এই গণতন্ত্রের কাছে আর কতকাল আস্থা রাখব?

লিখেছেন লিখেছেন ই জিনিয়াস ৩০ অক্টোবর, ২০১৩, ০৮:৪৪:১৭ রাত

রা যাক, সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপ হলো, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কোন একটা বিষয়ে সমঝোতাও হলো, একটা নির্বাচনও হলো এবং নির্বাচনের মাধ্যমে একটা নতুন সরকারও ক্ষমতায় বসল- কিন্তু তাতে করে সাধারণ আমজনতার কতটুকু উপকার হবে? এর উত্তরে হয়তো বলা হবে, অনেক উপকার হবে। দেশের চলমান সংকট থেকে জাতি উদ্ধার পাবে, চলমান আন্দোলন যেমন হরতাল, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাথে মারামারি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ইত্যাদি বন্ধ হয়ে শান্তি আসবে।

এবার যদি বলা হয় কত দিন থাকবে এই শান্তি? ক্ষমতায় নতুন সরকার বসে কি আগের মত দুঃশাসন চালাবে না? আগের মত স্বজনপ্রীতি, সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ দেশের বাইরে পাচার করা বন্ধ হবে কি? রাষ্ট্রের স্বার্থে কাজ না করে দলীয় স্বার্থে কাজ বন্ধ হবে কি? উপরোক্ত ব্যাপারে কোন দল প্রতিশ্র“তি দিয়েছে কি? আর যদি নির্বাচনের আগে এসব বিষয়ে প্রতিশ্র“তি দিয়েও থাকে তাও তারা রক্ষা করবে তার কোন গ্যারান্টি আছে? আমরা প্রতিবারই প্রতিশ্র“তি পাই, প্রচার প্রচারণার সীমাহীন উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ‘যেই লাউ সেই কদু’।

কিন্তু অন্ততপক্ষে ২০০৭ সালে কথিত ওয়ান ইলেভেনের মাধ্যমে তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্বারা দুটি দলের দুর্নীতিবাজ নেতাদের উপর ব্যাপক ধর-পাকড় অভিযান ও আদালত কর্তৃক শাস্তি প্রদানের পরেও যখন আবার রাজনীতির দুয়ার খুলে দেওয়া হয় তখন মানুষ আশা করেছিল এবার হয়তো রাজনীতিবিদগণ সংশোধিত হবেন, পরিশীলিত রাজনীতি করবেন। কিন্তু বাস্তবতা মানুষকে চরমভাবে হতাশ করলো। নতুন সরকার আসার সাথে সাথেই আইনে নানাবিধ মারপ্যাঁচে সব রাজনীতিবিদরাই খাঁচা মুক্ত হয়ে গেলেন। এবার বের হয়ে যেন তার দ্বিগুণ উৎসাহে লুটপাট শুরু করলেন। আর বিরোধী দলও লাগাতার সংসদ বর্জন করে, সরকারের সব কাজের বিরোধিতায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করলো। যারা ভেবেছিল রাজনীতিবিদগণ সংশোধন হবেন তাদের কাছে তখন নেতাদের ব্যাপারে শুধু বিশেষ একটি প্রাণীর লেজের কথাই স্মরণে এসেছিল।

এবারও জনতার মধ্যে আরেক নতুন রোগের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। কয়েকদিন যাবত তারা হা করে তাকিয়েছিল দুই নেত্রীর সংলাপের দিকে। আশা করেছিল এবার হয়তো দুই নেত্রীর সংলাপের মাধ্যমে জাতি উদ্ধার পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সংলাপ হয়েছে বটে, তবে তাকে সংলাপ না বলে ঝগড়া বলাই শ্রেয়তর। ফলাফলও তাই। হরতাল যে শর্ত এসেছিল অর্থাৎ সমাধানের জন্য আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত করা এবং একটি দলের পক্ষ থেকে তা করা হলেও হরতাল বন্ধ হয় নি। অজুহাত- রাজনৈতিক ভাষা- ‘হরতাল জোটের সিদ্ধান্ত, আমি একা উঠিয়ে নিতে পারব না।’ অজুহাত যদি বাস্তব হয়েও থাকে তাহলেও আন্তরিকতা থাকলে অন্তত হরতালকে সীমিত করা যেত, কর্মসূচীর কিছু কাটছাট করা যেত।

কিন্তু তা করা হয়নি। চৌদ্দটি প্রাণের বীভৎস্য মৃত্যুর বিনিময়ে অতিবাহিত হলো তিন দিনের হরতাল। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ক্ষয়-ক্ষতি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, ভোগান্তির হিসেব তুলে ধরা সাধ্যের অতীত। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া না দেওয়ার অজুহাতে পরবর্তী আলোচনার উদ্যোগ বিরোধী দলের ঘাড়েই চাপিয়ে দেওয়ার সুর তুলেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

রাজনীতিবিদদের এহেন কর্মকাণ্ড দেখে বোঝা যায়, তারা সমস্যা সমাধানে আন্তরিক নন। অন্ততঃপক্ষে বিপক্ষকে ছাড় দিয়ে তো নয়ই। একমাত্র তালগাছ নিজের মালিকানায় রেখেই তারা সমাধানে যেতে রাজী। তাহলে তাদের কর্মকাণ্ডে কেন আমরা আশান্বিত হই, কেন আমরা হা করে তাকিয়ে থাকি কখন কোন নেত্রী কি বললেন তার দিকে? আমরা কি এখনও তাদের দিক থেকে মুখ ফেরাতে পারি না? দেশের এই দুরবাস্থার জন্য শুধু কি তারাই দায়ী? স্বাধীনতার পর থেকে ৪২ বছর ধরে অর্ধেক সময় ক্ষমতার উত্থানপতন, সামরিকতন্ত্র আর বাকী অর্ধেক কথিত গণন্ত্রের ছেলে খেলা দেখেও আমরা এখনো বুঝতে শিখিনি আমাদের মুক্তি কোথায়? এর জন্য রাজনীতিবিদরা যতটা দায়ী তার চেয়েও হাজারগুণ বেশি দায়ী এই জনতা। অবশ্য এই সিদ্ধান্তেই সমাধান আসবে না। তাদের উপর থেকে আস্থা ত্যাগ করে বিকল্প খুঁজতে হবে। বুঝতে হবে এই দেশে গণতন্ত্র উপযুক্ত নয়, বিদেশীরা জোর করে যতই আমাদেরকে গণতন্ত্র গলধকরণ করাতে চাক, তা আমাদেরকে বমন উদ্রেকই করাবে, রোগ সারাবে না।

বিষয়: বিবিধ

৭৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File