যেভাবে শহিদুলকে ফ্রেন্ডলি ফায়ার করলো পুলিশ
লিখেছেন লিখেছেন আবু নাইম ০৬ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:২১:৫৩ দুপুর
একেই আল্লার মাইর। দেখুন ঘটনা কিমন করে উল্টে যাচ্ছে।
[url href="http://www.rtnn.net//newsdetail/detail/1/1/61669#.UV-2JDdBmMo" target="_blank"]Click this link[/url
নিজস্ব প্রতিবেদক, আরটিএনএন
ঢাকা: ‘গুলি করার আগে শহিদুল ইসলামকে পুলিশ বুট দিয়ে লাথি মারে। রাইফেলের বাঁট দিয়ে পেটায়। পরে বুকের বাম পাশে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে।’
শুক্রবার বাদ আছর রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে মাদ্রাসা ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত সরকারদলীয় কর্মী শহিদুলকে গুলি করার দৃশ্য এভাবেই জানালেন মনির খান।
মনির কামরাঙ্গীরচরের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে এসেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার সামনেই পুলিশ শহিদুল ইসলামকে মারধর করে গুলি করেছে। শহিদুলকে বাঁচাতে গেলে পুলিশ আমাকেও গুলি করে।’
পুলিশের গুলিতে নিহত শহিদুল ইসলাম হাওলাদার (৩৫) পেশায় ছিলেন ফল বিক্রেতা। তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার হজপাড়া গ্রামে। তিনি পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন কামরাঙ্গীরচর থানাধীন খলিফা ঘাটের মান্নান পাটোয়ারীর বাড়িতে।
নিহত শহিদুলের বাবা আফসার হাওলাদার জানান, তার পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে শহিদুল ছিল সবার বড়। ফল বিক্রি করে সে সংসার চালাতো। মাঝে-মধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী ফেরদৌসের সঙ্গে ঘোরা-ঘুরি করতো। শুক্রবার দুপুরে ফেরদৌস তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। বিকালে তিনি শুনতে পান- তার ছেলে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে।
রেন।
এরপর ইশহিদুলের স্ত্রী কামরুন্নাহার ও ৭ বছর বয়সী ছেলে শাহরিয়ার, বোন শিমুকে নিয়েঢামেক হাসপাতালের মর্গে ছুটে আসেন আফসার। তারা মর্গে শহিদুলের লাশ পড়ে থাকতে দেখেই বিলাপ করতে শুরু করেন।
কামরুন্নাহার বিলাপ করছিলেন আর বলছিলেন, ‘কেন তার সর্বনাশ করা হয়েছে। কী অপরাধে গুলি করা হলো আমার স্বামীকে। আমি কাছে বিচার চাইবো। কে আমার সংসার দেখবো।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিশের গুলিত আহত হয়ে কামরাঙ্গীচর থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন, ফজলু বাবুর্চি ও পথচারী নূরুল ইসলাম (২২) নামে তিন ব্যক্তিও চিকিত্সা নিতে ঢামেক হাসপাতালে আসেন।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম আহতদের দেখতে ঢামেক হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ ইকবাল প্রতিমন্ত্রীকে জানান, ‘ছাত্রলীগের পরিচয় দেয়ার পরও পুলিশ আমাকে গুলি করেছে। শহিদুল ইসলামকে ধরে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে।’
জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে পুলিশের গুলি চালাতে হলো। পুলিশের গুলিতে শহিদুল ইসলাম মারা গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত
গুলিবিদ্ধ সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার বাদ আছর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মো. সোলেমান শেখের নেতৃত্বে কামরাঙ্গীরচর থানা সংলগ্ন চৌরাস্তায় প্রতিবাদ সমাবেশ চলছিল।
একই সময়ে আছর নামাজ শেষে সারা দেশে লংমার্চে বাধা দেয়ার প্রতিবাদে মিছিল করার প্রস্তুতি নেয় থানা সংলগ্ন জামিয়া নূরীয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা।
এ সময় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা ‘ধর ধর’ চিৎকার করে মাদ্রাসার দিকে দৌড়ে গিয়ে মাদরাসা ছাত্রদের ওপর আক্রমণ চালায় । এতে ৩০জন মাদরাসা ছাত্র আহত হলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়।
পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে মাদ্রাসা ছাত্রদের হটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে হঠাৱ করেই এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তে শুরু করে।
এক পর্যায়ে পুলিশ সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের ওপরই গুলি চালাতে থাকে। এ সময় ঘটনাস্থলেই শহিদুল ইসলাম হাওলাদার মারা যান। আরো কয়েকজন আহত হন।
পুলিশের হঠাৰ ‘ফ্রেন্ডলি ফায়ার’ দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে দ্রুত ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে থাকে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা।
গুলি করে আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হওয়ার ব্যাপারে পুলিশের লালবাগ জোনের ডিসি হারুন উর রশীদ বলেন, ‘দুই পক্ষের মারমুখী অবস্থানে পুলিশ গুলি না চালালে শ’শ’ লোক মারা পড়তো। কিন্তু পুলিশ তো ফাঁকা গুলি করেছে। এতে প্রাণহানি ঘটলো কিভাবে, তা তদন্ত করা হচ্ছে।’
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন