কেমন আছে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার..

লিখেছেন লিখেছেন প্রশান্ত আত্মা ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১২:১০:১৩ দুপুর

যুদ্ধক্ষেত্রে অতুলনীয় সাহস ও আত্মত্যাগের নিদর্শন স্থাপনকারী যোদ্ধাদের বীরশ্রেষ্ঠ বলা হয়।স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল কৃতিত্ব তাদেরই।কিন্তু যাদের আত্মত্যাগে দেশ স্বাধীন হয়েছে আসুন একটু দেখে নেই তাদের পরিবার কেমন আছে..

বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল।তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে নিহত হন।বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের মা মালেকা বেগম শারীরিক অসুস্থতা আর অভাব অনটনে খুবই কষ্টে জীবন যাপন করছেন।বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান একটা চাকরীর জন্য হন্য হয়ে ঘুরছে!বর্তমানে পরিবারে উপার্জন করার মতো কেউ নেই।কালের কণ্ঠ পত্রিকায় একটা রিপোর্টে দেখলাম বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া মালেকা বেগম (৭৬) এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "আমি ভালো নেই। শাসকষ্ট, গ্যাস্ট্রিক, প্রেশারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। প্রতি মাসে ওষুধ কিনতে লাগে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। কিন্তু সরকার থেকে আমাকে দেওয়া হয় মাত্র ৯ হাজার টাকা। তাও আবার অর্ধেক দিতে হয় কামালের পুত্রবধূকে। শুধু ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে এখনো বেঁচে আছি গর্বিত মা হয়ে।"

বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর।তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হন।অসহনীয় দারিদ্রের মধ্যে বসবাস করছেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের ভাই ও অন্যান্য স্বজনরা।তার মায়ের স্বপ্ন ছিল তার নামে এলাকায় একটা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার।কিন্তু সরকারের কাছে বারবার ধর্না দিয়েও সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি।তার একমাত্র ভাইয়ের সামান্য আয়েই চলছে পরিবারটি।

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন।বেশ কিছুদিন আগে পত্রিকায় পড়েছিলাম রুহুল আমিনের ছোট ছেলে শওকত আলী পাটোয়ারীর দিন কাটছে চরম অবহেলা আর দারিদ্র্যের মধ্যে।বাবা বীরশ্রেষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও কখনো চায়ের দোকানের পানি টেনে, কখনোবা করাত কলে কাজ করে খুবই আর্থিক অনটনের মধ্যে জীবন কাটছে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের ছেলের।চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্টেডিয়ামটি বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামে থাকলেও বর্তমান সরকার নাম পালটিয়ে আওয়ামীলীগ নেতা মরহুম জহুর আহমেদ চৌধুরীর নামে নামকরন করে!শুধু তাই নয় বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের কাছে নির্মিত স্টেডিয়ামটির নামকরণ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামে করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত শেখ কামালের নামে নামকরণ করা হয়!

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ।ভাল নেই তার পরিবারও।ডয়েচে ভেলের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তার একমাত্র ছেলের ভাষায়,"বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সহায়তায় সরকার শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়েছে, কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি ৷"

বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ।তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে রাঙ্গামাটিতে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে নিহত হন।তার মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল তার ছেলের নামে তাদের উপজেলার নামকরণ করা। কিন্তু সে ইচ্ছা পূরণ হয়নি।মুন্সি আব্দুর রউফের ছেলে অটোরিকশা চালিয়ে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছে।তার পরিবার ছিল দরিদ্র।ছোটবেলায় মুন্সি আব্দুর রউফের বাবা মারা যায়। অভাবী মা মেয়ের বিয়েতে নতুন শাড়ির বন্দোবস্ত করতে পারেননি।মাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে মুন্সি আব্দুর রউফ, বলেছিলেন '' আমি বড় হয়ে যখন আয় করবো তখন অনেক নতুন শাড়ি কিনে দেব বুবুকে।'' কিন্তু তার আর ফেরা হয়নি শাড়িও কেনা হয়নি।দেশ স্বাধীন হলেও যে বুবুর জন্য মুন্সি আব্দুর রউফ শাড়ি কিনতে চেয়েছিলেন তার বংশশরেরা আজ স্থানীয় এক মিলে কাজ করে অতি কষ্টে জীবন কাটাচ্ছে।

স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগের নিদর্শন স্থাপনকারী বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার খুব কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করলেও মুক্তিযুদ্ধ তথা চেতনা ব্যাবসায়িরা কিন্তু খুব ভাল আছে।জাফর ইকবাল,শাহরিয়ার কবির আর মুনতাসির মামুনেরা যুদ্ধের সময় তাগড়া জোয়ান হওয়া সত্ত্বেও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি!জাফর ইকবাল ছারছিনা পীর সাহেবের দরবারে বসে তাবারক খেয়েছে,শাহরিয়ার কবির '৭১ এ পাকবাহিনীকে মুরগী সাপ্লাই দিত।মুনতাসির মামুন যুদ্ধে যাওয়ার বয়স থাকা সত্ত্বেও অংশ গ্রহণ করেনি।কিন্তু এরাই আজ স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যশ,খ্যাতি আর সম্মাননা পাচ্ছে আর বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারেরা আর্থিক অনটনে পড়ে ধুকে ধুকে মরছে!এই চেতনা ব্যাবসায়িরা যুগে যুগে থাকবেই।বিপদ দেখলে খাটের তলায় লুকাবে আর বিপদ কেটে গেলে চেতনা বাস্তবায়ন করবে।এই চেতনা ব্যাবসায়িদের চরিত্র সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়'

"ওরা মরিবেনা, যুদ্ব বাধিঁলে ওরা লুকাইবে কচুবনে,

দন্তনখরহীন ওরা তবু কোলাহল করে অঙ্গনে।"


কাল ১৬ই ডিসেম্বর।সরকারী টাকায় আর আওয়ামীলীগ ছাত্রলীগের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি গ্রামে পাড়া মহল্লায় বিরিয়ানি রান্নার ধুম পড়ে যাবে!বিরিয়ানি টাকার একটা বড় অংশ দলীয় নেতাকর্মীদের পকেটে যাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা!হয়ত কয়েক প্যাকেট বিরিয়ানি এসব বীরশ্রেষ্ঠদের ঘরেও পৌঁছাবে।বছরে একটা দিন তাদের খবর না নিলে চেতনা বাস্তবায়ন হবে কি করে!! কিন্তু বাকি দিনগুলিতে তাদের খবর আর কেউ নিবেনা!শুরু হবে স্বাধীন দেশে তাদের বেচে থাকার সংগ্রাম

স্বাধীনতা আমার জন্মগত অধিকার।স্বাধীনতাকে ভালবাসি।কিন্তু ঘৃণা করি ঐসব ভণ্ডদের যারা এই মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটছে... যারা এই মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে নিজের আখের গোছানোতে ব্যাস্ত.. যারা এই মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত...যারা এই মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে দেশকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে...

-- লিখাটি লেখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের রিপোর্টের সহায়তা নেওয়া হয়েছে।

বিষয়: বিবিধ

১৪২৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

294522
১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:১৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
বিরশ্রেষ্ঠ মুস্তাফা কামাল এর পিতার সাথে একবার দেখা হয়েছিল বাসে প্রায় ১৫ বছর আগে। তিনি দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক ছিলেন। চট্টগ্রাম ক্যান্টমমেন্ট এর ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টার থেকে বার্ষিক হাজিরা দিয়ে তিনি তখন বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাস ষ্টেশনে আসছিলেন। তার কাছে শুনেছিলাম তার পেনশন ছাড়া আর বিশেষ কোন আয় তার পরিবারের নাই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File