রাষ্ট্রপতির দিকে তাকিয়ে আছে দেশবাসী- কিন্তু তিনি এ কী করলেন?
লিখেছেন লিখেছেন ই জিনিয়াস ২০ নভেম্বর, ২০১৩, ০৮:৩২:৫৬ রাত
দেশের চলমান সঙ্কটে অবশেষে বিরোধী দলীয় নেত্রী রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের দ্বারস্থ হয়েছেন । ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে তিনি গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে রাষ্ট্রপতির কাছে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্দলীয় ব্যক্তির অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার দাবি জানান। পাশাপাশি তিনি এই দাবীসহ মোট আটদফার একটি লিখিত দাবি পেশ করেন রাষ্ট্রপতির কাছে। রাষ্ট্রপতি সংবিধান অনুসারে যতটুকু সম্ভব সাহায্য করার আশ্বাসও দিয়েছেন।
বিরোধী দলীয় নেত্রীর এই সাক্ষাৎকার রাজনৈতিক সঙ্কটের আকাশে দেখা দিয়েছে সামান্য আলোকচ্ছটা। সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রের কর্ণধার ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে রাষ্ট্রপতির উপর আস্থা রাখার চেষ্টা করছেন। তারা আশা পোষণ করছেন রাষ্ট্রপতি সঙ্কট উত্তরণে তার সাধ্য মোতাবেক করণীয় নির্ধারণ করবেন। কারণ তাদের বিশ্বাস একমাত্র তিনিই পারেন এই সঙ্কটে আলোর মুখ দেখাতে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার সীমাবদ্ধতায়। যা তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রীর কাছে প্রকাশ করেছেন সংবিধান অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব সহযোগিতার আশ্বাসের মাধ্যমে। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে আমরা দেখতে পাচ্ছি সংবিধান অনুযায়ী বিরোধী দলের দাবী পূর্ণ করার সাধ্য রাষ্ট্রপতির হাতে নেই। কারণ সংবিধান দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার কথাই বলা আছে। অপরদিকে বিরোধী দলের আপত্তি এই সংবিধানেই। আদালতের নির্দেশনায় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর তড়িঘড়ি করে সংসদ থেকে আইন করে এই ব্যবস্থাকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যদিও আদালতের নির্দেশনায় আরও দু’এক টার্ম তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা চলতে পারে বলে অভিমত প্রকাশ করা হয়েছিল। বিরোধীদলের দাবী, সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা হিসেবে সরকার আদালতের এই অভিমতকে পাশ কাটিয়ে আগে ভাগেই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে যাতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে এবং সে নির্বাচনে প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করা যায়। এছাড়া বিরোধী দলের আরও অভিযোগ আছে যে, ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংসদে আইন পাশ এবং সংবিধানে বিভিন্ন পরিবর্তন এনেছে। এমতবস্থায় তাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে যে, তারা দলীয় সরকারের অধীনে কিছুতেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। অপরদিকে নতুন করে সংবিধানে পরিবর্তন আনার সময়ও শেষ হয়ে গেছে। সুতরাং এখন যদি রাষ্ট্রপতিও সঙ্কট উত্তরণের জন্য সংবিধানের দোহাই দেন তাহলে ক্ষমতাসীন সরকার থেকে বেশি কিছু করতে পারবেন বলে মনে হয় না। এমতবস্থায় সামনে উপায় আছে দু’টি। প্রথমত, সংবিধান পরিবর্তন করা, যা আগেই বলেছি সময়োত্তীর্ণ হয়ে গেছে। আর দ্বিতীয় পথ হচ্ছে সংবিধানের বাইরে গিয়ে উভয়পক্ষের জন্য সন্তোষজনক কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কর্ণধার হিসেবে রাষ্ট্রপতিকে মনে রাখতে হবে যে, সংবিধান রক্ষাই বড় কথা নয়। সংবিধান রক্ষার থেকে বড় বিষয় হচ্ছে মানুষ বাঁচানো, জনগণের সম্পদের সুরক্ষা দেওয়া। চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট যদি এভাবে চলতেই থাকে তাহলে দেখা যাবে সংবিধান রক্ষা হচ্ছে বটে, কিন্তু পথে-ঘাটে মানুষ মারা পড়ছে, রাষ্ট্রে অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। রাষ্ট্রের চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ হিসেবে রাষ্ট্রপতিরও এ ব্যাপারে বড় দায় রয়েছে। সংবিধান রক্ষা করাই চূড়ান্ত কথা নয়, কারণ ‘সংবিধান মানুষের প্রয়োজনে, সংবিধানের প্রয়োজনে মানুষ নয়’-এই আপ্তবাক্যকে মাথায় রেখেই রাষ্ট্রপতি দেশের জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন এই আশাই মানুষ করছে।
এতটুকু লেখার পরেই খবর পেলাম রাষ্ট্রপতি সর্বদলীয় সরকার চালিয়ে যেতে অনুমতি দিয়েছেন। তা ছাড়া তার আর কীইবা করার আছে? অতএব জ্বালাও পোড়াও অবশ্যম্ভাবী। জেগে উঠছে হরতালের চাঁদ।
বিষয়: বিবিধ
১৩৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন