কূটনীতিকদের দৌঁড়-ঝাঁপ এবং আমাদের পরিণতি
লিখেছেন লিখেছেন ই জিনিয়াস ১৯ নভেম্বর, ২০১৩, ০২:১৫:০৬ রাত
বাংলাদেশের চলমান সঙ্কটে বিদেশী কূটনীতিক ও কর্তাব্যক্তিদের দৌঁড়-ঝাঁপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ নিয়ে যাদের স্বার্থ জড়িত সে দেশগুলোই এই দৌঁড় ঝাঁপে এগিয়ে আছে। চিন্তাশীল মহল অবশ্য তাদের এই দৌঁড়-ঝাঁপ, কর্মতৎপরতা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে বিদেশী কূটনীতিবিদদের নাক গলানোকে ভাল চোখে দেখছেন না। অনেক বুদ্ধিজীবীগণ মনে করছেন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এ অঞ্চলের মানুষের স্বাধীনতা আসলেও মনে প্রাণে এদেশের মানুষ আজও প্রকৃত স্বাধীনতা পায় নি। আর বাংলাদেশ ১৯৪৭ সালে ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তানের সাথে একীভূত এবং ১৯৭১ সালে আবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাসের এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করলেও বৈদেশিক গোলামীতে এখনও অন্যান্য যে কোন প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে আছে। তাদের অভিমত চাল চলনে, আচরণে অর্থাৎ শুধু চামড়া ছাড়া এদেশের মানুষের সব কিছুতেই বিদেশী প্রভুদের অনুসরণ-অনুকরণ করতে চায়। নিজেদের দৈন্যতা এবং শূন্যতার ফলে আজও আমরা সামান্য সমস্যা হলেই ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি জমাই, তাদের পরামর্শ, উপদেশ যাঁচি।
তবে ইদানীং বাংলাদেশ বিষয়ে কূটনৈতিক ব্যক্তিত্বদের দৌঁড়-ঝাঁপের মাত্রা সম্ভবতঃ সীমা অতিক্রম করেছে। প্রকাশ্যেই তারা আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বার্তা বলছে। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের রাশ টেনে ধরার মত যোগ্যতা আমাদের নেই বলেই তাদের পক্ষে এমনটা করা সম্ভব হচ্ছে। তাদের রাশ টেনে ধরার মত যোগ্যতা না থাকার কারণটাও আমাদের অজানা নয়। এটা জানা কথা যে, একটি সংসারের অভ্যন্তরের ঝগড়া-ঝাটিতে অপরে এসে উপদেশ দিতে পারে তখনই যখন তা আমরা নিজেরা সমাধান না করতে পারি। আমাদের দেশের বর্তমান সঙ্কট ঐ মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সমঝোতা, ছাড় দেওয়া ইত্যাদি আমাদের চরিত্র থেকে হারিয়ে গিয়ে কেউ হয়েছি ‘আয়রন লেডি’ আর কেউবা ‘আপসহীন নেত্রী’।
আমাদের মনে রাখা উচিত ভূ-কৌশলগত অবস্থান থেকে বাংলাদেশ এমন একটি স্থানে অবস্থিত যে বহু দেশেরই নজর এখন বাংলাদেশের দিকে। শুধু সামরিক দিক নয়, প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস হিসেবেও বাংলাদেশের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই এই এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে তাদের মধ্যে চলছে প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা এরই একটি নমুনা দেখলাম সাম্প্রতিক ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থগত দ্বন্দ্ব থেকে। এমতবস্থায় তাদের যার যার স্বার্থ উদ্ধারে বাংলাদেশ হতে পারে তাদের রণভূমি। আর এর ভোগান্তি কিন্তু ভুগতে হবে এদেশের মানুষকেই। আর তাদের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের নেতা-নেত্রীরা যদি নিজেদের স্বার্থ কেন্দ্রীক দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে তাদের উপাধি কথিত ‘আয়রন লেডি’ কিংবা ‘আপসহীন নেত্রী’র সঠিক প্রয়োগ বিদেশীদের এই অপতৎপরতার ব্যাপারে দেখাতে পারতেন তাহলে এদেশের মানুষের কতই না মঙ্গল হত। কিন্তু আমাদের এই প্রত্যাশা কতটা পূরণ হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই যায়। কারণ তারা আছেন ক্ষুদ্র স্বার্থ নিয়ে পরস্পরকে ছাড় না দেওয়ার প্রতিযোগিতায় অটল। তারা আছেন কদর্য পলিটিকস এর অন্ধকার জগতে। হায়, তারা যদি জনগণের ভাষা বুঝতে পারত! তারা যদি উপলব্ধি করতে পারত এই সংঘাত দেশের জনগণের ভবিষ্যতকে কোথায় কোন বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে!
বিষয়: বিবিধ
১১৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন