একজন পথশিশুর সাথে কিছুক্ষণ...

লিখেছেন লিখেছেন প্রশান্ত আত্মা ০৫ মার্চ, ২০১৪, ১২:৪২:২৬ দুপুর

বেশ কিছুদিন আগের ঘটনা..ছোট ভাইকে এয়ারপোর্টে নিয়ে যাব।সে ছিল মামার বাসায়।আমি উত্তরা হাউসবিল্ডিংয়ের সামনে দাড়িয়ে তার জন্য ওয়েট করছিলাম।রাত তখন প্রায় ১২ টা বা একটা হবে।সে আসতে দেরী হওয়াই আমি হাউসবিল্ডিংয়ের বিপরীত পাশে গেলাম বেশ কয়েকজন ছিন্নমূল পথশিশুর সাথে আড্ডা দিতে।পিচ্ছি একটা ছেলে বয়স আর কত ৪ অথবা ৫ বছর হবে ।দেখলাম তার হাঁটুতে বড় ধরণের আঘাত।হাঁটুর প্রায় সব অংশের চামড়ায় ছিড়ে গেছে!জিজ্ঞাসা করলাম কীভাবে ব্যাথা পেয়েছ?সে বলল রাস্তা পার হওয়ার সময় একটা মাইক্রোসের আঘাতে সে রাস্তায় পড়ে এই ব্যাথা পায়।গাড়ির মালিক এই ছোট শিশুটাকে চিকিৎসা বা সান্ত্বনা তো দেয়ইনি উল্টো তাকে অনেক গালিগালাজ করেছে!!কিছু কিছু পয়সাওয়ালা লোকেরা আসলেই অমানুষ.. ছেলেটাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চাইলে সে অস্বীকৃতি জানায় সে বলে এম্নিতেই ঠিক হয়ে যাবে!আসলে জন্মের পর থেকেই হয়ত সমাজের তথাকথিত ভদ্রলোকদের অত্যাচার,অপমান পেতে পেতে তারা অভ্যস্ত হয়ে গেছে।জিজ্ঞাসা করলাম কিছু খাবে কিনা।সে বলল সে বিকালে খেয়েছিল আর খাবেনা তবে তাকে যেন টাকাটা দিয়ে দেয়!আমি টাকা দিতে গিয়েও দিতে পারলাম না।কারন আমার সাথে যতক্ষণ কথা বলছিল ততক্ষনই সে আর তার এক বন্ধু পলিথিনে জুতার পেস্টিং দিয়ে নেশা করছিল।আমি বুঝতে পারছিলাম এখন টাকা দিলে সে আবারও কোন নেশার দ্রব্য কিনে আনবে!জিজ্ঞাসা করলাম এই নেশা কর ক্যান?তার উত্তরটা ছিল এরকম সারাদিন অভুক্ত থাকে আবার রাস্তার পাশে গাড়ির হর্নের আওয়াজে ঘুমাতে হয় আর তার হাঁটুর ব্যাথাটাও অসহ্য তাই এই নেশা না করলে তার ঘুম আসবে না!আমিও আর বাঁধা দিলাম না!কেন বাঁধা দিব কীভাবে বাঁধা দিব!আমি তো তাকে হয়ত কয়েকটা উপদেশবানী শুনাতে পারব বড়জোর কিন্তু তাকে কি রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে তার জীবনটাকে নতুন করে সাজাতে পারব!পারব না! কারন সেই আর্থিক সামর্থ্য আমার নেই।নিজেকে ধিক্কার দিলাম..ততক্ষনে কথা বলতে বলতে নেশার ঘোরে ছেলেটাও ঘুমিয়ে পড়েছে আর অন্যদিকে ছোট ভাইও চলে এসেছে আর আমিও পা বাড়ালাম এয়ারপোর্টের দিকে..



রেল ষ্টেশন কিংবা বাস স্টপিজে দাঁড়ালে অনেক সময় দেখা যায় পথশিশুরা টাকা চাই এমনকি অনেকের পা ধরে থাকে দুইটা টাকার জন্য।তখনা অনেককেই দেখি তাদের লাথি মারতে কিংবা অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে!!আহারে!!মানুষ এতটা নির্দয় হয় কি করে।মানলাম এভাবে টাকা চাওয়াটা বিরক্তিকর কিন্তু সে তো পেটের তাগিতেই এমনটা করছে।জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম খাবারের জন্যই তো এমনটা করছে।আজ হয়ত আল্লাহ আমাকে আপনাকে সচ্ছল পরিবারে পাঠিয়েছেন কিন্তু এই ছেলেটা তো আমিও হতে পারতাম।ধিক্কার এসব মানুষরূপী নরপশুদের।এরা চোর অর্থ আত্মসাৎকারী।কারন, “আর তাদের সম্পদে গরীব ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে”।(সূরা যারিয়াত: ১৯)



ছবি কার্টেসিঃ ছিন্নমূল

বিষয়: বিবিধ

১৪৬৩ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

187147
০৫ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:১৮
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, জাজাকাল্লাহুল খাইরান, অনেক সুন্দর পোস্ট
০৫ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:১৪
138743
প্রশান্ত আত্মা লিখেছেন : ওয়াকাইকুম সালাম।কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।জাজাকাল্লাহুল খাইরান। Happy
187173
০৫ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:১৩
গেরিলা লিখেছেন : অনেক সুন্দর পোস্ট । ভালো লাগলো
০৫ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:১৫
138744
প্রশান্ত আত্মা লিখেছেন : ধন্যবাদ Good Luck
187315
০৫ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৮
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৬ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:৫২
139445
প্রশান্ত আত্মা লিখেছেন : আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ Good Luck
187597
০৬ মার্চ ২০১৪ রাত ০৩:০৫
সজল আহমেদ লিখেছেন : যাযাকাল্লাহু খাইরান।
০৬ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:৫২
139446
প্রশান্ত আত্মা লিখেছেন : যাযাকাল্লাহ Happy
187681
০৬ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:০৯
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ না নিলে ব্যাক্তিগত প্রচেষ্টায় এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য কতটুকু করা সম্ভব?
০৬ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:৫৮
139454
প্রশান্ত আত্মা লিখেছেন : দুর্নীতির সাগরে হাবুডুবু খাওয়া রাষ্ট্রের কর্তারা যদি এসব দেখত তাহলে হয়ত এ লিখাটাই লেখার প্রয়োজনই হতনা!আসলে আমি বলতে চাচ্ছি নিজ নিজ অবস্থান থেকে যদি চেষ্টা করি তবে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর অন্তত একজন কিংবা দুইজনও যদি এই করুণ অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি পায় সেটাই কম কিসে!রাষ্ট্রের দায়িত্ব রাষ্ট্র পালন করেনি কিন্তু আমারও তো কিছু দায়িত্ব আছে..

ধন্যবাদ..
০৭ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:৩৮
139635
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : সেটা অনেকেই করে ভাই, আমার পরিচিত মহলেই অনেকে করে, কিন্তু সেটা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File