ্টের জীবন যাপন করছি। আমাদের এমনও অনেকে আছেন, যারা একবেলা কোনভাবে খেতে পারেন বাকী বেলার খবর নেই। অনেকে যাযাবর জীবন যাপন করছেন। আমিও সামান্য বেতনে কাজ করি। একসময় ছিল মাসের খরচ মিটিয়ে সামান্য কিছু থাকত। এখন থাকা তো দুরের কথা মাস শেষে যা পাই তাতে কোনভাবে দিন চলে। তারপর ছেলের লেখা-পড়ার খরচ। কোনভাবে বেচে আছি।

কখন কি হয়ে যায়। ভোরবেলা ঘুম থেকে জেগে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি যে, ঠিক মত আছি। কাজের স্থলে আশা-যাওয়ার পথে ভয় থাকি না জানি কোন শকুন ছোবল মেরে প্রানটা কেড়ে নিল কিনা। অফিসেও তটস্ত থাকি না জানি কখন কিসের হিংস্র ছোবলে আক্রান্ত হই।

এ অবস্থায় আমার সেই মুসলেহ ভাইয়ের কথাই মনে হয় বার বার। আল্লহ তাঁকে জান্নাতে আলা দরজা দান করুন। তাঁর নেক আমলগুলো কবুল করুন। তাঁর সকল গুনা মাফ করে দিন।

নিচে কয়েকটি দৈনিকের বন্যার খবর দেয়া হল মন চাইলে দেখতে পারেন।





ডুবে গেছে গোটা উপকূল

পানিবন্দী লাখো মানুষ, নষ্ট হয়েছে ক্ষেতের ফসল, ভেসে গেছে পুকুর-ঘেরের মাছ

ঢাকা, শুক্রবার ৩১ মে ২০১৩, ১৭ জৈষ্ঠ্য ১৪২০, ২০ রজব ১৪৩৪

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বর্ষণে উপকূলীয় জেলা বরগুনার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের কারণে আগে থেকেই এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা ছিল। এর প্রভাব কাটতে না কাটতেই আবারো বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় নতুন করে অনেক এলাকা তলিয়ে গেছে। মাছ ভেসে গেছে অসংখ্য ঘের, পুকুরের। পূর্ণিমার কারণে প্রবল জোয়ারে অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে নদী ও সাগরের পানি ঢুকে পড়ায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় আউশ ও রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।

বরগুনা সংবাদদাতা জানান, পাথরঘাটার বিষখালী ও বলেশ্বর নদের তীরবর্তী একাধিক স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অনেক আগেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সমপ্রতি ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের আঘাতে বেড়িবাঁধের বিদ্যমান অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ায় চলতি মৌসুমে উপজেলার ৪ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাথরঘাটা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল হাকিম জানান, লবণাক্ত পানি ঢুকে বীজতলায় গজানো ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি উচ্চতার চারা নষ্ট হয়ে গেছে।

মহাসেনের আঘাতে বরগুনার ৯৫ ভাগ মানুষ এখনো ত্রাণ পায়নি

বরগুনা (উত্তর) প্রতিনিধি

ঢাকা, শনিবার, ২৫ মে ২০১৩, ১১ জৈষ্ঠ্য ১৪২০, ১৪ রজব ১৪৩৪



ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের আঘাতের ৬ দিনেও বরগুনার ক্ষতিগ্রস্তদের ৯৫ ভাগ মানুষ ত্রাণ সহায়তা পায়নি। জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫ লক্ষাধিক মানুষের জন্য সোমবার পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ২৫৭ টন চাল এবং ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। মহাসেনের আঘাতের ৬ দিন অতিবাহিত হলেও ত্রাণ পায়নি জেলার কয়েক লাখ মানুষ।

বরগুনা সদর উপজেলার ছোটবদরখালী গ্রামের হতদরিদ্র ব্রজেশর, রণজিত মাঝি, মোয়াজ্জেম জানান, ঘূর্ণিঝড়ে তাদের ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত কোন ত্রাণ তারা পাননি।

অপরদিকে তালতলী উপজেলার ছোটবগী গ্রামের হারুন একই অভিযোগ করে বলেন, মহাসেনে ঘর-বাড়ি সব শেষ হলেও কোন ত্রাণ পাইনি। এদিকে নবগঠিত তালতলী উপজেলা আ'লীগের সভাপতি ফজলুল হক জোমাদ্দার জানান, গত ১২ মে তালতলীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোগদানের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। যার কারণে তালতলী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ এবং ত্রাণ সহায়তা ঠিক ভাবে বন্টন করা হচ্ছে না। বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) আবদুল খালেক বলেন, সিডর ও আইলার তুলনায় এবারের ঘূর্ণিঝড়ে কম মানুষ মারা গেলেও ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে অনেক বেশি। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে না।

মহাসেনের আঘাতে নিহত ১৪ আশ্রয়হীন বহু মানুষ

ইত্তেফাক রিপোর্ট

ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মে ২০১৩, ৩ জৈষ্ঠ্য ১৪২০, ৬ রজব ১৪৩৪



ব্যাপক প্রস্তুতি, আগাম সতর্কতার পর ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আঘাত হেনেছে দুর্বলভাবে। তারপরও থামানো যায়নি প্রাণহানি। বিধ্বস্ত হয়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি। উপড়ে পড়েছে গাছপালা। বহু মানুষ আশ্রয় হারিয়েছেন। তাদের এখন ঠিকানা হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগেই বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ত্রিপুরার দিকে চলে যায় দুর্বল হয়ে পড়া এই ঘূর্ণিঝড়টি। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী মহাসেনের আঘাতে ১৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে বরগুনায় ৭ জন, ভোলায় ৪ জন, পটুয়াখালিতে ২ জন ও পিরোজপুরে ১ জন।

বরগুনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস ৭ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। ঝড়ের তাণ্ডবে নিহত ব্যক্তিরা হলেন— বেতাগী উপজেলার পূর্ব রানীপুর গ্রামের সৈয়দ আলী (৭৫), বকুলতলী গ্রামের শিশু আমির হোসেন (৬), তালতলী উপজেলার ছোট আমখোলা গ্রামের চান মিয়া (৬০), বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরা গ্রামের আনোয়ার হোসেন (৬০), একই ইউনিয়নের নাদিরা আক্তার (২৬) ও বামনা সদর ইউনিয়নের সফিপুর গ্রামের মোশাররফ হোসেন (৬৫) ও পাথরঘাটা উপজেলার ঘুটাবাছা গ্রামের হানুফা বেগম (২৫)।

বুধবার রাত তিনটার দিকে ঝড়ে উপড়ানো গাছের নিচে চাপা পড়ে সৈয়দ আলী নামের এক ব্যক্তি মারা যান। গতকাল গাছের নিচে চাপা পড়ে মোশাররফ ও আনোয়ার নামের দুই ব্যক্তি মারা যান। দুপুরের দিকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় বজ পাতে মারা যায় শিশু আমির। আর হুড়োহুড়ি করে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে মারা যান চান মিয়া ও নাদিরা। এর মধ্যে নাদিরা অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির উপপরিচালক হাফিজ উদ্দিন এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের প্রভাবে গতকাল ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে বরগুনায় দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে। একই সঙ্গে ছিল প্রবল বৃষ্টিপাত। বুধবার রাত আড়াইটার দিকে বরগুনায় বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরই মধ্যে নদ-নদীর পানি ছয় থেকে সাত ফুট ফুঁসে ওঠে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে। এতে বরগুনা শহর তিন ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, পাথরঘাটা উপজেলার লালদিয়া, পদ্মা, হরিণঘাটা ও খলিফারহাট এলাকায় প্রায় ৪০০ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আশারচর, নিদ্রারচর, নলবুনিয়া, কাজিরখাল এলাকায় প্রায় ৩০০ কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বরগুনা সদর, তালতলী, আমতলী ও পাথরঘাটার প্রায় এক হাজার মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। তালতলীর দক্ষিণ ঝাড়াখালী গ্রামে ঝড়ে উপড়ানো বেশ কিছু গাছের নিচে চাপা পড়ে ৫০টির মত গরু মারা গেছে।



নিম্নœচাপে উত্তাল পদ্মা : স্পিডবোট ডুবে নিখোঁজ ৪ নৌচলাচল বন্ধ, আটকা পড়েছে ২ ফেরি, বরগুনায় পানিতে ভাসছে ২ শতাধিক গ্রাম

নয়া দিগন্ত ডেস্ক, তারিখ: 31 May, 2013

বরগুনায় জোয়ারের পানিতে ভাসছে দুই শতাধিক গ্রাম

বরগুনা সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের তাণ্ডবে বরগুনা জেলার চার লাখ ৭৫ হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এরপর আবার অমাবস্যার জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৫-৬ ফুট বেশি হওয়ায় জেলার অনেক এলাকায় প্রতিদিন তলিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার বসতঘর। জোয়ারের পানির তোড়ে প্রতিদিন একের পর এক ভাঙছে বেড়িবাঁধ। ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের গড়িমসিতে এই বাঁধগুলো নির্মাণ করা হয়নি। ফলে চরম দুর্ভোগের মধ্যে এখন দিন কাটছে বরগুনার মহাসেনদুর্গত হাজার হাজার মানুষের। বরগুনার আমতলী উপজেলার আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের বালিয়াতলী এলাকার আরেকটি বেড়িবাঁধ ভেঙে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া বরগুনা সদর উপজেলার পালের বালিয়াতলী গ্রামসহ পাথরঘাটা উপজেলা ও তালতলী উপজেলার প্রায় ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ পুরোপুরি ভেঙে গেছে।

বরগুনার বেতাগী উপজেলার সড়িষামুড়ি ইউনিয়নের আলিয়াবাদ গ্রাম থেকে দণি কালিকাবাড়ি গ্রাম পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জোয়ারের পানির চাপে ভেঙে গেছে। এতে প্লাবিত হয়েছে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি। সরেজমিন দেখা গেছে, লঘুচাপ, টানা বর্ষণ ও জোয়ারের চাপে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে জেলার বেশির ভাগ এলাকার নিম্নাঞ্চল ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পালের বালিয়াতলী গ্রামের জহির হোসেন বলেন, জোয়ার এলে ঘরের মধ্যে কোমর সমান পানি ওঠে। তাই ভেসে যাওয়ার ভয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছি। এ ছাড়া সোনাকাটা, নিশানবাড়ীয়া, বড়বগী, ছোটবগী, পচাকোড়ালিয়া, আড়পাংগাশিয়া, চাওড়া, গুলিশাখালী ইউনিয়নের ভাঙা বেড়িবাঁধগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান।

আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহ আলম জানান, টানা বর্ষণে বাদাম, মরিচ, বেগুন, ঢেঁড়স, করলাসহ রবিশস্যের ব্যাপক তি হয়েছে। এ দিকে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী পলাশ ব্যানার্জি জানান, পানি একটু কমলে যখনই আমরা দেখব ওখানে মাটি কাটার পরিবেশ আছে তখনই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ করা হবে।

তালতলীতে আঘাত হেনেছে নিম্নচাপ পূবালী

তালতলী (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের আঘাতের ১৬ দিনের ব্যবধানে আবার আঘাত হেনেছে নিম্নচাপ পূবালী। গত বুধবার রাত ১১টার দিকে নিম্নচাপটি বলেশ্বর ও সুন্দরবন অঞ্চল অতিক্রমের সময় তালতলীতে আঘাত হানে। ঘণ্টায় ৪৫-৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বয়ে যায়। পূবালীর প্রভাবে ভারী বর্ষণ হয়েছে। জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আট দিন ধরে পূর্ণিমার ‘জো’ থাকায় পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বহু স্থানের বাঁধ ভেঙে গেছে। তেতুলবাড়িয়াসহ আরো নতুন বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পূবালী আঘাত হানায় তালতলী উপজেলার সাত ইউনিয়ন বাসিন্দাদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার তেতুলবাড়িয়া, জয়ালভাঙ্গা, নলবুনিয়া, নিদ্রা, সকিনা, সোনাকাটা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে গৃহহারা মানুষ মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। ফসল হারিয়ে কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। লাউপাড়া গ্রামের গৃহহারা অসহায় হালিমন বলেন, ‘মহাসেন আমার সব কিছু ধ্বংস করে দিয়া গেছে’। এখন প্রতিদিনের বৃষ্টিতে ভিজে রোদে শুকিয়ে তার দিন কাটে বলে তিনি জানান। পূবালীর বন্যায় বেশ কয়েক স্থানের ফসলি জমি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।

পাথরঘাটা উপকূলের হাজার হাজার জেলে বেকার

আমিনুল হক পাথরঘাটা (বরগুনা)

তারিখ: 31 May, 2013

দীর্ঘ প্রতীার পর ইলিশ মওসুম শুরু হয়েছে। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ইলিশ শিকারে সাগরে যেতে পারছেন না জেলেরা। এতে পাথরঘাটা উপকূলের ১০ হাজার জেলে বেকার হয়ে পড়েছেন। জ্যৈষ্ঠ মাসে একনাগারে ১৫ দিন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার নজির অতীতে নেই বলে জানান স্থানীয় জেলেরা। প্রস্তুতি সম্পন্ন করে অলস সময় পাড় করছেন তারা। শত শত মাছ ধরা ট্রলার পাথরঘাটার বিভিন্ন খালে নোঙর করে ইলিশ শিকারের উপযোগী আবহাওয়ার প্রতীা করছেন জেলেরা।

মহাসেনের তাণ্ডবে পাথরঘাটার জেলে পল্লীর জেলেরা বিপর্যস্ত। তার ওপর সাগরে উপর্যুপরি লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপের সৃষ্টি। মহাসেনের পর সেই থেকে উপকূলে ৩ ন¤¦র সতর্ক সঙ্কেত চলছে। তাই সাগরে যেতে না পারার কারণে পাথরঘাটার জেলে পল্লীতে চলছে নীরব দুর্ভি। উপকূলের জেলেরা ঐতিহ্যগতভাবেই দরিদ্র। ইলিশ ও জাটকা ধরা জেলেরা দরিদ্রসীমার নিচে বাস করেন। যেসব জেলে প্রধান পেশা হিসেবে ইলিশ মাছ আহরণের ওপর নির্ভরশীল তাদের ৬০ শতাংশের চাষযোগ্য জমি নেই। অনেক েেত্র নিজস¦ বাসস্থানও নেই। তাই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বেকার হয়ে জেলেরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, আবহাওয়াটা ইলিশ ধরা পরার উপযোগী। কিন্তু স্থানীয় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) অফিস থেকে সাগরে জেলেদের মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

বরগুনায় হাজারো পরিবারে আহাজারি : পৌঁছেনি ত্রাণ

মহাসেনের আঘাত

গোলাম কিবরিয়া বরগুনা

তারিখ: 23 May, 2013

বরগুনা জেলায় দিনে দিনে বাড়ছে অনাহারি মানুষের সংখ্যা। সিডর ও আইলার তাণ্ডবের ঘাঁ শুকাতে না শুকাতেই এলো প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় মহাসেন। তছনছ করে দিয়ে গেলো লাখ লাখ মানুষের জীবন। ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের তাণ্ডবে গাছগুলো আছড়ে পড়েছে ঘরের ওপর। এসব গাছ ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে মানুষকে রা করে। তাই তারা ডালপালা কেটে ফের জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে বরগুনার তালতলীর সোনাকাটা ও নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের প্রায় ৭০০ বসতঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও সাত হাজার ঘর আংশিক তি হয়েছে।

বুধবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, ইউনিয়ন দু’টির প্রায় সাড়ে ছয় হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। চার দিকে ধ্বংসের চিহ্ন। একেকটি ঘর যেন আছড়ে গুঁড়িয়ে দিয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন। ওই বসতঘরটুকুই ছিল তাদের শেষ আশ্রয়। সর্বশেষ আশ্রয়টুকু হারিয়ে এখন তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। ত্রাণ নেই, খাবার নেই। বঙ্গোপসাগর তীরের তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের লাউপাড়া, লালুপাড়া, চামোপাড়া, নমিসেপাড়া, নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তাঁতীপাড়া, কবিরাজপাড়া ও মেনিপাড়া ঘুরে গতকাল আশ্রয়হীন মানুষের মানবেতর জীবনযাপনের এ দৃশ্য দেখা যায়। এদের কেউ মাছ ধরে, কেউ কৃষি শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে, কেউ ধারদেনা করে মাথার ওপর একটা ছাউনি দিয়েছিলেন।

এ পরিবারগুলোর কাছে গত ছয় দিনেও ত্রাণের খাবার পৌঁছেনি। নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের লাউপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব আবদুল মালেক নদীতে পোনা মাছ ধরে সংসার চালাতেন। কাছে যেতেই অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনেরা কী দ্যাখতে আইছেন। মোগো কপাল পুইড়া গ্যাছে। ঘর নাই, প্যাডে ভাত নাই। এর চাইতে মরণও ভালো।’ লালুপাড়া গ্রামের বাদল খানের কাহিনীও মর্মস্পর্শী। বললেন ‘ছয় দিনেও একমুঠ চাউল পাই নাই। এহন কী দিয়া ঘর উডামু, পোলাপান লইয়্যা কী খামু, ক্যামনে বাঁচমু কিচ্ছু কইতে পারি না।’

সোনাকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরাজী মো: ইউনূস বলেন, এ পর্যন্ত সাড়ে চার টন চাল পেয়েছি, যা দিয়ে ৫০০-৫৫০ জনকে সহায়তা করা গেছে। অথচ এই ইউনিয়নে তিগ্রস্ত সাত-আট হাজার পরিবার। এত কম সহায়তা দিয়ে কিভাবে এত মানুষকে সহায়তা করব।

পার্শ্ববর্তী নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তাঁতীপাড়া, মেনিপাড়া, কবিরাজপাড়া গ্রামে গিয়েও এমন ধ্বংসযজ্ঞ আর গৃহহীন অনাহারি মানুষের দুর্দশার কথা জানা যায়। তারা এ প্রতিনিধিকে জানান, আমতলী উপজেলার তিন সহস্রাধিক গৃহহারা পরিবার ঘূর্ণিঝড়ের পর চার দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।

আমতলী উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, পৌর মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যানদের দেয়া তালিকা অনুসারে উপজেলায় দুই হাজার ৮২৩টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক তি হয়েছে ২৭ হাজার ৭০২টি ঘরের। উপজেলার তিগ্রস্ত তালতলী, সোনাকাটা, নিশানবাড়িয়া, বড়বগী, ছোটবগী, পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের গৃহহারা পরিবারগুলো এখনো খোলা আকাশের নিচে জীবনযাপন করছে।

তালতলীর লাউপাড়া গ্রামের হালিমা বেগম বলেন, ‘মোর স্বামী অচল। ছোড অ্যাকটা চায়ের দোহান দিয়া পাঁচজনের সোংসার চলাই। বইন্যা মোগো ঘর লইয়্যা গ্যাছে। এ্যাহন মোরা ঘর হারাইয়্যা খোলা আহাশের নিচে আছি। মোগো এ্যাহোনো কেউ সাহায্য হরে নাই।’

আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, গৃহ নির্মাণের জন্য তিগ্রস্তদের তালিকা ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এ দিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সোমবার বিকেলে ঘূর্ণিঝড় মহাসেনে তিগ্রস্ত বরগুনায় এসেও তিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন না করেই ফিরে গেছেন। তিনি জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্ধারিত সভায়ও যোগ দেননি।

৬৫ কিলোমিটার বিদ্যুৎলাইন তিগ্রস্ত : বরগুনা জেলায় মহাসেনের তাণ্ডবে ৬৫ কিলোমিটার বিদ্যুৎলাইন তিগ্রস্ত হয়েছে। শহরের মধ্যেই বিদ্যুতের ১০টি খুঁটি উপড়ে পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত শহরের ৯০ ভাগ গ্রাহকের বিদ্যুৎসংযোগ চালু করা সম্ভব হয়েছে। বরগুনা পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সাইফুল আহম্মেদ জানান, বাকি ১০ ভাগ বিদ্যুৎ চার-পাঁচ দিনের মধ্যে চালু করা সম্ভব হবে। জেলার সাবস্টেশনগুলো চালু করা হয়েছে। এখনও পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন গ্রামাঞ্চলের ৯০ ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরো জানান, সিডরেও এত ক্ষতি হয়নি। গ্রামের অধিকাংশ স্থানে গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে।

বরগুনার আমতলী উপজেলা পাঁচ দিন ধরে অন্ধকারে

বরগুনা সংবাদদাতা

তারিখ: 21 May, 2013

ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের আঘাতে লণ্ডভণ্ড বরগুনার আমতলী উপজেলা পাঁচ দিন ধরে অন্ধকারে রয়েছে।

পটুয়াখালী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি তিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। আমতলী উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নের মোট চার হাজার ৮০০ বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছেন। এরমধ্যে হাজার হাজার গ্রাহক পাঁচ দিন ধরে অন্ধকারে রয়েছেন। ঘূর্ণিঝড়ে মহিষকাটা, ঘটখালী ও ফায়ার সার্ভিসের সামনের তিনটি স্টিলের বিদ্যুৎ টাওয়ার বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া আমতলী ও তালতলীর বিভিন্ন স্থানে গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে যাওয়া ও ২০-২৫টি বৈদ্যুৎতিক কাঠের খুঁটি ভেঙে যাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে মেরামতের পরে (৩৩ কেভি) সংযোগটি বর্তমানে চালু আছে।

গাজীপুর বন্দরের ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় তার ফ্রিজে থাকা ২০ হাজার টাকার আইচক্রিম নষ্ট হয়ে গেছে। চাওড়া পাতাকাটা বাজারের আদর্শ ডিজিটাল ফটো স্টুডিওর মালিক মনির মিয়া ও মহিষকাটা বাজারের ফটোস্ট্যাট ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন খান জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় পাঁচ দিন পর্যন্ত দোকান বন্ধ রয়েছে।

পটুয়াখালী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো: হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের কারণে এ উপজেলায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ব্যাপক তি হয়েছে। তির পরিমাণ প্রায় এক কোটি টাকা। তিনি আরো জানান, লাইনগুলো মেরামতের জন্য একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। আশা করি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আংশিক তিগ্রস্ত লাইনগুলো মেরামত করে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারব। সম্পূর্ণ তিগ্রস্ত লাইনগুলো মেরামত করতে আরো ১৫ দিনের মতো সময় লাগতে পারে।

মহাসেনের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত বরগুনার আবাসন প্রকল্পের দেড় লাখ পরিবার

গোলাম কিবরিয়া বরগুনা

তারিখ: 21 May, 2013

বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী জেলা বরগুনার মানুষ প্রতিনিয়তই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে বেঁচে আছেন। গত ১৬ মে মহাসেনের তাণ্ডবে এই জেলার হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এখনো খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন তারা।

দক্ষিণাঞ্চলের সাগর পাড়ের আশ্রয়হীন এই অসহায় পরিবারগুলো যাতে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে নিশ্চিন্তে বাঁচতে পারেÑ সব সময় এই আশায় বুক বেঁধে আছেন তারা। যেসব আবাসন ব্যারাক হাউজ নদীর পাড়ে নির্মাণ করা হয়েছে, নতুন কোনো বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসের আগেই আবাসনের বাইরে থেকে বেড়িবাঁধ অথবা অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে তাদের স্থানান্তর করা হোক এমনটাই প্রত্যাশা আশ্রয়হীন এই দুঃখী পরিবারগুলোর।

২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর ও ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলা এবং গত ১৬ মের ঘূর্ণিঝড় মহাসেনসহ বিষখালী ও পায়রা নদীভাঙনে গৃহহীন হয়ে পড়েছে এই জেলার প্রায় দেড় লাখ পরিবার। জেলার বরগুনা, বামনা, পাথরঘাটা, বেতাগী, আমতলী, তালতলী উপজেলার গৃহহীন এসব পরিবারের জন্য সরকারি ও বিভিন্ন দাতাসংস্থার সহায়তায় ২৮টি আবাসন প্রকল্প ও ১৮২টি ব্যারাক হাউজ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে পুনর্বাসন করা হয়েছে চার হাজার ৩৩৭টি গৃহহীন পরিবারকে। কিন্তু এই আবাসন ও ব্যারাক হাউজগুলোর বেশির ভাগই নির্মাণ করা হয়েছে বেড়িবাঁধের বাইরে, নদীর পাড়ে এবং চর ভরাট করে, যা সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়। ফলে ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত নিঃস্ব অসহায় পরিবারগুলোকে আবাসনের নামে ঠেলে দেয়া হয়েছে এক মারণফাঁদে। বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই আবাসনে বসবাসকারী অসহায় পরিবারগুলো। বন্যা বা জলোচ্ছ্বাস দূরের কথা, সামান্য জোয়ারের পানিতে বেশির ভাগ আবাসন ও ব্যারাক হাউজ প্লাবিত হওয়ায় বসবাসরত মানুষের দুর্ভোগ নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে জেলার বেতাগী উপজেলার বদনীখালী বাজারসংলগ্ন ৬০টি পরিবারের আবাসনের ১৫টি ঘর ইতোমধ্যে বিষখালী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

সরজমিনে দেখা যায়, বেড়িবাঁধের বাইরে বিষখালী নদীর চর ভরাট করে এই ৬০টি পরিবারের আবাসন নির্মাণ করা হয়েছে। তাই সামান্য জোয়ারের পানিতে এই ঘরগুলো প্রায় সময়ই নিমজ্জিত থাকে।

এ ব্যাপারে আবাসনে বসবাসকারী জালাল মৃধা বলেন, স্যার দেখতেই পাচ্ছেন, আবাসনের অনেক ঘর নদীর মধ্যে খালি খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আমরা অনেক ঝড়-ঝাপটা মোকাবেলা করে কোনো মতে বেঁচে আছি। সামান্য জোয়ারের পানিতে আবাসনের ঘরগুলোর মেঝে যখন এক-দেড় ফুট পানিতে ডুবে যায় তখন ঘর ছাড়তে বাধ্য হই। সিডর বা আইলার মতো ঘূর্ণিঝড় যদি আবার কখনো আসে তবে এখানকার সব কয়টি পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো। বর্ষা মওসুমে ঝড়ের আশঙ্কা সাধারণত একটু বেশি থাকে। সামনেই বর্ষা মওসুম। তাই সব সময় আতঙ্ক নিয়ে এখানে বসবাস করছি। সরকারি এত জমি থাকতে কেন আমাদের এই নদী পাড়ে থাকার স্থান দিয়েছে এ প্রশ্নের জবাব আজো খুঁজে পাইনি।

বেড়িবাঁধের বাইরে নদীতীরে কেন আবাসন নির্মাণ করা হলো এ প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় বুড়ামজুমদার ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান রেজাউল করিম সুমন বলেন, বেড়িবাঁধের ভেতরে অনেক ফাঁকা জমি থাকতেও কেন এই আবাসন নদীতীরে নির্মাণ করা হয়েছে এ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। কারণ আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর এই আবাসন নির্মাণ হয়নি। এই আবাসন নির্মাণ করা হয়েছে সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল হায়দার বারেক মিয়ার সময়। তাই এ প্রশ্নের জবাব তিনিই যথাযথভাবে দিতে পারবেন। তিনি বলেন, আবাসনের এ দুরবস্থা দেখে ৪০ দিন কর্মসূচির আওতায় উত্তর-পশ্চিম পাশে নদীর পাড় দিয়ে একটি বেড়িবাঁধ দিয়েছিলাম কিন্তু বালুমাটির জন্য পানির তোড়ে এই বাঁধটি বেশি দিন টিকেনি। শুধু সিডর নয়, সিডরের একশত ভাগের একভাগ শক্তিশালী বন্যাও যদি হয় তবে এই ৬০ ঘরের আবাসন মুহূর্তে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

কেন নদীতীরে এই আবাসন নির্মাণ করার স্থান নির্বাচন করা হলোÑ এ ব্যাপারে সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল হায়দার বারেক মিয়া বলেন, আমি চেয়ারম্যান থাকাকালে এই আবাসন নির্মাণ করা হলেও এর স্থান নির্বাচন করার জন্য তৎকালীন সময় বেতাগী উপজেলা পরিষদের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তারাই এই আবাসন নির্মাণ করার স্থান নির্বাচন করেছেন। এতে আমার কোনো হাত ছিল না। আবাসনের প্রত্যেকটি ঘরের সিলিং ও ফোর পাকা থাকার কথা কিন্তু বেশির ভাগ ঘরে তা নেই কেনÑ এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা শুধু ঠিকাদারই বলতে পারবেন। তবে এতটুকু আমি বলতে পারিÑ এই আবাসন তৈরিতে ঠিকাদার যে কাজ করেছেন তা অত্যন্ত নিম্নমানের। এই নিম্নমানের কাজ দেখে আপনি তাকে কেন সাবধান করেননিÑ এর জবাবে তিনি বলেন, আমি বহুবার তাকে বলেছি কাজ ভালো করার জন্য কিন্তু তা না করে কাজ অসমাপ্ত রেখে কিভাবে বিল তোলে নিয়ে চলে গেল তা আমি জানি না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে বলেন, এই আবাসন নির্মাণে যে টাকা ব্যয় করার কথা তার অর্ধেকটাই সাবেক চেয়ারম্যান ও ঠিকাদারের পকেটে। তাই বুঝতেই পারছেন এখানে ভালো কাজ হবে কিভাবে?

এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক আব্দুল ওয়াহাব ভূঞা বলেন, আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে এ আবাসন প্রকল্প ও ব্যারাক হাউজগুলোর নির্মাণ করার বাইরে থেকে আবার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার ব্যবস্থা করব।

বরগুনায় এখনো অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে

গোলাম কিবরিয়া বরগুনা

তারিখ: 19 May, 2013

বরগুনায় মহাসেন আঘাতহানার চার দিন পর এখনো খোলা আকাশের নিচে বসবাস করেছেন অনেক পরিবার। অন্য দিকে প্রশাসন থেকেও পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাচ্ছেন না তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, বরগুনার বামনা, পাথরঘাটা, বেতাগী, আমতলী, তালতলী ও বরগুনা সদরের কয়েক শ’ পরিবার এখনো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা দুই-তিন দিন ধরে খাবার পাচ্ছেন না। গতকাল পর্যন্ত খাকদোন নদী, বিষখালী নদী ও পায়রা নদীর তীরবর্তী নলটোনা, বালিয়াতী, গৌরিচন্না, আমতলী এলাকা ঘুরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্ভোগের দৃশ্য দেখা গেছে।

বরগুনা জেলার ৭০ ভাগ এলাকা এখনো জলাবদ্ধ থাকায় লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। তাদের অনেকের ঘরেই বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যসামগ্রীর অভাব রয়েছে বলে জানান তারা।

স্থানীয় প্রশাসন জানায়, বরগুনায় ১৯৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ক্ষতি হয়েছে ১৫৬ কিলোমিটার। এ ছাড়া জেলার বেশির ভাগ খামারের মাছ বর্ষার পানিতে ভেসে গেছে।

চালিতাতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিন বলেন, তার বিদ্যালয়টি বিধ্বস্ত হয়েছে। মেরামত করতে আনুমানিক ১০ লাখ টাকা দরকার হবে। আমি এখন নিরুপায় ছাত্র-ছাত্রীদের কিভাবে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাব জানি না।

বরগুনা সদরের ঢলুয়া ইউনিয়নের কদমতলা নিবাসী মৎস্য খামারি জালাল, জাহিদ হোসেন মোল্লা ও ক্রোক ওয়াপদা নিবাসী মনোয়ার হোসেন পল্টু পঞ্চায়েত বলেন, আমাদের ২০ লক্ষাধিক টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক আবদুল ওয়াহাব ভূঞা বলেন, আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করে জরুরি পুনর্বাসনসহ ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করব।



ঢাকা, শুক্রবার, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২০, ১৩ রজব ১৪৩৪, ২৪ মে ২০১৩



ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত বরগুনার হাজার হাজার পরিবার

গত ১৬ মে মহাসেনের তাণ্ডবের পরবর্তী আবাসন প্রকল্প

শাহ্ আলী, বরগুনা : বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী জেলা বরগুনা। এখানকার মানুষ প্রতিনিয়তই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে বেঁচে আছে। গত ১৬ মে মহাসেনের তাণ্ডবের পরবর্তী সময় এই জেলার হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এখনও খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন তারা। বর্তমানে প্রকৃতির সাথে অঘোষিত লড়াই করে বেঁচে আছে এই জেলার মানুষ।

দক্ষিণাঞ্চলের সাগর পাড়ের আশ্রয়হীন এই অসহায় পরিবারগুলো যাতে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিশ্চিন্ত মনে বাঁচতে পারে সব সময় এই আশায় বুক বেঁধে আছে তারা। যে সব আবাসন ব্যারাক হাউজ নদীর পাড়ে নির্মাণ করা হয়েছে, নতুন কোনো বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসের আগেই আবাসনের বাইরে থেকে বেড়িবাঁধ অথবা অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে তাদেরকে স্থানান্তর করা হোক এমনটাই প্রত্যাশা আশ্রয়হীন এই দুঃখী পরিবারগুলোর।

২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর ও ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলা এবং ২০১৩ সালের ১৬ মে ঘূর্ণিঝড় মহাসেনসহ বিষখালী ও পায়রা নদী ভাঙ্গনে গৃহহীন হয়ে পড়েছে এই জেলার প্রায় দেড় লাখ পরিবার। জেলার বরগুনা, বামনা, পাথরঘাটা, বেতাগী, আমতলী, তালতলী উপজেলার এই গৃহহীন এসব পরিবারের জন্য সরকারি ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহায়তায় ২৮টি আবাসন প্রকল্প ও ১৮২টি ব্যারাক হাউজ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে পুনর্বাসন করা হয়েছে ৪ হাজার ৩৩৭টি গৃহহীন পরিবারকে। কিন্তু এই আবাসন ও ব্যারাক হাউজগুলোর বেশির ভাগই নির্মাণ করা হয়েছে বেড়িবাঁধের বাইরে, নদীর পাড়ে এবং চর ভরাট করে। যা সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মহাসেন বন্যা জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত নিঃস্ব অসহায় পরিবারগুলোকে আবাসনের নামে ঠেলে দেয়া হয়েছে এক মরণ ফাঁদে। বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই আবাসনে বসবাসকারী অসহায় পরিবারগুলো। বন্যা বা জলোচ্ছ্বাস দূরের কথা সামান্য জোয়ারের পানিতে অধিকাংশ আবাসন ও ব্যারাক হাউজ প্লাবিত হওয়ায় বসবাসরত মানুষের দুর্ভোগ নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার বদনীখালী বাজার সংলগ্ন ৬০ পরিবারের আবাসনের ১৫টি ঘর ইতোমধ্যে বিষখালী নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বেড়িবাঁধের বাইরে বিষখালী নদীর চর ভরাট দিয়ে এই ৬০ পরিবারের আবাসন নির্মাণ করা হয়েছে। তাই সামান্য জোয়ারের পানিতে এই আবাসনের ঘরগুলো প্রায় সময়ই নিমজ্জিত থাকে।

এ ব্যাপারে আবাসনে বসবাসকারী জালাল মৃধা বলেন, স্যার দেখতেই পাচ্ছেন, আবাসনের অনেক ঘর নদীর মধ্যে খালি খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আমরা যে কয়টি পরিবার এখানে বসবাস করছি অনেক ঝড়-ঝাপটা মোকাবেলা করে কোনো মতে বেঁচে আছি। সামান্য জোয়ারের পানিতে আবাসনের ঘরগুলোর মেঝে যখন এক দেড় ফুট পানিতে ডুবে যায় তখন খাওয়া-দাওয়া কাজকর্ম ফেলে রেখে ঘর ছাড়তে বাধ্য হই। এ অভ্যাস আমাদের নিত্যদিনের। সিডর বা আইলার মতো ঘূর্ণিঝড় যদি আবার কখনও আসে তবে এখানকার আমরা সবকটি পরিবার প্রথম অবস্থাতেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো। বর্ষা মওসুমে ঝড়ের আশঙ্কা সাধারণত একটু বেশি থাকে। সামনেই বর্ষা মওসুম। তাই সব সময় আতঙ্ক নিয়ে এখানে বসবাস করছি। সরকারি এতো জমি থাকতে কেন আমাদের এই নদী পাড়ে থাকার স্থান দিয়েছে এ প্রশ্নের জবাব আজও আমি খুঁজে পাইনি। তবে স্যার, গরিবের জান মালের জন্য কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই এটাই সত্য।

বেড়িবাঁধের বাইরে নদীর তীরে কেন আবাসন নির্মাণ করা হলো এ প্রশ্নের জাবাবে স্থানীয় বুড়ামজুমদার ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান রেজাউল করিম সুমন বলেন, বেড়িবাঁধের ভিতরে অনেক ফাঁকা জমি থাকতেও কেন এই আবাসন নদীর তীরে নির্মাণ করা হয়েছে এ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। কারণ আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরে এই আবাসন নির্মাণ হয়নি এই আবাসন নির্মাণ করা হয়েছে সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল হায়দার বারেক মিয়ার সময়ে। তাই এ প্রশ্নের জবাব তিনিই যথাযথভাবে দিতে পারবেন। তিনি বলেন, আবাসনের এ দুরবস্থা আমি নিজ চোখে দেখে ৪০ দিন কর্মসূচির আওতায় উত্তর-পশ্চিম পাশে নদীর পাড় দিয়ে একটি বেড়িবাঁধ দিয়েছিলাম, কিন্তু বালু মাটির জন্য পানির তোড়ে এই বাঁধটি বেশিদিন টিকে নাই। শুধু সিডর নয় সিডরের একশত ভাগের একভাগ শক্তিশালী বন্যাও যদি হয় তবে এই ৬০ ঘরের আবাসন মুহূর্তে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এতে কোনো সন্দেহ নাই।

কেন নদী তীরে এই আবাসন নির্মাণ করার স্থান নির্বাচন করা হলো এ ব্যাপারে সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল হায়দার বারেক মিয়া বলেন, আমি চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময় এই আবাসন নির্মাণ করা হলেও এর স্থান নির্বাচন করার জন্য তৎকালীন সময়ে বেতাগী উপজেলা পরিষদের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তারাই এই আবাসন নির্মাণ করার স্থান নির্বাচন করেছেন। এতে আমার কোনো হাত ছিল না। আবাসনের প্রত্যেকটি ঘরের সিলিং এবং ফোর পাকা থাকার কথা কিন্তু অধিকাংশ ঘরে তা নেই কেন, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা শুধু ঠিকাদারই বলতে পারবে। তবে এটুকু আমি বলতে পারি এই আবাসন তৈরিতে ঠিকাদার যে কাজ করেছে তা অত্যন্ত নি¤œমানের। এই নি¤œমানের কাজ দেখে আপনি তাকে কেন সাবধান করেননি, এর জবাবে তিনি বলেন, আমি বহুবার তাকে বলেছি কাজ ভালো করার জন্য কিন্তু সে তা না করে কাজ অসমাপ্ত রেখে কিভাবে বিল তুলে নিয়ে চলে গেল তা আমি জানি না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি এ প্রতিবেদকে বলেন, এই আবাসন নির্মাণে যে টাকা ব্যয় করার কথা তার অর্ধেকটাই সাবেক চেয়ারম্যান ও ঠিকাদারের পকেটে। তাই বুঝতেই পারছেন এখানে ভালো কাজ হবে কিভাবে?

এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক আব্দুল ওয়াহাব ভূঞা বলেন, আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে এ আবাসন প্রকল্প ও ব্যারাক হাউজগুলোর নির্মাণ করার বাইরে থেকে পুনরায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার ব্যাবস্থা করা হবে।

বিষয়: বিবিধ

২৬৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File