যে দৃষ্টিহীন চোখ দৃষ্টির দিশা দেয়!
লিখেছেন লিখেছেন প্রশান্ত আত্মা ২৫ জুন, ২০১৩, ০২:২০:০৭ দুপুর
--আসসালামু (সালাম শেষ করতে পারলাম না)
--আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।কেমন আছেন ভাইয়া?
--ওয়ালাইকুম আস সালাম।আলহামদুলিল্লাহ তুমি কেমন আছ নোমান?
--আলহামদুলিল্লাহ্।
--তুমি সাথী হয়েছ জেনে খুব খুশী হলাম।
--জি ভাইয়া আমার অনেক দিনের স্বপ্ন।আমার বাসার সবাই ইসলামী আন্দোলনে অনেক এগিয়ে গেছে আমিই শুধু পিছিয়ে ছিলাম।
--আচ্ছা।কিন্তু সিলেবাসের বইগুলি মুখস্ত করলে কিভাবে?
--আমার বোনেরা পড়ে শুনাত পাশাপাশি ভাইয়ারাও প্রোগ্রামে আমাকে ইসলামী সাহিত্য পড়ে শুনাতেন।এভাবেই সিলেবাসের বইগুলি শেষ করেছি।
--কিন্তু শুনেছি তুমি নাকি অনেকগুলি বইও নোট করেছ?কিভাবে করলে?
--জি ভাইয়া চারটা বই নোট করেছি।ব্রেইলি পদ্ধতিতে চারটা বই নোট করেছি।
--আচ্ছা ভাইয়া তুমি ভবিষ্যতে কি হতে চাও?
--আমি ভবিষ্যতে Bcs ক্যাডার হতেচাই।প্রশাসনে কাজ করার আমার অনেক ইচ্ছা।
--নোমান আমার ত খুব খুশী লাগছে তোমার আগ্রহ ও সফলতা দেখে।তুমি ত আমার ছোট ভাইয়ের মত।আমার ছোট ভাই সাথী হয়েছে এটা ত আমার জন্য খুশীর সংবাদ।আমি তোমাকে একটা গিফট দিতে চাই তুমি কি গিফট চাও ভাইয়া?
--না না ভাইয়া।গিফট লাগবে না।আমার জন্য দোয়া করবেন যেন ইসলামের খেদমত করতে পারি।আপনাদের সবার দোয়ায় আমার জন্য সেরা গিফট।
--(মোবাইলে নোমানের সাথে কথা বলছিলাম।এত সুন্দর করে কথা বলে আমার এই ভাইটি!তার উত্তর শুনে ইসলামের জন্য তার আবেগ দেখে চোখেপানি আসার উপক্রম হল)ঠিক আছে নাইম।ভাল থেক।বাড়িতে আসলে দেখা হবে ইনশা’আল্লাহ।
--জি ভাইয়া।আপনিও ভাল থাকবেন। আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
-- ওয়ালাইকুম আস সালাম।
আবদুল্লাহ আল নোমান।জন্ম থেকেই অন্ধ।অন্ধ হলেও থেমে নেই তার পথ চলা।পরিবারের সবাই ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত।ছোটবেলা থেকেই ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের প্রতি ছিল তার অগাধ ভালবাসা।সংগঠনের কোন প্রোগ্রামই সে মিস করত না।নিজের মানোন্নয়নে ছিল তার অদম্য স্পৃহা।তাইত পরিবার এবং দায়িত্বশীল ভাইদের সহায়তার সাথী সিলেবাসের প্রায় সবগুলি বইও শেষ করে ফেলেছে।এমনকি ব্রেইলি পদ্ধতিতে সাথী সিলেবাসের চারটা বইও নোট করে ফেলেছে।
সাথী হওয়ার জন্য নিজের সাংগঠনিক মানকে আরও উন্নত করারজন্য সাথী শপথের জন্য সে ছিল ব্যাকুল।অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।সাথী হওয়ার কর্মশালায় যাওয়ার জন্য ডাক এল নোমানের।নোমান তো আনন্দে আত্মহারা!এত দিনের লালিত স্বপ্ন বুঝি তার পূরণ হতে চলল।
কর্মশালা চলছে।চলছে কোরআন আর হাদিসের বিষয়ভিত্তিক আয়াত মুখস্ত করার প্রতিযোগিতা।নোমানও পিছিয়ে নেই।তার ব্রেইলি পদ্ধতির কোরআন শরিফটা সবসময় তার সাথেই থাকে।
অবশেষে এল সেই সাথী শপথের সেই দিন।শ্রদ্ধেয় দায়িত্বশীল মুহতারাম মনির আহমেদ ভাই একে একে কর্মীদের কোরআন-হাদিসের জ্ঞান,আমলগত দিক ইত্যাদিবিষয় পর্যালোচনা করছেন।তিনি নোমানকে কোরআন তেলাওয়াত করতে বললেন।নোমান তার ব্রেইলি পদ্ধতির কোরআন শরিফটা হাতে নিয়ে খুবই দরদভরা কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত করতে শুরু করল।সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছে মহাগ্রন্থের অমিয় বাণী।এরপর মুহতারাম মনির আহমেদ ভাই তাকে বিভিন্ন ইসলামী বিষয়ে প্রশ্ন করতে লাগলেন।সবগুলি প্রশ্নের উত্তর খুব গোছানোভাবে দিতে থাকল নাইম।
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে মনির আহমেদ ভাই সবাইকে জিজ্ঞাসাকরল সবাই কি সাথী হতে চান?সবাই হ্যাঁসূচক উত্তর দিল।কিন্তু নোমান নিশ্চুপ।তার চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বয়ে যেতে লাগল।যে সাথী শপথ নেওয়ার জন্য সে এতদিন ব্যাকুল ছিল আজ তার চোখে কেন অশ্রুধারা!কারন নোমান শপথের প্রকৃত তাৎপর্য বুঝতে পেরেছিল।বুঝতে পেরেছিল এ শপথ মানে জান্নাতের বিনিময়ে নিজের জান ও মালকে খোদার রাহে অকাতরে বিলিয়ে দেওয়া।এ শপথের মানে নিজের নিজের সমস্ত সত্তাকে ইসলামের জন্য উৎসর্গ করা।অবশেষে নোমানকে সাথী শপথ পাঠ করালেন মুহতারাম মনির আহমেদ ভাই।অশ্রুসিক্ত নয়নে নোমান পাঠ করল—“ আমি নোমান,আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে সাক্ষী করে ওয়াদা করছি যে-আমি বাংলাদেশ ইসলামী ইসলামীছাত্রশিবিরের আদর্শ লক্ষ্য, কর্মসূচী ও কর্মপদ্ধতিরসাথে সম্পূর্ণরুপে একমত।এ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাতে আমি সম্ভাব্য সকল প্রকার সহযোগীতা করবো।আমি ইসলামের মৌ্লিক বিধি-বিধান সমূহ যথাযতভাবে পালন করব এবং আমার উপর অর্পিত আমানাত যথাযতভাবে রক্ষা করব।আল্লাহআমাকে এ ওয়াদা পালন করার তাওফিক দিন- আমীন”।শপথবাক্য পাঠ করার পর মুহতারাম মনির আহমেদ তাকে বুকে জড়িয়ে নেন।এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।কক্ষে নেমে আসে পিনপতন নিরবতা।সবার চোখে পানি কিন্তু চোখে-মুখে খোদার ধরায় তারই দ্বীন কায়েমের স্বপ্ন,ইসলামী হুকুমাতেরপূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের স্বপ্ন।
এখন নবম শ্রেণীতে পড়ে নোমান।তার ক্লাসে একমাত্র অন্ধ ছাত্র সে।জে এস সি পরীক্ষায় তার রেজাল্ট ছিল ৪.৭০।আপনি জেনে অবাক হবেন অন্ধ হওয়া সত্তেও ক্লাসের প্রায় ১১০ জন ছাত্রের মধ্যে সে প্রথম স্থান অধিকার করেছে।ক্লাসে সবার প্রিয় মুখ নোমান নিজেকে ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসাবে নিজেকে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে।তার মনে অনেক কষ্ট সে মিছিলে যেতে পারেনা বলে।তার চোখে মুখে একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন।তার সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে সে ছুটে চলছে সাইমুমের বেগে।দৃষ্টির প্রতিবন্ধকতা তাকে আটকাতে পারেনি পারবেওনা ইনশা’আল্লাহ।আপনার মোনাজাতে এই ভাইটির জন্য দোয়া করতে ভুলবেন না যেন।
ধন্য!ধন্য সে বাবা-মা যারা এমন প্রতিভার জন্ম দিয়েছেন।নোমানেরা দৃষ্টিহীন চোখে আমাদের দৃষ্টির সন্ধান দিবে।অন্ধকারাছন্ন মরভুমিতে দৃষ্টিহীন নোমানেরাই আমাদের জন্য প্রেরনার বাতিঘর হিসাবে কাজ করবে।
বিষয়: বিবিধ
২৬৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন