যে কারণে রাজনৈতিক দলগুলোকে উস্কানী দেই
লিখেছেন লিখেছেন ই জিনিয়াস ০৪ নভেম্বর, ২০১৩, ০৮:৪৯:৩৫ রাত
নৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক মত বিরোধ এবং সহিংস পরিস্থিতি আবার একটি ওয়ান ইলেভেন পরিস্থিতিকেই ডেকে আনছে। এক্ষেত্রে যদিও দুই প্রধান রাজনৈতিক জোটের কাছেই ওয়ান ইলেভেনের মত পরিস্থিতি মোটেই পছন্দনীয় নয়। কিন্তু তাদের একগুয়ে স্বভাব এবং হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড তাদেরকে সেদিকেই নিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃত অর্থে দুটি দলই যখন কোন ধরনের সমঝোতায় আসছে না, তখন ঐ পরিস্থিটি ক্রমেই অনিবার্য হয়ে উঠছে। আর সত্যিই যদি এমন একটি পরিস্থিতির পুনরাবির্ভাব ঘটে তখন নিজেদের প্রতি দোষ দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে কি?
বাস্তবতা হচ্ছে জাতির ঘাড়ে চেপে বসা দুটি রাজনৈতিক দলই তাদের অগ্রপশ্চাৎ নিয়ে ভাবতে নারাজ। এ ব্যাপারে তাদের কোন ধরনের চিন্তা-ভাবনা বা পরিণতি নিয়ে কোন ধরনের বোধ নেই।
অথচ গত ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনের পর তাদের উপর আরোপিত দুনিয়াবী আযাব থেকে তাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল। কেননা, এ সময় তাদের পরনের কাছা একপ্রকারে খুলেই গিয়েছিল। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়কের দীর্ঘ দুই বছরের শাসনামলে তাদের অতীত সকল দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদের তসরুপের ইতিহাস জাতির সামনে উঠে এসেছিল। অনেকে আদালতের মাধ্যমে জেল জরিমানার শিকার ও হয়েছিলেন। আচ্ছামত ধোলাইয়ের পর আবার যখন তারা রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছিল তখন আশা করা হয়েছিল যে, হয়ত এবার তারা নিজেদেরকে সংশোধন করে পরিশীলিত রাজনীতি করতে শুরু করবেন। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি। কয়েকদিন না যেতেই আবার শুরু হলো আজান দিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ কুক্ষিগত করা। পরিবর্তনের মধ্যে যা এলো তা হচ্ছে আগে যারা ছিল তাদের পরিবর্তে এখন অন্যরা এলো। এভাবেই জনগণ একবার কড়াই থেকে চুলোয় পড়ে আবার চুলোয় থেকে কড়াইয়ে পড়ে।
তাদের পরিচয় আলাদা করে বলার মত কিছু নেই। একই মুদ্রার এরা এপিঠ আর ওপিঠ। নামে শুধু আলাদা। চরিত্র ও গুণগত দিক একই রকম। এদের যখন যে দল ক্ষমতায় যায় তখন তাদের দৃষ্টিতে দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যায়। সরকারি প্রচার মাধ্যমে এই দৃশ্য দেখতে দেখতে জনতার চোখ ক্লান্ত হয়ে যায়। অপরদিকে বিরোধী দল মানেই অভিশাপ। তারা যতদিন বিরোধী দলে অবস্থান করে ততদিন শুধু দেশকে পিছন দিকেই টানে। এখন সে যে কোন দলেই হোক।
প্রায়শঃই আমরা ভুল করে মনে করে থাকি যে এই দুটো দলের মধ্যে দূরত্ব বিস্তর। কিন্তু মোটেই তা নয়। অন্তত একটি বিষয়ে আমরা হলফ করে বলতে পারি যে, তারা মোটেই আলাদা নয়। সেটা হচ্ছে, কোনভাবে ক্ষমতা যেন তাদের হাতের বাইরে না যায়। অর্থাৎ যুদ্ধ চললেও মাঠে যেমন কিছু কমন নীতি থাকে, তাদের মধ্যেও কিছু কমন নীতি বিদ্যমান। এই নীতিগুলো তারা খুব ভালোভাবেই মেনে থাকেন। অর্থাৎ তারা কিছুতেই চান না যে, নির্ধারিত গণ্ডির বাইরে ক্ষমতা যাক। তাই এব্যাপারে তাদের খুব ভয়, না জানি ছোঁ মেরে কোন তৃতীয় শক্তি ক্ষমতা নিয়ে যায়! জনগণের পক্ষ থেকে তাদের জানা উচিত, আপনারা যদি এইভাবে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ক্রমাগত ছিনিমিনি খেলেই যান তাহলে জনগণই একসময় বাধ্য হবে তৃতীয় শক্তিকে ডেকে আনতে। আপনারাই বলেন, ‘জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস’ যা আপনারা একটি উৎকৃষ্ট কৌতুকে পরিণত করেছেন।
আপনারা হয় তো এসব কথা বলে আড়ালে গিয়ে মুখ চেপে হাসেন। আপনারাও জেনে রাখুন, আমরাও আপনাদের এই বুলি শুনে হাসি। আপনাদের উপর থেকে ক্রমাগত আমাদের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য আপনাদের কর্মকাণ্ডই দায়ী। কথিত গণতন্ত্রের নাম নিয়ে আমাদের কাছ থেকে অর্জিত অর্থ যুগের পর যুগ ধরে ভাগাভাগি করে খাচ্ছেন, আর আমাদের দিচ্ছেন উচ্ছিষ্ট- এটা আমরা ভালো করেই জানি।
তাই বলি, থামবেন কেন? থামবেন না মোটেও। পেয়ালা পূর্ণ করুন। হরতাল, অবরোধ দিয়ে আমাদেরকে হত্যা করুন, পুড়িয়ে মারুন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরো বাড়িয়ে দিন। কিছু মানুষ না খেয়ে মারা পড়ুক। বৃহত্তর কাজের জন্য এটি আনুষঙ্গিক ক্ষতি বলেই আমরা মেনে নেব। এই ক্ষতির মাধ্যমে এক সময় হয়তো আমাদের হুঁশ ফিরে আসবে। আমরা সেদিন সত্যি সত্যি প্রকৃত ক্ষমতার মালিক হয়ে উঠব। তাই দোহাই আপনাদের, আপনারা থামবেন না। চালিয়ে যান সমান তালে। ক্ষমতার রশি টানতে টানতে ছিড়ে ফেলুন। এর মধ্য দিয়ে হয়তো কিছু মানুষের বোধ জাগ্রত হবে। ভিন্ন দিক দিয়ে হলেও আপনারা একটি মহৎ কাজ করছেন। এর মাধ্যমেই হয়তো বেরিয়ে আসতে পারে তৃতীয় কোন সম্ভাবনা।
বিষয়: বিবিধ
৯৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন