সম্রাট হুমায়ূনের মানবতাবোধ ও চরিত্রের দৃঢ়তা

লিখেছেন লিখেছেন প্রশান্ত আত্মা ২৯ মে, ২০১৪, ০৩:১৬:৪৯ দুপুর



সম্রাট বাবরের পুত্র সম্রাট হুমায়ূন একবার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে খরস্রোতা নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন।ফলে তার প্রান বাঁচানোই দায় হয়ে পড়েছিল।তখন এক ভিস্তিওয়ালা তাকে সাঁতরে পাড়ে উঠতে সাহায্য করেছিল।হুমায়ূন বলেছিলেন,’আমি যদি দিল্লীর সিংহাসন পায় তবে তুমি দেখা করবে,আমি তাই উপহার দেব যা তুমি চাইবে।‘যখন হুমায়ূন দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করলেন সে সময় এক ছেঁড়া ময়লা জামা পরিহিত কাঁধে ছাগল-চামড়ার ভিস্তি নিয়ে ভিস্তিওয়ালা হুমায়ুনের ফটক প্রহরীকে প্রস্তাব করলেন ‘আমায় বাদশাহের কাছে যেতে দাও’।প্রহরী রাগান্বিত হয়ে তাকে গুপ্তচর বা পাগল মনে করে আটকে রেখে বাদশাহকে জানাতেই হুমায়ূন বললেন তাকে খুব সম্মানজনকভাবে আমার কাছে নিয়ে এস।‘ভিস্তিওয়ালা হুমায়ূনের রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করতেই হুমায়ূন ছুটে গিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন,’আমি আপনার দ্বারা উপকৃত।বলুন আপনি কি চান?আমি ইনশা’আল্লাহ বিনা দ্বিধায় আপনাকে তাই দিব’ভিস্তিওয়ালা বললেন,’আমি চাই তোমাকে সরিয়ে সিংহাসনে বসতে’।সমস্ত সভাসদ অবাক।হুমায়ূন মাথার মুকুট খুলে ভিস্তিওয়ালার মাথায় পড়িয়ে দিয়ে তাকে সিংহাসনে বসিয়ে সভাসদকে জানিয়ে দিলেন,’আজ থেকে ইনিই বাদশাহ।আমি এর নগণ্য খাদেম’।গোটা দিল্লীতে তোলপাড়।হুমায়ূন বহুভাবে জিজ্ঞাসিত হলেন কেন তিনি এরকম করলেন?তিনি উত্তর দিলেন,’পবিত্র কোরআনে আছে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা অবৈধ।আমি তো ডুবে মরেই যেতাম,তার উপকারে তিনি যা চাইবেন তাই বলে স্বীকার করেছিলাম’।যাই হোক এক রাত্রি যাপনের পর মহামান্য ভিস্তিওয়ালা হুমায়ুনকে আলিঙ্গন করে তার মাথায় আবার মুকুট পড়িয়ে তাকে সিংহাসনে বসিয়ে হাত তোলে দোয়া ও করমর্দন করে বলে গেলেন,’আমি বড় পুরষ্কার পেয়েছি,তা হচ্ছে আপনার মানবতা ও চরিত্রের দৃঢ়তা’।

আর একবার বিধবা রানী কর্ণবতী তাঁর শিশুপুত্রকে নিয়ে রাজ্য সামলাতে পারছিলেন না।ঠিক সে সময় তাকে আক্রমণ করার প্রস্তুতি চলে।তিনি তখন কয়েক গাছি সুতার বৃত্তাকার যাকে রাখী বলা হয়,পাঠিয়ে হুমায়ূনকে লিখেছিলেন,’আমি আপনাকে ভাই হিসাবে এ রাখী পাঠালাম,আপনি এটা পরবেন এবং আমাকে বোন হিসাবে এবং আমার শিশুপুত্রকে ভাগ্নে হিসাবে সসৈন্য এসে রক্ষা করবেন’।হিন্দু রমণীর সে সুতা হুমায়ূন সজল নয়নে হাতে পরলেন এবং স্বয়ং একদল সৈন্য নিয়ে হিন্দু বোন,ভাগ্নে ও তাদের রাজ্য রক্ষা করতে।একটা যুদ্ধ যাত্রায় লাখ লাখ টাকা খরচ কিন্তু তা অল্প মূল্যের সূতার চেয়েও কম দাম মনে করে দীর্ঘদিন পর পৌঁছালেন সে বোনের রাজ্যে।কিন্তু তাঁর পৌঁছাবার পূর্বেই রানী ভয়ে ভীত হয়ে বিষপান করে দেহত্যাগ করেন।(রানী হয়ত ভাবতেই পারেনি মুসলিম শাসক সম্রাট হুমায়ূন হিন্দু বোনের ডাকে সসৈন্য তাকে রক্ষা করতে হাজির হবেন।)।হুমায়ূন সে সংবাদে এত কেঁদেছিলেন যে হঠাৎ কেহ দেখলে অবাক না হয়ে পারত না।একজন প্রাপ্তবয়স্ক বীর বাদশাহ তাঁর পাতান বোনের জন্য এভাবে শিশুর মত কাঁদতে পারেন।।

-- ইতিহাসবিদ গোলাম আহমদ মোর্তজার ‘চেপে রাখা ইতিহাস’ বই থেকে সংগৃহীত



ইতিহাসবিদ গোলাম আহমদ মোর্তজার ‘চেপে রাখা ইতিহাস’ একটা অসাধারণ বই।সত্য ইতিহাসকে চাপিয়ে রেখে ভারতবর্ষের ইতিহাসকে যে কত বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে তা জানতে পারবেন এই বইটি পড়লে।

বইটির পিডিএফ ডাউনলোড লিংক

(সরাসরি ডাউনলোড না হলে 'Follow Link' এ ক্লিক করুণ)

বিষয়: বিবিধ

১৬৪০ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

227938
২৯ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:৩২
মুজিব সেনা লিখেছেন : অসাধারন লেখাটির জন্য ধন্যবাদ। Good Luck Good Luck
227941
২৯ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৬
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : আসলেই। মুসলিম শাসকদের কেবল লোভী, অত্যাচারী, লম্পট হিসেবেই দেখানো হয়। প্রকৃত ইতিহাস আজ হারিয়েই গেছে!
২৯ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৩
174793
প্রশান্ত আত্মা লিখেছেন : আমরা সঠিক ইতিহাস জানিনা,জানার চেষ্টাও কম করি।মুসলিমরাই মূলত মহাকালের মহানায়ক
২৯ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:০৯
174830
আহ জীবন লিখেছেন : লিংকটার জন্য অনেক ধন্যবাদ @প্রশান্ত আত্মা
227949
২৯ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৩
শুভ্র আহমেদ লিখেছেন : ভিস্তিওয়ালা নিজের ইচ্ছায় সিংহাসন ছাড়েন নাই। ভিস্তিওয়ালাকে হুমায়ূন বলেছিলেন একদিনের জন্যে হলেও তোমাকে আমার সিংহাসনে বসাব। তাদের মাঝে এক প্রকার চুক্তি হয়েছিল।

কিন্তু, ভিস্তিওয়ালা যখন প্রাসাদে পৌঁছান। তখন আধা বেলা পাড় হয়ে যায়। আর তখন সন্ধা পর্যন্ত ভিস্তিওয়ালাকে সিংহাসনে বসান। ভিস্তিওয়ালা অনেক মূল্যবান জিনিস নিয়ে যান। কিন্তু, হুমায়ূনের ভাই কামরান মির্জা তা লুট করে রেখে দেন।

বাদশাহ হুমায়ূন ভারত ইতিহাসের এক উজ্জলময় নক্ষত্র। তিনি দয়ার এক মডেল। বাদশাহ হুমায়ূন ছিলেন অলস প্রকৃতির। এটাই তার জীবনের কষ্টের অন্যতম কারন। আর দয়া ক্ষমতা তার সবচেয়ে বড় দূর্বল দিক।

সুন্দর এক মানুষ।
২৯ মে ২০১৪ বিকাল ০৪:০১
174801
প্রশান্ত আত্মা লিখেছেন : ইতিহাসবিদ গোলাম আহমদ মোর্তজার বইয়ে হুবুহু এটাই উল্লেখ করা।এ বিষয়ে আরও জেনে বলতে হবে।অন্য কোন বইয়ের রেফারেন্স থাকলে দিয়েন।

ধন্যবাদ
227987
২৯ মে ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৯
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে লিখেছেন : সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : আসলেই। মুসলিম শাসকদের কেবল লোভী, অত্যাচারী, লম্পট হিসেবেই দেখানো হয়। প্রকৃত ইতিহাস আজ হারিয়েই গেছে!

সহমত।
228039
২৯ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:৫০
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : ধন্যবাদ
228077
২৯ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪১
সিকদারর লিখেছেন : আস্-সালামু-আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ ।বইটি আমার কাছে আছে । তারপরও আপনার দেওয়া বইটি নামিয়ে নিব।
মোঘলরা এই ভাবে শাসন করেছিল বলেই চারশ বছর রাজত্ব করেছিল।
228090
২৯ মে ২০১৪ রাত ০৮:২৭
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ খুব ভালো লাগলো লিখাটি
228191
৩০ মে ২০১৪ রাত ০১:২৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : হুমায়ুন যখন নিজাম ভিস্তি এবং কর্ণাবতিকে সহায়তা করেছিলেন তখন তিনি নিজেই ভয়ংকর বিপদের মধ্যে ছিলেন। অনেক ঐতিহাসিক যুক্তিগত দৃষ্টিতে তার সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে হুমায়ুন অবশ্যই সঠিক কাজটি করেছিলেন।
নিজাম কোন কিছু লুঠ করেছিলেন বলে জানা যায়না। হুমায়ুন যখন সকলকে নিজামকে বাদশাহ হিসেবে সন্মান জানাতে বলেন মির্যা কামরান তা অস্বিকার করেন। এই সল্প সময়েই নিজাম কিন্তু তার নামে একটি মুদ্রা চালু করেছিলেন বলে জানা যায়। তার সিংহাসনের মেয়াদ আবুল ফজল এর মতে আধাদিন এবং গুলবদন বেগমের মতে দুই দিন। গুলবদন বেগমের "হুমায়ুন নামা" এর বিবরন টাই অধিক গ্রহনযোগ্য।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File