নাইজেরিয়ার 'বোকো হারামের' সশস্ত্র হয়ে উঠার কাহিনী..
লিখেছেন লিখেছেন প্রশান্ত আত্মা ২২ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:৪৫:২২ রাত
::বোকো হারাম::
নামটা শুনে নিশ্চয় ভয় পেয়ে গেছেন!চোখের সামনে ভেসে উঠছে নাইজেরিয়ার এক নৃশংস ইসলামী জঙ্গি সংগঠনের কথা!হ্যাঁ এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক যদি আপনি মিডিয়ার সব খবর ঢালাওভাবে বিশ্বাস করেন।ম্যালকম-এক্স মালিক শাহবাজ এর একটা উক্তি মনে পড়ে গেল,"আপনি যদি সতর্ক না থাকেন তাহলে পত্রিকাগুলো আপনাকে নিপীড়িত-অত্যাচারিত মানুষদেরকে ঘৃণা করতে শেখাবে এবং যারা অত্যাচারী-নিপীড়নকারী তাদের প্রতি ভালোবাসা জাগাবে।"নাইজেরিয়ার ইদানীং সব ঘটনার সাথে বোকো হারামকে জড়িত করে খবর প্রচার করা হচ্ছে।সত্যি কথা বলতে কি আমি মিডিয়ার কোন খবরই যাচাই-বাছাই না করে ঢালাওভাবে বিশ্বাস করিনা।বোকো হারাম সম্পর্কে মিডিয়ার হাজার হাজার রিপোর্টের ভিড়ে একটা পজিটিভ খবরও নাই।বোকো হারাম সম্পর্কে অনেক ঘাটাঘাটি করে যে সত্যটা জানতে পেরেছি সেটাই এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি...
নাইজেরিয়া আফ্রিকা মহাদেশের একটা গুরুত্বপূর্ণ দেশ। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১৪ কোটি।এখানে প্রায় ৫০ ভাগ মানুষ খ্রিস্টান আর মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ৪৮ ভাগ। নাইজেরিয়ায় ইসলাম প্রবেশ করেছিল খ্রিস্টীয় নবম শতকে।বর্তমানে ওখানে রাষ্ট্রক্ষমতা খ্রিস্টানদের আয়ত্তে।নাইজেরিয়া আফ্রিকার বৃহত্তম তেল রফতানিকারক দেশ হওয়া সত্ত্বেও ক্ষুধা,দারিদ্রতা,বেকারত্ব তাদের নিত্য সঙ্গী।নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট গুডলাক জনাথান যিনি একজন খ্রিস্টান আর তেলের স্বার্থে পশ্চিমাদের একজন প্রিয়পাত্র।
'বোকো হারাম' শব্দটার সাধারণ অর্থ দাড়ায় পশ্চিমা শিক্ষা বর্জনীয়।ব্যাপক অর্থে এই সংগঠনটি বিশ্বাস করে পশ্চিমা কৃষ্টি-কালচার,জীবনব্যাবস্থা মানুষের জন্য কল্যাণকর নয়।মানবতার মুক্তির একমাত্র পথ হল ইসলাম।'বোকো হারাম' প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে।এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নাইজেরিয়ার ধর্মীয় নেতা মোহাম্মদ ইউসুফ।প্রতিষ্ঠার পর 'বোকো হারাম' কেবল একটা দাওয়াতি সংগঠন ছিল।কিন্তু ইসলামী সংগঠন বলে কথা!!সারা বিশ্বের ইসলামী আন্দোলনের মত তাদের উপরও চলত রাষ্ট্রযন্ত্রের নিপীড়ন।কিন্তু ২০০৯ সালে বোকো হারামের প্রতিষ্ঠাতা তাদের প্রিয় নেতা মোহাম্মদ ইউসুফ নিরাপত্তাবাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় তাদের হাতে নৃশংসভাবে নিহত হন।তাছাড়াও বোকো হারামের শতাধিক কর্মী এসময় হত্যা করা হয়।এই ঘটনার পর বোকো হারামের সদস্যরা সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করে।
বোকো হারামের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ইউসুফ
এবার আসুন সংগঠনটির নামে যেসব নৃশংস কর্মকাণ্ডের কথা বলা হচ্ছে এতে বোকো হারামের ভূমিকা কতটুকু...
বোকো হারামের সাথে বিভিন্ন সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ বহু হতাহত হয়েছে।তারা থানা ও বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যালয়ে হামলা করেছে। তবে মসজিদ ও গির্জায় হামলা,পাবলিক প্লেসে হামলার যে অভিযোগগুলি আনা হচ্ছে সেগুলি প্রশ্নবিদ্ধ।গত বছর বোকো হারাম অধ্যুষিত এক এলাকায় চার্চে হামলার ঘটনায় বোকো হারামকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।পরে দেখা গেল আগুন দিয়েছিল লিন্ডা যোসেফ নামের এক ক্যাথলিক।বয়ফ্রেন্ডের প্রতারণার শিকার হয়ে সে ওই কাজ করেছিল।এছাড়াও আরেক ঘটনায় প্রেসিডেন্ট জোনাথন গুডলাকের এলাকায় এক খ্রিস্টান ধরা পড়ে আগুন দেয়ার অভিযোগে অথচ এক্ষেত্রেও দোষ দেওয়া হয়েছিল বোকো হারামকে!সম্প্রতি নাইজেরিয়ায় মসজিদে নামাজরত মুসুল্লিদের উপর হামলার ঘটনা বাড়ছে।গতবছর এক মসজিদে হামলায় ৪৪ জন মুসল্লি নিহত হয়।কয়েকদিন আগেও এক মসজিদে হামলায় ২০ মুসল্লি নিহত হয়।এছাড়াও প্রতিনিয়ত মসজিদে হামলা হচ্ছে যার দায়ভার হাস্যকরভাবে বোকো হারামের উপর পড়ছে যেমনভাবে হেফাজতে ইসলামের নামে মিডিয়া ঢালাওভাবে প্রচার করেছিল যে তারা ৫ই মে কোরআন পুড়িয়েছিল।বোকো হারাম একটা ইসলামী সংগঠন হয়ে মসজিদে কেন হামলা করবে!!হেফাজতে ইসলামের পক্ষে তো তবুও দু-একটা মিডিয়া ছিল কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বোকো হারামের পক্ষে নাইজেরিয়ার একটা মিডিয়াও নাই।সব মিডিয়ার নিয়ন্ত্রক খ্রিস্টানেরা তাই তারা যেভাবে ইচ্ছা মিথ্যা অপবাদ রটাচ্ছে।
এখন আপনি হয়ত বলবেন তাহলে নাইজেরিয়ার মসজিদে,পাবলিক প্লেসে হামলাগুলি কারা করছে।এই হামলাগুলি জন্য দায়ী উগ্র খ্রিস্টান সংগঠনগুলি যার পিছনে মদদ দিচ্ছে সরকার ও পশ্চিমা শক্তি।যারা নাইজেরিয়ার পার্শ্ববর্তী দেশ মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে মুসলিমদের হত্যার পর তাদের শরীর থেকে গোশত কেটে খেয়ে উল্লাস করেছে এই হামলাগুলি তারাই করছে।যারা মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শত শত মুসলিমকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারছে,মৃত লাশকে কেটে ছিন্নভিন্ন করছে এই হামলাগুলি তারাই করছে।মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখবেন নাইজেরিয়ার পাশেই ক্যামেরুন তার পাশেই মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র।ঐ ভূখণ্ড থেকে মুসলিমদের উচ্ছেদ করতে তারা আপ্রান চেষ্টা চালাচ্ছে।মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও সেখানে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে হিজাব।জঙ্গিবাদ দমনের নামে নাইজেরিয়ায় চলছে মুসলিমদের ঘরে ঘরে অভিযান,ঘটানো হয়েছে কয়েকদফা গণহত্যা।যেই গণহত্যার খবরগুলি খ্রিস্টানদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় আসেনা।
বোকো হারামের ব্যাপারে যেটুকু সত্য জেনেছি তাই এখানে বললাম।মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে মুসলিমরা সংখ্যালঘু,কিন্তু নাইজেরিয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ।আমার দৃষ্টিতে তাদের নেতা মোহাম্মদ ইউসুফ নিহত হবার পর বোকো হারাম ধৈর্য এবং বুদ্ধিমত্তা পরিচয় দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের কাজকে এগিয়ে নিয়ে গেলে সেটাই সবার জন্য কল্যাণকর হত।সশস্ত্র পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে তারা সাম্রাজ্যবাদীদের সহজ শিকারে পরিণত হয়েছে।আমাদের স্মরণে রাখা প্রয়োজন প্রতিপক্ষ সম্পদ, বুদ্ধি, প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক এগিয়ে।তারা সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানাতে পারে।তারা নিরীহ মানুষকে সন্ত্রাসী আর সন্ত্রাসীদের ভাল মানুষ বানাতে পারে।বোকো হারাম সশস্ত্র হওয়াই তাদের উপর ক্র্যাকডাউনটা আরও সহজ হয়ে গেল আর মিডিয়ার মিথ্যাচারও সব সীমা অতিক্রম করে মিথ্যা অপপ্রচার চালাতে লাগল।বোকো হারামের কর্মপন্থার সাথে ভিন্নতা থাকলেও তারা যে মিডিয়ার অপপ্রচারের শিকার এটা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।যাদের পক্ষে মিডিয়া নেই তাদের পক্ষে তো আমাদেরই মিডিয়ার ভুমিকায় অবতীর্ণ হওয়া উচিত সে যেই মত কিংবা পথেরই হোক না কেন।
বিষয়: বিবিধ
৩৪১১ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
৫ই মে, ঐ দিন হেফাজতের দখলে থাকা এলাকায় আল্লার গায়েব থেকে কোরানে আগুন লেগে গেল কিনা?
হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আগুন দিয়েছে সরকারদলীয় কাড্যাররাই।কারন আগুন দেওয়ার স্থানে হেফাজতে ইসলাম ছিলনা ঐ জায়গাটাতে আওয়ামী ক্যাডাররা ছিল। আমি নিজে সাক্ষী।
চীন আফ্রিকায় তাদের পণের নতুন বাজার খুঁজছে আর আমেরিকা (এবং তাদের ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীরা) চীনকে প্রতিহত করে African Black Gold (অর্থাৎ মূল্যবান খনিজ সম্পদ) তাদের বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর দ্বারা লুটপাটের জন্য নতুন সামরিক ফ্রন্ট খুলছে। এর সর্বশেষ খেলা হয়ে গেলো, তেল-সমৃদ্ধ দক্ষিণ সুদানকে সাফল্যজনকভাবে বৃহত্তর সুদান থেকে পৃথক করার মাধ্যমে ।
আপনার পোষ্টে পরিবেশিত তথ্যাদির কোন সূত্রের (মুসলিম বা অমুসলিম) উল্লেখ না থাকায় পোষ্টের গ্রহণযোগ্যতা ম্নান হয়ে গেছে । আপনি যে ধরণের কথা বলেছেন, এগুলো আমার কাছে এক ধরণের আর্মচেয়ার জার্নালিজমের মতো মনে হয়েছে অর্থাৎ বিশ্বের যে কোনো মুসলিম দেশে সংঘটিত সহিংসতাকে ঐ ধরণের গৎবাঁধা কথামালা দিয়ে সাজানো যায় বিশেষ করে খেলাঘর বাধঁতে এসেছি'র মন্তব্যে আপনি যখন বলেছেন, “পাকিস্তান, ইরাক, আফগানিস্তানের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। হামলা করছে বিরুধিপক্ষ আর নাম পড়ছে মুসলিমদের।” এ ধরণের blanket statement দিয়ে তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানো যায় না । পাকিস্তান ও ইরাকে শিয়া সুন্নীর সশস্ত্র বৈরতা একটি সুপরিচিত সত্য - সেখানে ইহুদী-খৃষ্টীয় ষড়যন্ত্র খোঁজার বিশেষ দরকার নেই । তবে হেফাজতের ব্যাপারে যা বলেছেন তা ঠিক আছে কারণ সেগুলোর প্রমাণাদি আমরা দেশীয় মিডিয়ায় পেয়েছি - বাংলাদেশের সেক্যুলার মিডিয়াগুলো-ও আওয়ামী লীগের পক্ষে নগ্নভাবে মিথ্যাচার করতে গিয়ে ধরা খেয়ে গেছে ।
বোকো হারামের কথা বলতে গিয়ে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে সংঘটিত সহিংসতার ছবি ব্যবহার করার প্রয়োজন ছিলো না - উল্লেখ-ই যথেষ্ট হয়েছে । অন্যথায় এটা অযাচিত সেনসেশন তৈরীর প্রচেষ্টা বলে মনে হতে পারে । পারলে নাইজেরিয়ায় সংঘটিত ঘটনাবলীর ছবি দেয়া উচিত ছিলো ।
যেমন, আল-জাজিরা প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, তারা পাশ্চাত্যে শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলছে না কিন্তু সমাজে ইসলামে হারাম-ঘোষিত দুর্নীতি, নেশাগ্রস্ততা, পতিতাবৃত্তি ইত্যাদির বিরুদ্ধে লড়ছে । কিন্তু এজন্য যে সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়া সঠিক নয় তা তো আপনার ভাষ্যে-ও চলে এসেছে - “আমার দৃষ্টিতে তাদের নেতা মোহাম্মদ ইউসুফ নিহত হবার পর বোকো হারাম ধৈর্য এবং বুদ্ধিমত্তা পরিচয় দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের কাজকে এগিয়ে নিয়ে গেলে সেটাই সবার জন্য কল্যাণকর হত। সশস্ত্র পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে তারা সাম্রাজ্যবাদীদের সহজ শিকারে পরিণত হয়েছে।”
পরে আপনি বললেন তারা অস্ত্র হাতে না নিলে এত অত্যাচারিত হতো না। কিন্তু আপনিই তো উপরে বলেছেন যে তারা যখন অস্ত্র হাতে নেইনি তখনো তাদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে। তাহলে আপনিও কি স্ববিরুধী?
তারা অত্যাচারিত হবে কিন্তু প্রতিবাদ করতে পারেব না, এইত?
আপনি এবং অনেকেই বলে যে মুসলমান অত্যাচার সহ্য করবে কিন্তু প্রতিবাদ করতে গেলে জালিমেরা সুযোগ নিবে। এখানে জালিমের সহানুভুতি কামনা করা হয় না?
মিডিয়া মুসলমানদের পক্ষে থাকলে তারা বিজয় অর্জন করবে এই ধারণা একেবারেই ভুল। মুসলমান তত দিন মার খাবে যত দিন সঠিক ভাবে আল্লাহর হুকুম পালন না করবে।
স হমত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন